দীপেশ চক্রবর্তীর ‘চুল ভিজাব না?’ (২৪-৮) প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। ‘দীর্ঘায়ু প্রাপ্তি’ এবং ‘পরিবেশ চেতনা’— বর্তমান সময়ে এই দুই বিষয়ে মানবজীবন দ্বিধায় আচ্ছন্ন। কামনা-বাসনা-কল্পনার বৃত্তে আমাদের বস্তুগত-জীবন ভোগবাদে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। তবুও কেউ কেউ বস্তুজগতের বৈভবে ভেসে না গিয়ে জীবনের লাগামটুকু টেনে ধরেন। এই ব্যতিক্রমী স্রোতের বিপরীতে এগোনোর ঐকান্তিক ইচ্ছা আমাদের সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
সভ্যতার উষালগ্নে আগুন জ্বালাতে শিখে শক্তি উৎপাদনের ক্ষমতাই মানবজাতিকে জীবজগতে অন্য সমস্ত জীবের তুলনায় এগিয়ে দিয়েছিল। এর পরবর্তী কালে মানুষ ধীরে ধীরে নিজের প্রয়োজনে পৃথিবীর সম্পদকে কাজে লাগাতে শিখেছে। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েছে গবেষণায়। সচেষ্ট হয়েছে মানব জীবনের রহস্য ভেদে। মহাকাশে পাড়ি দিয়েছে, অন্য গ্রহগুলির সম্বন্ধেও তথ্য সংগ্রহ করতে চেয়েছে। তবুও আমাদের দ্বিচারিতা সর্বদা পাশে পাশে হেঁটেছে। আমরা বর্তমান সময়ে যে দিকে আমাদের সামর্থ্য আছে, সে দিকটা রুদ্ধ করে রেখেছি। আর যে দিকে শুকনো, যে-প্রান্ত থেকে অঞ্জলি কোনও মতেই পূর্ণ হবে না, সে দিকে দু’হাত পেতে আমরা ঠায় বসে আছি।
প্রবন্ধকার বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে মানবসমাজের দীর্ঘায়ু সম্পর্কিত ভাবনাটিকে বর্তমান সময়ে মানুষের স্বাভাবিক অধিকার বলেছেন। অথচ, প্রতিনিয়ত নানা ঘটনায় প্রমাণিত, বিজ্ঞানের অগ্রগতিতেও মানুষের দুর্দিন ঘনিয়ে এসেছে। ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন, ইউক্রেন-রাশিয়ার মতো রাষ্ট্রের সংঘাতে অত্যাধুনিক অস্ত্রের প্রয়োগ বিশ্ব জুড়ে যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বাতাবরণ সৃষ্টি করেছে, তা এক গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। এক দিকে, এই পৃথিবীতেই মানুষ শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে নিজেদের প্রয়োজন এবং চাহিদাকে ভিত্তি করে কৃষিকাজে অত্যধিক রাসায়নিকের ব্যবহারে জমিকে অধিক ফলনশীল করে তুলেছে। অগ্রাহ্য করেছে প্রকৃতির স্বাভাবিক উৎপাদন ক্ষমতাকে। অন্য দিকে, ভোগবাদী জীবনের সমস্ত চাহিদাকে পূরণ করতে চেয়ে শিল্পে উৎপাদন ক্ষমতাকে সুউচ্চ স্তরে পৌঁছে দিতে ক্রমাগত প্রকৃতিতে দূষণ ছড়িয়ে গিয়েছে। তাই বলাই যায় যে, মানবসভ্যতা দীর্ঘ সময় ধরে যে ডালে বসে আছে, সেই ডালই কাটার কাজ করে চলেছে।
সঞ্জয় রায়, হাওড়া
রিক্ত পৃথিবী
দীপেশ চক্রবর্তীর লেখা ‘চুল ভিজাব না?’ প্রবন্ধের সঙ্গে সহমত পোষণ করি। বিভিন্ন গবেষণায় স্পষ্ট হয়েছে যে, মানুষের সমস্ত কার্যকলাপের সঙ্গে কার্বন ফুটপ্রিন্টের সরাসরি সম্পর্ক আছে। ফলে বিশ্বে মানুষের সংখ্যা ও গড় আয়ু যত বাড়ছে, তত তাল মিলিয়ে বেড়ে চলেছে কার্বন ফুটপ্রিন্টও। মানুষ সব সময়ই চায় তার আয়ু আরও কিছুটা বাড়িয়ে নিতে। কিন্তু, তার কার্যকলাপের জন্য কার্বন ফুটপ্রিন্ট বাড়ুক, সেটাও সচেতন মানুষ চায় না। অধিক পরমায়ু চাই, না সুজলা-সুফলা-সবুজ পৃথিবী— এই দ্বন্দ্বের মাঝে পড়ে মানুষ আজ বুঝতে পারছে, উভয় শর্ত এক সঙ্গে সত্য হওয়া সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে থামতে হবে মধ্যবর্তী কোনও এক স্থানে। কিন্তু তাই বলে এ কথাও বলার উপায় নেই যে, “আমার যেমন বেণী তেমনি রবে, চুল ভিজাব না”।
আমাদের অবস্থা চার্লস ডিকেন্সের লেখা আ ক্রিসমাস ক্যারল উপন্যাসের এবনেজ়ার স্ক্রুজ় নামক চরিত্রের মতো হতে পারে। স্ক্রুজ়ের মতো আমরাও হয়তো এক দিন নিজেদের ভবিষ্যতের সমাধি-ভূমি দেখতে পাব। বিশ্ব উষ্ণায়নের ভয়াবহ প্রকোপ, তার প্রভাবে বিপর্যস্ত জীববৈচিত্র, প্রকৃতির সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া দূষণের কালো ছায়ার মাঝে আমরাও হয়তো স্ক্রুজ়ের মতো মৃত্যুর অনিবার্যতা ও জীবনের অর্থহীন দিকের এক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়াব। হয়তো তখন আমরা উপলব্ধি করব আমাদের অমরত্বের বাসনা, বিলাস-বৈভবের সাধ পূরণ করতে গিয়ে কী ভাবে আমরা পৃথিবীকে রিক্ত করে তুলেছি। আমরা যদি অচিরেই নিজেদের জীবনযাত্রা না বদলাই, তা হলে সেই দিন দূর নয়, যখন আমরা অদৃষ্টের কাছে ভুল স্বীকার করেও কোনও বিকল্প পথ খুঁজে পাব না।
অজয় ভট্টাচার্য, বনগাঁ, উত্তর ২৪ পরগনা
হাতিয়ার
ত্রিশ দিনের অধিক বিচারাধীন বন্দি থাকলেই মন্ত্রিত্ব চলে যাবে— সংবিধান সংশোধন করে কেন্দ্রীয় সরকার এমনই এক বিল প্রণয়নের উদ্যোগ করেছে। এই প্রসঙ্গে ‘সব দাগ উধাও’ (২৮-৮) সম্পাদকীয় প্রবন্ধে যে প্রতিহিংসার সম্ভাবনা তুলে ধরা হয়েছে, তা সমর্থনযোগ্য। কেন্দ্র কিংবা রাজ্যে বহু নেতা-নেত্রীর বিরুদ্ধে অসংখ্য দুর্নীতির অভিযোগ আছে। তাই দুর্নীতির দায়ে তাঁদের মন্ত্রিত্ব চলে গেলে সাধারণ মানুষ খুশি হবে, সরকারের উপর ভরসা পুনরায় জন্মাবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আইনের মূল উদ্যোক্তা কেন্দ্রীয় শাসক দলেও এমন অনেকে আছেন, যাঁরা এক সময়ে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। জ্যোতি মির্ধা, একনাথ শিন্দে, অজিত পওয়ার, হেমন্তবিশ্ব শর্মা প্রমুখ, যাঁদের অপরাধের মামলা বিজেপিতে নাম লেখাতেই খারিজ বা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর কারণ, সিবিআই, ইডি কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশেই পরিচালিত হয়। এ রাজ্যের শাসক দলের অপরাধীদের সংখ্যাও অনেক বেশি। এক মাস বা তার বেশি সময় জেলে কাটিয়েছেন তাবড় মন্ত্রী-বিধায়কদের একাংশ। দু’বছরের বেশি সময় ধরে জেলে আছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। এ দিকে কংগ্রেসের এক বড় নেতা খুনের আসামি হয়েও, তৃণমূলে যোগ দিয়ে পার পেয়েছেন।
সারনাথ হাজরা, হাওড়া
পুজোর স্মৃতি
দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের প্রবন্ধ ‘প্রাণের যোগে প্রাণপ্রতিষ্ঠা’ (২২-৯) প্রবন্ধটি পড়ে পুরনো স্মৃতি ভেসে ওঠে। পুরনো আমলের রেডিয়োতে মহিষাসুরমর্দিনী শুনতে শুনতে কখন যে চোখের পাতায় ভোরের শিশির কাজল পরিয়ে দিল! চোখ মেলতেই দেখি বকের পালকের মতো মেঘ, বিলের জলে স্থির হয়ে থাকা ছায়া, শালুকের অপলক চেয়ে থাকা আর উঠোনে বিছানো শিউলির মায়া। প্রবাসী মন উচাটন। দেশে ফেরা, হইচই, নতুন করে কাছে পাওয়া, অচেনা ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া, পাত পেড়ে খাওয়া। মহাসমারোহে আনন্দ উদ্যাপন। মনে হয় ‘মেলাবেন, তিনি মেলাবেন’। এ রকম অস্তিত্বের টানে যখন আমার আদরের গ্রামে আদুল গায়ে তর্জনী ও মধ্যমার ফাঁকে খেজুর পাতার চরকি নিয়ে দৌড়ে যাওয়া শিশু ও তার দিদির দৃশ্য দেখি, কিংবা দো-মেটের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকা প্রতিবন্ধী কিশোরীর মুগ্ধতা, ছুঁয়ে থাকা দেখি, তখন এত দিনের শৌখিনতা, অহঙ্কার ধুলোয় মিশে যায়। আমাদের পূর্ণ মাতৃরূপ দর্শন হয়! বিশ্বমন্দার বাজারে দাঁড়িয়ে বলতে ইচ্ছে করে— এই তো সেই সু-সময়। থাক আরও কিছু ক্ষণ!
পুজো আসবে, চলেও যাবে। এই ক’দিনের সাড়েবত্রিশভাজার জীবন একটু আলো হয়ে উঠবে। এটাই তো বাকি দিনগুলোর বেঁচে থাকার মহৌষধ। আবার যে যার মতো পুরনো ছন্দে ফিরে যাব, গতানুগতিকতার চেনা ছকে। সুখ-অসুখের দোলাচলে। সংযোগের এই আয়োজন, এমন নিবিড় আত্মীয়তা একমাত্র শারদোৎসবই পারে!
সব্যসাচী পড়ুয়া, ঈশ্বরপুর, পূর্ব মেদিনীপুর
বাসের অভাব
মহেশতলা ডাকঘর থেকে বেহালা চৌরাস্তা পর্যন্ত কোনও বাস চলাচল করে না। আগে এখানে ৭৭, ১৮এ, এস২৯ বাসের পাশাপাশি বজবজ মিনিবাস, ব্যানার্জি হাট মিল্ক কলোনি মিনিবাস চলত। এখন ১৮বি/১এ বাস চলাচল করে বাগমারি থেকে বোসপুকুর। তা-ও খুব অনিয়মিত। যদিও এই বাসের আসল রুট ডাকঘর থেকে বোসপুকুর।
সমীর কুমার মণ্ডল, কলকাতা-১৪১
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)