Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Luiz Inácio Lula da Silva

সম্পাদক সমীপেষু: ব্রাজিলের নয়া দিন

লুলা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম বার ২০০২-এ, এবং দ্বিতীয় বার ২০০৮ সালে নির্বাচিত হন। তাঁর আট বছরের সময়সীমায় তিনি ব্রাজিলের কয়েক কোটি মানুষের মধ্যে থেকে দারিদ্র দূর করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা।

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২২ ০৫:৪৭
Share: Save:

লুইস ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা পুনরায় ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে বিজয় ভাষণে বলেছেন, “ওরা আমায় জ্যান্ত কবর দিতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি এখানে, তোমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি!” তাঁর নির্বাচন আশা জাগায়, মানবিকতা কি ফিরে আসছে বিশ্ব জুড়ে? গত কয়েক দশকে আমরা দেখেছি পুঁজিবাদ ও এক নব্য সাম্রাজ্যবাদের চোখরাঙানি! বাড়ছে বেকারত্ব, মধ্যযুগীয় ভৃত্য-মনিব সম্পর্ক এব‌ং ধর্ম-বর্ণের উপর ভিত্তি করে বিষ ছড়ানো। পরিবেশকে খামখেয়ালি ভাবে ব্যবহার করেছেন বিশ্বের ক্ষমতাবানরা। এই সময় ব্রাজিলে লুলার প্রত্যাবর্তন, ও তার সঙ্গে প্রায় সমগ্র একটা মহাদেশে শ্রমজীবী মানুষের হয়ে লড়াই করতে চাওয়া বামপন্থীদের ফিরে আসা কি তৃতীয় বিশ্বকে নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে?

লুলা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম বার ২০০২-এ, এবং দ্বিতীয় বার ২০০৮ সালে নির্বাচিত হন। তাঁর আট বছরের সময়সীমায় তিনি ব্রাজিলের কয়েক কোটি মানুষের মধ্যে থেকে দারিদ্র দূর করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু, ব্রাজিলে বোলসোনারোর হাত ধরে তীব্র দক্ষিণপন্থার উত্থান ঘটলে, তারা লুলা ও তাঁর ‘ওয়ার্কার্স পার্টি’র বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। লুলাকে ৫৮১ দিন জেল খাটতে হয়। এই মধ্যবর্তী কয়েক বছরে, ব্রাজিলে ফিরে এসেছে ক্ষুধা, দারিদ্র। আমাজ়ন বৃষ্টি-অরণ্যকে বিনষ্ট করা হয়েছে। পরিসংখ্যান বলে, এই সময় ব্রাজিলে প্রতি সেকেন্ডে ১৮টি গাছ উন্নয়নের নামে কেটে ফেলা হয়েছে। গৃহহারা হতে হয়েছে বহু মানুষকে।

তবে, ব্রাজিলের মানুষ অল্প সময়ের মধ্যেই লুলাকে ফিরিয়ে এনেছেন। ল্যাটিন আমেরিকা এমন এক মহাদেশ, যার শতাব্দীপ্রাচীন লড়াই, নিঃসঙ্গতা, দারিদ্রের কথা আমরা বার বার পড়েছি গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস, পাবলো নেরুদার মতো লেখকের লেখায়, বক্তৃতায়। মার্কেস ১৯৮২ সালে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পরে ‘ল্যাটিন আমেরিকার নিঃসঙ্গতা’ শীর্ষক ভাষণে বলেছিলেন— সমস্ত দমনপীড়ন, নির্যাতন, লুটতরাজ, আত্মবিক্রয় সত্ত্বেও আমাদের উত্তর হচ্ছে, জীবন।

ল্যাটিন আমেরিকার মানুষ জীবন দিয়ে উত্তর দিতে জানেন।

সৌমাল্য চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা-৩২

বোমা বাজি

‘অ-নিয়মের পুজো’ (২৪-১০) শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রসঙ্গে ‘বাজির দৌরাত্ম্য’ ও অন্যান্য চিঠিপত্র (সম্পাদক সমীপেষু, ৩১-১০) পড়ে বোঝা যাচ্ছে, পুজোর বাজির দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে গেলে রাজনৈতিক বোমাবাজি আগে বন্ধ করতে হবে। রাজ্য জুড়ে অবাধে বোমার সঙ্গে শব্দবাজিও ঢুকছে। ‘অলিগলিতে নজর নেই, ঢুকছে দুষ্কৃতীও’ (১-১১) সংবাদে এ জন্য দায়ী করা হয়েছে পুলিশ-প্রশাসনের নজরদারির অভাব, সব গ্রামীণ পথে নজরদারি সম্ভব না-হওয়া, ঢিলেমি এবং উদাসীনতাকে। সংবাদমাধ্যম প্রায় প্রতি দিন জানাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে অসংখ্য বোমা মজুত হওয়া, বোমার চোরাগোপ্তা কারখানা খোলা, বোমার কারণে দুর্ঘটনা ঘটা, কথায়-কথায় বোমাবাজি ও মৃত্যুর কথা। অর্থাৎ, পরিস্থিতি হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে।

সামনে পঞ্চায়েত ভোট। রাজ্যে জীবিকার উপযুক্ত ও সম্মানজনক কাজের অভাব প্রকট। উপায়, পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে কোনও ভাবে জিতে রাজ্যের রাজস্বের ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিজের অংশ বুঝে নেওয়া। অভূতপূর্ব দুর্নীতির বাড়বাড়ন্তে এলাকায় ক্ষমতা দখলের জন্য প্রাণপণ লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছে। আরও তীব্র তীক্ষ্ণ বিস্তৃত হচ্ছে বোমাবাজি। আর সেই ফাঁকে অবাধ হয়ে যাচ্ছে শব্দবাজি। এখানে বিষয়, কালীপুজো, দীপাবলি বা ছট নয়। ভারত খেলায় জিতলে, নতুন বছরের উৎসবে, প্রিয় রাজনৈতিক দল জিতলেও বাজি ফাটানো হয়। বৃষ্টি হলে বাজি ফাটে, বৃষ্টি না-হলেও বাজি ফাটে। এই উন্মত্ততার জন্য কোনও ধর্মীয় অ্যাজেন্ডারও প্রয়োজন পড়ে না। এর সমাধানে রাজনীতির আলোচনায় পরিবেশকে একেবারে সামনের সারিতে আনতে হবে। এই পরিবেশের কেন্দ্রে আছে জনস্বাস্থ্য, যা বিজ্ঞানমনস্কতার আলোয় বিচার করতে হবে। এ রাজ্যে কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ এবং ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট বা নিরি-র গবেষণাপ্রসূত বাজি এবং পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড এক্সপ্লোসিভ সেফটি অর্গানাইজ়েশন-এর অনুমোদন রাজনৈতিক স্তরে আলোচনা হয়েছে, এমন খবর জানা যাচ্ছে না। সবুজ বাজি নিয়ে বিভ্রান্তি সর্বত্র। অন্য দিকে, বোমা, বিস্ফোরক ইত্যাদি নিয়ে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি এ রাজ্যে কাজ করছে। বোমাবাজি আর শব্দবাজি, আতশবাজি এ ক্ষেত্রে আলাদা বিষয় নয়। তাই এই সমস্যার সমাধানে পারস্পরিক দূষণের রাজনীতি না করে কেন্দ্র ও রাজ্য সমন্বয় দরকার।

এই ক্ষেত্রে একটা মুশকিল আছে, যা একান্ত ভাবেই পশ্চিমবঙ্গের। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে অহিংস, সমাজতান্ত্রিক ধারার সঙ্গে সশস্ত্র সংগ্রামেরও উজ্জ্বল ভূমিকা আছে। এই সশস্ত্র পথে ১৯৪৭-পূর্ব অখণ্ড বঙ্গে বোমা-গুলি-বন্দুক-বিস্ফোরক ব্যবহারের ইতিহাস আছে। স্বাধীনতার পরে ১৯৭০-এর দশকে বোমা-পাইপগান ফের ব্যবহার করা হল। ১৯৮০-৯০ দুই দশক মতাদর্শের সন্ধিক্ষণে চাপা পড়ে গিয়েছিল সশস্ত্র ধারার পরম্পরা। ইতিমধ্যে ১৯৭০-৮০ দশকে পরিবেশ দূষণ ও ভাবনার জন্ম নিল নতুন আঙ্গিক ও চরিত্র নিয়ে। সেখানেও দূষণ বিরোধী প্রচারে এ রাজ্যে বিজ্ঞান আন্দোলন এগিয়ে ছিল। পরমাণু শক্তি কেন্দ্র হতে দেওয়া হয়নি এ রাজ্যে। কিন্তু ২০০০-এর পর থেকে পুরনো সব চরিত্র কাল্পনিক হয়ে যায়। বামপন্থী আদর্শের অবমূল্যায়ন হতে শুরু করল। ২০০০-২০২০, দুই দশকে পশ্চিমবঙ্গবাসী প্রতিবেশী রাজ্যের বোমা, আতশবাজি কিনছে, এ রাজ্যেও ঘরে ঘরে বোমা তৈরি হচ্ছে। রাজনৈতিক সদিচ্ছার এমন অভাবে রাজনীতিই প্রতিশোধ নেবে, নিচ্ছেও। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগে মনোনয়নপত্রে তাই একটা শপথ-বাক্য জুড়ে দেওয়া হোক— আমার দল কোনও বোমা-বাজি ফাটাবে না, আমিও কোনও বোমা-বাজি ফাটাব না, ফাটাতে দেব না।

শুভ্রাংশু কুমার রায়, চন্দননগর, হুগলি

গোবেচারা

‘গরুর ধাক্কায় ক্ষতি ট্রেনে, ক্রমেই বাড়ছে দুর্ভোগ’ (৩১-১০) সংবাদটি পড়লাম। না, ভুল পড়িনি। ট্রেনের ধাক্কায় গরুর ক্ষতি নয়, গরুর ধাক্কায় ট্রেনের ক্ষতি। সত্যিই তো গাভীকুলের কি স্পর্ধা! ট্রেনের সঙ্গে ‘সংঘর্ষে’ লিপ্ত হয়? তাও আবার ‘বন্দে ভারত’-এর মতো দ্রুতগামী অত্যাধুনিক ট্রেন। রেলের তরফে জানানো হয়েছে, চলতি মাসের প্রথম ৯ দিনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০০টি ট্রেন। চলতি বছরে সংখ্যাটা পেরিয়েছে চার হাজারেরও বেশি।

এর পর হয়তো ‘গোবেচারা’ শব্দটির অর্থ নতুন করে নির্ধারণ করতে হবে। তবে একটা খটকা থেকেই গেল। গরুগুলো কি ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার আগে এক বারও বুঝল না যে, ট্রেনের ক্ষতি করতে গিয়ে তাদের প্রাণটাও যাবে? রেল কর্তৃপক্ষ কিন্তু এ বিষয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেননি। রেলের তরফে ওই চার হাজার গরুর মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে কি না, তা-ও আদৌ স্পষ্ট নয়।

মনোজ গুপ্ত, কলকাতা

অমিল শংসাপত্র

যে কোনও শিশু জন্মানোর এক মাস পরেই বার্থ সার্টিফিকেট পেয়ে যাওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু পোর্টালের সমস্যার কারণ দেখিয়ে অনেক দেরি করছে মুর্শিদাবাদ পুরসভা। আমার মতো বহু অভিভাবকের সন্তানের ৯ মাস বয়স হওয়া সত্ত্বেও বার্থ সার্টিফিকেট কবে পাব, পুরসভার কেউ বলতে পারছে না। এ দিকে বার্থ সার্টিফিকেট ছাড়া রেশন কার্ড, আধার কার্ড হচ্ছে না, ফলে মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন। এর দ্রুত সুরাহা আশা করি।

নাজিব হোসেন, মুর্শিদাবাদ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Luiz Inácio Lula da Silva Brazil
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE