শ্রমিক, শিল্পীদের সহায়তার আর্জি’ (৬-১) শীর্ষক সংবাদ সূত্রে জানতে পারলাম, ফরওয়ার্ড ব্লক করোনা পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে অসংগঠিত শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে শিল্পী, কলাকুশলী-সহ সাংস্কৃতিক কর্মীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে আবেদন জানিয়েছে। করোনা আক্রমণের প্রথম থেকেই অসংগঠিত শ্রমিকদের আর্থিক সঙ্কট নিয়ে সমাজ সরব। কিন্তু বাংলার প্রায় প্রতিটি জেলার শহর-মফস্সলে ছড়িয়ে থাকা মূল সংস্কৃতি মাধ্যম অর্থাৎ, গান-নাচ-ছবি-আবৃত্তি ইত্যাদি পারফর্মিং আর্টের স্বনির্ভরশীল শিল্পী-শিক্ষকদের রুজি বন্ধ হওয়া নিয়ে সমাজ তেমন সরব নয়, যদিও সমাজে সুস্থ সাংস্কৃতিক পরিবেশ তৈরির নীরব ও নিরন্তর কারিগর এঁরা। তাই রাগবিদ্যা চর্চার এক নগণ্য সেবক হিসাবে উক্ত আবেদনের জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। গত বছর ১৩ এপ্রিল ‘বাঁকুড়া শাস্ত্রীয় সঙ্গীত সমাজ’-এর পক্ষ থেকে বাঁকুড়ার জেলাশাসকের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীকে কোভিড পরিস্থিতিতে শিল্পী-শিক্ষকদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল। জেলাশাসকের দফতর থেকে সেই আবেদন পশ্চিম মেদিনীপুরে ডিভিশনাল কমিশনারের কাছে পাঠানো হয়। সেই চিঠি মুখ্যমন্ত্রী দেখেছেন কি না, জানা যায়নি। প্রসঙ্গত, রাজ্য সরকার লোকশিল্পীদের জন্য অনেক আগেই মাসিক ভাতা চালু করেছে। পরে মহিলাদের জন্য ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্প চালু হয়েছে। কিন্তু মূল সংস্কৃতি মাধ্যমের শিল্পী-শিক্ষকদের আর্থিক সঙ্কট নিয়ে মোটেও ভাবেনি।
এ কথা সকলেই মানবেন যে, মাস মাইনের সরকারি, আধা-সরকারি বা স্বনির্ভরশীল বেসরকারি চাকরিজীবীর হাতে বাড়তি কিছু টাকা থাকলে তবেই গানবাজনা বা আঁকা ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের খোঁজ পড়ে। এটাই গড়পড়তা বাঙালি পরিবারের দস্তুর। কিন্তু, গত দু’বছর অনেকের পকেটেই টান পড়েছে আর তাই প্রথম নাকচের তালিকায় রয়েছেন মফস্সল বাংলার ওই সব পারফর্মিং আর্টসের শিল্পী-শিক্ষকরা। আবার কারও ইচ্ছে থাকলেও সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে বাড়িতে গানের ওস্তাদ বা আঁকার শিল্পীর জন্য দরজা বন্ধ রেখেছেন। ফলে, জেলা শহর-মফস্সলের শিল্পী-শিক্ষকসমাজ চরম আর্থিক সমস্যার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। অনেকে পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন। আবার এত দিনের এক পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় গিয়ে যে এঁরা সাফল্য পাবেন, সে নিশ্চয়তাও নেই। করোনা আবহে এঁদের পেশা পরিবর্তনের জন্য সুস্থ সংস্কৃতিচর্চার পরিসরে এক শূন্যস্থানের সৃষ্ট হবে।
জয়দীপ মুখোপাধ্যায়