Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Pollution

সম্পাদক সমীপেষু: আকালের সঙ্কেত

গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাতে সব দেশকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২১ ০৪:৪৪
Share: Save:

আমাদের পরিবেশ কী ভাবে দূষিত হচ্ছে, কল্যাণ রুদ্র তা খুব সুন্দর ব্যাখ্যা করেছেন (‘ঘরে ডেকে আনা মৃত্যু’, ৫-৬)। আমরা এখন জলবায়ু পরিবর্তনকে বেশ অনুভব করতে পারছি। মুশকিল হল, সাধারণ মানুষ এ ব্যাপারে খুব একটা চিন্তিত নন। চিন, ভারতের মতো জনবহুল দেশে এখনও কয়লার ব্যবহার রমরম করে চলছে। গোটা পৃথিবীতে গাড়ির জ্বালানি হিসেবে এখনও তেলের ব্যবহার তুঙ্গে। বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাস বাড়ার অর্থ চরম আবহাওয়ার সম্ভাবনা বাড়া। কয়েক বছর আগে যেমন ভাবা হয়েছিল, তার থেকেও দ্রুত ও ব্যাপক হারে জলবায়ুর বদল হচ্ছে। খরা, বন্যা, ঝড় এখন স্বাভাবিক ঘটনা। সমুদ্র উঁচু হচ্ছে বলে নিচু দ্বীপগুলি এবং উপকূলের শহরগুলি বিপন্ন হচ্ছে। উষ্ণ অঞ্চলে কীট-পতঙ্গ বাহিত রোগ ছড়াচ্ছে। আগে ঠান্ডা আবহাওয়ার জন্য যেখানে জীবাণুবাহী নানা পতঙ্গ বেঁচে থাকতে পারত না, সেই সব জায়গাও এখন উষ্ণ। তাই রোগবাহী পতঙ্গের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়ছে।

আমাদের দেশে জলবায়ু বদলের জন্য কৃষকরা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বৃষ্টিপাত অনিয়মিত হলে চাষে সমস্যা হয়। কৃষিক্ষেত্রে ক্রমাগত মাটির নীচের জল ব্যবহারের জন্য জলের আকাল দেখা দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সেই আকাল আরও বাড়বে। মনে রাখতে হবে, অবস্থা যতই খারাপ হোক, দেশের সমস্ত মানুষকে খাওয়াতে গেলে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়াতেই হবে। বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের আধিক্যের দায়িত্ব প্রধানত উন্নত দেশগুলির। তা সত্ত্বেও উন্নত বিশ্ব নিঃসরণ কমানোর যথেষ্ট চেষ্টা করছে না। তবে সেই অজুহাতে আমাদের বসে থাকা চলে না। মোট নিঃসরণে আমাদের ভাগও যথেষ্ট। তাই গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাতে সব দেশকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।

রবীন রায়

শ্যামনগর, উত্তর ২৪ পরগনা

স্বেচ্ছাচার

‘ঘরে ডেকে আনা মৃত্যু’ নিবন্ধটি গুরুত্বপূর্ণ। একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় লন্ডভন্ড করে দিচ্ছে জীবন-জীবিকা ও বাস্তুতন্ত্রকে। লাগামহীন শিল্পায়ন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বনাঞ্চলের সঙ্কোচন, যত্রতত্র বর্জ্য নিক্ষেপ পরিবেশকে বিপন্ন করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই শতাব্দীর শেষে ৩-৪ ডিগ্ৰি সেলসিয়াস উত্তাপ বাড়বে পৃথিবীর, যা চরম প্রভাব ফেলবে মানুষের জীবনে। কৃষিজমিতে লাগামছাড়া কৃত্রিম রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে আজ বিশাল আয়তনের কৃষিজমি তার প্রাকৃতিক গুণ হারিয়ে বন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ জলের আধার আগামী কয়েক বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে, তবুও মানুষ জল অপচয় করেই চলেছে। সম্প্রতি বিশ্ব পরিবেশ দিবস (৫ জুন) পালিত হল, কিন্তু গাছ কাটা অব্যাহত। প্রকৃতির প্রতি মানুষের চরম অবহেলা বিনাশকেই ডেকে আনবে।

উৎপল মুখোপাধ্যায়

চন্দননগর, হুগলি

চরিত্রের পরীক্ষা

‘মন নিয়ে পরীক্ষা’ (রবিবাসরীয়, ৩০-৫) নিবন্ধে পথিক গুহ বলেছেন, মানুষ খারাপ বা ভাল চরিত্রগত ভাবে হয় না। পরিবেশ বা পরিস্থিতি তাকে খারাপ বা ভাল করে তোলে। এই প্রসঙ্গে, আমার একান্ত ব্যক্তিগত একটি ঘটনার কথা উল্লেখ না করে পারলাম না।

আশির দশকের গোড়ার কথা। সবে চাকরিতে যোগ দিয়েছি। আমাদের কিছু প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল। সেই রকমই এক প্রশিক্ষণে, প্রশিক্ষক আমাদের মধ্যে চার জনকে নির্বাচন করে একটি অনুশীলন দিলেন। কোনও কলেজের পরীক্ষা আসন্ন। কিন্তু, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পরীক্ষা হবে কি না, তাই নিয়ে মিটিং। যাঁরা মিটিং-এ ছিলেন, তাঁদের চার জনের কপালে স্টিকার সেঁটে দেওয়া হল। এক জন প্রিন্সিপাল, এক জন জেলাশাসক, এক জন ছাত্র ইউনিয়নের সেক্রেটারি যে অত্যন্ত ভদ্র ও মেধাবী, আর এক জন বিরোধী ইউনিয়নের নেতা, যিনি নিরেট এবং মাথাগরম। যাঁর কপালে স্টিকার, তিনি নিজের পরিচয় জানতে পারছেন না। কিন্তু সেই পরিচয় অনুসারে সকলে তাঁর সঙ্গে ব্যবহার করছে। ঘটনাচক্রে বিরোধী নেতার স্টিকার পড়েছিল আমার এক বন্ধুর কপালে, যে আমাদের ব্যাচের অন্যতম যুক্তিবাদী এবং শান্ত স্বভাবের। কিছু ক্ষণের মধ্যেই দেখা গেল, সে মাথা গরম করে উল্টোপাল্টা কথা বলছে, কারণ খেলার নিয়ম অনুযায়ী সবাই তার সঙ্গে তেমনই ব্যবহার করছে। পথিকবাবুর কথায়, এ হল ‘বেনালিটি অব ইভিল’— শয়তানির তুচ্ছতা। বুদ্ধিমান মানুষের বুদ্ধিলোপ। মানুষের খারাপ বা ভাল হওয়ার চাবিকাঠি মানুষেরই হাতে।

কাজলকান্তি চক্রবর্তী

কলকাতা-১৪১

শয়তানি

পথিক গুহের এই নিবন্ধের বিষয় তাঁর অন্যান্য রচনার থেকে অনেকাংশেই ভিন্নতর। নিবন্ধানুসারে স্ট্যানলি মিলগ্রামের পরীক্ষাধীন ৬৫% মানুষের ক্ষেত্রে শয়তানি মনুষ্য চরিত্রেই মিশে আছে। এঁদের ক্ষেত্রে শয়তানি তুচ্ছ ব্যাপার। কিন্তু বাকি ৩৫%-র ক্ষেত্রে ওই পরীক্ষার ফলাফল কী ছিল? নিবন্ধে উল্লেখ না থাকলেও এটা মনে করা যায় যে, শয়তানি বাকিদের ক্ষেত্রে নগণ্য ব্যাপার নয়। শয়তানি সব মনুষ্যচরিত্রে মিশে নেই। হতে পারে সংখ্যাগরিষ্ঠের মধ্যেই এই ভয়াবহ প্রবণতা দেখা যায়, কিন্তু ৩৫% সংখ্যাটাও তো নেহাত কম নয়! ওই পরীক্ষার এক-তৃতীয়াংশের বেশি মানুষ কিন্তু ঊর্ধ্বতনের হুকুম তামিল করতে গিয়ে শয়তান হয়ে উঠছেন না। এই ফলের দিকে আলোকপাত করে মনুষ্যচরিত্র সম্বন্ধে কিছুটা আশাবাদী হওয়া কি একেবারেই অসম্ভব?

শ্রাবণী পাল

কলকাতা-১০৫

বিনোদন নয়

এ বছর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা বাতিল হয়েছে। যদিও অতিমারির কারণে এই সিদ্ধান্ত নিতে হল। কিন্তু এখান থেকেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা করার অবকাশও পাওয়া গেল।

আমরা এই দু’টি পরীক্ষাকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়ে ফেলেছি। এই পরীক্ষাগুলির গুরুত্ব নিশ্চয়ই থাকবে, কিন্তু সেটা অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কাছে। মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল সাধারণ জনগণ ও মিডিয়ার কাছে একটা উৎসবে পরিণত হয়েছে। স্কুল স্তরের একটা পরীক্ষার ফলাফল কেন টিভির ব্রেকিং নিউজ় হবে? কেন কয়েক জন সফল পরীক্ষার্থীদের নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা হবে? কেন জেলা বনাম কলকাতার এক কাল্পনিক প্রতিযোগিতা খবরের কাগজের হেডলাইন হবে? এগুলি কি আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার পক্ষে স্বাস্থ্যকর? আমি জানি না কোনও উন্নত দেশে স্কুল স্তরের দু’টি পরীক্ষা নিয়ে এই ধরনের আদিখ্যেতা করা হয় কি না। শুধু এ বারের জন্য নয়। বরাবরের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক হোম সেন্টারে হোক। যেমন স্নাতক বা স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা হয়, কিন্তু মিডিয়া তার খবর রাখে না, এ ক্ষেত্রেও তা-ই হোক। বন্ধ হোক মেধা তালিকা প্রকাশ। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষামাত্র, দুর্গাপুজো বা বিশ্বকাপ নয়।

প্রিয়ব্রত মুখোপাধ্যায়

নিকুঞ্জপুর, বাঁকুড়া

তাচ্ছিল্যের ত্রাণ

গত ৭ জুন প্রথম পাতায় তাজপুর সৈকতে ত্রাণে পাওয়া জামাকাপড়ের স্তূপের ছবি দেখে মর্মাহত হলাম। মানুষের দুর্দশায় যে মানবতাবোধে মানুষ হাত বাড়িয়ে দেয়, তার মধ্যে সহমর্মিতা থাকবে। তা করুণার দান যেন না হয়। অন্তর থেকে যে দান, সেখানে দাতার অন্তরের সৌন্দর্য যেন প্রকাশিত হয়। ত্রাণের দান অবহেলায় ধূলিলুণ্ঠিত হবে কেন? দারিদ্রকে আমরা কতই না হেয় করে চলি। ত্রাণকর্মীদের কাছে মিনতি, একটু কি শোভনসুন্দর ভাবে ত্রাণসামগ্রী দেওয়া যায় না?

ত্রিদিব মিশ্র

শান্তিনিকেতন, বীরভূম

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Environment Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE