Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Rabindranath Tagore

সম্পাদক সমীপেষু: বিতর্কিত অতিথি

রবীন্দ্রনাথের লেখা চিনা ভাষায় প্রথম অনুবাদ করেন ছেন তু শিউ, যিনি ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি লিখেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ ভারতীয় যুবকদের পথপ্রদর্শক।

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২০ ০০:০৪
Share: Save:

বিশ্বজিৎ রায়ের লেখায় (‘নেশন’সভ্যতার সঙ্কট, ২১-৬) চিনের কমিউনিস্ট পার্টির তরুণদের রবীন্দ্রবিরোধিতার কথা এসেছে। সেই প্রসঙ্গে বলি, রবীন্দ্রনাথের লেখা চিনা ভাষায় প্রথম অনুবাদ করেন ছেন তু শিউ, যিনি ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি লিখেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ ভারতীয় যুবকদের পথপ্রদর্শক। সাহিত্য গবেষণা সভার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত, চেঙ চেন তো রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে লিখেছিলেন “তিনি এক সমস্যাসঙ্কুল জগতে আমাদের জন্য রচনা করেছেন একটি মহৎ, প্রশান্ত কাব্যের স্বর্গ। এটি সূর্যের আলোর মত শ্রেণিনির্বিশেষে সকলের জন্য। যে কেউ তার মধ্যে প্রবেশ করতে চায় তারই জন্য পথ খোলা।” মাও এর ঘনিষ্ঠ, কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য, চাঙ ওয়েন থিয়েন ‘রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও দর্শন’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথকে কবি ও মহৎ দার্শনিক বলে বর্ণনা করে লেখেন, “তাঁর কবিতাই তাঁর দর্শন, দর্শনই কবিতা।” মাও তুন লেখেন, ‘আমরাও রবীন্দ্রনাথের প্রতি শ্রদ্ধাশীল কেননা তিনি দুর্বলের প্রতি সহানুভূতিশীল, তিনি কৃষকদের সহায়ক কবি, তিনি দেশপ্রেম উদ্দীপনের কবি, ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ জাগাবার কবি।” সুতরাং স্পষ্টতই কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যরা রবীন্দ্রনাথের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল ছিলেন, শুধু প্রতিক্রিয়াশীল বলে দেগে দেননি।

অবশ্য বিরোধিতাও ছিল। মাও তুনের প্রবন্ধ প্রকাশিত হওয়ার পাঁচ দিন পর ‘চিনা যুব পত্রিকা’র সম্পাদক ও কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম য়ুন তাই ইঙ লেখেন, “আমরা কোনও বিদ্বেষ থেকে রবীন্দ্রনাথকে ব্যক্তিগত ভাবে আক্রমণ করব না। তবে অন্যরা কবিকে ব্যবহার করতে পারে এমন সম্ভাবনা আছে বলেই আমাদের কবিকে সমালোচনা না করে উপায় নেই।” রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে চৌ এন লাই-এর বক্তব্য (১৯৫৬) থেকে পাই কবি সম্পর্কে কমিউনিস্ট পার্টির দৃষ্টিভঙ্গি: “তিনি অন্ধকারবিমুখ, আলোর সন্ধানী, মহান ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি।... তাঁর ১৯২৪-এর চিন ভ্রমণের কথা চিনবাসী আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে।” (তথ্যসূত্র: বিতর্কিত অতিথি, শিশিরকুমার দাশ ও তান ওয়েন; রবীন্দ্রনাথ থ্রু ওয়েস্টার্ন আইজ়, অ্যালেক্স অ্যারনসন)

শিবাজী ভাদুড়ি, সাঁতরাগাছি, হাওড়া

রবীন্দ্রকাব্যপাঠ

১৯৮৫ সালে ১ জানুয়ারি কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট, তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির বন শহরের টেগোর ইনস্টিটিউট, কোরিয়ার টেগোর সোসাইটি এবং লন্ডনের দ্য টেগোরিয়ান্স-এর পরিচালকগণ যথাক্রমে সোমেন্দ্রনাথ বসু, তৃণা পুরোহিত রায়, কিম ইয়াং সিক এবং তপন বসু, স্ব স্ব মুখপত্রে একযোগে আবেদন করেন, যেন প্রতি বছর ৩০ জুন আন্তর্জাতিক রবীন্দ্রকাব্যপাঠ দিবস পালন করা হয়। কারণ, তাঁরা আবিষ্কার করেন যে ১৯১২ সালে ওই দিন সেই প্রথম শিল্পী রদেনস্টাইনের হামস্টেড হিথের বাড়িতে এজরা পাউন্ড, মে সিনক্লেয়ার, আর্নস্ট রিজ, এলিস মেনেল, ইভলিন আন্ডারহিল, অ্যান্ড্রুজ় প্রমুখদের সামনে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথকৃত গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদ পড়েছিলেন কবি ইয়েট্স। রবীন্দ্রনাথ তখনও নোবেল পুরস্কার পাননি। সেই সন্ধ্যায় উপস্থিত ছিলেন নিশ্চুপ রবীন্দ্রনাথ।

পরবর্তী কালে স্থির হয়, ২৮ জুন থেকে ১২ জুলাই, এই পক্ষকালের মধ্যে যে কোনও একটি দিন আন্তর্জাতিক রবীন্দ্র কাব্যপাঠ দিবস হিসেবে পালন করা হবে।

হারাধন রক্ষিত, শ্রীরামপুর, হুগলি

উপেক্ষিত নন

জ্যোতিপ্রসাদ রায়ের ‘আপনার হাতে কবিতা দিয়ে খুব আশ্বস্ত বোধ করি’ (রবিবাসরীয়, ১৪-৬) নিবন্ধের সূত্রে আরও কিছু কথা। সরোজমোহন মিত্রের ‘মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন ও সাহিত্য’ গ্রন্থে আছে, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘স্নায়ু’ (১৩৪৬), ‘শ্রম বঞ্চিতা শিকারিণী’ (বৈশাখ, ১৩৪৬), ‘দেবতা’ (১৩৪৪) নামক রচনা ‘পূর্ব্বাশা’য় প্রকাশিত হয়েছিল, যেগুলির তেমন পরিচিতি নেই। আর ১৯৫১-য় সম্পাদক সঞ্জয় ভট্টাচার্যের অনুরোধে মানিক ১৩৫৮ সালের জ্যৈষ্ঠ সংখ্যায় ‘উপন্যাসের কথা’ নামে প্রবন্ধ পাঠান, সঙ্গে ‘মজুরি’র কথাটা স্মরণ করিয়ে দেন। সঞ্জয়বাবু মানিকের এ-কথায় ব্যথিত হলেও প্রবন্ধটি প্রকাশ করেন। যুগান্তর চক্রবর্তী সম্পাদিত মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অপ্রকাশিত ডায়েরি থেকেও জানা যাচ্ছে, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চিন্তামণি’ উপন্যাস (শ্রাবণ, ১৩৫২) ‘পূর্ব্বাশা’তে ‘রাঙামাটির চাষী’ নামে প্রকাশিত হয়। এর পর ১৯৩৫-৩৬ থেকে মানিকের রচনাগুলি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হতে থাকে। কাজেই তাঁর প্রতি উপেক্ষা বা অবহেলার অনুযোগ সর্বক্ষেত্রে বিশ্বাস্য বলে মনে হয় না।

সুদেব মাল, খরসরাই, হুগলি

বাজার ও লেখক

নবারুণ ভট্টাচার্য তাঁর ‘উপন্যাস সমগ্র’-র ভূমিকায় লিখেছেন, “আমি শুধু এটুকু বলতে পারি যে, যে তাগিদ থেকে আমি লিখি, তার সঙ্গে বাজারের সম্পর্ক প্রায় নেই বললেই চলে।” নেই নয়, ‘প্রায় নেই’। সামান্যতম হলেও বাজারের সঙ্গে লেখার তাগিদের যোগ আছে— প্রকারান্তরে এ কথা তিনি মেনে নিয়েছেন। এতে কোনও ভুল নেই। বাজার তো একটা ক্ষেত্র, যেখানে পণ্য বা পরিষেবা ক্রয়বিক্রয়ের জন্য মানুষ জড়ো হয়। কোনও লেখক শুধুমাত্র লেখার কথাই ভাবেন এবং লেখেন, তাঁর লেখার সঙ্গে নিঃসন্দেহে বাজারের কোনও সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। ফরাসি কথাসাহিত্যিক গুস্তাভ ফ্লবেয়ার যেমন ঘোষণাই করেছিলেন, তিনি তাঁর কোনও লেখা ছাপাতে চান না। কিন্তু যে লেখকের বই ছাপা হয় এবং বাজারে বিক্রি হয়, সে বই লেখকের তাগিদ-নিরপেক্ষ হয়েও বাজারের পণ্য হয়ে ওঠে। সে বইয়ের বিক্রি আশানুরূপ হলে বাজার লেখকের মনকে কোনও-না-কোনও ভাবে প্রভাবিত করতে পারে। সে ক্ষেত্রে বাজারের আদর্শ বা প্রভাব না মেনেও লেখক এক ধরনের নৈর্ব্যক্তিক বাজারের কলমচি হয়ে উঠতে পারেন। তাতে লেখকের জাত যায় না, যদিও বাজারের সঙ্গে লেখকের সম্পর্কহীন হয়ে থাকার মনোভাবকে অবান্তর বলে মনে হয়।

নবারুণ ভট্টাচার্য ছিলেন সিরিয়াস সাহিত্যের সফল লেখক এবং তাঁর বইয়ের বিক্রিও ছিল সন্তোষজনক। বইমেলায় বই বিক্রির স্টলে তিনি নিয়মিত হাজির থাকতেন। সিরিয়াস সাহিত্যের বাজারের প্রেক্ষিতে নবারুণ ভট্টাচার্যকে যে সফল লেখক বলা যাচ্ছে, সে অনুমানে বাজারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বাজার মানেই সস্তা পণ্যের কারবার নয়। নিম্নরুচির পণ্য উৎপাদনে উৎপাদকের কোনও বিশেষ স্বার্থ থাকে না। তবে, ক্রেতাচাহিদার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।

শিবাশিস দত্ত, কলকাতা-৮৪

যুগপুরুষ

৭ জুন রবিবাসরীয়তে ভারতরত্ন স্যর মোক্ষগুন্ডম বিশ্বেশ্বরাইয়া সম্বন্ধে আলোচনার প্রেক্ষিতে জানাই: তিনি ১৯২৩ সালে মাইসোর আয়রন অ্যান্ড স্টিল নামে এক সঙ্কর ইস্পাত কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন ভদ্রাবতী শহরে। এটি তখন মেটালার্জিস্টদের মক্কা বলে পরিচিত ছিল। পরে এর নাম হয় বিশ্বেশ্বরাইয়া আয়রন অ্যান্ড স্টিল লিমিটেড। ১৯৮৯ সালে সেল এটি অধিগ্রহণ করে। বিশ্বেশ্বরাইয়া ১৯১৩ সালে স্টেট ব্যাঙ্ক অব মাইসোর প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরে ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্কের সহযোগী হয় ও ২০১৭ সালে দুই ব্যাঙ্ককে মিশিয়ে দেওয়া হয়। মাইসোর পেপার মিলেরও রূপকার ছিলেন তিনি।

অরূণাভ দত্ত গুপ্ত, কলকাতা-১০৩

হেরিটেজ

সঙ্গীতশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিবিজড়িত ভবানীপুরের রূপনারায়ণ নন্দন লেনের পৈতৃক ভিটে বিক্রি হয়ে গেল। শুনলাম, যিনি কিনেছেন, তিনি এখানে বহুতল বাড়ি করবেন। সরকারের কাছে অনুরোধ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের এই পৈতৃক ভিটেটিকে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণা করা হোক। এবং, বাড়িটি অধিগ্রহণ করে ‘হেমন্ত আর্কাইভস’ গড়ে তোলা হোক।

বিশ্বনাথ বিশ্বাস, কলকাতা -১০৫

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,

কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rabindranath Tagore Letters To The Editor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE