তা কোন ‘সোনার বাংলা’ ‘পোড়া বঙ্গালি’দের জন্য গড়ে দেওয়া হবে? ব্র্যান্ড নিউ ইন্ডিয়ার মতো, যা বিমুদ্রাকরণের ব্যর্থতা, ধর্মীয় বিভেদ, রেকর্ড বেকারত্ব ও মুদ্রাস্ফীতি, বাক্স্বাধীনতার উপর আক্রমণ দ্বারা দীর্ণ? না ব্র্যান্ড গুজরাতের মতো, যেখানে ঘোড়ায় সওয়ার হওয়া বা গোঁফ রাখার অপরাধে দলিতদের প্রহার করা হয়; আর ‘ট্রাম্প ওয়াল’ গড়া হয় রাজ্যের ‘ঈর্ষণীয়’ উন্নয়ন ট্রাম্পের দৃষ্টির আড়ালে রাখতে?
আর কারা আজ পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য চোখের জলে নাকের জলে ভাসছেন? যাঁরা মাত্র চার ঘণ্টার নোটিসে লকডাউন ঘোষণা করলেন! যাঁদের জন্য লক্ষ লক্ষ অসহায় দরিদ্রকে হাজার হাজার কিলোমিটার পদব্রজে পাড়ি দিতে হল, আর কেউ মারা গেলেন খিদেয় ক্লান্তিতে, কেউ ঘুমন্ত অবস্থায় রেলের চাকায় পিষে গেলেন! যাঁরা আটকে পড়া অসহায় শ্রমিকদের সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় রেলযোগে নিজ নিজ রাজ্যে ফিরিয়ে দেওয়ার বদলে, প্রায় কপর্দকহীন মানুষদের নিংড়ে সারচার্জ সহ ট্রেনের ভাড়া নিলেন?
ন্যূনতম শারীরিক দূরত্ব রক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে যে ভাবে পরিযায়ী শ্রমিকদের ট্রেনে ঢোকানো হয়েছে, তাতে করোনার গ্রাস যে অনেক বিস্তার লাভ করেছে, সন্দেহ আছে? মাসাধিককাল রেল চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রেখে, রাজ্য সরকারের মতামতকে অগ্রাহ্য করে হঠাৎ হুড়মুড় করে উপর্যুপরি ট্রেন পাঠানো যেতেই পারে, কিন্তু যাবতীয় পরিকাঠামো সমেত কোয়রান্টিন সেন্টার রাতারাতি প্রস্তুত করা যেতে পারে কি? সুতরাং এই চূড়ান্ত পরিকল্পনাহীন কর্মকাণ্ডের জন্য সমাজ তো আরও বেশি করে ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হবেই আর সেই পরিপ্রেক্ষিতে ‘করোনা এক্সপ্রেস’ শব্দবন্ধটি তো একশো শতাংশ যথার্থ।
‘‘রেল লাইন ঘুমানোর জায়গা নয়’’, ‘‘শকুনরা ছবি তুলে বেড়াচ্ছে’’ (‘নতুন ভারতের’ নগ্ন অবস্থা তুলে ধরার ‘অপরাধে’ সাংবাদিককুলের উদ্দেশে বিষোদ্গার), ‘‘রাহুল গাঁধী ড্রামাবাজ’’ (লং মার্চ-এ শামিল অসহায় পরিযায়ীদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করার ‘মহাপাপে’)— এ সব বিবৃতি যাঁরা দেন, আর নিজেরা স্ত্রীর সঙ্গে লুডো খেলা ও রামায়ণ দেখার ছবি পোস্ট করেন, তাঁরা আজ শ্রমিকদের জন্য কুম্ভীরাশ্রু নির্গত করেন! তাও আবার বাঙালি শ্রমিকদের জন্য, যাঁরা বোধহয় সবচেয়ে দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন বিশেষত বিজেপি-শাসিত গুজরাতে?
কাজল চট্টোপাধ্যায়
পিয়ারলেস নগর, সোদপুর
অর্ধেক ফি
কোভিডের লড়াইয়ে সামনে থেকে লাগাতার স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার জন্য জুনিয়র ডাক্তারদের সম্মান জানাতে তাঁদের ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম, মনে হয় না কেউই এর বিরোধিতা করবেন। এর পাশাপাশি এই পরিস্থিতিতে বেশির ভাগ চিকিৎসকের অন্তরালে চলে যাওয়াটা সমাজকে বড় বেশি আঘাত করেছে। এখন অনুরোধ, আগামী এক বছর প্রত্যেক চিকিৎসক তাঁর ফি যদি অর্ধেক নেন, এতে এই আর্থিক দুরবস্থায় আপামর জনসাধারণ উপকৃত হবেন, এটা দায়বদ্ধতা হিসাবেও চিহ্নিত হবে। ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম কী বলেন?
অশোক দাশ
রিষড়া, হুগলি
মহামারি আইন
অরুণাভ সেনগুপ্ত ‘মহামারি নিয়ন্ত্রণে দমন নীতি’ (২-৬) নিবন্ধে লিখেছেন, ১৮৯৭ সালে ব্রিটিশ ভারতে কুখ্যাত ‘মহামারি আইন’ চালু হয়েছিল “অবিলম্বে আইনটি রচনা করা ছাড়া উপায়ান্তর ছিল না বলেই।” কিন্তু কেন উপায়ান্তর ছিল না? পৃথিবীর এত দেশ এ রকম আইন ছাড়াই মহামারি নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে, ব্রিটেন নিজের দেশে কলেরা বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মহামারি সত্ত্বেও এ রকম আইন বানায়নি, তা হলে ভারতে কেন বানাতে হল?
১৮৯৭ সালে ভারতের ভাইসরয় ছিলেন আর্ল অব এলগিন (আসল নাম আলেকজ়ান্ডার ব্রুস)। এঁর মতো অপদার্থ শাসক সেই ব্রিটিশ ভারতেও কমই ছিল। এঁর আমলেই ১৮৯৬-৯৭ সালের মধ্য এবং দক্ষিণ ভারতের মন্বন্তর। শুধু ব্রিটিশ ভারতেই ১০ লক্ষের ওপর মানুষ মারা গিয়েছিল, নেটিভ স্টেটের কথা বাদই দিলাম। আর এর মধ্যেই ব্রিটিশ বণিকেরা হাজার হাজার টন খাদ্যশস্য রফতানি করার অনুমতি পেয়েছিল। এই মন্বন্তরের ফলেই ইঁদুরের উৎপাত বেড়ে গিয়েছিল এবং ইঁদুরেরা লোকালয়ের কাছাকাছি চলে এসেছিল। প্লেগবাহী ইঁদুর হংকং থেকে আসামাত্র বারুদে অগ্নিসংযোগ হয়।
ভারতে কত জন লোকের মৃত্যু হল, সেই চিন্তার থেকেও ব্রিটিশদের বেশি চিন্তা ছিল ব্যবসা নিয়ে। সেপ্টেম্বর ১৮৯৬ সালে প্লেগ শুরু হওয়ার পরেই ইউরোপের অন্যান্য দেশ এই নিয়ে ব্রিটেনকে খোঁচাতে শুরু করে। প্রথমে ব্রিটিশ সরকার এটাকে ‘বিউবোনিক ফিভার’ বলে চালানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ফ্রান্স বা ইটালিকে প্রবোধ দেওয়া যায়নি। ফ্রান্স প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দক্ষিণ এশিয়ার জাহাজের ক্ষেত্রে ভূমধ্যসাগরের সব বন্দর বন্ধ করে দেয়। ভারত থেকে চামড়ার দ্রব্য আমদানিও বন্ধ করা হয়। এ ছাড়া ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে বিজ্ঞানীর দল ভারতে এসে নিজেদের সরকারকে রিপোর্ট দেয়। এর মধ্যে আমেরিকান দলের রিপোর্ট খুব নেতিবাচক ছিল। অনেক দেশ ভাবে, এ রকম হলে খুব শীঘ্রই ভারত থেকে ব্রিটিশ জাহাজের মাধ্যমে প্লেগ অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়বে।
এই জন্যই ভারতের সরকার তখন খুব তাড়াতাড়ি এই মহামারি আইন এনে পৃথিবীর অন্য দেশকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে। এর ফল খুব একটা খারাপ হয়নি। ১৮৯৭ সালে ভেনিসে স্যানিটারি সম্মেলনে অন্য দেশের প্রতিনিধিরা এই আইন এবং ব্রিটিশ কর্মকাণ্ডে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং ভারত থেকে বাণিজ্যের ব্যাপারে কড়াকড়ি কমিয়ে দেন।
আইনটি আনার আর একটা কারণ ছিল। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল সার্ভিসের কর্তা জেমস ক্লেগহর্ন এবং পরে রবার্ট হার্ভি-র, প্লেগ নিয়ে তেমন দক্ষতা ছিল না। এঁরা ভাল ডাক্তার ছিলেন, কিন্তু ভাল প্রশাসক নন। তাই এই আইন এনে সরকার পুলিশ বা সেনা দিয়ে মহামারি সামলানোর চেষ্টা করেছিল। বিশেষ প্লেগ কমিটি এবং প্লেগ অফিসার তৈরি করা হল। বম্বে এবং পুণের প্লেগ কমিটিতে মিলিটারির লোকেরাই ছিলেন প্রধান, ডাক্তার ছিলেন মাত্র এক জন।
রুদ্রজিৎ পাল
কলকাতা-৩৯
বিভ্রান্তিমূলক
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিবহণ দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি আনন্দবাজার পত্রিকার (১৪।৬।২০২০) প্রথম পাতায় ‘জেদের লড়াইয়ে অচল বাস’ শীর্ষক খবরের প্রতিবাদে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। সেই চিঠি থেকে বোঝা যাচ্ছে, ওই সংবাদটি বিভ্রান্তিমূলক এবং এই কঠিন সময়ে তা জনমানসে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে। রাজ্য সরকার যখন আমপান বিপর্যয় এবং করোনা পরিস্থিতি সামলাতে আন্তরিকভাবে লড়ছে, এবং সব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতে তৎপর, তখন আপনাদের সহযোগিতা করার অনুরোধ করা হচ্ছে এবং সত্যতা যাচাই করে খবর প্রকাশের অনুরোধ করা হচ্ছে।
তথ্য অধিকর্তা, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
প্রতিবেদকের জবাব: আমরা পাঠকের কাছে এবং সাংবাদিকতার শর্ত মেনে সংবাদ পরিবেশনে দায়বদ্ধ। কোনওরকম আতঙ্ক ছড়ানো আমাদের উদ্দেশ্য নয় এবং ছিলও না। তবে এই সংবাদে ভুল শব্দ চয়নের জন্য বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়ে থাকলে আমরা দুঃখিত।
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy