E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: হারিয়েছে পুষ্টিগুণ

উৎপাদন সংস্কৃতিতে যেন তেন প্রকারেণ পরিমাণ বৃদ্ধি গুরুত্ব পাচ্ছে। পুষ্টিগুণ, রোগমুক্তি উপেক্ষিত হয়ে হারিয়ে গিয়েছে।

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৫ ০৫:৫১

নীলাঞ্জন মিশ্র তাঁর ‘দিনান্তবেলার ফসল’ (৪-১০) শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন কেন ‘কৃষি নেই তো সংস্কৃতি নেই। সংস্কৃতি নষ্ট তো কৃষিও নষ্ট’। পশ্চিমবঙ্গ তার নির্মম উদাহরণ। গবেষণা হছে বাংলার কৃষি উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে, যার সাফল্যের কথা সংবাদে পড়ছি, জানছি। অনিবার্য প্রাকৃতিক পরিবর্তনে নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে বোঝাপড়া করার জন্য উন্নত মানের বীজ আবিষ্কার হচ্ছে। উৎপাদনের পরিমাণও বাড়ছে। কিন্তু সেখানে হারিয়ে যাওয়া ধানের চালে অসাধারণ পুষ্টিগুণের স্বঙ্গে রোগমুক্তির ঠিকানা কম আলোচিত। সে কালে সারা বছর খাওয়ার ও বীজধান রাখার মতো চাল, আর কিছু বাড়তি উৎপাদন থেকে বস্ত্র, বাসস্থানের জোগানেই সন্তুষ্ট ছিল বাঙালি। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এত দুর্মূল্য ছিল না। কিন্তু এখন যোগ হয়েছে মোবাইল, টেলিভিশন, গ্যাস, ফ্রিজ, বাইক ইত্যাদি ভোগ্যপণ্য কেনার চাহিদা। অতএব উৎপাদন সংস্কৃতিতে যেন তেন প্রকারেণ পরিমাণ বৃদ্ধি গুরুত্ব পাচ্ছে। পুষ্টিগুণ, রোগমুক্তি উপেক্ষিত হয়ে হারিয়ে গিয়েছে।

কৃষিতে আধুনিক উৎপাদন ব্যবস্থায় মৌলিক, ব্যাপক পরিবর্তনের জন্য বর্তমানে বাজারে বিকৃত ফসলের কুপ্রভাব রোগ বাড়াচ্ছে। আরও গুরুতর সমস্যা আছে। কৃষিবাণিজ্যে উন্নত পশ্চিমি দুনিয়া শাসাচ্ছে, তাদের উৎপাদিত পণ্য কিনে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে বিক্রি করতে হবে। উন্নত দেশগুলির পুঁজিনির্ভর সম্পদের বিস্ফোরণে উন্নয়নশীল দেশগুলির অন্যতম ভারত প্রায় দিশাহারা। ভাবিয়ে তুলেছে পরিবেশ দূষণ, ‘ম্যান মেড’ বন্যা পরিস্থিতি, অনিয়মিত বর্ষণ, অনুন্নত বা গতানুগতিক কৃষিতে স্বল্পমজুরি ও অনিশ্চিত লাভ ইত্যাদি। এই সামগ্রিক পরিস্থিতি ‘ইকোলজি’কে ধ্বংস করছে।

প্রবন্ধে চালের নামগুলো পড়ে রূপকথা মনে হয়। এই সম্পদ আমাদের ছিল। কিন্তু আজ সে চাষিরা নেই, সেই পরিবেশও নেই। সে কালের চাষির উত্তর প্রজন্ম এখন লেখাপড়া শিখে অন্য জীবিকা নিয়েছেন। বড় জোর কেউ ট্র্যাক্টর কিনেছেন, ড্রোনে করে কীটনাশক, সার ছড়াচ্ছেন। এআই যুগে শিক্ষিত কৃষকসন্তান গ্রামে থাকতে চাইছেন না। সেই ফাঁকে কৃষিব্যবস্থায় কর্পোরেট সংস্থার পুঁজির দাপটে ও অভিনব বিজ্ঞান-প্রযুক্তির প্রয়োগে কৃষক ক্রমশ কৃষিশ্রমিকে পরিণত হচ্ছেন। এখন অপেক্ষা, ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটে কোন রাজনীতি বাঙালির একদা চমৎকারা এই অন্নচিন্তাকে প্রাধান্য দেয়।

শুভ্রাংশু কুমার রায়, চন্দননগর, হুগলি

বাংলার ধান

নীলাঞ্জন মিশ্রের প্রবন্ধ ‘দিনান্তবেলার ফসল’ প্রসঙ্গে বলি, এ কথা সত্যি যে বাংলার নিজস্ব প্রজাতির অনেক ধান হারিয়ে গিয়েছে উচ্চ ফলনশীল প্রজাতির ধান চাষ হওয়ার ফলে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় প্রায় ৪৪০০টি বৈচিত্রময় দেশি প্রজাতির ধানের চাষ হত পঞ্চাশ-ষাট বছর আগেও। সাম্প্রতিক কালে হাইব্রিড এবং উচ্চ ফলনশীল ধান চাষ শুরু হওয়ার ফলে হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার নিজস্ব প্রজাতির ধান। ‘অগ্নিবাণ’ নামের একটি সুগন্ধি ধান আগে রাঢ় বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ করা হত। এই চালের ভাত দুধ দিয়ে খাওয়ার প্রচলন ছিল গ্রামবাংলার মানুষের মধ্যে। কেউ ক্ষুধামান্দ্য রোগে ভুগলে এই পুষ্টিকর সরু ধানের খই দিয়ে দুধ খাওয়ার নিদান দিতেন কবিরাজ, বৈদ্যরা। এই ধান বর্তমানে লুপ্ত হয়ে গিয়েছে।

‘দুধের সর’ নামের একটি দেশি ধানের প্রজাতিও ইদানীং কালে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। আজকাল ‘দুধের সর’ নামে যে চাল বিক্রি হয়, তা আদতে মিনিকিট চাল। ধানকলের মেশিনে পালিশ করে সরু করা হয়ে থাকে। আদি ‘দুধের সর’ ছিল দুধের সরের মতোই সাদা সুগন্ধি চাল। কয়েক দশক আগেও ‘বহুরূপী’ নামের একটি ধানের চাষ হত পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতে। সুস্বাদু, মিষ্টি স্বাদের ভাত হয় এই ধানের। কালের স্রোতে হারিয়ে গিয়েছে এই ধানও।

‘কবিরাজ শাল’ নামের দেশীয় ধানের চাল প্রচুর পরিমাণে লোহা ও জিঙ্ক সমৃদ্ধ ছিল। এর ভাত আগে গর্ভবতী মেয়েদের খাওয়ানোর প্রচলন ছিল। ‘কনকচূড়’ ধান এখন একমাত্র দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় চাষ হয়ে থাকে, জয়নগরের বিখ্যাত মোয়ার খই হিসেবে ব্যবহারের জন্য। ‘খাড়া’ নামের একটি দেশি ধানের কচি পাতার বড়া তৈরি করে খেতেন গ্রামবাংলার মানুষ। এখন আর এই ধান পাওয়া যায় না কোথাও। ‘কোমল মাগুরি’ নামের দেশি ধানের চাল মাত্র আধ ঘণ্টা জলের মধ্যে ভিজিয়ে রাখলেই চিঁড়ের মতো ফুলে ওঠে। সেই ফুলে ওঠা চাল টক দই, আখের গুড় কিংবা পাটালি দিয়ে তৃপ্তি করে খাওয়া যায়। ‘সীতাশাল’, ‘কালকেতু’, ‘রামশাল’ প্রভৃতি দেশি ধান চাষ হত চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর আগেও। এখন এই সব দিশি ধানের নামও শোনা যায় না।

বলা হয়, পুরনো প্রজাতির ধান চাষ করলে এখন প্রতি বিঘেতে সাকুল্যে চার-পাঁচ মন ধান উৎপাদন হয়। অন্য দিকে, উচ্চ ফলনশীল ধান বর্তমানে প্রতি বিঘেতে প্রায় কুড়ি-বাইশ মন হয়। স্বভাবতই চাষিরা দেশি প্রজাতির ধান চাষে কিছুটা অনাগ্রহী হয়ে পড়েছেন ইদানীং। বাংলার কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সঙ্গে ধানের সম্পর্ক রয়েছে সুপ্রাচীন কাল থেকেই। কৃষিভিত্তিক বাংলায় এখনও কার্তিক, অগ্রহায়ণ মাসে নতুন ধান উঠলে ‘নবান্ন’ উৎসব পালিত হয়। আশার কথা, সাম্প্রতিক কালে মুর্শিদাবাদ জেলার সারগাছি রামকৃষ্ণ মিশন এবং নদিয়া জেলার ফুলিয়ার সরকারি কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বাংলার লুপ্তপ্রায় দেশীয় প্রজাতির ধানগুলি পুনরায় চাষের উদ্যোগ করা হয়েছে। চেষ্টা করা হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির ধানগুলি কৃষকদের মধ্যে আবার জনপ্ৰিয় করে তুলতে।

তুষার ভট্টাচাৰ্য, কাশিমবাজার, মুর্শিদাবাদ

আসন বৃদ্ধি

সরকারি-বেসরকারি বাসে প্রবীণ জন্য মাত্র দু’টি আসন বরাদ্দ থাকে। সেটি দ্বিগুণ করা হোক।

অমল কৃষ্ণ পাল, কলকাতা-৮৪

বিভ্রান্তিকর

‘মুখ্যমন্ত্রীর হাতে ফর্ম পৌঁছল বুধে’ (পৃ ১, ৬-১১) শীর্ষক সংবাদের শুরুতে উল্লেখ করা হয়েছে, “...বুধবার সকালে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নিযুক্ত বুথ লেভেল আধিকারিক (বিএলও) তাঁর হাতে ফর্মটি তুলে দেন।” পরে বলা হয়েছে, “এ দিন সকালে ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের (সেই কেন্দ্র থেকেই মমতা নির্বাচিত এবং সেখানকারই ভোটার) ৭৭ নম্বর বুথের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএলও অমিতকুমার রায় পৌঁছে যান ৩০বি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে। প্রথামাফিক তাঁকে আটকান নিরাপত্তারক্ষীরা। নিজের পরিচয় এবং উদ্দেশ্য জানানোর পরে মুখ্যমন্ত্রীর মূল নিরাপত্তা আধিকারিকদের অনুমতিতে বাসভবনে ঢোকেন বিএলও। কারণ, কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী ভোটার বা তাঁর আত্মীয়দের হাতেই একমাত্র ফর্মটি দেওয়া হচ্ছে। পরে মুখ্যমন্ত্রী নিজে বেরিয়ে এসে এনুমারেশন ফর্মটি গ্রহণ করেন এবং জানিয়ে দেন, ফর্ম ভর্তি হলে তাঁর অফিস সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে জানিয়ে দেবে।”

স্পষ্ট ভাবে জানানো হচ্ছে, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে যে তথ্য পরিবেশিত হয়েছে, তা ভ্রান্ত। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী নিজে কোনও ফর্ম গ্রহণ করেননি। এ রকম বিভ্রান্তিকর এবং কল্পনাপ্রসূত সংবাদ পরিবেশনের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে।

শর্মিষ্ঠা বন্দ্যোপাধ্যায়, তথ্য অধিকর্তা, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার

প্রতিবেদকের উত্তর: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে হাতে এসআইআর-এর এনুমারেশন ফর্ম নিয়েছেন, এই খবর নির্দিষ্ট সূত্রে পাওয়া গিয়েছিল বলে তা প্রকাশিত হয়েছে। অপপ্রচার করা বা মুখ্যমন্ত্রীকে অসম্মান করার কোনও উদ্দেশ্যই ছিল না। উল্লেখ্য, এই একই সংবাদ তৃণমূলের মুখপত্রে গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়েছিল ‘বিএলও-র হাত থেকে ফর্ম নিলেন ভোটার মুখ্যমন্ত্রী’ শীর্ষক প্রতিবেদনে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Food Quality Nutrition

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy