Advertisement
০৫ ডিসেম্বর ২০২৪
Disaster Tourism

সম্পাদক সমীপেষু: অযাচিত উপদেশ

এই রকম ভ্রমণের প্রখ্যাত এক আয়োজক সংস্থা জানাচ্ছে যে, ২০২৫-এর টুরগুলির সব টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে। উৎসাহীদের অপেক্ষা করতে হবে।

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:২৬
Share: Save:

‘কেবলি দৃশ্যের জন্ম হয়’ (৩১-১০) শীর্ষক প্রবন্ধটি পড়ে মনে হল প্রবন্ধকার ঐশী চট্টোপাধ্যায় কে ‘অসংবেদনশীল’ আর কে নয়; কোন কাজটি ‘শুভবুদ্ধি’র; আর কোনটি নয়— সে বিষয়ে নির্ধারকের ভূমিকা নিয়েছেন। ঘূর্ণিঝড়ের ভূমিস্পর্শ দেখতে কিছু বাঙালির দিঘা এবং পুরী গমনের পরিপ্রেক্ষিতে গণমাধ্যমে বেশ হইচই শুরু হয়েছে। তার কারণটি আমার বুদ্ধির অগোচর। কেউ যদি সব জেনেবুঝে তাঁর নিজের পয়সায় তাঁর নিজের ঝুঁকিতে ঝড় দেখতে যান, তাতে বৃহত্তর সমাজের কী অসুবিধা হয়, তা আমার জানা নেই। বুঝলাম কাজটি ঝুঁকির, কিন্তু ঝুঁকি আছে বলেই যদি তার নিন্দেমন্দ করতে হয়, তা হলে পর্বতারোহণ থেকে ‘ডিপ সি ডাইভিং’-এর মতো সব অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসই নিষিদ্ধ করতে হয়। ‘ডিজ়াস্টার টুরিজ়ম’ সারা পৃথিবীতেই চালু। বিদেশে ‘স্টর্ম চেজ় অ্যাডভেঞ্চার টুর’ অতীব জনপ্রিয়। এই রকম ভ্রমণের প্রখ্যাত এক আয়োজক সংস্থা জানাচ্ছে যে, ২০২৫-এর টুরগুলির সব টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে। উৎসাহীদের অপেক্ষা করতে হবে। এর মধ্যে কেউই অনৈতিক কিছু খুঁজে পান না। বাজারে একটি পরিষেবার চাহিদা আছে, আমি সেই পরিষেবাটি জোগান দিচ্ছি। ব্যস, ফুরিয়ে গেল!

সামাজিক প্রেক্ষাপটে একটি অসুবিধার কথা উঠতে পারে যে, ঝড় দেখতে গিয়ে এই পর্যটকরা বিপদে পড়লে সরকারকে করদাতাদের পয়সায় এঁদের খাবারদাবার দিতে হবে, উদ্ধার করে আনতে হবে, এঁদের মৃত্যু ঘটলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। প্রশ্ন উঠতেই পারে, তাঁদের অবিবেচনার, হঠকারিতার দায় করদাতা জনগণ কেন নেবে! জানিয়ে রাখা ভাল, কুম্ভমেলায় বা কেদারনাথে গিয়ে তীর্থযাত্রীরা প্রাকৃতিক দুর্যোগে আটকে পড়লে সরকার করদাতাদের অর্থেই পর্যটকদের খাবারদাবার দেয়, চিকিৎসার ব্যবস্থা করে, হেলিকপ্টারে উদ্ধার করে আনে। কেউ জেনেশুনে বিষমদ খেয়ে মরলেও তো সরকার ক্ষতিপূরণ হিসাবে লাখ লাখ টাকা দেয়। কুম্ভমেলায় বা কেদারনাথে গেলে দোষ নেই, ঘূর্ণিঝড়ের ভূমিস্পর্শ দেখতে দিঘা বা পুরী গেলেই ‘গেল গেল’ রব— এই দ্বিচারিতা অর্থহীন।

ঘূর্ণিঝড়ে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন, স্কুলবাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। তাঁদের জন্য সমবেদনা থাকেই। কিন্তু গড়পড়তা বাঙালি পর্যটক রাজনীতিকও নন, প্রশাসনের অংশও নন। বিপন্ন, দুঃস্থ, নিপীড়িত মানুষের দুঃখমোচনের দায়িত্ব তাঁরা নেননি। ‘ওরে ভীরু তোমার হাতে/ নাই ভুবনের ভার।/ হালের কাছে মাঝি আছে,/ করবে তরী পার।” তাঁর কষ্টার্জিত অর্থে তিনি কোথায় ভ্রমণে যাবেন, তাই নিয়ে উপদেশ অবাঞ্ছিত, বিরক্তিকর এবং ব্যক্তিস্বাধীনতার বিরোধীও বটে।

ছোটবেলায় প্রিয় ঋতুর রচনায় বর্ষাকাল নিয়ে লিখতাম ঝড়-বৃষ্টি ভালবাসি বলে। কখনও সে রচনা কেটে শূন্য বসিয়ে দেওয়া হয়নি। যুগ যুগ ধরেই প্রাকৃতিক দুর্যোগে কবিদের মনে ভাবের সঞ্চার হয়েছে, আর দরিদ্র কৃষিজীবী সাধারণ মানুষ পথে বসেছেন। সেই ‘অসংবেদনশীল’ ‘অশুভ বুদ্ধি’র কবিতাগুলিকে তবে পাঠ্যক্রমে রাখা হয়েছে কেন?

তপন পাল, কলকাতা-১৪০

অ-প্রকাশিত

একটি নারকীয় হত্যাকাণ্ড। শহর উত্তাল— রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক। বহু দিন পর এই বঙ্গে নাগরিক সমাজ একদম নতুন চেহারায় আবারও রাস্তায়। রাত দখল, পাল্টা গুন্ডামি। অনশন— দাবি আদায়ের দরাদরি। এই সবের মাঝে আরও একটা, দুটো, তিনটে... লাঞ্ছনা, নিগ্রহ বা হত্যার খবর। এই সব প্রকাশিত। কিন্তু যা প্রকাশিত নয়, তার কী হবে? ট্রেনে, বাসে, ভিড় রাস্তায় প্রতি দিনের যে নিগ্রহ, যাদের মুখ স্পষ্ট নয়, ভয়ের রঙে আঁকা, তারা যে আছে তা কি আমরা জানি না? পরিবারের ভিতরে, যাঁরা ‘আত্মীয় হয়’— সেই সব পরিচিত হাত এবং মুখের হঠাৎ সুযোগ পেয়ে পাল্টে যাওয়া যে অপরিচিত ব্যবহার— তাদের কী হবে? কেউ কেউ হয়তো বলেছে, বাড়ির লোক বিশ্বাস করেনি। ধমকে চুপ করিয়ে দিয়েছে। চাপা দিয়ে রেখেছে, পাছে পরিবারে কলঙ্ক হয়। তার পর তারা আর কখনও বলেনি। মনের ভিতরে ভয়ের পাহাড় জমিয়ে রেখেছে।

ঘরের বাইরে তো এমনিতে অনেক ভয়। স্কুলের দারোয়ান, কখনও মাস্টারমশাই তো কখনও ইস্কুল-ভ্যানের কাকু— তাঁদের পরিচিত হাত, মুখের আচরণ বদলে গেছে। তারা কেউ বলতে পারেনি সেই পরিবর্তিত আচরণের কথা। বলবে কী করে? ঘটনার আকস্মিকতায় তখন তারা স্তম্ভিত। কেউ কেউ বয়সে এত ছোট, বুঝতেই পারেনি ঠিক কী ঘটছে। পরে কেউ কেউ স্মৃতিকথায় লিখেছে, সাক্ষাৎকারে বলেছে। কিন্তু তারাই বা আর ক’জন?

যারা বুঝেছে তারাই কি সব বলতে পেরেছে? কেউ মাসমাইনেটুকু পাওয়ার জন্য অসভ্যতার সঙ্গে সমঝোতা করে গেছে দিনের পর দিন। কেউ কেউ ধরে নিয়েছে এমনই তো হয়। কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক থেকে প্রভাবশালী আধিকারিক— পরিচিত মুখের বদল ঘটে গেছে বার বার। অনেকেই সে কথা বলতে পারেনি। কেউ কেউ বলেছে। টিভিতে খবর হয়েছে, ঝাপসা মুখে অথবা ক্যামেরার দিকে পিছন করে অভিযোগ করেছে। তাদের কেউ কেউ আবার অভিযোগ প্রত্যাহার করেছে, কোথাও আবার আদালতে কিছুই প্রমাণিত হয়নি। অতএব, বেকসুর খালাস। কোথাও ঢাল হয়ে এসেছে এই কথাগুলি— তার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে তাকে ‘ফাঁসানো হচ্ছিল’। আবার কোথাও বলা হয়েছে, তার সাফল্য মেনে নিতে পারছিল না বলেই ঈর্ষায় ‘মিথ্যা অভিযোগ’ করা হয়েছে।

কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীরা তো সেই শিল্প বিপ্লবের সময় থেকেই সুযোগ নিয়েছে, লাঞ্ছনা করেছে। এখনও চাকরিটা চলে যাবে, অন্য কোনও ভাল কোম্পানিতে চাকরি পাবে না, সেই ভেবে চুপ করে যেতে হয়েছে। পরে, অনেকটা পরে মুখ খুললে, প্রথমেই যেটা শুনতে হয়েছে— আজ কেন? সে দিন কেন বলেনি?

সে দিন কেন বলেনি— এই প্রশ্ন একেবারে অবান্তর এই কারণে যে, কখনও ‘মজা করতে করতে’, কখনও আবার ‘আদর করার অছিলায়’ ঘটে যাওয়া ঘটনাটি ঠিক কী ঘটল, সেটা বুঝতেই বেশ খানিকটা সময় লাগে। ঘটনার আকস্মিকতা কাটিয়ে ওঠার পরেও, মনের মধ্যে যে গভীর শঙ্কার দাগ পড়ে যায়, এর সঙ্গে যুঝে উঠতে অনেকটা সময় লাগে। এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে লজ্জা এবং পুলিশি হয়রানি। লড়াই করার প্রস্তুতির জন্যও অনেকটা সময় লাগে। এই সব কিছু মিলিয়ে ভাবলে দেখা যাবে যে— বলার জন্য সঙ্গত কারণেই সময় লাগে।

আজ কেন বলছে? সে দিন বললে কী হতে পারত— এই সব আলোচনা যুক্তির ভাঁজে ভাঁজে বিশ্লেষণ করে কী হয়? মনের গভীরে যে শঙ্কাটা সারা জীবনের জন্য রয়ে গেল, তার কোনও নিরাময় কি আছে? নেই। এমনকি বিবাহিত সম্পর্কেও, দরজা বন্ধ হওয়ার পর, সম্মতি ও জবরদস্তির সীমানা কখন কোন ক্ষেত্রে লঙ্ঘিত হচ্ছে, তার খবর কে রাখে? যদিও, জবরদস্তির দাপটে সম্মতির জমিটুকু বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে কি না, তার জন্য শেষ বিচারের আশায় আমাদের চেয়ে থাকতে হয় আদালতের সাম্প্রতিকতম গাইডলাইনের দিকে।

আবির্ভাব ভট্টাচার্য, পূর্ব বর্ধমান

নবান্নে কেন?

ঘূর্ণিঝড় দানার ওড়িশাতে ল্যান্ডফল হওয়ার কথা ছিল। সে দিন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে রাত কাটিয়েছিলেন। আগের সন্ধ্যায় একটি ভাষণে তিনি বলেন, সব রকম বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য রাজ্যের দলবল প্রস্তুত। শুধু দানা নয়, এর আগেও কয়েকটি দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে বা অন্য কন্ট্রোল রুমে সারা রাত ছিলেন। কিন্তু কেন তাঁকে জাগতে হবে? বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য সরকারি বিভাগ ও দল আছে! ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি কিন্তু নিজের বাসভবনেই রাত কাটিয়েছেন।

পঙ্কজ সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Dana Disaster
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy