Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: খাঁচা নয়, নাচা

বিচারপতিরা মুরগিদের ধুলো-স্নানের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ঠিক যুক্তিতেই। খাঁচার মুরগিরা ধুলো-স্নান পদ্ধতি অবলম্বন না করতে পারায়, তাদের দেহে পরজীবীরা সহজেই বাসা বাঁধছে এবং মুরগি-মাংসকে খাদ্য হিসাবে কলুষিত করছে।

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

মুরগি-খাঁচার ব্যবহার নিষিদ্ধ করার দাবি তুললেন বহু প্রাক্তন বিচারপতি-সহ বিশিষ্ট মানুষজন।এই দাবির যথাযথ কারণ রয়েছে। এটা জানা যে, এক দিনের আদিম বন্য মুরগি বা নাচা-মুরগিরাই আজকের ঘরোয়া মুরগি তথা খাঁচা-মুরগি। এই পরিবর্তন পদ্ধতিতেই মুরগিদের স্বাভাবিক কিছু দক্ষতা নষ্ট হয়েছে। তারা হারিয়েছে প্রাকৃতিক জীবনযাত্রার সাবলীল ক্রম-উত্তরণ। এতে ডিম উৎপাদনের হার বাড়লেও, ডিমের গুণমান যথেষ্টই দুর্বল হয়েছে। এ ছাড়া মাংসের বৈশিষ্ট্য নিয়েও নানা ধরনের প্রশ্ন আছে।

বিচারপতিরা মুরগিদের ধুলো-স্নানের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ঠিক যুক্তিতেই। খাঁচার মুরগিরা ধুলো-স্নান পদ্ধতি অবলম্বন না করতে পারায়, তাদের দেহে পরজীবীরা সহজেই বাসা বাঁধছে এবং মুরগি-মাংসকে খাদ্য হিসাবে কলুষিত করছে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই ইটালির আলপাইন ফরেস্ট এলাকার নাচা-মুরগি ব্যবস্থার এক গবেষণাধর্মী রিপোর্ট তুলে ধরছি।

জনৈক ইটালিবাসী শিক্ষাকর্মী মেসিনো রাপেলা, অর্থনৈতিক কারণে তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে নিজের বাসভূমি মিলান-শহরতলি ছেড়ে, আলপাইন ফরেস্ট অঞ্চলে বসবাস করতে বাধ্য হন। তাঁর স্ত্রী এলিসাবেট্টা নিজেদের জন্য ডিম পেতে কয়েকটি ঘরোয়া মুরগি রাখেন। এই মুরগিরা দিন সাতেক ঘরে থাকার পর, লাগোয়া জঙ্গলে যাতায়াত শুরু করে, চরে বেড়ায় গাছপালার মধ্যে। স্বামী-স্ত্রী এই মুরগিদের মধ্যে আগেকার মুরগির কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ করেন, বিশেষ করে তাদের খাদ্য-সংগ্রহের পদ্ধতিতে। স্বামী-স্ত্রী মুরগিদের এই জীবনযাপনে কোনও বাধা দেন না। তাঁরা দেখেন, তাঁদের মুরগিরা বনাঞ্চলেই ডিম পাড়ছে এবং তাদের চেহারা আগের তুলনায় অনেক উজ্জ্বল হয়েছে। এই মুরগিদের দেওয়া ডিমের স্বাদ অনেকাংশে বেড়েছে। মাংসেরও।

ধীরে ধীরে তাঁরা মুরগির সংখ্যা বাড়ান। তাঁদের মুরগিরা ঘরোয়া মুরগিদের মতোই নিয়মিত ডিম পাড়ছে, তবে ঘরে নয়, জঙ্গলে। এখন তাঁরা জঙ্গল থেকে প্রতি দিন ১০০০টি ডিম পাচ্ছেন, যা তাঁদের আর্থিক সমস্যা থেকে মুক্তি দিয়েছে। ‘খাঁচা মুরগি নয়, নাচা মুরগি চাই’ এমন চাহিদাই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।

দেবদাস মুখোপাধ্যায়

কলকাতা-১৪৪

সাম্প্রদায়িকতা

শ্রদ্ধেয় গবেষক অনিকেত দে ‘ফিরতে চাই সেই ঘরে’(২-৪) শীর্ষক লেখায় সাত-আটশো বছর আগেকার ইতিহাস সম্পর্কে বলতে গিয়ে লিখছেন, “আজকের হিন্দু মুসলমান সম্পর্কের ঠুলি পরে সে কালের সমাজকে দেখা অর্থহীন।” পরে লিখেছেন, “মহাপ্রভুর প্রিয় শিষ্য যবন হরিদাস দিনভর কৃষ্ণনাম জপ করতেন। এই তথাকথিত যবন, স্টুয়ার্ট দেখিয়েছেন, সম্ভবত কোনও সুফি ধারার সাধক ছিলেন। হরিদাস মুসলমান থেকে বৈষ্ণব হওয়ায় পাকাপাকি ঘরবদল করেছিলেন বলে মনে হয় না।”

আমরা সামান্য বৈষ্ণব। শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যে প্রীতিলাভের উদ্দেশ্যে চৈতন্যচরিতামৃত পাঠ করি। মহাত্মা শিশির কুমার ঘোষ রচিত শ্রীঅমিয় নিমাই চরিত গ্রন্থে দেখতে পাই, “যশোহর জেলাস্থ বূঢ়ন গ্রামে হরিদাস ঠাকুর আবির্ভূত হয়েন। তাঁহার পিতৃদেব শ্রীমনোহর বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজা যখন বলপুর্ব্বক যবন করেন তখন সেই দুঃখে এবং আত্মগ্লানিতে তাঁহার মৃত্যু হয়। সেই হইতে শিশু হরিদাস যবন-গৃহে পতিপালিত হইতে থাকেন। শৈশবকাল হইতেই শ্রীহরিদাস ছিলেন শ্রীকৃষ্ণপ্রেমী। পরবর্ত্তী সময়ে তিনি আমৃত্যু মহাপ্রভুর অন্তরঙ্গ ভক্ত ছিলেন।” বূঢ়ন থেকে শান্তিপুর ফুলিয়া এসে উচ্চৈঃস্বরে হরিনাম করায় তাঁর কী দশা হল, বৃন্দাবনদাস ঠাকুর কৃত শ্রীশ্রীচৈতন্যভাগবত গ্রন্থে দেখি, কাজী মুলুকপতির কাছে নালিশ জানালেন— “যবন হইয়া করে হিন্দুর আচার। ভালমতে তারে আনি করহ বিচার/ হরিদাস— আইলেন মুলুকের অধিপতি স্থান/ — আপনে জিজ্ঞাসে তানে মুলুকের পতি/ কেনে ভাই! তোমার বিরূপ দেখি মতি/ কত ভাগ্যে দেখ তুমি হৈয়াছ যবন/ তবে কেনে হিন্দুর আচারে দেহ মন/ আমরা হিন্দুর দেখি নাহি খাই ভাত/ তাহা তুমি ছোড় হই মহাবংশজাত/— হরিদাস/বলিতে লাগিলা তারে মধুর উত্তর/ “শুন বাপ! সভারই একই ইশ্বর/ নামমাত্র ভেদ করে হিন্দুয়ে যবনে/ পরমার্থে এক কহে কোরানে পুরাণে।” হরিদাস মুলুকপতির মন গলালেন, কিন্তু কাজী বললেন, যদি হরিদাসকে শাস্তি না দেওয়া হয়, তা হলে আরও অনেকে হিন্দু হয়ে মুসলমানের অপমান করবে। তবে যদি কলমা পড়ে ও হরিনাম ছাড়ে, তবে একে ছাড়া হবে। হরিদাস বললেন, “খণ্ড খণ্ড হই দেহ যদি যায় প্রাণ/ তভো আমি বদনে না ছাড়ি হরিনাম।’’ মুলুকপতি বাধ্য হয়ে হরিদাসকে শাস্তি দিলেন “কাজী বোলে— বাইশ বাজারে নিঞা মারি/ প্রাণ লহ,আর কিছু বিচার না করি/ পাইক সকলে ডাকি তর্জ্জ করি কহে/ এইমত মারিবি যেন প্রাণ নাহি রহে/ যবন হইয়া যেন হিন্দুয়ানি করে/ প্রাণান্ত হইলে শেষে এ পাপেতে তরে।” বাজারে বাজারে নিয়ে সর্ব্বসমক্ষে প্রহার করা দেখে কেউ অভিসম্পাত দিচ্ছেন, কেউ ক্রুদ্ধ হচ্ছেন, কেউ বা প্রহারকারীগণের পায়ে ধরে বলছেন, “কিছু দিব অল্প করি মারহ উহারে।”

এক দিন সন্ধ্যাকালে দলবল নিয়ে কাজী নগরে প্রবেশ করে দেখেন, “হরিনাম কোলাহল চতুর্দ্দিকে মাত্র/শুনিয়া স্মরয়ে কাজী আপনার শাস্ত্র/ —যাহারে পাইল কাজী মারিল তাহারে/ ভাঙ্গিল মৃদঙ্গ,অনাচার কৈল দ্বারে।” যাওয়ার সময় বলে গেলেন, আবার যদি কেউ নগরে সংকীর্তন করে তবে তার জাত মারব।

সেই সময়ে মুসলমান শাসক ও ব্রাহ্মণ সমাজপতিগণ সমাজের কী হাল করেছিলেন, তার প্রমাণ সুবুদ্ধি রায়। তিনি গৌড়ের রাজা ছিলেন। তাঁর কর্মচারী হোসেন খাঁর উপর একটা দিঘি কাটাবার ভার দেন। কাজের বিশেষ ত্রুটির দরুন তাঁকে বেত্রাঘাত করেন। ক্রুদ্ধ হোসেন খাঁ ষড়যন্ত্র করে সুবুদ্ধি রায়কে পদচ্যুত করে রাজা হয়ে, বহু বেত্রাঘাত করে শোধ তোলেন। শেষে জোর করে করোঁয়ার জল পান করিয়ে ছেড়ে দিলেন সুবুদ্ধিকে। হিন্দু সমাজ পরিত্যক্ত সুবুদ্ধিকে গৌড়ীয় পণ্ডিতগণ ব্যবস্থা দিলেন: তপ্ত ঘৃত পান করে বা তুষানলে প্রাণত্যাগই একমাত্র প্রায়শ্চিত্ত।

আর ছিলেন শ্রীকুমার দেবের দুই পুত্র অমর দেব এবং সন্তোষ দেব। এঁরা হুসেন খাঁ’র দরবারে চাকরি করতেন দবির খাস ও সাকর মল্লিক নামে। মহাপ্রভু তাঁদের দীক্ষা দিয়ে নাম দেন রূপ-সনাতন। মহাপ্রভুর আবির্ভাবে বলপূর্ব্বক ধর্মান্তরিতরা পুনরায় সমাজে স্থান পান।

অতএব ব্রিটিশ শাসকেরা আসার আগে থেকেই যে সাম্প্রদায়িকতার বিষ বর্তমান ছিল, সে কথা অস্বীকার করা যায় না।

সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস

কলকাতা-১৪০

কুটাল

বীরভূমে আমাদের গ্রামে ছিলেন গ্রাম-প্রহরী। লক্ষ্মীদা। তাঁর নিশুতি রাতে ঘুম-ভাঙানো হাঁক বা ‘হালি’ আমাদের ভয়ার্ত করে তুলত। লক্ষ্মীদাকে বলা হত লক্ষ্মী কুটাল (কোতোয়াল > কোটাল > কুটাল)।

দিনের বেলায় লক্ষ্মীদাকে দেখেছি। ধুতি-শার্টের উপর বেল্টের মাঝ-বরাবর উপবৃত্তাকার চকচকে প্লেটে খোদিত সরকারি মহিমায় থানায় যেতে। লক্ষ্মীদা লম্বা-চওড়া, তাঁর পাথুরে কৃষ্ণবর্ণ মুখে স্মিত হাসি ও স্নেহময় দৃষ্টিতে তাকালেও আমাদের ভয় কাটত না। কারণ, তিনি আগে ছিলেন এলাকার বিখ্যাত চোর। তাঁর চুরিতে কয়েকটি গ্রামের লোক অতিষ্ঠ ছিলেন, পরে নলহাটি থানার বড়বাবু তাঁকে ‘কুটাল’ অর্থাৎ চৌকিদার নিয়োগ করে, চুরি কমিয়ে দেন। লক্ষ্মীদা বেঁচে থাকলে, এত বড় দেশের মাথারা চৌকিদার হয়েছেন বা হতে চাইছেন জেনে, খুব খুশি হতেন।

কান্ত প্রসাদ সিংহ

কলকাতা-১০৬

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

ভ্রম সংশোধন

‘অধস্তনের অধীনে ভোটের কাজ কেন, মামলা শিক্ষকদের’ শীর্ষক প্রতিবেদনে (দিল্লির দৌড়, পৃষ্ঠা ৫, ১১-৪) ‘সেক্টর অফিসারেরা মূলত বিডিও’ বলা হয়েছে। বিডিও-রা সেক্টর অফিসার নন। তাঁদের অধীনে সেক্টর অফিসারেরা কাজ করেন। বিডিও-রাও গেজ়েটেড পদ মর্যাদার। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chicken Cage Meat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE