E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: ভাষাহীনের শাস্তি

রাস্তার কুকুরদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে তার জন্য বৈজ্ঞানিক উপায়ে নির্বীজকরণ পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়। তথ্য দেওয়া হয়েছে, কত জনকে কুকুরে কামড়েছে, কত জন জলাতঙ্কে মারা গিয়েছেন।

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২৫ ০৪:১৯

‘রাজধানীতে পথকুকুর সরাতে কড়া নির্দেশ’ (১২-৮) শীর্ষক প্রতিবেদন সম্পর্কে বলি, হাজার হাজার কুকুরকে কোনও এক জায়গায় আশ্রয় দেওয়া কি বাস্তবে কখনও সম্ভব? তেমন উপযুক্ত আশ্রয়স্থল কি কোথাও আছে? বরং এর পরিণতি সকলেরই জানা। সবাই জানি, কুকুরের কামড় থেকে জলাতঙ্ক রোগ হয়। তবে, ঠিক সময়ে প্রতিষেধক নেওয়া হলে এই ধরনের রোগ প্রতিরোধ করা যায়। তা ছাড়া, খুব বিপদে না পড়লে বা অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি না হলে কুকুর কামড়ায় না। খুব সামান্য ক্ষেত্রে দু’-একটি কুকুর অস্বাভাবিক আচরণ করে এবং পথচারীদের কামড়ে দেয়। তাদের জন্য সমস্ত কুকুরকে একই রকম ভাবা কি উচিত?

রাস্তার কুকুরদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে তার জন্য বৈজ্ঞানিক উপায়ে নির্বীজকরণ পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়। তথ্য দেওয়া হয়েছে, কত জনকে কুকুরে কামড়েছে, কত জন জলাতঙ্কে মারা গিয়েছেন। কিন্তু কত জন প্রত্যেক দিন দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছেন, চোখের নিমেষে বিমান-দুর্ঘটনা বা হড়পা বানে শয়ে শয়ে মানুষ মারা যাচ্ছেন, সেই সমস্ত কিছুর সমাধান করার মানসিকতা এ দেশের নেতৃস্থানীয়দের আছে কি? বছরের পর বছর হাজার হাজার মানুষ দুর্নীতির শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে মানসিক যন্ত্রণাতে ভুগছেন! সেই সব দিকে না তাকিয়ে শুধুমাত্র অবলা জীবদের অন্ধকূপে আশ্রয় দিতে চাওয়া কেন? শিশুদের পরম বন্ধু ও খেলার সঙ্গী এই কুকুররা। তারা দিনরাত এক করে গলি, রাস্তা, পাড়া, গ্রাম, শহর রক্ষা করে। প্রতি দিন সরকারি অনুষ্ঠানে, রাজনীতিবিদদের সুরক্ষায়, বিভিন্ন অযাচিত দানে কোটি কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে। সেই খরচের সামান্য অংশ দিয়ে পথকুকুরদের টিকাকরণ ও নির্বীজকরণের ব্যবস্থা করলে এই পরিস্থিতি পাল্টানোর চেষ্টা তো করা যেতেই পারে।

দিল্লির বায়ুদূষণ বিশ্ববিখ্যাত। তার স্থায়ী সমাধান নিয়ে তেমন কোনও মাথাব্যথা দেখা যায় না প্রশাসনের। অথচ, পথকুকুরদের প্রতি সমাজে তীব্র বিদ্বেষ, অমানবিকতা সমাজে বাড়তে থাকে। হয়তো এর পর বিড়াল, পাখি ইত্যাদি বিলুপ্ত করে দিল্লির রাজপথ, আকাশ, বাতাস ‘কলুষমুক্ত’ করার চেষ্টা দেখা যাবে। যদিও প্রধান বিচারপতি বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন, তবুও সুপ্রিম কোর্টের মহামান্য বিচারপতিদের রায়ের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রেখেই একান্ত অনুরোধ, উক্ত অমানবিক আইন যেন বলবৎ না হয়।

স্বস্তিক দত্ত চৌধুরী, শান্তিপুর, নদিয়া

‘অন্য’রাও বাঁচুক

‘বুদ্ধিশ্রেষ্ঠ’ মানুষ অনেক কিছু জানে। তার বিশ্বজয় করার শক্তি হয়তো আছে। কিন্তু তার অর্থ কি এটাই যে, এই দুনিয়ায় মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণিকুল ও উদ্ভিদের কোনও মূল্য নেই? ‘রাজধানীতে পথকুকুর সরাতে কড়া নির্দেশ’ প্রতিবেদন পড়তে পড়তে প্রশ্নটা নতুন করে আঘাত করল হৃদয়ে। খবরে প্রকাশ, দিল্লিতে নাকি কুকুরের কামড় বিপজ্জনক আকার নিয়েছে, জলাতঙ্ক রোগে মৃত্যুও ঘটেছে। আর তাই জনস্বার্থের কথা মাথায় রেখেই এমন নির্দেশ। আদালতের আদেশ শিরোধার্য করেও একটি বিনীত প্রশ্ন, রাস্তায় কুকুরের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পথচারীদের সমস্যা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে পেশাদার কর্মী দিয়ে অবিলম্বে কুকুরের বৈজ্ঞানিক উপায়ে নির্বীজকরণ, জীবাণুমুক্তকরণ, টিকাদানের কাজ নিশ্চিত করার নির্দেশ কি এর পরিবর্তে দেওয়া যেত না? প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মেনকা গান্ধী যথার্থই বলেছেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গাজ়িয়াবাদ-ফরিদাবাদ থেকে তিন লক্ষ কুকুর চলে আসবে। কারণ, দিল্লিতে খাবার রয়েছে। তা ছাড়া কুকুরদের সরিয়ে দিলে বাঁদরেরা নেমে আসবে মাটিতে।

প্রসঙ্গত, অস্ট্রিয়া, সুইৎজ়ারল্যান্ড, কেনিয়া, তানজ়ানিয়া প্রভৃতি বহু দেশে পশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধ এবং তাদের সুরক্ষার জন্য কঠোর আইন রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোষা প্রাণী এবং অন্য প্রাণীদের সঙ্গে ভ্রমণের জন্য নিয়মকানুন রয়েছে, যা পশুদের স্বাস্থ্যবিধি ও সুরক্ষার দিকটি নিশ্চিত করে। কয়েকটি দেশে পশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতা গুরুতর অপরাধ এবং কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। আশা করব, সমগ্র বিষয়টি শেষ পর্যন্ত মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচিত হবে। ‘অন্য’রাও সুষ্ঠু ভাবে বেঁচে থাকার সুযোগ পাবে।

শক্তিশঙ্কর সামন্ত, ধাড়সা, হাওড়া

প্রাণের মূল্য

পথকুকুরদের জীবন তো রাস্তাতেই। তাদের মনমেজাজ ভাল না থাকলে, এলাকায় নতুন কাউকে আসতে দেখলে, কাউকে তাদের পছন্দ না হলে তারা তেড়ে যায়। আঁচড়ে-কামড়ে দিলে সমস্যা। দৌড়তে হবে ইনজেকশন নিতে। আমার মনে হয়, কুকুর নিয়ে কিছু মানুষের আবেগ বাড়তির দিকে। দিল্লি-এনসিআর’এর আবাসিক এলাকায় কুকুরদের দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠছিলেন। তাদের কামড়ে জলাতঙ্কে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এমতাবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছিলেন, উল্লিখিত এলাকার পথকুকুরদের ঢোকাতে হবে নির্দিষ্ট আস্তানায়। কুকুরের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে আরও কিছু ব্যবস্থার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। এ ব্যাপারে পশুপ্রেমিকদের সম্ভাব্য বাধাদানের আগেভাগেই বিচারপতিদের সোজাসাপটা প্রশ্ন, জলাতঙ্কে মৃতদের প্রাণ ফিরিয়ে দিতে পারবেন ওই পশুপ্রেমিকেরা?

শুধু দিল্লি বা তৎসংলগ্ন এলাকা কেন, আমাদের সবার বিচরণপথে কম-বেশি মালিকানাহীন কুকুরের রাজত্ব। কঠোর বাস্তব হল, এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তার কথা ভাবতে হয় নিজেকেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিজের পকেটের পয়সা খসিয়ে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হয়। কেননা জলাতঙ্কের ভয়াবহতা সাধারণ মানুষকে ভয়বিহ্বল করে রাখে। এখনও কোনও কোনও এলাকায় আছে কুসংস্কারের বিপদ। কুকুরে কামড়ালে জলপড়া, তেলপড়া দিয়ে নিরাময়ের পরামর্শ। তাতে অনেক সময়ই প্রাণ যায় আহত মানুষটির। তাই এ বিষয়ে বিচারপতিদের রায় সারা দেশেই প্রযোজ্য হোক। সব নাগরিকের প্রাণের মূল্য একই।

বিশ্বনাথ পাকড়াশি, শ্রীরামপুর, হুগলি

পরিকল্পনা চাই

পথকুকুর প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে স্বাগত‌‌ জানাই। এই নির্দেশ সব রাজ্যে সব শহরে কার্যকর হওয়া দরকার। বর্তমানে দিল্লিতে কয়েক লক্ষ পথকুকুর আছে। ভয়ানক চিত্র। এই চিত্র শুধু দিল্লি নয়, অন্য শহরেও আছে। এত কুকুর রাস্তায় যত্রতত্র ঘুরে বেড়ালে মানুষের স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করা দায় হয়ে উঠবে। এক দিকে শহরের সৌন্দর্যায়নের ক্ষেত্রে এরা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করে রাস্তা অপরিষ্কার করে। আবার, এদের কামড়ে জলাতঙ্ক রোগ হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। রাতে এদের জন্য পথ চলা দায় হয়ে ওঠে। দলবদ্ধ ভাবে পথ আটকে দাঁড়ায়। চিৎকার করে, কামড়েও দেয়। কোনও সভ্য দেশে এই ধরনের ঘটনা কল্পনা করা যায় না।

তবে কয়েক লক্ষ পথকুকুরকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় দেওয়া কতটা বাস্তবে সম্ভব, যথেষ্ট সন্দেহ আছে। প্রশাসনের লক্ষ লক্ষ কুকুরকে আশ্রয় দেওয়ার মতো পরিকাঠামো এই মুহূর্তে আছে কি? আছে বিশাল অঙ্কের খরচও। এই কাজ করতে গিয়ে পথকুকুররা মারা গেলে, তা অত্যন্ত অমানবিক হবে। তাই পথকুকুর সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি মানবিক পরিকল্পনা নিতে হবে, রাজ্য সরকারগুলিকেও তা পালন করতে হবে। প্রতিটি পুর-প্রশাসনের উচিত, পথকুকুরদের ক্ষেত্রে সারা বছর নির্দিষ্ট কর্মসূচি নেওয়া। একই সঙ্গে পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে কুকুরের কামড়ে আহতদের বিনামূল্যে ইনজেকশন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে আক্রান্তের বাড়ি গিয়ে ইনজেকশন দিতে হবে। তাতে কিছুটা হলেও আতঙ্ক কমবে।

অতীশচন্দ্র ভাওয়াল, কোন্নগর, হুগলি

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Stray Dogs Supreme Court of India

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy