Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: এ কুল ও কুল

প্রতি বার সরস্বতী পুজোর আগে অভিভাবকদের ‘কুল খেতে নেই’ এই ফরমান ভুল হয়ে যেত শুধুমাত্র সেই সব আদি-অকৃত্রিম কুলের স্বাদ-গন্ধের কল্যাণে।

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৮ ০০:১৪

এখনকার মাছ-মাংস, শাক-সবজি, ফল-ফলারি ইত্যাদি-প্রভৃতি সকল খাদ্যদ্রব্যই উচ্চ ফলনশীল বীজ ও রাসায়নিক কীটনাশকের ঠেলায় স্বাদে-গন্ধে জিরো হয়ে গিয়েছে। এখন বাজারে বাঘাটে মার্কা এক ঢাউস হাইব্রিড কুল পাওয়া যাচ্ছে, যা ‘ইহা একটি কুল’ লিখে না দিলে কুল খাচ্ছি না ঘাস খাচ্ছি তা বিলকুল ভুল হতে বাধ্য। আগে কুল গাছে কুল ধরার সময় থেকে সেই কষটে কুল বাচ্চাদের পকেটে-পকেটে ভর্তি থাকত। প্রতি বার সরস্বতী পুজোর আগে অভিভাবকদের ‘কুল খেতে নেই’ এই ফরমান ভুল হয়ে যেত শুধুমাত্র সেই সব আদি-অকৃত্রিম কুলের স্বাদ-গন্ধের কল্যাণে। নানান রং, নানান আকার-যুক্ত সেই সব কুলের প্রজাতি ইদানীং লুপ্ত হতে বসেছে। নদীতীর বরাবর কাঁটা-ভর্তি ছোট ঝোপগাছে যেমন শিয়াকুল নামে অত্যন্ত মিষ্টি সুস্বাদু এক জাতের কুল পাওয়া যেত, তেমনই বেশ বড়সড় লম্বাটে দেখতে নারকেলি কুল হত, যা খেতে যেমন রসালো তেমনই নিজস্ব গন্ধযুক্ত। এখনকার জিন-প্রযুক্তির হাত ধরে পিংপং বল সাইজের বড় কুল বছরের অনেকটা সময় বাজার দখল করে রাখলেও, স্বাদে-গন্ধে যেন কিছুই নয়। তাই তো বাচ্চাদের স্কুলের সামনে এই সব কুল ঝালমশলা বিটনুন সহযোগে বিক্রিবাটা চলে। হায় হায় হাইব্রিড হায় রে।

সঞ্জীব রাহা পাডিয়া মার্কেট, নদিয়া

বল্লাল ঢিপি

নদিয়া জেলার অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হল বামনপুকুরের বল্লাল ঢিপি। সেনবংশীয় রাজা বল্লালের নামাঙ্কিত এই বিশিষ্ট প্রত্নস্থলটি আগে জঙ্গলাবৃত ছিল। তখন অনেক ইতিহাসবেত্তা মনে করতেন, এখানে পালযুগের কোনও বৌদ্ধবিহার ছিল। প্রায় তেরো হাজার বর্গমিটার আয়তাকার এই ঢিপির উচ্চতা ছিল প্রায় ন’মিটার। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের পূর্বাঞ্চল চক্রের তত্ত্বাবধানে ১৯৮২-৮৩ থেকে ১৯৮৮-৮৯ সাল পর্যন্ত এখানে খননকার্য চালানো হলে, দেখা যায় মূল স্থাপত্যটি পোড়ামাটির টালি ইটের, যা চুনসুরকি দিয়ে গাঁথা। অনুমান, এটি সপ্তম-অষ্টম শতকের কোনও ধ্বংসস্তূপের ওপর দ্বাদশ শতকে সেনরাজাদের নির্মিত কোনও দেবালয়। এখান থেকে সে-যুগের হোমকুণ্ড, বারিকুণ্ড, বাঁধানো কূপ, সংকীর্ণ প্রণালীর সঙ্গে যুক্ত পাথরের তৈরি মকরমুখ, প্রস্তর নির্মিত শৈব গণমূর্তি, দেবদেবীর ও দৈত্যের মূর্তিমুখ, ফুলকারি অলংকরণ প্রভৃতি আবিষ্কৃত হয়।

এ-হেন গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থলটি দেখতে নিত্য বহু পর্যটক বামনপুকুর যান। কিন্তু কৃষ্ণনগর থেকে মায়াপুর যাওয়ার প্রধান যে রাস্তা, এই জায়গাটা তার কাছে হলেও, পর্যটকদের সেখানে পৌঁছতে বেশ বেগ পেতে হয়। গ্রামের ভেতর দিয়ে প্রত্নস্থলটিতে যেতে হয়। কিন্তু পথে দিক-নির্দেশক কোনও বোর্ড নেই। প্রত্নস্থলটিতে পৌঁছে দেখা যায় ‘সুরক্ষিত স্মারক’ লেখা বোর্ডটিও নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

দীপাঞ্জন দে চাপড়া বাঙ্গালঝি মহাবিদ্যালয়, নদিয়া

ঝুড়িচাপা

অনেক দিন আগে কলকাতা শহরে এক অদ্ভুত মিছিল দেখেছিলাম। কোন দলের মিছিল, মনে নেই। দৃশ্যটা মনে আছে। সারি সারি মানুষ চলেছেন। প্রত্যেকের মাথায় একটি করে ঝুড়ি চাপা দেওয়া। প্রত্যেক ঝুড়ির উপর একটা করে কাগজ সাঁটা। লেখা: অমুক তদন্ত ঝুড়িচাপা, তমুক তদন্ত ঝুড়িচাপা। মানুষজন ঝুড়িচাপা অবস্থায় নীরবে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এখনও আমাদের দেশের রাজনীতির জগৎটা যে ঝুড়িচাপা সে-কথা আমরা মর্মে-মর্মে অনুভব করি। কত দুর্নীতি হল, কত জল বয়ে গেল, শেষ পর্যন্ত সবই ঝুড়িচাপা রইল।

দিলীপ মজুমদার কলকাতা ৬০

রেলের হাল

‘ফের এসি কামরায় চুরি’ (১৭-৩) সংবাদটির পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। ভারতীয় রেলের বর্তমান বেহাল দশার এটি আর একটি নমুনা মাত্র। যাত্রী-সুরক্ষা ও স্বাচ্ছন্দ্যের দোহাই দিয়ে এবং ন্যূনতম পরিষেবার মাত্রা তেমন ভাবে উন্নত না করে, বর্তমান রেল-মন্ত্রক ক্রমশ ট্রেন-টিকিটের ভাড়া বাড়িয়েই চলেছেন। ট্রেনে যাত্রার সময় শৌচাগারে প্রায়শই জল না থাকা; শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরাগুলিতে শীতাতপ-যন্ত্র কাজ না করা; নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে ট্রেনের আসা ও ছাড়া; অপরিচ্ছন্ন চাদর আর বার্থ; দুর্গন্ধযুক্ত খাবার পরিবেশন ইত্যাদি অসুবিধেগুলি তো ছিলই, তার সঙ্গে যোগ হয়েছে সংরক্ষিত কামরাগুলিতে যখন খুশি বিভিন্ন অপরিচিত বিক্রেতা ও অ-তালিকাভুক্ত যাত্রীদের আনাগোনা। যাত্রী-সুরক্ষা মাথায় উঠেছে। মজার ব্যাপার হল, এই বিষয়গুলি নিয়ে প্রায় কখনওই রেলরক্ষীদের কোনও হেলদোল লক্ষ করা যায় না। রেলওয়ের কাছে দাবিদাওয়া জানানোর জন্য গঠিত বোর্ডগুলির সদস্যরা যে কর্তব্য পালন করছেন, এমন কথা ভাবারও কারণ নেই। সুতরাং এ অবস্থায় সাধারণ যাত্রীদের একমাত্র কর্তব্য হল, চুপচাপ সব কিছু সহ্য করে যাওয়া।

পিনাকী রায় নারায়ণপুর, বালুরঘাট

মোবাইল দায়ী

বিগত দশ-পনেরো বছর ধরে ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি বাড়তে বাড়তে মহামারির রূপ নিয়েছে। কিন্তু কেন? মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেটই উত্তরোত্তর ধর্ষণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। হাতে-হাতে স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট সংযোগের পর, নীল ছবি দেখার প্রবণতা এক লাফে কয়েক হাজার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। নাবালক থেকে সাবালকদের অধিকাংশই মোবাইল ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিকৃত যৌনতা দর্শন করে থাকে। এদেরই মধ্যে অনেকে আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধর্ষণ শ্লীলতাহানি ও ওই জাতীয় অন্য অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পর্নো ছবি সম্প্রচার বন্ধ হওয়া জরুরি।

সেন্টু দত্ত রাইপুর, বাঁকুড়া

নাবালিকার বিয়ে

প্রায় প্রতিদিন পুলিশ এবং প্রশাসনের দ্বারা কোথাও না কোথাও দু’একটা নাবালিকার বিয়ে ভাঙার সংবাদ নজরে আসে। যদিও প্রতিদিন যত সংখ্যক নাবালিকার বিয়ে হয় তার একটা ভগ্নাংশ মাত্র প্রকাশ্যে আসে। প্রচুর সচেতনতা শিবির, আলোচনা সভা, মিছিল-মিটিং হওয়া সত্ত্বেও গোপনে প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে, বা প্রয়োজনে বিয়ের রাতে দূরে আত্মীয়বাড়িতে নিয়ে গিয়ে, এ ধরনের বিয়ে আজও হয়ে চলেছে। এর মূল কারণ, অনেক মানুষ এখনও কম বয়সে বিয়ে দেওয়ার মধ্যে কোনও অন্যায় আছে বলে মনে করেন না। কম বয়সে বিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে বাবা-মা মূলত তিনটি যুক্তি খাড়া করেন। ১) আমরা গরিব মানুষ। ভাল ছেলে পেয়েছি, তাই বিয়ে দিয়ে দিচ্ছি। ২) আমরা খেটে খাই। মেয়ে বড় হচ্ছে, কে তাকে ঘিরে রাখবে? ৩) আমারও তো কম বয়সে বিয়ে হয়েছিল। আমার তো কিছু ক্ষতি হয়নি!

মনের মধ্যে এই গেঁথে যাওয়া বিশ্বাসকে খণ্ডন করে কম বয়সে বিয়ে বন্ধ করা খুব সহজ কাজ নয়। সে-জন্য বিভিন্ন রাজ্যে কিশোরীদের কল্যাণে বিভিন্ন প্রকল্প থাকা সত্ত্বেও নাবালিকাদের বিয়ে আজও বন্ধ করা যায়নি। এ-কাজে সাফল্য পেতে একটু অন্য ভাবে ভাবা হোক।

পুরোহিত বা ইমাম, যাঁরা মূলত মন্দির, মসজিদে বা ছাঁদনাতলায় যে কোনও ধরনের বিয়ের শুভকাজ করান, তাঁদের যথাযথ সচেতন করার ব্যবস্থা করা হোক। এমনকী সার্টিফিকেট দেখে আঠারো পার হলে তবেই বিয়ের মন্ত্র পাঠ করাতে পারবেন— এটা কঠোর ভাবে রূপায়ণের চেষ্টা করা হোক। গরিব পরিবারের অনেক বিয়েরই রেজিস্ট্রেশন হয় না। তাই শুধুমাত্র রেজিস্ট্রারকে দিয়ে এটা হওয়ার নয়।

কৃষ্ণা কারফা বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

Chinee apple Jujube Hybrid
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy