Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: মহিলা নিষিদ্ধ!

মেয়ে বলেই বোটে আমি অসুরক্ষিত, মেনে নেওয়া কঠিন। কাজের সূত্রে নিয়মিত যাই সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, যেখানে যাতায়াতের একমাত্র উপায় খেয়া নৌকো।

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৮ ০০:৫৫

রবিবার (১৮-৩) সন্ধ্যা সা়ড়ে পাঁচটা নাগাদ হাওড়ার রামকৃষ্ণপুর ঘাট থেকে একটি লঞ্চে উঠি বাবুঘাট যাওয়ার জন্য। সঙ্গে ছিলেন আমার পুরুষ সহকর্মী আর শিশুকন্যা। ড্রাইভারের কেবিনের সামনে একটা সাদা কাগজ সাঁটা, তাতে লেখা ‘মহিলা ছাদে ওঠা নিষেধ।’ তাতে কারও স্বাক্ষর বা স্ট্যাম্প নেই। মানলাম না, ছাদেই দাঁড়ালাম। আরও দুটি মেয়ে উপরে ওঠে। লঞ্চ ছাড়ার আগে চালক এসে নেমে যেতে বলেন। কেন? চালক চিৎকার জোড়েন, ‘এখানে লেখা আছে, ব্যস।’ আমরা বলি, ঘাটে ওঠার মুখে যে নোটিসবোর্ড আছে ‘ভেসেল’-এর সব নিয়মাবলি দিয়ে, সেখানে তো এই নিয়মের কথা বলা নেই! উত্তর আসে ‘ও সব জানি না, অফিসে গিয়ে কথা বলুন।’ আমি জানাই, নীচের বদ্ধ জায়গায় শরীর খারাপ করবে, বমি পাবে, তাই আমার উপরে থাকা দরকার। চালক বোটের গলুই দেখিয়ে দেন। সেখানে কোনও রেলিং নেই, সম্পূর্ণ অসুরক্ষিত একটি জায়গা। আপত্তি জানাই। চালক বলেন, না নামলে তিনি বোট ছাড়বেন না।

মেয়ে বলেই বোটে আমি অসুরক্ষিত, মেনে নেওয়া কঠিন। কাজের সূত্রে নিয়মিত যাই সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, যেখানে যাতায়াতের একমাত্র উপায় খেয়া নৌকো। দাপুটে নদীতে ভাটির টানে নৌকো ভয়ানক দুলে ওঠার সময়েও ভয় পাইনি। মেয়ের হাতটা শক্ত করে ধরে রাখি। চালক চেঁচান, ‘লেডিস নীচে না নামলে লঞ্চ ছাড়বে না।’ এ বার এগিয়ে আসেন অন্যান্য পুরুষ। নীচে নামার জন্য জোর করতে থাকেন। আমি বার বার বলি, একটা কারণ বলুন, কেন নামব। কেউ বলেননি। যেখানে বাচ্চা ছেলেরা দাঁড়িয়ে আছে ওপরে, যেখানে আমার শিশুকন্যার নিরাপত্তার প্রশ্নে কেউ আপত্তি করছে না, সেখানে আমি কেন নামব?

কত কষ্টে আকাশ-বাতাসের অধিকার অর্জন করছে মেয়েরা। কেবল কিছু পুরুষের গা-জোয়ারিতে তা হারাতে হবে?

নীচে নামার জন্য চাপ বাড়ে। এ বার ভয় হয়। আমি জানি কিছু হলে মারটা আমার সহকর্মী খাবেন বেশি। সঙ্গে মেয়ে আছে! অগত্যা নেমে গেলাম লঞ্চ থেকে। টিকিট কাউন্টারের মহিলা টাকা ফেরত দিয়ে জানালেন, এই নিয়ম কেন তিনি জানেন না। তবে তাঁকেও মানতে হয়।

আমার প্রশ্ন, সংবিধান যেখানে সর্বত্র যাওয়ার সমানাধিকার দিয়েছে, সেখানে হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ কর্তৃপক্ষ কোনও কারণ না দর্শিয়ে, স্বাক্ষরহীন নোটিস লাগিয়ে, মেয়েদের ক্ষেত্রে পরিষেবার অংশ ‘নিষিদ্ধ’ করতে পারে? এলাকার জনপ্রতিনিধিরাই বা কী করে এটা মেনে নিচ্ছেন? লঞ্চের যে অংশ মেয়েদের পক্ষে সুরক্ষিত নয়, তা কারও পক্ষেই সুরক্ষিত নয়। তেমন জলবাহন কী করে ছাড়পত্র পেতে পারে? ওই নোটিস এখনই প্রত্যাহার করা হোক। যাঁরা নোটিস লাগিয়েছেন, তাঁদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

মৌপিয়া মুখোপাধ্যায় কলকাতা-১০

শুধুই বুদ্ধ্যঙ্ক?

অমিতাভ গুপ্তের লেখা (‘অচেনাকে ভয় পান বলেই’, ২৩-২) পড়ে চমৎকৃত হলাম জেনে, রক্ষণশীল মানসিক কাঠামো গঠনের পিছনে বুদ্ধ্যঙ্কাল্পতা ক্রিয়াশীল। অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে জানতে চাই, বঙ্কিমচন্দ্র কি বুদ্ধ্যঙ্কাল্পতায় ভোগা মানুষ ছিলেন? তা না হলে ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ উপন্যাসে বিধবা রোহিণীর প্রেমকে স্বীকৃতি দিলেন না কেন? সামাজিক রক্ষণশীলতাকে উপেক্ষা করে প্রেমের প্রদীপকে প্রজ্বলিত রেখে মানবিকতাকে জয়যুক্ত করতে ভয় পেলেন কেন? অথবা ১৮৭৫ সালে লেখা ‘প্রোটোপ্লাজম’ প্রবন্ধের শেষ অনুচ্ছেদে কেন লিখলেন— এর পর উনি আছেন। যা কিছু উনিই নির্ধারণ করেন। আগাগোড়া শারীরবিজ্ঞানের তথ্য উপস্থাপন করার পর ভাববাদের দ্বারস্থ হলেন কেন?

এ কথা বোঝাই যায়, বঙ্কিম রক্ষণশীল মানসিকতার বশবর্তী হয়েই, বিধবা বলেই রোহিণীকে সামাজিক পুনর্বাসন দিতে চাননি। তাকে হত্যা করিয়েছেন। বা কোষের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিতে দিতে শেষে ভাববাদের আশ্রয় নিয়েছেন সচেতন ভাবে। অথচ ১৮৫৩ সালে বসে অক্ষয়কুমার দত্ত যুক্তির কোষ্ঠীপাথরে উপনিষদের ব্যাখ্যা করেছেন। এখন ওই বুদ্ধ্যঙ্ক-বিষয়ক সিদ্ধান্ত সত্য ধরে নিলে আমাদের বিশ্বাস করতে হয়, বঙ্কিমের তুলনায় অক্ষয়কুমার দত্তের বুদ্ধ্যঙ্ক বেশি ছিল।

আবার, এই সময়ে দাঁড়িয়ে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক মুরলীমনোহর যোশী ভাজপা সরকারের শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে যখন জ্যোতিষ নিয়ে ডিগ্রি চালু করেন, অথবা ইসরো অধিকর্তা যখন চন্দ্রায়ন-১ উৎক্ষেপণের সময় জ্যোতিষশাস্ত্রের শরণাপন্ন হন, তখন তাঁদের বুদ্ধ্যঙ্কের স্বল্পতা এই কাজের পিছনে সক্রিয়— মেনে নিতে মন সায় দেয় না। বা বিজ্ঞান কংগ্রেসে প্রধানমন্ত্রী যখন ঘোষণা করেন, গণেশের মস্তক সংযোজন প্লাস্টিক সার্জারির প্রথম প্রয়োগ, তখন যে-সব বিজ্ঞানী তাঁর মতকে সত্য প্রমাণ করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন, তাঁদের বুদ্ধ্যঙ্ক কম, মেনে নিতে পারি না। এর সঙ্গে প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতি অন্বিত আছে, বুঝতে অসুবিধা হয় না।

আসলে শুধু বুদ্ধ্যঙ্কের স্বল্পতা নয়, যে-পারিপার্শ্বিকতায় শৈশব-কৈশোর অতিবাহিত হয়, তা মানুষের চেতনা নির্মাণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। যে ঐতিহাসিক উপাদান নিয়ে মানুষ বেড়ে ওঠে, তা তার মানসিক গঠনে ছাপ রেখে যায়। যেমন ধরুন, শিশুরা রোজা রাখলে বা সরস্বতীপুজোয় অঞ্জলি দিলে, কোনও কোনও এথিক্যাল অভিভাবক খুশি হন ভেতরে-ভেতরে। কিন্তু শিশুর হৃৎপিণ্ডে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের অনুষঙ্গ যে ছাপ রেখে যায়, তা কি পুরোপুরি মুছে ফেলা যায়? এই কারণেই তো আরএসএস তাদের শাখাগুলোতে শিশুদের বেছে নিয়ছে। সেরেফ খেলার মাধ্যমে তাদের অপরিণত মনে তীব্র মুসলিম-বিদ্বেষ ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

এই প্রসঙ্গে দুটি তথ্যচিত্রের কথা মনে পড়ছে। ‘দ্য বয় ইন দ্য ব্র্যাঞ্চ’ এবং ‘দ্য মেন ইন দ্য ট্রি’। পরিচালক ললিত ভাচানি ছবিগুলিতে দেখিয়েছেন, আরএসএস শিশুদের আকৃষ্ট করে হয়তো শুধুমাত্র বিকেলে একটি বড় খেলার মাঠে খেলতে পাওয়ার মতো সরল কিছুর লোভ দেখিয়েই, তার পর তাদের মধ্যে ধীরে ধীরে সাম্প্রদায়িক বিষ ঢুকিয়ে দেয়।

বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে যদি ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের আস্ফালন প্রতিনিয়ত দেখে শিশু বড় হয়, তা হলে তার মধ্যে নিজের ধর্মের প্রতি গভীর আনুগত্য জন্মাতে বাধ্য এবং এখান থেকেই অন্য ধর্মের প্রতি অসহিষ্ণুতা জন্মানোর অবকাশ থেকেই যায়। আবুল ফজল তাঁর ‘মানবতন্ত্র’ প্রবন্ধে বলেছিলেন, ‘খাঁটি অর্থে কোনও ধর্মের পক্ষেই আজ আর তার নিষ্কলুষ আদি স্বরূপ রক্ষা করা সম্ভব নয়— সম্ভব নয় সাম্প্রদায়িকতার হাত থেকে রেহাই পাওয়া— বিশেষ করে পাকিস্তানে-হিন্দুস্থানে।’ এই সাম্প্রদায়িক ধার্মিকদের উদ্দেশ্যে বার্নার্ড শ বলেছিলেন, Beware of that man whose God is in heaven.

কমলকুমার দাশ কলকাতা-৭৮

প্রশ্ন

ধর্মান্তর নিয়ে চিঠিগুলো পড়লাম। আমি হিন্দু। বাড়িতে গৃহদেবতা আছেন, নিত্য ‍পুজোপাঠ হয়। আমি ভিন্ন ধর্মের মেয়েকে আমার ছেলের বউ হিসাবে বরণ করে নিয়ে এসেছি। এখন সবাই মিলে একসঙ্গেই বাস করছি। আমার বউমা নিজের ইচ্ছায় হিন্দু পরিবারের ঐতিহ্য মেনে, ‍হিন্দু ধর্মীয় আচরণ পালনের মধ্য দিয়ে আজ আমার পরিবারের সদস্যা। এটা কি ধর্মান্তর? যদি তা-ই হয়, তবে কী ভাবে? আর, এই ঘটনায় কার ধর্ম খোয়া গেল? যে এল, না যে তাকে গ্রহণ করল?

আলোক রায় কলকাতা-১১০

ভ্রম সংশোধন

‘ছ’বছর পেরিয়ে শহরে স্টারবাক্‌স’ শীর্ষক খবরে (২১-৩, পৃ ১১) টাটা-স্টারবাক্‌সের সিইও-র নাম সুমিত্র ঘোষ পড়তে হবে। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

Women ban Gender discrimination
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy