Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
cooking gas

সম্পাদক সমীপেষু:কাঠের উনুন

জ্বালানি তেল, গ্যাসের দাম যে হারে বাড়ছে, তাতে গ্রামের মানুষরা পুনরায় খড়, কাঠ, ঘুঁটে দিয়ে রান্না শুরু করবেন।

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২১ ০৬:২৭
Share: Save:

স্বাতী ভট্টাচার্যের ‘কলকাতার কাঠকুড়ানি’ (১০-১১) প্রবন্ধটি প্রসঙ্গে বলি, গ্রামেগঞ্জেও এক‌ই চিত্র। উজ্জ্বলা যোজনায় সবাইকে গ্যাস সিলিন্ডার, ওভেন দেওয়া হল। এখন ওই গরিবদের পক্ষে রান্নার গ্যাস কেনা অসাধ্য হয়ে উঠেছে। আগে রেশন দোকানে কেরোসিন তেল পেয়ে অনেক গরিব মানুষ তা জমিয়ে রেখে বেশি দরে বিক্রি করতে পারতেন, এখন সেটাও হয় না। লম্ফ, উনুন জ্বালাতে উল্টে তাঁদেরকেই কেরোসিন তেল কিনতে হচ্ছে। আগে কাঠ, ঘুঁটে, গুল পুড়িয়ে গ্রামের ঘরে ঘরে রান্না হত। এখন গ্যাস ব্যবহারের ফলে লোহার বালতির উনুন, বা মাটির তৈরি উনুনগুলো যত্ন করে ঢাকা রয়েছে। আমি গ্রামে দেখেছি বাগদি, বাউরি পরিবারের মেয়েরা পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে ঘুরে তালগাছের বাগড়া ছাড়িয়ে বেড়াত। গাছের শুকনো ডাল, কাঠি কুড়িয়ে মাথায় করে নিয়ে যেত, তার পর সে সব দিয়ে বাড়িতে রান্নার কাজ শুরু করত।‌ কিছু মেয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে গরু, মোষের গোবর কুড়িয়ে বেড়াত। ঘুঁটে দিয়ে ওই ঘুঁটে বিক্রি করত, তা পুড়িয়ে রান্নাও করত তারা। বাড়ির জন্য আমি সাইকেলে করে ৪/৬ পণ ঘুঁটে কিনে বস্তায় ভরে নিয়ে এসেছি কত বার।

জ্বালানি তেল, গ্যাসের দাম যে হারে বাড়ছে, তাতে গ্রামের মানুষরা পুনরায় খড়, কাঠ, ঘুঁটে দিয়ে রান্না শুরু করবেন। একটা সময়ে গ্রামের কাঠকলগুলোতে ২ টাকা কেজি দরে ছাঁটাই কাঠ কিনতে পাওয়া যেত। এক পণ ঘুঁটের দাম ছিল ৩-৫ টাকা, এখন শুনছি ১০-১২ টাকা পণ হয়েছে। কেরোসিন তেল তো গ্রামেও অমিল। এক দিন গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে ফের আঙিনায় জ্বলে উঠবে মাটির তৈরি উনুনগুলো।

মুন্সি দরুদ

কাজিপাড়া, বীরভূম

অধরা এলপিজি

‘কলকাতার কাঠকুড়ানি’ প্রবন্ধটি প্রসঙ্গে বলতে চাই যে, আজ থেকে অন্তত ৫০ বছর আগে, যখন সবে মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে এলপিজি বা জ্বালানি গ্যাসের বহুল প্রচলন শুরু হল, তখন মনে পড়ে আমার স্কুলশিক্ষিকা মা হঠাৎ সকলকে চমকে দিয়ে এই নতুন যন্ত্রটি নিয়ে হাজির হলেন। বাড়ির একটি টেবিলে বার্নার বসানোর ব্যবস্থা হল। অমন যন্ত্র দেখে বাড়ির পিসিমা, বড়মারা তো ভয়ে কাঁটা। সেই সময় মা বাড়ির বড়দের বোঝাতেন, “এখন আর ধোঁয়ায় চোখ জ্বলবে না, স্টোভ বার্স্ট করার ভয়‌ও নেই, খরচ‌ও বাঁচবে।” প্রথমে একটি সিলিন্ডার, তা থেকে ধীরে ধীরে ডবল সিলিন্ডারে প্রোমোশন‌ পেল নিম্ন মধ্যবিত্তের রান্নাঘর। আজ এই এলপিজি সিলিন্ডারের ‘হাজারিকরণ’ চাকরিজীবী লোকেদের সংসারের বাজেট সব ওলটপালট করে দিয়েছে। নিম্নবিত্ত, অল্পবিত্ত, প্রান্তিক লোকজনের বুঝি সেই কয়লা, গুল, উনুন, ধোঁয়ার পুরনো যুগে ফিরে যাওয়ার দিন এল।

সুদীপ দাশ

কলকাতা-৭০

ভাতের হাঁড়ি

মোটা চালের ভাত করতে বড্ড বেশি সময় ফোটাতে হয়। দীর্ঘ প্রতীক্ষা, চাল সেদ্ধ হতেই চায় না। সত্যিই দেশ যত না এগোয়, সরকারি রিপোর্ট এগোয় তার চেয়ে বেশি। ভোটের বাজারে যে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরতে হবে। তবুও হতদরিদ্রের কেরোসিনের ভর্তুকিটুকুও নিঃশব্দেই উঠে যায়। গ্যাস সিলিন্ডারের ভর্তুকি কমতে কমতে শূন্যে নামিয়ে আনা হয়। অর্থনীতির সোজা হিসাবে সরকারের আয় বাড়াতে হবে। অতএব কোপ বসাও জনগণের ঘাড়ে। যাবতীয় সরকারি সুবিধাপ্রাপ্ত সাংসদ-বিধায়করা কি প্রান্তিক মানুষের প্রতি দিনের চাল সেদ্ধ করার যন্ত্রণা বুঝতে পারেন?

সঞ্জয় রায়

দানেশ শেখ লেন, হাওড়া

অপরিকল্পিত

কেবল কলকাতা নয়, পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ প্রান্তিক মেয়ে কাঠ কুড়িয়ে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রান্না করেন। বিশেষ করে জঙ্গলমহলের আদিবাসী মহিলাদের দিনে তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা ধরে জঙ্গলে শুকনো কাঠ, ঝাঁটি জ্বালানি সংগ্রহ করতে হয়। সাম্প্রতিক ক্ষেত্রসমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, জঙ্গলমহলের ৮০ শতাংশেরও বেশি পরিবারের হাঁড়ি চড়ে শুকনো জ্বালানি কাঠে। হয়তো অনেকে উজ্জ্বলা গ্যাস কানেকশন নিয়েছিেলন, কিন্তু তাঁরা এক বছরের বেশি সময় ধরে আর গ্যাস ব্যবহার করছেন না। কারণ, সঠিক সময়ে গ্যাস পরিষেবার অভাব। তা ছাড়া তিন বেলা ভাত রান্না করতে হলে ভর্তুকির গ্যাস এক মাসও চলে না। অন্য দিকে, জঙ্গলে পর্যাপ্ত জ্বালানি কাঠের জোগান থাকায় তাঁরা কাঠ-নির্ভর জ্বালানির দিকে ফিরছেন।

কাঠ পুড়িয়ে রান্না করলে শিশু ও নারীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে, দূষণ বাড়বে। কেন্দ্রীয় সরকারের হিসাব অনুসারে, কাঠ পুড়িয়ে রান্নার ফলে ৫৩৫ মিলিয়ন টন কার্বন উৎপন্ন হয়েছে ২০২০ সালে, ২০৩০ সালে তা দাঁড়াবে প্রায় ৬২৭ মিলিয়ন টন কার্বন। এই কার্বনের নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে ২৪ কোটি গ্রামীণ পরিবারকে এলপিজি গ্যাস দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মোদী সরকার ২০১৬ সালে। তা বাস্তবে হয়নি। যাঁরা পেয়েছিলেন তাঁরা দু’-এক বার ব্যবহার করে গ্যাস সিলিন্ডার তুলে রেখেছেন। সঠিক পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধান করে পরিকল্পনা করা উচিত ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের।

প্রভাত কুমার শীট

মেদিনীপুর

তেলের দাম

স্বাতী ভট্টাচার্য তাঁর প্রবন্ধে যথার্থই লিখেছেন যে, রাজ্যের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ করা কেরোসিনের কোটা থেকে প্রতি মাসে প্রায় আড়াই হাজার কিলোলিটার অবণ্টিত থেকে যাচ্ছে। ফলে ‘ল্যাপ্স’ হয়ে যাচ্ছে।

এই প্রসঙ্গে আরও একটু তথ্য যোগ করতে চাই। পশ্চিমবঙ্গের জন্য এখন প্রতি মাসে বরাদ্দ কেরোসিন তেলের পরিমাণ ৫৮,৬৬৮ কিলোলিটার, যা ৮.৭ কোটি গ্রাহকের মধ্যে বণ্টিত হওয়ার কথা। রাজ্যে এখন রেশন কার্ডে বিভিন্ন গ্রাহকের প্রাপ্য কেরোসিনের পরিমাণে হেরফের রয়েছে। কেউ পান মাসে মাথাপিছু এক লিটার, কেউ ৬০০ মিলিলিটার, কেউ ১৫০ মিলিলিটার। রাজ্যের কেরোসিন ডিলারদের তরফে খাদ্য দফতরকে বার বার আবেদন করা হয়েছে ওই অবণ্টিত, অতিরিক্ত তেল প্রতি মাসে সব ডিজিটাল রেশন কার্ড-প্রাপ্ত গ্রাহকের মধ্যে সমান ভাবে বণ্টন করে দেওয়া হোক। কিন্তু তার অনুমতি মেলেনি। তার ফলে মার্চ, ২০২১-এ ত্রৈমাসিক কোটার ১১,৭২২ কিলোলিটার কেরোসিন অতিরিক্ত হয় এবং অবণ্টিত থেকে যায়। যাঁরা কাঠ, খড়, পাটকাঠি, ঘাস দিয়ে উনুন জ্বালান, তাঁদের ভাগ্যে ওই কেরোসিন জোটেনি। রেশনে কেরোসিনের পরিমাণ বাড়ালে কি গরিবের সুবিধা হত না?

কেরোসিন আর গ্যাস, দু’টিরই দ্রুত দাম বাড়ায় কোনওটাই আর দরিদ্রের নাগালের মধ্যে নেই। বাজারে কেরোসিনের দাম প্রায় একশো টাকা ছুঁয়েছে। এর ফলে গ্রামাঞ্চলের বহু মহিলা তাঁদের রেশনে পাওয়া কেরোসিনটুকু বাজারে বিক্রি করে, সেই টাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনছেন। আর উনুন জ্বালানোর জন্য কাঠের খোঁজে বেরোচ্ছেন। পরিণতি, এক দিকে কাঠ পোড়ানোর ফলে বায়ুদূষণ এবং শ্বাসকষ্ট, অন্য দিকে গাছের সংখ্যা ক্রমশ কমে আসা, এই দুইয়ে মিলে পরিবেশ আরও বিপন্ন হয়ে পড়ছে, যার প্রভাব পড়বে জলবায়ুর উপরেও। কেরোসিন কিন্তু দূষণকারী জ্বালানি নয়, যদি তার স্টোভের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। কেরোসিন বা গ্যাসের স্টোভে নীল শিখা বার হলে এবং বাসনে কোনও কালি না পড়লে বুঝতে হবে যে, তা থেকে কার্বন দূষণ হচ্ছে না। পরিবেশ বাঁচাতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর লক্ষ্যে পৌঁছনোর চেষ্টা অবশ্যই করা উচিত। কিন্তু যত দিন না সোলার কুকারের মতো কোনও বিকল্প সহজে মিলছে, তত দিন ধনী যদি গ্যাস ব্যবহার করতে পারেন, দরিদ্রই বা কেরোসিন ব্যবহার করবেন না কেন?

অমল ভরদ্বাজ

কলকাতা-৯৯

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

cooking gas Petrol Diesel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE