‘দেবতার বঙ্গে অবতরণ’ (২-৪) প্রবন্ধে সেমন্তী ঘোষ ঠিকই বলেছেন, এ বারের রামনবমীর বিশাল আয়োজন ভোটের প্রয়োজন থেকেই। ধর্মপালন নাগরিকের ব্যক্তিগত অধিকার। সেই অধিকার যখন ব্যক্তির গণ্ডি ছাড়িয়ে সামাজিক ক্ষেত্রে অশান্তি বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা তৈরি করে তখন তা ব্যক্তির অধিকারের সীমাকে ছাড়িয়ে যায়। রামনবমী পালন নিয়ে ঠিক সেই জিনিসটাই বিগত কয়েক দিন ধরে দেখা গেল। এ রাজ্যের মানুষের কাছে রাম চিরকালই মহাকাব্যের নায়ক। স্বর্গের দেবতা নন। তাই এ রাজ্যে খুব কমই রামমন্দির আছে। সেগুলিতে বা ব্যক্তিগত স্তরে যে রামনবমী পালন করা হত, তা কখনও সামাজিক বিশৃঙ্খলার কারণ হয়ে ওঠেনি। বাবরি মসজিদ, রাম জন্মভূমি বিতর্ককে সামনে রেখে বিজেপি রামনবমী পালনকে ব্যাপক রূপ দিতে চাইলেও তা মূলত উত্তর ভারতেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। এ রাজ্যে তার তেমন প্রভাব পড়েনি। বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় বসার পর এ রাজ্যের ক্ষমতার দিকে নজর দিতেই শুরু হয় রামনবমী পালনের রাজনৈতিক কর্মসূচি। এ রাজ্যে জনআন্দোলনের দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। কোনও দল বা নেতাকে সমর্থনের আগে মানুষ দেখতে চায় জনজীবনের সমস্যাগুলি নিয়ে তাঁর কী ভূমিকা রয়েছে। বিজেপি রাজ্যের সেই ঐতিহ্যের শরিক নয়। তা ছাড়া জনসাধারণের দাবি নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা বিজেপির রাজনীতিও নয়। তাই এত বড় আর জি কর আন্দোলনেও তারা হাত গুটিয়ে থেকেছে। এ অবস্থায় জনসমর্থন আদায়ের একটি রাস্তাই খোলা থাকে, তা হল বিদ্বেষ এবং বিভাজন তৈরির রাস্তা। রামনবমী পালন কর্মসূচিকে সামনে রেখে বিজেপি সেই রাস্তাই ধরেছে।
প্রবন্ধকার ঠিকই বলেছেন হিন্দুত্ববাদীদের প্রচারিত এই রাম বাঙালির কাছে পরিচিত নয়। বাঙালির রাম ঘরোয়া মেজাজের। তাঁর মধ্যে ‘যুদ্ধং দেহি’ মনোভাব নেই। অথচ তাতে তো আর হিন্দুত্ববাদী নেতাদের চলবে না। তাঁদের চাই ভোট। অথচ মানুষের কাছে ভোট চাওয়ার স্বাভাবিক রাস্তাটি তাঁদের কাছে খোলা নেই। তাই মানুষকে চমকে দিয়ে, ভয় দেখিয়ে, ‘হিন্দুত্ব বিপন্ন’, ‘মৌলবাদীরা কিছু দিনের মধ্যেই দেশটাকে দখল করে নেবে’ ইত্যাদি বলে মানুষের মনে ভয় ছড়িয়ে ভোট আহরণ করতে হয়। বাংলার ঐতিহ্য ভেঙে মিছিলে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে হয়। কপালে গেরুয়া ফেট্টি বেঁধে বাইকবাহিনীকে নামাতে হয়। রামের বিশাল কাট আউটে আলোর ঝলকানি লাগিয়ে, উচ্চৈঃস্বরে ডিজে বাজিয়ে মানুষকে চমকে দেওয়ার দরকার হয়। মিছিল বেছে বেছে সংখ্যালঘু এলাকাগুলির মধ্য দিয়েই এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়। এগুলির কোনওটিই বাঙালির প্রচলিত ধর্মাচরণের সঙ্গে মেলে না।
সমুদ্র গুপ্ত, কলকাতা-৬
একই মুদ্রা
সেমন্তী ঘোষের ‘দেবতার বঙ্গে অবতরণ’ শীর্ষক প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। লেখক অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাবে পশ্চিমবঙ্গে রামকাহিনির নায়ক দশরথনন্দনকে যুদ্ধবাজ রামে পরিণত করার রাজনৈতিক অভিসন্ধির একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণী উপস্থাপিত করেছেন। অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে এই আখ্যান।
২০১৭-১৮ সাল, এই সময়কালে আমি যে অঞ্চলে বসবাস করি, সেই অঞ্চলে বিজেপি-আরএসএস’এর রামনবমীর সশস্ত্র উদ্যাপনের পাল্টা হিসাবে তৃণমূল কংগ্রেসের সশস্ত্র হনুমান জয়ন্তী দেখেছি। সেখানে ছোট ছোট শিশুর হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছিল।
বাঙালি সমাজের কাছে রাম হলেন শিশুসুলভ পরম আদরের বস্তু। দক্ষিণেশ্বরে এসে এক সাধু এই রকম একটি রামলালার মূর্তি শ্রীরামকৃষ্ণকে দিয়ে গিয়েছিলেন। সেই বালক রামকে শ্রীরামকৃষ্ণ সন্তানস্নেহে দেখেছিলেন, তাঁর পূজার্চনা করেছিলেন।
আজ বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে এই রামনবমীকে কেন্দ্র করে ভোট রাজনীতির দিকে তাকিয়ে দাঙ্গার ছক কষছেন যাঁরা, তাঁরা বিজেপি আর তৃণমূলের মধ্যে ‘ডেলি প্যাসেঞ্জারি’ করেন। ভোট-রাজনীতির ক্ষেত্রে ধর্মকে ব্যবহার করার নিরিখে, বাংলায় যুযুধান প্রধান দু’টি দলের মধ্যে কিন্তু আসলে তফাত নেই।
গৌতম রায়, ভাটপাড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
এত ঘৃণা কেন
জাগরী বন্দ্যোপাধ্যায়ের “‘বেছে নেওয়া’র হিসাব” (২৯-৪) প্রবন্ধ প্রসঙ্গে কিছু কথা। ভারতে জঙ্গিহানা অবশ্যই মর্মান্তিক, তবে নতুন কিছু নয়। এর আগে যখনই এ রকম ঘটনা ঘটেছে, গোটা ভারত একযোগে এর প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু আজ আমাদের এই চেনা দেশ ধীরে ধীরে যেন এক সম্পূর্ণ অচেনা ভারতে পরিণত হয়েছে। এখন যখনই কোনও জঙ্গি হানা হয় আমরা নিজেদের মধ্যে মতাদর্শগত ঝগড়া শুরু করে দিই। আমরা তাকিয়ে দেখি আমাদের বন্ধুদের দিকে, সে কি সেকুলার? সে কি যথেষ্ট দেশপ্রেমিক নয়? তা হলেই তাকে বন্ধুতালিকা থেকে বাদ দিতে আমাদের আর আটকায় না। আমরা দেখি আমাদের প্রতিবেশীর দিকে। আমাদের পাড়ায় যিনি আনাজ বিক্রি করতে আসেন তাঁর দিকে। তিনি কি অন্য ধর্মের মানুষ? তা হলে আমি তাঁর কাছ থেকে আনাজ কিনব কেন? ডাক্তার তাকান রোগিণীর দিকে, ধর্ম নিশ্চিত করে তবেই চিকিৎসা করতে হবে তো! সমাজের অলি-গলিতে, বাড়ির চৌহদ্দিতে চোরাস্রোতের মতো ঢুকে যাচ্ছে ঘৃণা, সন্দেহ আর বিদ্বেষ। কত সম্পর্ক, বন্ধুত্ব, প্রেম— ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাচ্ছে শুধুমাত্র সামান্য কিছু দৃষ্টিভঙ্গির তফাতের সৌজন্যে।
আসলে দীর্ঘ দিন ধরে সমাজমাধ্যমে, ইউটিউবে, ওয়টস্যাপে, সংবাদমাধ্যমে, সিনেমায় অবিরত ঘৃণার সাধারণীকরণ হয়েছে। তিল তিল করে জমতে জমতে আজ তা আকাশ ঢেকে দিয়েছে। শত্রুদেশ যা ৭০ বছরে করে উঠতে পারেনি, এক দশকেই সাম্প্রদায়িকতার আর ঘৃণার রাজনীতি তা করে দেখিয়েছে। দেশ এখন সত্যিই বিভাজিত।
রাজনীতি, ধর্ম, দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য সব সময় ছিল এবং থাকবেও। আমাদের বন্ধুত্ব সম্পর্ক ভালবাসা যে ভাবে আমাদের জীবনকে প্রস্ফুটিত করে তোলে, স্মৃতির অ্যালবাম ভরিয়ে তোলে, তাতে যদি একটু আধটু মতপার্থক্য থাকেও খুব কি ক্ষতি হবে? এখনও যখন আপনার বাড়ির ছাদ ঢালাই হবে, হয়তো কোনও ইকবালই এসে সেটা করবে। গভীর রাতে বুকে ব্যথা হলে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য ছুটে আসবে আপনার পড়শি গোঁড়া হিন্দু হারানকাকু বা ‘সেকু’ বাবলাদা। দিন শেষে এই পারস্পরিক সংযোগ ভিন্ন আমরা সবাই বড় অসহায়। তা হলে পারস্পরিক সন্দেহ, ঘৃণা, বিদ্বেষ নিয়ে ঠিক কোথায় পৌঁছব আমরা? যে রাজনীতি আমাদের এই ভালবাসাকে ভাগ করে দিচ্ছে, একা করে দিচ্ছে, তাকে কি আমরা চিনতে এবং ঠেকাতে শিখব না?
সুপ্রতীক রায়চৌধুরী, কলকাতা-১১৪
পথ নিরাপত্তা
প্রায়ই দেখি মোটরসাইকেল আরোহীদের সঙ্গে ট্র্যাফিক পুলিশদের বাগ্বিতণ্ডা চলছে। হেলমেট পরা নিয়ে বা নিয়ম লঙ্ঘন করা নিয়ে ঝামেলা। কিন্তু এত কথার প্রয়োজন কী? নিয়মভঙ্গকারীদের অবশ্যই আইনানুযায়ী শাস্তি পেতে হবে। তবে শুধুমাত্র আর্থিক শাস্তি এবং আইনি ব্যবস্থা করাই প্রশাসনের কর্তব্য নয়, পথের সুরক্ষার দিকেও সমান নজর দেওয়া উচিত।
খাবার থেকে দৈনন্দিন সামগ্রী, ওষুধ সবটাই এখন ই-কমার্স কর্মীদের মোটরবাইকের উপর নির্ভরশীল। সময়ে পৌঁছনোর তাগিদে এই বাইক আরোহী কর্মীরা অনেক সময়ই তাড়াহুড়ো করতে বাধ্য হন। কিন্তু বাদ সাধে রাস্তার বেহাল অবস্থা, জমা জলের নীচে লুকিয়ে থাকা গর্ত। ভারসাম্য হারিয়ে দুর্ঘটনা প্রায়ই দেখা যায়।
কলকাতার রাস্তায় বড় মৃত্যুফাঁদ হল অব্যবহৃত ট্রামলাইনগুলো। এগুলি অনেক ক্ষেত্রেই আরোহীর টাল সামলাতে না পারার কারণ। পথকে নিরাপদ করুক প্রশাসন।
দেবরাজ রায়, কলকাতা-৪৯
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)