Advertisement
০২ মে ২০২৪
Society

কটূক্তিতে আসক্ত

নিজেদের ‘আধুনিক মানসিকতার মানুষ’ মনে করা বামেরা যদিও শেষ পর্যন্ত তাঁদের জন্য কিছুই করে উঠতে পারেননি।

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২৩ ০৪:৫১
Share: Save:

‘দুরারোগ্য’ (১০-৮) শীর্ষক সম্পাদকীয়র পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। সিপিআইএম-এর রাজ্য সম্পাদকের স্মরণে থাকবে যে, একটা সময় তাঁদের নেতৃত্বাধীন সরকার ‘বারবনিতা’দের শ্রমিকের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বিস্তর আলাপ-আলোচনা ও বিভিন্ন প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। তার পর গঙ্গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে কয়েক লক্ষ কিউসেক জল। নিজেদের ‘আধুনিক মানসিকতার মানুষ’ মনে করা বামেরা যদিও শেষ পর্যন্ত তাঁদের জন্য কিছুই করে উঠতে পারেননি। বরং যৌনকর্মীদের পেশায় ঘনিয়েছে অনিশ্চয়তার কালো মেঘ। আক্ষেপের বিষয়, আজ ক্ষমতা হারানো সেই রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার বিষয়টিও উঠে আসে এই পেশায় নিয়োজিত নারীদের নিয়ে। হতাশা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, দলের নেতারা বার বার তার নিদর্শন রাখছেন। এমনিতেই কটূক্তি করার ক্ষেত্রে বাম নেতাদের পূর্বসূরিরা অজস্র উদাহরণ রেখে গিয়েছেন। জানি না, সে দিন সিপিএম-এর যৌনকর্মীদের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে বিচলিত বোধ করা কতটা মানবিক ছিল। আর আজ যৌনকর্মী এবং মডেল— এই দুই পেশাকে এক পঙ্‌ক্তিতে এনে তাঁরাই জনগণের কাছে নিজেদের অনেকটা মেকি প্রমাণ করে দিলেন।

নিজেদের বিপ্লবী, সংস্কৃতিমনস্ক এবং আধুনিক চিন্তাধারার পৃষ্ঠপোষক মনে করা বামপন্থীদের রুচিবোধের বহিঃপ্রকাশ যদি এ রূপ হয়, তা হলে বলাই যায় যে, ক্ষমতায় থাকতে না পারায় ও ক্ষমতার দম্ভ চলে যাওয়ায় তাঁরা সকলে পাল ও হাল-বিহীন নৌকার যাত্রী, যার ডুবে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। একদা এঁরাই কংগ্রেস রাজনীতির তীব্র সমালোচনা করে এবং মেহনতি মানুষের বন্ধুরূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে সুদীর্ঘ চৌত্রিশ বছর একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম রেখেছিলেন। অথচ, আজ সেই কংগ্রেসিদেরই ছাতার নীচে আশ্রয় নিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচানোর দ্বিচারিতা ঢাকার জন্য এই সব বেঁফাস কথা বলতে শোনা যাচ্ছে। মানুষের পাশে থাকার আশ্বাসের যে মূল বাণী বামপন্থীদের থাকা উচিত, আজকে সেই বৈপ্লবিক চিন্তাধারার বামপন্থী কত জন আছেন? মনে মনে নিজেকে ভোগবাদের চরম সীমায় পৌঁছে দিয়ে বহিরাবরণে সাম্যবাদের বুলি আওড়ালে, তা আজকের নেট-নাগরিকেরা খুব সহজেই মেপে নিতে পারেন। তাই সময় থাকতে বিরোধিতার হাজার একটা বিষয় পেয়েও বামপন্থীরা যদি তা হেলায় হারান, তা হলে শুধু আসন সংখ্যায় শূন্য নয়, নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতেও সময় লাগবে না।

রাজা বাগচী, গুপ্তিপাড়া, হুগলি

ব্যাধিগ্রস্ত

‘দুরারোগ্য’ সম্পাদকীয় প্রবন্ধে সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদকের ‘বারবনিতা’ শব্দের কটূক্তিকে তাঁদের রাজনৈতিক পূর্বসূরিদের ব্যাধির উপসর্গ প্রকট হয়ে উঠেছে বলে যথার্থই উল্লিখিত। এই ব্যাধি প্রাক্‌-স্বাধীনতা আমল থেকেই তাঁদের ছিল। যদিও তখন সিপিএম ছিল না, ছিল সিপিআই। তখন নেতাজির বিরুদ্ধে তাঁদের জঘন্য কটূক্তির ইতিহাস আজকের প্রজন্মের কাছে অনেকটাই ধূসর হয়ে গিয়েছে। সেই সিপিআই ভেঙে আজকের সিপিএম। তবে নারী সম্পর্কে সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদকের সাম্প্রতিক কটূক্তির ব্যাধি পিতৃতন্ত্রের ব্যাধি বলে সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে। বাম দল বলে পরিচিত দলের সম্পাদক যদি এই ব্যাধির শিকার হন, তা হলে তাঁদের ‘সাম্যের কথা’ এক প্রকার ফাঁকা আওয়াজ ছাড়া আর কিছু নয়। বামপন্থী চর্চা উন্নত সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের চর্চা বলেই শুনে এসেছি। কিন্তু সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদকের কটূক্তি শুধু তাঁর ব্যক্তিগত বললেও, তা তাঁর রাজনৈতিক চর্চার প্রতিফলনকেই ব্যক্ত করে।

পদ্মাবতী বসু, কলকাতা-৩৪

চলছে চলুক

অনলাইন ভোট প্রসঙ্গে তূর্য বাইন-এর ‘চাই বিকল্প ব্যবস্থার খোঁজ’ (১০-৮) প্রবন্ধটি ভালই। কিন্তু আমাদের দেশে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে তা সময়োপযোগী নয়। যদিও ঘরে বসে ভোট দেওয়ার বিষয়ে অনেকেই আহ্লাদিত, বিশেষ করে বয়সজনিত কারণে বা অসুস্থতার জন্য আমরা যাঁরা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারি না। এই ব্যবস্থায় যেমন সরকারের প্রচুর অর্থ বেঁচে যাবে, তেমনই ঝামেলা বা ঝুঁকিও প্রচুর। এখন রাজনৈতিক দলগুলো ভোটকেন্দ্রে ঝামেলা করে, ছাপ্পা ব্যালট জমা দেয়, ব্যালট বাক্স চুরিও করে। অনলাইন ভোটে ঘরে ঘরে অশান্তি, গুন্ডামি বাড়বে। ঘরে এসেই হুমকি দেওয়া হবে বিশেষ বিশেষ প্রতিনিধিকে ভোট দেওয়ার জন্য এবং প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে গুন্ডাবাহিনী নিজেরাই জোর করে অনলাইন ভোট দিয়ে দেবে ওদের এবং আমাদের সময় বাঁচানোর জন্য। সব বাড়িতে তো আর পুলিশ বসানো যাবে না। তা ছাড়া, অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব থাকে পুলিশের উপরেও। তাই প্রতিটি দলই এই প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করবে ন্যায্য কারণেই। সুতরাং, যা চলছে তা-ই চলুক।

পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-৬১

ঘৃণার খেলা

‘ঘৃণার উপত্যকা’ (৯-৮) শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রসঙ্গে কিছু কথা। আমাদের সংবিধান আমাদের সবাইকে স্বাধীন ভাবে ধর্মাচরণের অধিকার দিয়েছে। কেউ তাতে বাধা দিতে পারে না। সংবিধানের কোথাও এ কথার উল্লেখ নেই যে— কেউ এক স্থান থেকে আর এক স্থানে গিয়ে ধর্মীয় জনসভা বা শোভাযাত্রায় যোগ দিতে পারবেন না। ভিন রাজ্য থেকে লোক গিয়ে সেই প্রথাকে এগিয়ে নিয়ে যেতেই পারেন। যদি কেউ রামনবমীর মিছিলে যোগ দিতে চান, তবে তাঁকে কী ভাবে আটকানো সম্ভব? সম্প্রতি হরিয়ানার নুহ জেলায় যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা ঘটে গেল, তা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আলাপ-আলোচনাও হচ্ছে বিস্তর। অভিযোগ— রীতিমতো ঘোষণা করে অশান্তি তৈরি করা হয়েছে। প্রশাসন তাকে ঠেকানোর চেষ্টা মাত্র করেনি। সাম্প্রদায়িক সংঘাতের অজুহাতে সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের সম্পত্তির উপর বুলডোজ়ার চালিয়েছে বলেও খবর আসছে। কিন্তু কেন বেছে বেছে অন্য সম্প্রদায়ের মানুষদেরই টার্গেট করা হল?

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মিছিল মুসলমানদের মসজিদের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় অশান্তির প্ররোচনা তৈরি হয়। মুসলমানরা আক্রমণ করেন হিন্দুদের উপর। হিন্দুরা সেই আক্রমণ প্রতিরোধ করেন। হরিয়ানার তিনটি জেলা জুড়ে বিপুল অশান্তি হয়। সেই অশান্তির আগুনে পুড়ে যায় হাজার হাজার ঘর। মুসলমানদের ক্ষতি হিন্দুদের তুলনায় বহু গুণ বেশি। কারণ যেখানে এই অশান্তি হয়েছে, সেখানে মুসলমানরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। হরিয়ানার মোট জনসংখ্যার মাত্র সাত শতাংশ ইসলাম ধর্মাবলম্বী হলেও, নুহ জেলায় সেই অনুপাতটি আশি শতাংশের কাছাকাছি। কিন্তু সব কিছু তো আর সংখ্যা দিয়ে বিচার হয় না। যে সমস্ত ভবন বা বাড়ি থেকে পাথর ছোড়ার মতো ঘটনা ঘটেছে, সেই সব বাড়িতেই বুলডোজ়ার চালিয়েছে প্রশাসন। হিংসাকে প্রশ্রয় দিলে তা বাড়বে। তাই এই ব্যবস্থা।

এই হিংসায় ছ’টি প্রাণ চলে গিয়েছে। আহতের সংখ্যাও ৭০ ছাড়িয়েছে। সাম্প্রদায়িক হিংসায় জ্বলছে হরিয়ানা। জনসাধারণেরও নিস্তার নেই এই হিংসা থেকে। প্রতি বছর শ্রাবণ মাসে স্থানীয় দু’টি মন্দিরে হিন্দু দর্শনার্থীরা পুজো দিতে আসেন। সেখানে কোনও অশান্তি হওয়ার কথাই নয়। কিন্তু, সেই অশান্তির ছায়া এসে পড়ল এ বার তাঁদের উপর। মেওয়াট দর্শন যাত্রায় ভিড় বেড়েছে ধর্মীয় আবেগ থেকে। আর সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগিয়েছে ধর্মপ্রসারকামীরা। সামনেই লোকসভা নির্বাচন। তার ঠিক আগে মণিপুর এবং হরিয়ানার হিংসার ঘটনা কী ইঙ্গিত করছে, তা সকলের কাছেই স্পষ্ট। এই ঘটনার পর পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্ট ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন শাসক তার রাজধর্ম পালন করলেই রক্ষা।

প্রদ্যুৎ সিংহ, অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Women leftist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE