Advertisement
০২ মে ২০২৪
Women Discriminations

সম্পাদক সমীপেষু: কেবলই বিভাজন

সংসদে ‘নারীশক্তি বন্দন অধিনিয়ম’ পাশ হয়েছে। কিন্তু যে মেয়েরা নিজের পরিচিতি নিজে তৈরি করেছেন, অন্যদেরও এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখাতে পারছেন, তাঁদের খুশি হওয়ার কারণ নেই।

An image of women discriminations

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৩ ০৪:৪৮
Share: Save:

স্বাতী ভট্টাচার্যের প্রবন্ধ ‘দুই হাতে তরবারি’ (৬-১১) অনেক অপ্রিয় সত্যকে উপস্থাপন করল। কথায় ‘টরটরে’ যে মহিলাটি প্রতিবেদককে বলতে পেরেছেন, “এখন আমি গাঁয়ের সবার সঙ্গে কথা বলি। ভোটে দাঁড়ালে অর্ধেক মানুষের সঙ্গে কথাই বলতে পারব না”— তাঁর কথাগুলি তাৎপর্যপূর্ণ। এর অর্থ সংবেদনশীল মানুষের অজানা নয়। কিন্তু স্বার্থসর্বস্ব রাজনৈতিক নেতাদের পক্ষে কথাটি বোঝা কঠিন। তাঁরা শুধু ‘আমরা’ আর ‘ওরা’ বিভাজনই শিখেছেন। তাঁদের কাছ থেকে স্বপ্ন দেখার, দেখাতে পারার রাজনীতি আশা করা যায় কি? তেমন রাজনীতির চর্চা গোটা দেশ থেকেই বোধ হয় বিলীন হতে চলেছে।

সংসদে ‘নারীশক্তি বন্দন অধিনিয়ম’ পাশ হয়েছে। কিন্তু যে মেয়েরা নিজের পরিচিতি নিজে তৈরি করেছেন, অন্যদেরও এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখাতে পারছেন, তাঁদের খুশি হওয়ার কারণ নেই। তাঁরা জানেন, যে দলেই নাম লেখান না কেন, কয়েক দিন যেতে না যেতে টিকতে পারবেন না তাঁরা। যাঁরা স্বাধীনচেতা, উদ্ভাবনী ভাবনায় জারিত হতে জানেন, তাঁরা দলীয় নেতার প্রশ্নহীন আধিপত্য মেনে নেবেন কী করে? বর্তমান শাসক দলেই এ-রকম উদাহরণ তো কম নেই যাঁরা রাজনীতিতে এসে অনুতাপে মরেছেন, ধিক্কারে আড়ালে চলে গিয়েছেন, অথবা জীর্ণ, জরাগ্রস্ত একটা ব্যবস্থাকে মানিয়ে নিতে নিতে ধ্বস্ত হচ্ছেন প্রতি দিন। পুরুষ-শাসিত সমাজে পুরুষদের রাজনীতির অঙ্কটা না-বোঝার কারণ নেই।

সম্প্রতি সংসদে ও বিধানসভাগুলিতে মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণের অধিনিয়মটি সংসদে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে পাশ হয়েছে। তবে হয়তো তার চাইতেও বেশি জরুরি ছিল— যে মেয়েরা নিজেদের নেতৃত্বের ক্ষমতা নিজেরাই প্রমাণ করেন, তাঁদের রাজনৈতিক দলে স্বাগত জানানোর। আর তা না-করে ‘আসন সংরক্ষণ’ করে দেশোদ্ধার করলেন নেতারা। যদি প্রশ্ন ওঠে— এক-তৃতীয়াংশ কেন, যোগ্যতার নিরিখে ৫০ শতাংশ নারীই পাবেন না কেন ভোটে দাঁড়ানোর অধিকার— তার কী উত্তর দেবে কেন্দ্রীয় সরকার?

শক্তিশঙ্কর সামন্ত, ধাড়সা, হাওড়া

নামমাত্র

যাঁরা যোগ্য রাজনীতি খোঁজেন, তেমন মেয়েদের কিছু উদাহরণ পাওয়া যেতে পারে। তবে এই মেয়েরা ব্যতিক্রম। আর রাজনীতি যে যোগ্য মেয়ে খোঁজে, সে তো নেহাতই সঙ্কীর্ণ, দলীয় স্বার্থে। রাজনৈতিক দল অধিকাংশ সময়ে মেয়েদের ব্যবহার করে কেবল, সম্মান দেয় না। মর্যাদার আসনে কোনও মেয়েকে বসাতে চায় না। বসাবেই বা কেন? তাতে তো পুরুষের ক্ষমতায় ভাগ বসে যাবে। কে আর বুঝতে চায় যে, নারীকে বাদ দিয়ে কোনও সমাজ শক্তিশালী হতে পারে না?

ভারতের নারী ও পুরুষ, দুই শক্তি সম্মিলিত হলে দুনিয়া জুড়ে সাড়া ফেলে দিতে পারে। কিন্তু কে তা চায়? যে ছেলেটি তার সমবয়সি মেয়েটির সবচেয়ে বড় বন্ধু, প্রধান বল-ভরসা, তারই হাতে মেয়েটি ধর্ষিতা হয়। এ কি ওই ছেলে-মেয়ে দু’টির দোষ, না সমাজের? নারী ক্ষমতায়ন নিয়ে অনেক কথা হয়, সে সব যেন নেহাতই প্রসাধনী। ক্ষমতার ধর্মই এই যে, তা সব কিছু আত্মসাৎ করে একা ভোগ করতে চায়। অপর কারও হাতে সমান, এমনকি সামান্য ক্ষমতাও না দেওয়া, যাতে অন্যে তার সমান অধিকার দাবি করতে না পারে। দলীয় রাজনীতিতে তাই দেখা যায়, যে কোনও প্রকারে ক্ষমতায় টিকে থাকাই সব। যাতে নিজে, নিজের পরিবার, আগামী প্রজন্মও দুধে-ঘিয়ে থাকতে পারে। এ বিষয়ে নারী-পুরুষ ভেদ নেই। তবে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে ক্ষমতার এই স্বার্থপর, ভয়ানক রূপের বিরুদ্ধে মেয়েদের যারপরনাই লড়াই করে যেতে হয়। না হলে মেয়েদের নামমাত্র মূল্যে ব্যবহার করে এই ক্ষমতা টিকে যাবে, বেড়ে উঠবে। আরও বেশি মেয়ে রাজনীতিতে আসা সত্ত্বেও আরও বাড়বে নারীবিদ্বেষ।

শিবপ্রসাদ দাস, আন্দুল মৌরি, হাওড়া

বিস্মৃত অতীত

মেয়েদের উন্নয়ন, নারী ক্ষমতায়ন ছাড়া সমাজের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়, এটা সবাই স্বীকার করেন, কিন্তু কাজের বেলায় গ্রহণ করেন না। মেয়েদের লড়াই করেই সব কিছু আদায় করতে হয়। মেয়েরা যে ভীরু নন, পরমুখাপেক্ষী নন, তাঁরাও যে পুরুষের সমান লড়াই করতে পারেন, ইতিহাসে তার অস‌ংখ্য উদাহরণ আছে। কিন্তু কত জন পুরুষই বা সেই ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন? তাই মেয়েদের পথে এসেছে নানা বাধা। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে পুরুষদের সঙ্গে মেয়েরাও সমান ভাবে এগিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু তাঁরা সমান মর্যাদা পেয়েছেন কি? কাজের অধিকার হোক, আর রাজনীতিতে যোগদানের অধিকার, মেয়েদের প্রাপ্য স্বীকৃতি দেওয়ার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত উন্নয়ন।

অভিজিৎ দত্ত, জিয়াগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ

ক্ষমতার পথ

‘দুই হাতে তরবারি’ প্রবন্ধটি সম্পর্কে কিছু কথা। মেয়েরাও যোগ্য রাজনীতি খোঁজেন, প্রবন্ধকারের এই বিশ্লেষণ যথার্থ। দুর্নীতির চক্রে মেয়েদের শামিল হতে হয়, স্বেচ্ছায় বা অজানতে, পুরুষতান্ত্রিক রাজনীতির স্বার্থে। এই একবিংশ শতাব্দীতেও মেয়েদের জন্য আইনসভাগুলিতে আসন সংরক্ষণ করতে হল। এতে প্রকারান্তরে এটাই প্রমাণিত হল না কি যে, সংরক্ষিত আসন ছাড়া নারীদের আইনসভায় প্রতিনিধিত্ব করা প্রায় অসম্ভব?

একটাই নিবেদন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সমীপে— সংরক্ষণের আইনকে যেন দাক্ষিণ্যরূপে বিবেচনা না করা হয়। একবিংশ শতাব্দীতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীশক্তির বিকাশ ঘটছে, তবু মেয়েদের প্রতি বৈষম্য রয়ে যাচ্ছে। যেমন, সেনাবাহিনীতে মেয়েদের স্থায়ী কমিশন নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ের আদেশ মানতে হচ্ছে। পরিশেষে বলা দরকার, নারী ক্ষমতায়ন চাইলে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য, এই দু’টি ক্ষেত্রে মেয়েদের অবহেলা করা যাবে না।

সুবীর ভদ্র, কলকাতা-১৫১

মাছের জীবন

সুপ্রতিম কর্মকারের প্রবন্ধ ‘ছোট মাছের অভয়াশ্রম’ (৪-১১) প্রসঙ্গে বলতে চাই, পশ্চিমবঙ্গের মতো এত পুকুর সম্ভবত অন্য কোনও রাজ্যে নেই। ছোটবেলায় গ্রামে দেখেছি, পুকুরে অসংখ্য মাছ পাওয়া যেত। অনেকেই পুকুর থেকে হাত দিয়ে মাছ ধরতেন। পুকুরের মালিক প্রতি বছর মাছ ফেলতেন না, পুকুরেই মাছ জন্মাত। দু’দশকের মধ্যে ছবিটার পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। এখন অনেক প্রজাতির মাছ বিরল, বা বিলুপ্ত। এর মূল কারণ, পুকুর আবর্জনাতে ভর্তি হয়ে রয়েছে দিনের পর দিন। জল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অনেকে বেশি লাভের জন্য কার্প জাতীয় মাছের চাষ শুরু করেন। বছরের নির্দিষ্ট একটি সময়ে পুকুরের সব মাছ ধরার জন্য নানা ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছে। এর ফলে অনেক মাছ শেষ হয়ে গিয়েছে কয়েক বছরের মধ্যে। বর্ষার সময় মাঠের জলে অসংখ্য মাছ দেখেছি। মাঠ থেকে মাছ ধরে এনে খুব অল্প দামে বিক্রি হত গ্রামে। পাল্লা-বাটখারার বালাই ছিল না, হাত মেপে আন্দাজে বিক্রি হত মাছ। আজকের দিনে হয়তো রূপকথা বলে মনে হবে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার পুকুরের মাছ শেষ করে দিয়েছে।

এখনও সময় আছে, সঠিক পরিচর্যায় অনেক মাছ বেঁচে যাবে। এর জন্য প্রথমে দরকার মাছ সংরক্ষণ। সেই সঙ্গে প্রতিটি পুকুর মাছ চাষের উপযোগী করে গড়ে তোলা। সরকারি ভাবে প্রতি বছর নতুন পুকুর খনন ও পুরনো পুকুর সংস্কারের লক্ষ্যমাত্রা বাড়াতে হবে। ছোট মাছ পুকুরে ছাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। একটা ন্যূনতম দাম নির্ধারণ করারও দরকার আছে। মাছচাষিরা বিনা পয়সায় মাছ পেলে মাছের যত্ন করার মানসিকতা কমবে। প্রয়োজনে ছোট মাছচাষিদের প্রশিক্ষণ, ও কিছু অনুদানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

সৈয়দ সাদিক ইকবাল, সিমলা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Women Harassment Gender Inequality
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE