E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: প্রতিভায় পরিচয়

উর্দু ভাষায় শেষ বার জ্ঞানপীঠ পুরস্কার যিনি পেয়েছেন তিনিও মুসলমান নন। জন্মসূত্রে তিনি শিখ ধর্মাবলম্বী, তাঁর নাম সম্পূর্ণ সিংহ কালরা, তিনি জ্ঞানপীঠ পান ২০২৩ সালে।

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৫ ০৭:১৭

বিতস্তা ঘোষালের ‘এঁরা কি তবে আমাদের নন?’ (৫-৯) প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। উর্দু ভাষার বিখ্যাত লেখক-লেখিকারা কি তবে আমাদের, অর্থাৎ ভারতীয় নন? এই প্রশ্ন ওঠার কারণ সাধারণ মানুষের এক ধারণা। তা হল, উর্দু মুসলমানদের ভাষা, অর্থাৎ পাকিস্তানের ভাষা। অতএব এই ভাষায় যাঁরা লেখালিখি করেছেন এত দিন তাঁরা এক রকম ব্রাত্য। প্রতিযুক্তি হিসাবে এক ঝাঁক প্রিয় উর্দু লেখক-লেখিকার নাম রয়েছে প্রবন্ধে। তার মধ্যে আছেন বিখ্যাত গদ্য লেখক কৃষন চন্দ্র, যিনি কিন্তু মুসলমান নন।

এই উপমহাদেশে উর্দু কোনও দিন কোনও নির্দিষ্ট ধর্মের ভাষা ছিল না। যে লেখক উর্দু ভাষায় প্রথম জ্ঞানপীঠ পেয়েছেন তিনি জন্মগত ভাবে ‘হিন্দু’। ১৯৬৯ সালে উর্দুতে প্রথম জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পান বিখ্যাত কবি, লেখক, এবং ইলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক, ভারতীয় সাহিত্যের এক বর্ণময় চরিত্র ফিরাক গোরখপুরী (বাঁ দিকের ছবি), আসল নাম রঘুপতি সহায়। তার আগে ১৯৬৮ সালে তিনি পেয়েছেন পদ্মভূষণ। সারা জীবন ফিরাক গোরখপুরী উর্দুতেই লেখালিখি চালিয়ে গিয়েছেন, যদিও তৎকালীন ইলাহাবাদে হিন্দি সাহিত্যের রমরমা, আছেন সুমিত্রানন্দন পন্থ, আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরাক গোরখপুরীর ইংরেজি বিভাগেই সহকর্মী, অমিতাভ বচ্চনের বাবা হরিবংশ রাই বচ্চন এবং আরও অনেকে। এঁদের সঙ্গে কোন ভাষার কৌলীন্য বেশি— হিন্দি না উর্দু, তা নিয়ে বার বার তর্কে জড়িয়েছেন ফিরাক গোরখপুরী।

উর্দু ভাষায় শেষ বার জ্ঞানপীঠ পুরস্কার যিনি পেয়েছেন তিনিও মুসলমান নন। জন্মসূত্রে তিনি শিখ ধর্মাবলম্বী, তাঁর নাম সম্পূর্ণ সিংহ কালরা, তিনি জ্ঞানপীঠ পান ২০২৩ সালে। আমরা তাঁকে ‘গুলজ়ার’ (ডান দিকের ছবি) নামেই চিনি। সারা জীবন ধরে গুলজ়ার উর্দু হরফে অনন্ত লেখালিখি করে চলেছেন।

দেবরাজ রায় চৌধুরী, রাজমহল রোড, মালদহ

মুক্তির দিশা

“ধরা পড়ছে কেবল নাবালিকা প্রসূতির মৃত্যু। সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে যত প্রসূতি মারা যাচ্ছেন, তাঁদের চার জনের এক জনই নাবালিকা। এই তো এ রাজ্যে কন্যাদের শ্রী!”

“স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, উদ্বেগের তালিকায় প্রথম তিনে ছিল মুর্শিদাবাদ, রামপুরহাট (স্বাস্থ্য জেলা) ও বীরভূম। পাশাপাশি, আরও ১৪টি জেলায় নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যা বাড়ছে বলেই পর্যবেক্ষণ ছিল স্বাস্থ্যকর্তাদের। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, প্রতি বছর এ রাজ্যে যত প্রসূতি-মৃত্যু হয়, তার অন্তত ১৪ শতাংশই নাবালিকা।”

উপরের দু’টি উদ্ধৃত অংশ একই বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত হলেও, উৎস কিন্তু পৃথক। প্রথম উদ্ধৃতাংশটি সন্দীপন নন্দীর উত্তর-সম্পাদকীয় প্রবন্ধ ‘কাল থেকে স্কুলে আসব না’ (৯-৯) থেকে নেওয়া হয়েছে আর দ্বিতীয়টি একই দিনে প্রকাশিত ‘প্রসব ১৪ বছরের কিশোরীর, পকসো আইনে গ্রেফতার স্বামী’ শীর্ষক সংবাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

পরিসংখ্যানগত ভাবে কিছুটা ভিন্ন চিত্র দুটো সূত্র থেকে বেরিয়ে এলেও উভয় ক্ষেত্রেই সমাজের ব্যাধি ও তার শিকার— রাজ্যের নাবালিকাদের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশিত হয়েছে। নাবালিকা বিবাহের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে খুব স্বাভাবিক ভাবেই যেমন নাবালিকা প্ৰসূতির সংখ্যা বেড়েছে, তেমনই মোট প্রসবকালে মৃতদের মধ্যে নাবালিকার হারও উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

উত্তর-সম্পাদকীয় প্রবন্ধটির প্রসঙ্গে বলি, মেয়েদের এই অকালবিবাহ তথা অকাল সন্তানধারণ থেকে কী ভাবেই বা মুক্তি? মেয়েদের অবস্থার আশানুরূপ উন্নতি না হলে সমাজের অগ্রগতিও তো সম্ভব নয়। নজরুল ইসলামের ‘নারী’ কবিতার সেই পঙ্‌ক্তি এ প্ৰসঙ্গে খুবই প্রণিধানযোগ্য। “বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।” সেই দিক দিয়ে প্রশাসনের ভূমিকা যথাযথই ছিল। রাজ্যের কন্যাসন্তানদের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করতে এবং বাল্যবিবাহ বন্ধ করে তাদের বিদ্যালয়মুখী করার তাগিদেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার কন্যাশ্রী প্রকল্প শুরু করে। আমাদের মতো দারিদ্র-দীর্ণ সমাজে এই প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে ২০১৭-য় রাষ্ট্রপুঞ্জ পর্যন্ত জনসেবার জন্য পুরস্কারে সম্মানিতও করেছিল বাংলার ‘কন্যাশ্রী’-কে।

সুতরাং, কোনও সরকারি প্রকল্পে কিছু অসাধু লোক বা তাঁদের দুর্নীতির কারণে সেই প্রকল্প খারাপ বা তাকে বন্ধ করে দেওয়া উচিত, এই অতি-সরলীকরণ যেমন ন্যায্য নয়, তেমনই দুর্নীতিকে সম্পূর্ণ ভাবে রোধ করতে না পারলে যে এই ধরনের প্রকল্প থেকে সমাজের আখেরে কোনও লাভ সম্ভব নয়— সেটুকু বুঝতেও কোনও অসুবিধা হয় না।

আসলে কথা হচ্ছে, বিয়ে বা অন্য কোনও কাজে নিযুক্তির কারণে ওই মেয়েরা সম্ভবত স্কুলটাই ছেড়ে দিয়েছে। অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রে পারিবারিক অভাব এতটাই প্রকট যে, কন্যাশ্রী প্রকল্পের বার্ষিক বৃত্তিও এই সমস্ত পরিবারের নাবালিকা মেয়েদের স্কুলমুখো করাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এর থেকে এটাই স্পষ্ট হয়, এই সমস্ত আনুষঙ্গিক প্রকল্পের সঙ্গে সমান ভাবে জরুরি হল পরিবারের কর্তাদের হাতে অর্থ সংস্থানের একটা পাকাপোক্ত ব্যবস্থা। সরকারকে তাঁদের কথাটিও গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে।

গৌতম নারায়ণ দেব, কলকাতা-৭৪

অন্ধকারের ছবি

সন্দীপন নন্দীর ‘কাল থেকে স্কুলে আসব না’ শীর্ষক প্রবন্ধটি পাঠককে যন্ত্রণাদগ্ধ বিচ্ছিন্ন এক নীরবতার দ্বীপে পৌঁছে দেয়। সেখানে রক্তাক্ত লেখনীতে ছাত্রীরা যেন দিনলিপি লিখে চলেছে জীবনখাতার পাতায় পাতায়। স্কুল ছাড়ার অভিব্যক্তিগুলো পাশাপাশি রাখলে আশ্চর্য একটা বেদনাবিধুর চিত্রনাট্য রচিত হবে। টুকরো সংলাপগুলো এ রূপ— ‘মা হতে চলেছি, স্কুলে আসব কী করে?’ ‘বাবা-মা বাইরে কাজ করতে গিয়ে নিখোঁজ, দু’বছরের ভাইকে...’, ‘স্কুলে এলে বাবার চিকিৎসার খরচ...’ রোলকলের খাতাগুলো খুললেই জানা হয়ে যাচ্ছে মাসের পর মাস স্কুলে কিছু মেয়ে কেন আসছে না।

‘ফেসবুক প্রেম’ মাথা তুলেছে সমাজমাধ্যমে। মেয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে অন্য গ্রামে। অকাল মাতৃত্ব ঘনিয়ে আসা নবম শ্রেণির প্রসূতির দায় এসে পড়ে অঙ্গনওয়াড়ি বা আশাকর্মীদের উপর। সদ্য-মা নিজেই নাবালিকা, তার আবার সন্তান পালন!

দায়ী আর্থ-সামাজিক দুরবস্থাও। হতদরিদ্র পরিবার থেকে পড়তে আসা মেয়েদের সংগ্রাম করতে হয় দৈনন্দিন রুজি-রোজগারের জন্য, আলোর দিকে তাকাবে কখন? তা ছাড়া, অনেকেই অভিভাবকহীন। জঠরের জ্বালায় বাবা-মা পাড়ি দিয়েছে ভিন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে। আর ফেরেনি। এমনও হয়, শিক্ষা-দীক্ষা বর্জিত প্রান্তিক পরিবারের মেয়েটি হয়তো প্রথম পড়তে এসেছে। সহায়তা সত্ত্বেও বিদ্যালয়ের দায়-দায়িত্ব, চাহিদা তার পক্ষে অনেক বেশি হয়ে পড়ছে যা পরিবারটি টানতে পারছে না।

একমাত্র শিক্ষাই পারে এই অন্ধকারকে মুছে দিতে। এই দায়ভার প্রশাসন নিশ্চয়ই বহন করবে। আমরা এখনও আশাবাদী।

সূর্যকান্ত মণ্ডল, কলকাতা-৮৪

যথেচ্ছাচার

দেবাশিস ঘড়াইয়ের লেখা ‘পার্কিং অনিয়মে জরিমানা ও কালো তালিকার শাস্তি, স্বস্তি মিলবে কি?’ (২১-৯) প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আশা জেগেছিল পার্কিং সমস্যায় জেরবার নাগরিকদের রেহাই মিলবে। কিন্তু সমস্যার যে বিন্দুমাত্র সমাধান হয়নি, হাতেনাতে তার ফল মিলল সপ্তমীর দিন, গড়িয়াহাট অঞ্চলে। পৌনে দু’ঘণ্টা গাড়ি রাখার জন্য একশো টাকা দাবি করা হল। রেট চার্ট নাকি তখনও হাতে পায়নি। অনেক বাক্য বিনিময়ের পর সেই পরিচিত হুমকিটি শোনা গেল— “এর পর এখানে এলে গাড়ি রাখার আর জায়গা পাবেন না।”

নীলাঞ্জন চৌধুরী, কলকাতা-৫৪

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Urdu Literature Culture

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy