Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Lottery

সম্পাদক সমীপেষু: নেশার নাম লটারি

‘লটারি রেগুলেশন অ্যাক্ট ১৯৯৮’ অনুযায়ী এটি এক প্রকার জুয়া। অথচ আশ্চর্যের বিষয় যে, ২৮টির মধ্যে ১৩টি রাজ্যে লটারি খেলা আইনসম্মত।

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২০ ০০:৪৮
Share: Save:

‘নেশা’ শব্দটি সুরা এবং মাদক প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হলেও, এটি লটারি টিকিটের জন্যও সমান ভাবে প্রযোজ্য। লকডাউন-পরবর্তী কালে কর্মহীন মানুষদের বড় অংশ এই লটারির নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছেন। ভারতে প্রতি দিন প্রায় দু’কোটি মানুষ লটারি খেলেন। এঁদের মধ্যে বেশির ভাগই মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত। কয়েক জনের ভাগ্য খোলে, কিন্তু বেশির ভাগই ধীরে ধীরে লটারি-নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তাঁদের পরিবার ঋণগ্রস্ত, সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছে। তা সত্ত্বেও সরকারের চোখে এ সত্য উপেক্ষিত। তার প্রধান কারণ অবশ্যই বিপুল রাজস্ব। নীতি আয়োগের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে প্রতি বছর অন্তত ৫০ হাজার কোটি টাকার লটারি টিকিট বিক্রি হয়। তাই, এই ব্যবসাকে বন্ধ করার সাহস কোনও সরকারেরই নেই।

‘লটারি রেগুলেশন অ্যাক্ট ১৯৯৮’ অনুযায়ী এটি এক প্রকার জুয়া। অথচ আশ্চর্যের বিষয় যে, ২৮টির মধ্যে ১৩টি রাজ্যে লটারি খেলা আইনসম্মত। কেরল, মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ, পঞ্জাবের মতো রাজ্য এ ক্ষেত্রে অগ্রণী। ২০১৯ সালে বিজেপির বিজয় গোয়েল রাজ্যসভায় ‘জ়িরো আওয়ার’-এ ওয়ান ডিজিট লটারি নিষিদ্ধ করার আবেদন জানালেও অন্য দলের সমর্থন পাননি। তবে যে দেশে রাজস্ব ঘাটতি পূরণ করতে মদ বিক্রির উপর ভরসা করতে হয়, সেখানে লটারি ব্যবসাকে আইনসম্মত বলে ধার্য করা স্বাভাবিক।

সায়ন্তন টাট

জাঙ্গিপাড়া, হুগলি

দুর্লভ পুঁথি

আবদুল কাফির ‘দূরে দূরে থাকি তাই’ (৪-১০) নিবন্ধ প্রসঙ্গে বলতে চাই, বাংলা শব্দের অর্থ বৈশিষ্ট্য ও তার প্রয়োগ বৈচিত্র দেখানোর জন্য বিদ্যাসাগর শব্দমঞ্জরী (১৮৬৪) নামক প্রয়োগার্থ অভিধানের সঙ্কলন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তা সমাপ্ত করতে পারেননি। নিবন্ধকার জানিয়েছেন, তিনি ‘অ’ সমাপ্ত করে ‘আ’ অবধিও পৌঁছতে পারেননি। কিন্তু অধ্যাপক অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বাংলা সাহিত্যে বিদ্যাসাগর (পুনর্মুদ্রণ, ২০১৮) গ্রন্থে লিখেছেন যে, ‘‘স্বরবর্ণ থেকে শুরু করে ব্যঞ্জনবর্ণের ন-কারের অন্তর্গত ‘নিবৃত্তি’ পর্যন্ত এসে মধ্যপথেই তাঁর মূল্যবান প্রচেষ্টা নিবৃত্তি লাভ করে।’’ বাংলা শব্দের অর্থ, পদ পরিচয় ও বাক্যে তার ব্যবহারের দৃষ্টান্ত দিয়ে বিদ্যাসাগর একটি সরল শব্দকোষ সঙ্কলন করতে চেয়েছিলেন।

আর বর্ণানুক্রমিক সাজানো শব্দ-সংগ্রহ (প্রবন্ধপঞ্জি-সহ সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা কর্তৃক মৃত্যুর পর প্রকাশিত, ১৩০৮) শুধু দেশি ও বিদেশি শব্দ নয় (যা নিবন্ধকার বলেছেন), সেখানে আছে তৎসম, তদ্ভব শব্দও। সাঁসাল, সুধু, সুধান- এর মতো কোনও কোনও শব্দের বানান পরবর্তী কালে পরিবর্তিত হয়েছে। প্রসঙ্গত, মনে করা যেতে পারে তাঁর জীবনচরিত (১৮৪৯) গ্রন্থের শেষে পরিভাষা তৈরির কথা। অপটিক্স-দৃষ্টিবিজ্ঞান, মেটাফিজ়িক্স-মনোবিজ্ঞান, ইলাস্টিসিটি-স্থিতিস্থাপক, অ্যাস্ট্রোলজি-নক্ষত্রবিদ্যা, এ সব পরিভাষা তিনিই তৈরি করেন। ১৮৫৮ সালে এশিয়াটিক সোসাইটির বিবলিয়োথিকা ইন্ডিকা সিরিজ়ের ২২ নং বই হয়ে প্রকাশিত হয় সর্ব্বদর্শন-সংগ্রহ। মুখবন্ধে বিদ্যাসাগর লিখেছিলেন, ‘‘সংস্কৃত শিক্ষা ও জ্ঞানচর্চার বহু মূল্যবান নিদর্শন যে ভাবে ধ্বংস হয়েছে তার থেকে রক্ষা করাই এই প্রাচীন পুঁথিটির সম্পাদনার মূল উদ্দেশ্য।’’ বিদ্যাসাগরকে এটি সম্পাদনা করতে সাহায্য করেন সংস্কৃত কলেজের পণ্ডিত জয়নারায়ণ তর্কপঞ্চানন ও পণ্ডিত তারানাথ বাচস্পতি মহাশয়। বাংলায় এই পুঁথি দুর্লভ হলেও এশিয়াটিক সোসাইটি ও সংস্কৃত কলেজের সংগ্রহালয়ে একটি করে পুঁথি পাওয়া যায়।

সুদেব মাল

খরসরাই, হুগলি

স্বার্থান্বেষী

বিশ্বভারতীর তথাকথিত অনুরাগীরা কয়েকটি বিষয়ে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন (সম্পাদক সমীপেষু, ১৬-১০)। বিশ্বভারতীর তরফ থেকে প্রথমেই তাঁদের জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। তবে এই প্রচেষ্টার মধ্যে স্বার্থরক্ষা ব্যতিরেকে অন্য কোনও উদ্দেশ্য পরিলক্ষিত হয় না।

বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী এবং আশ্রমিকরা (অবশ্য সবাই নয়) রাবীন্দ্রিক আদর্শকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন তত ক্ষণ, যত ক্ষণ তা তাঁদের স্বার্থের পক্ষে অনুকূল হয়। কিন্তু আমরা ভুলে যাই যে, গুরুদেব স্বার্থান্বেষী আশ্রমিকদের বিরুদ্ধে দৃঢ় সমালোচনা করতে কখনওই পিছপা হননি। তাই চরিত্রপূজা পুস্তিকাতে বলেন যে “আমরা ভুরিপরিমাণ বাক্যরচনা করিতে পারি, তিল পরিমাণ আত্মত্যাগ করিতে না। আমরা অহংকার দেখাইয়া পরিতৃপ্ত থাকি, যোগ্যতা লাভের চেষ্টা করি না, আমরা সকল কাজেই পরের প্রত্যাশা করি, অথচ পরের ত্রুটি লইয়া আকাশ বিদীর্ণ করিয়া থাকি।’’ গুরুদেব এতটাই আশঙ্কিত ছিলেন বিশ্বভারতীর ভবিষ্যৎ নিয়ে, তিনি গাঁধীজির কাছে আবেদন করেন এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য, কারণ তাঁর আশঙ্কা ছিল, স্বার্থান্বেষী মানুষেরা বিশ্বভারতী ধ্বংস করতে কুণ্ঠাবোধ করবেন না।

কবিগুরুর বক্তব্য তুলে ধরার মূল উদ্দেশ্য হল যে, তথাকথিত আশ্রমিকরা গুরুদেবের মনেও দ্বিধার উদ্রেক করেছিলেন। সেখানে স্বার্থের বিরুদ্ধে যদি কোনও উপাচার্য আওয়াজ ওঠান, তাঁকে তো ছোবল খেতে হবেই। এখানে গুরুদেবের উত্তরসূরি একেবারে নিপাট ভদ্রলোক শ্রী রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে চোখের জলে আশ্রম ত্যাগ করতে হয়েছিল।

দ্বিতীয়ত, এই চিঠি দুটোতে বলা হয়েছে যে, বর্তমান কর্তৃপক্ষ রবীন্দ্র আদর্শ বজায় রাখার জন্য যথেষ্ট সচেষ্ট নন। আমাদের প্রশ্ন, রবীন্দ্র আদর্শ কী? রাবীন্দ্রিক মানে কি স্বার্থসিদ্ধির সিঁড়িমাত্র? অর্থাৎ, দায়িত্ব ব্যতিরেকে অধিকার প্রতিষ্ঠার সার্বিক প্রচেষ্টা! এখানে আমি প্রাচীন ভারতের ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সুধাকর চট্টোপাধ্যায়, যিনি বিশ্বভারতীতে অধ্যাপনা করতেন, তাঁর কথা উল্লেখ করব। শান্তিনিকেতন স্মৃতি গ্রন্থে তিনি অত্যন্ত খেদের সঙ্গে বলেন যে, “শান্তিনিকেতনে একদল আছেন যাঁরা নূতন কিছু করলেই ‘আদর্শ গেল, আদর্শ গেল’ বলে চেঁচিয়ে ওঠেন। তাঁদের মতে শান্তিনিকেতনে কোনও বিষয়ে কোনও পরিবর্তন হবে না। যা পুরোনো তাই থাকবে। ছ’মাস বয়সে একটা শিশু যে জামা গায়ে দিত তাকে ছাব্বিশ বছর বয়সেও সেই জামা গায়ে দিতে হবে অবশ্য নিজের যদি সুবিধা হয়।’’ আজকের বিশ্বভারতীতে পরিবর্তনের ছোঁয়া সর্বত্র। গুরুদেব পরিবর্তন যে স্বাভাবিক, তা পরিষ্কার ভাবে তাঁর বিশ্বভারতী পুস্তিকায় বলেন। তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন, “আমার প্রেরিত আদর্শ সকলে মিলে একতারা যন্ত্রে গুঞ্জরিত করবেন এমন সরল ব্যবস্থাকে আমি নিজেই শ্রদ্ধা করি নে।’’

এখন প্রশ্ন, তা হলে বর্তমানে এত কাদা ছোড়াছুড়ি কেন? উত্তর খুব সহজ। আমরা বর্ধিত হারে বেতন নেব। সুসজ্জিত দালান বাড়িতে থাকব। বিশ্বভারতীর জন্য দায়িত্ব স্খলনের জন্য রাবীন্দ্রিক আদর্শের কথা বলে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করব। উপাচার্য এবং তাঁর সহকর্মীরা শুধুমাত্র দায়িত্ব পালন করবেন, আর অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে কিছু স্বার্থান্বেষী প্রাক্তনী এবং আশ্রমিক তারস্বরে চিৎকার করবেন। হয়তো বা তাঁরা মনে করছেন, এই ভাবে তাঁরা তাঁদের অস্তিত্ব বজায় রাখবেন, এবং তাঁদের ক্ষুদ্র স্বার্থ রক্ষা করবেন। কিন্তু এই পরিবর্তনশীল জগতে যেখানে মানুষের সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা নতুন মাত্রা পাচ্ছে, সেখানে কায়েমি স্বার্থের পরিপন্থী শক্তিসমূহ কত দিন টিকে থাকবে, তা ভবিষ্যৎ বলবে।

অনির্বাণ সরকার

জনসংযোগ আধিকারিক, বিশ্বভারতী

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lottery Drug Addiction Letters to Editor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE