Advertisement
০২ মে ২০২৪
Bimal Ghosh

সম্পাদক সমীপেষু: বাংলার মৌমাছি

বিমল ঘোষেরই উদ্যোগে ১৯৪০ সালে আনন্দবাজার পত্রিকা-র ছোটদের বিভাগ আনন্দমেলা-র প্রতিষ্ঠা হয় ও তার প্রসার ঘটে।

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:৩৫
Share: Save:

শিশুসাহিত্যিক কবি বিমল ঘোষের ১১০ বছরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দিলীপ দাশগুপ্তের লেখা ‘মৌমাছি উড়ে গেল মৌচাকে’ (১২-১২) প্রবন্ধটির জন্য ধন্যবাদ। কবি বিমল ঘোষের ছদ্মনাম ‘মৌমাছি’। তিনি বাংলার এক খ্যাতনামা শিশুসাহিত্যিকও ছিলেন।

১২ ডিসেম্বর, ১৯১০ সালে বাঁকুড়ার বড়জোড়া ব্লকের সমৃদ্ধ গ্রাম বেলিয়াতোড়ে বিমল ঘোষ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন বেঙ্গল কেমিক্যাল-এর সঙ্গে যুক্ত জাতীয়তাবাদী কেমিস্ট অনাদিপ্রসন্ন ঘোষ। বিমল ঘোষেরই উদ্যোগে ১৯৪০ সালে আনন্দবাজার পত্রিকা-র ছোটদের বিভাগ আনন্দমেলা-র প্রতিষ্ঠা হয় ও তার প্রসার ঘটে। আনন্দমেলা-র মাধ্যমে শিশু ও কিশোরদের জন্য তিনি ‘মণিমেলা’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করেছিলেন। সেই সময় বাংলা ও বাংলার বাইরে এই সংগঠনটি যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছিল। যেমন, বিহারের পটনায় অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল মণিমেলা। এমনকি ভারতের বাইরেও মৌমাছির মধু ছড়িয়ে পড়েছিল।

আমার গ্রাম বেলিয়াতোড়েও কয়েক দশক আগে শিশুদের নিয়ে গড়ে উঠেছিল ‘মণিমেলা’ নামে সংগঠন। যদিও আজ তা অতীত।

ছোটদের জন্য বিমল ঘোষ অজস্র ছড়া, কবিতা, নাটক, গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন। চেঙাবেঙা বইটির জন্য তিনি পুরস্কারও লাভ করেন। শুধুমাত্র তা-ই নয়, ১৯৫৩ সালে ইউরোপের রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্টে অনুষ্ঠিত বিশ্ব যুব উৎসবে তিনি ভারত সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেছিলেন। বিমল ঘোষ আকাশবাণীর সঙ্গেও দীর্ঘ দিন যুক্ত ছিলেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল— ইউরোপের অগ্নিকোণে, কামাল পরদেশী ইত্যাদি। বিমল ঘোষ ১৯৮২ সালে কলকাতায় প্রয়াত হন।

বিমল ঘোষ হলেন বাংলা সাহিত্যের মণি। বর্তমান প্রজন্মের শিশুরা অনেকেই জানে না, কে এই মৌমাছি? বাঙালিরা আজ তাঁকে ভুলতে বসেছে।

বিপদতারণ ধীবর

বেলিয়াতোড়, বাঁকুড়া

বিয়ের ছড়া

‘বিয়েতে হারিয়ে যাওয়া ছড়া-গানের লোকাচার’ শীর্ষক প্রবন্ধের (রবিবাসরীয়, ৬-১২) প্রেক্ষিতে বলতে চাই, ঠিক কবে থেকে বিয়ের অনুষ্ঠানে ছড়া-পাঠ শুরু হয়েছিল, তা জানা যায় না। কিন্তু গবেষকগণ মনে করেন, বিয়ের অনুষ্ঠানকে ঘিরে আমোদ-প্রমোদের চল ছিল বৈদিক যুগেও। বাঙালি জীবনেও বিয়ের অনুষ্ঠানে ছড়া-গানের চল ছিল বহু যুগ ধরে।

সেই সময়, বিয়ের এক মাস আগে থেকেই ছেলে ও মেয়ের বাড়িতে বিয়ের গান শুরু হয়ে যেত। জানা যায়, চৈতন্যদেবের বিয়ের সময়েও পুরনারীরা গান করেছিলেন। এখনও দেখা যায়, প্রায় সব বিয়েবাড়িতেই নরসুন্দরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বর-কনের শুভদৃষ্টি ও মালা বদলের সময় তিনি নানা রকম হাস্যরসাত্মক ছড়া বলে বিবাহ অনুষ্ঠানকে উজ্জীবিত করে তোলেন। উপস্থিত যাঁরা পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণের মধ্য দিয়ে বিবাহ অনুষ্ঠান উপভোগ করেন, তাঁদের কাছে উপরি পাওনা হল ছাঁদনাতলায় বর ও কনের শুভদৃষ্টির সময় নাপিতভায়ার ছড়া।

উনিশ শতকে বিলাসীবাবুদের বিবাহ অনুষ্ঠানের উপভোগ্য বিষয়গুলির কিছু কিছু সে কালের সংবাদপত্রে স্থান করে নিয়েছে। জানা গিয়েছে, সেই সব বিয়েবাড়িতে প্রায়ই বিখ্যাত বাইজিদের নাচ-গান হত। উনিশ শতকের শেষ দিকে কলকাতার প্রায় সব বাবুর বাড়িতেই ঝুমুরওয়ালিদের নাচ হত। এই প্রসঙ্গে, স্বামী বিবেকানন্দের ভাই মহেন্দ্রনাথ দত্ত লিখেছেন—“তখনকার দিনে বিবাহেতে গরুর গাড়িতে কাগজের ময়ূরপঙ্খী করে তার উপর ঝুমুরওয়ালির নাচ দেওয়া হত। ঝুমুরওয়ালিরা সেই নৌকার উপর নাচিত আর পিছনে একটা লোক ঢোল-কাঁসি বাজাইত।”

বিয়ের ছড়া প্রথম দিকে শিক্ষিত ব্যক্তিরাই লিখতেন, আর তার ব্যবহারও ছিল সীমিত। একটি ভাবগম্ভীর পরিবেশের মধ্যে বর ও বধূকে আপন করে নেওয়াই ছিল সেই ছড়ার প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু তাৎক্ষণিক আনন্দ ও উত্তেজনাই যখন প্রধান হয়ে উঠল, তখন থেকে এই সব ছড়ার ভাব ও ভাষাও লঘু হতে শুরু করেছিল। সত্যিকারের কবিদের পাশাপাশি অ-কবিদের লেখা আদিরসাত্মক ছড়াও বেশ জাঁকিয়ে বসতে শুরু করেছিল বিয়ের অনুষ্ঠানে। কবে থেকে বিয়ের আসরে বিয়ের ছড়া ছাপা ও বিতরণ শুরু হয়েছিল, তা এখনও নিশ্চিত ভাবে জানা যায় না। তবে এ সম্পর্কে গবেষক বারিদবরণ ঘোষ বলেছেন— “গবেষণা করে স্থির করা অসম্ভব, কারণ বিনি পয়সার কবিতার ইতিহাস থাকে না।”

বিয়ের পদ্যের প্রথম বই উপহার-এর সঙ্কলক অবিনাশচন্দ্র ঘোষ ১৯১১ সালে লিখেছিলেন, “কে যে এই প্রথা প্রথম প্রবর্তন করেন অথবা কাহার বিবাহে প্রথম প্রবর্তিত হয় তাহা জানিবার ঔৎসুক্য থাকিলেও তাহা জানিবার কোনও উপায় নাই; ইহা এই বিবাহ সাহিত্যের পক্ষে নিতান্ত দুর্ভাগ্যের সন্দেহ নাই।” যদিও বারিদবরণ জানিয়েছেন— “প্রায় দুশো বছর আগে রাধানগরের মণীন্দ্রকুমার সর্বাধিকারী ও কৃষ্ণমৃণালিনী ঘোষ বিয়ের কবিতা সঙ্কলন করেছিলেন শুভকর্মে গদ্য ও পদ্য এবং অশ্রুধারা, সে সবও হারিয়ে গেছে।”

রবীন্দ্রনাথের লেখা ফরমায়েশি বিয়ের কবিতার সঠিক সংখ্যা এখনও জানা যায়নি। ব্রাহ্ম সমাজে বিয়ের গান লেখার চল ছিল। হিন্দু বিয়ের অনুষ্ঠানে যে গান গাওয়া হত, তা থেকে সরে আসার জন্য, কিংবা বিবাহ অনুষ্ঠানকে সর্বাঙ্গসুন্দর করে তোলার জন্য, ব্রাহ্মরা গভীর ভাবের বিবাহ-সঙ্গীত রচনায় উদ্যোগী হয়েছিলেন। পরবর্তী কালে প্রেমেন্দ্র মিত্র, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, সুনির্মল বসু, বুদ্ধদেব বসু, কুমুদরঞ্জন মল্লিক প্রমুখ খ্যাতনামা কবি ও সাহিত্যিক বিবাহবাসরের জন্য ছড়া ও গান লিখেছিলেন।

সংখ্যায় কম হলেও এখনও বিয়ের ছড়া লেখা হয়। আমি ছাত্রজীবনে নিকটাত্মীয়দের বিয়েতে দেখেছিলাম, কমলা রঙের কাগজে লাল কালিতে ছাপা বেশ কয়েকটি ছড়া, যার একটি এখনও আমার মনে আছে, “গুড মর্নিং ঠাকুরপো, আজকে তোমার বিয়ে। বউ আনতে যাবে তুমি টোপর মাথায় দিয়ে।” বছর দুয়েক আগে একটি বিয়েবাড়িতে বিবাহের বিবর্তিত ইতিহাস-সহ নারীর অধিকার, মেয়ের গুরুজনদের স্নেহ-আশীর্বাদ-সহ বিয়ের ছড়া সঙ্কলন বিতরণ করা হয়েছিল।

প্রসন্নকুমার কোলে

শ্রীরামপুর, হুগলি

বৈষম্যের শিকল

‘লৌহকঠিন বিভাজনরেখা’ (১২-১২) প্রবন্ধে অনিতা অগ্নিহোত্রীর বয়ান অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। এক জীবনে এ ভাবে প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে না তুললে বৈষম্যের শিকল ঝেড়ে ফেলা সম্ভব নয়। একই কথা হিন্দু কবি-মুসলিম কবির বেলায়ও উঠে আসে। সাহিত্যের ইতিহাসকার অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে অনেকেই সপ্তদশ শতকের ‘মুসলিম কবি’ বলে অভিহিত করেছেন দৌলত কাজি ও সৈয়দ আলাওলকে। নামের আগে এই ‘মুসলিম কবি’ বিশেষণ দিয়ে কত সাহিত্যের ছাত্রছাত্রী পিএইচ ডি সেরে ফেললেন, তার হিসেব কষা মুশকিল। এ ভাবে নারী-পুরুষ, হিন্দু-মুসলিম বিভাজন করা কেন? আচার আচরণে, ব্যবহারিক প্রকাশে যেন ঠাঁই না পায় সঙ্কীর্ণতা এবং পক্ষপাতিত্ব।

রবীন্দ্রনাথ পান্ডে

বাঁশবাড়ি, মালদহ

মনের খোরাক

‘লৌহকঠিন বিভাজনরেখা’ নিবন্ধে লেখক একটি অপ্রিয় সত্যের অবতারণা করেছেন। আসলে যাঁদের নিজের লেখার ক্ষমতার উপর আস্থা বা ভরসা নেই, তাঁরাই বেশি করে অন্যের লেখাকে ‘উপযুক্ত মানের নয়’ বলে আত্মশ্লাঘা অনুভব করেন।

লীলা মজুমদার, নবনীতা দেব সেন, আশাপূর্ণা দেবী, মহাশ্বেতা দেবী, প্রভাবতী দেবী সরস্বতী, কবিতা সিংহ, তিলোত্তমা মজুমদার, অনিতা অগ্নিহোত্রী, আরও কত শত মহিলা লেখার জগৎ আলো করে আছেন। যতই পরিহাস, ঠাট্টা করা হোক, মেয়েরা লেখার অভ্যাস ছাড়বেন না। তাঁদের পুরস্কার জুটুক আর না-ই জুটুক, কেউ তাঁদের প্রশংসা করুক আর না-ই করুক, মেয়েরা লিখে যাবেনই। সেটা তাঁদের অধিকার, তাঁদের মনের খোরাক। পুরুষ বিভাজন করতে পারে, আমরা কিন্তু সাম্যে বিশ্বাসী। আসুন, পুরুষ-মহিলা বিভাজনরেখা লঙ্ঘন করি, ভাল লেখার জন্য মনোনিবেশ করি।

সর্বাণী গুপ্ত

বড়জোড়া, বাঁকুড়া

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE