Advertisement
০১ মে ২০২৪
Sexual Harassment

সম্পাদক সমীপেষু: আইন ও আন্দোলন

ভারতীয় সমাজে যে নারীবিদ্বেষী মনোভাব, মেয়েদের পোশাক নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য, চরিত্র নিয়ে অপবাদ দেওয়া ইত্যাদি যা দীর্ঘ দিন সয়ে আসা হয়েছে, তারও প্রতিবাদ দরকার।

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৪ ০৫:১৬
Share: Save:

আর্শিয়া শেঠির ‘সাম্যময় কর্মক্ষেত্রের সন্ধানে’ (৮-১) শীর্ষক প্রবন্ধে কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গসাম্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কাজের জায়গায় যৌন হয়রানি নিয়ে ইদানীং মহিলারা সরব হয়েছেন। চেন্নাইয়ের ‘কলাক্ষেত্র’-এর মতো বিখ্যাত নৃত্য শিক্ষায়তনে একশোটিরও বেশি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কিছু কাল আগে বিদেশের মতো ভারতেও ‘আমিও এই যৌন নিগ্রহের শিকার’ এই মনোভাবের ‘মি টু’ আন্দোলন সাড়া ফেলেছিল। তবে দেশবাসীর মনে সবচেয়ে বেশি ছাপ ফেলেছিল ২০২৩ সালে, দেশের জন্যে আন্তর্জাতিক পুরস্কার আনা সাক্ষী মালিক-সহ অন্য মহিলা কুস্তিগিররা যখন দিল্লির রাস্তায় প্রতিবাদ আন্দোলন করছিলেন। তাঁদের প্রতিবাদ ছিল ভারতের কুস্তি ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ব্রিজভূষণ সিংহের হাতে তাঁদের নির্যাতন ও হয়রানির বিরুদ্ধে। শাসক সরকার ভোট রাজনীতির সঙ্কীর্ণ স্বার্থে ব্রিজভূষণকে অপসারণ ও শাস্তি না দিলেও, তাঁর নেতৃত্বে নবনির্বাচিত কমিটি ভেঙে দিয়েছে। তার কারণ, দেশের মানুষের সহানুভূতি মহিলা কুস্তিগিরদের উপরে রয়েছে। বিলকিস বানোর ধর্ষকদের আবারও গারদে পোরার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। যৌন নিগ্রহের কথাটা জানানো খুব জরুরি। সমাজ বা লোকলজ্জার ভয়ে মেয়েরা চুপ করে থাকলে অত্যাচারের প্রতিবিধান হবে না। শুধু কর্মক্ষেত্রে নয়, স্কুল-কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়েও মেয়েদের যৌন নিগ্রহের শিকার হতে হয়। এই অপরাধের বিরুদ্ধে তীব্র ধিক্কার, প্রতিবাদ হওয়া দরকার।

ভারতীয় সমাজে যে নারীবিদ্বেষী মনোভাব, মেয়েদের পোশাক নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য, চরিত্র নিয়ে অপবাদ দেওয়া ইত্যাদি যা দীর্ঘ দিন সয়ে আসা হয়েছে, তারও প্রতিবাদ দরকার। যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে ভারতে কঠোর আইন আছে। কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি (প্রতিরোধ, নিষিদ্ধকরণ ও প্রতিকার) আইন, ২০১৩। এই আইন মোতাবেক একটি পাঁচ সদস্যের অভ্যন্তরীণ কমিটি তৈরি করতে হবে সব কর্মক্ষেত্রে। কমিটির কাজ হবে সংস্থার সকলকে প্রশিক্ষিত করা, কাজের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা, এবং অভিযোগের তদন্ত করে নিষ্পত্তি করা।

চারশো নারীপুরুষের মধ্যে একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ৩৭% মেয়ে কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির শিকার। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার আধিকারিকগণ যদি এই প্রতিরোধ আইনের (সংক্ষেপে ‘পশ’) সাহায্য নেন, তবে কর্মক্ষেত্রে একটি সাম্য ও ন্যায়পূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকে। প্রবন্ধকার ঠিকই বলেছেন, এই আইনটি একাধারে নমনীয় ও কঠোর।

শিখা সেনগুপ্ত, বিরাটি, উত্তর ২৪ পরগনা

দেশের কালিমা

‘খেলরত্ন, অর্জুন পথে ফেলে এলেন বিনেশ’ (৩১-১২) শীর্ষক খবরটি দেখে মর্মাহত। একের পর এক কুস্তিগির জাতীয় সম্মান ফিরিয়ে দিচ্ছেন। বজরং পুনিয়া দেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ সম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার পর সম্প্রতি বিনেশ ফোগট খেলরত্ন ও অর্জুন পুরস্কার ফিরিয়ে দিলেন। সাক্ষী মালিক জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সমস্ত প্রতিযোগিতা থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। কুস্তিগিরদের এই প্রতিবাদী পন্থাগুলি ভারতের নাগরিক হিসাবে আমাদের কাছে অত্যন্ত লজ্জার। এঁরা দেশ তথাপি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের প্রথম সারির উজ্জ্বল নক্ষত্র। এঁদের অপমান ভারতের ক্রীড়াজগতে যে কালিমা লেপন করছে, তা এক কথায় ঘৃণ্য ও নিন্দনীয়।

ছ’জন মহিলা কুস্তিগিরের উপর ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের নির্যাতনের অভিযোগের পর বছর ঘুরে গিয়েছে। কিন্তু সেই অভিযোগের তদন্তে কুস্তি ফেডারেশনের প্রাক্তন সভাপতিকে রাতারাতি বেকসুর বলে দাবি করা হয় এবং অভিযোগগুলিকে ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যমূলক বলে উল্লেখ করা হয়। ভারতের পুলিশ-প্রশাসন যে আজও প্রভাবশালীদের ছায়া থেকে বেরোতে পারেনি, তার এক জ্বলন্ত উদাহরণ কুস্তিগিরদের ন্যায়বিচার না পাওয়া। ব্রিজভূষণের একান্ত অনুগামী বলে পরিচিত সঞ্জয় সিংহকে কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি হিসাবে নির্বাচিত করা হল কোন যুক্তিতে? যেন এই বার্তা দিয়ে রাখা হল— ভারতের সংবিধানে যা-ই লেখা থাক, গণতন্ত্র বিনষ্টকরতে সরকার বদ্ধপরিকর। এত কিছুতেও ভারত সরকারের বিন্দুমাত্র হেলদোল নেই। সরকারের স্বজনপোষণ এই বার বন্ধ হোক। শুধুমাত্র ক্রিকেটকে এগিয়ে দিয়ে বাকি খেলাগুলিকে পিছিয়ে দিলে আখেরে দেশেরই যে ক্ষতি হয়, এবং সেই সঙ্গে জনগণেরও যে ক্ষতি হয়, সেই সরল সত্যটা রাজনীতির ধ্বজাধারীরা যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন, ততই মঙ্গল।

জয়ী চৌধুরী, সোদপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

বইয়ের নেশা

রবিবারের সকালে যশোধরা রায়চৌধুরীর স্মৃতিসুধাভরা প্রবন্ধ ‘শারদোৎসবের চেয়ে এর আনন্দ কিছু কম নয়’ (৭-১) মন ছুঁয়ে গেল। কেউ যদি বইয়ের নেশায় মজেন, সে নেশা যে কী মারাত্মক হয়ে দাঁড়ায়, তার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অভিজ্ঞতা নেই এমন মানুষ বিরল। বই কী চায়? পাঠ। পাঠে কী হয়? রবীন্দ্রনাথের কথা ধার করে বলা যায়, শৃঙ্খলে বদ্ধ জ্ঞান শৃঙ্খলমুক্ত হয়। পাঠকের আনন্দ হয়। আনন্দ আনে মুক্তি। প্রশ্ন এ বার, বই মিলবে কোথায়? পথ বাতলে গেছেন গুণী পূর্বসূরিরা— ‘বাই, বেগ, বরো অর স্টিল’ (খরিদ, ভিক্ষা, ধার কিংবা চুরি)। অনেক কাল ধরেঅবশ্য বই চুরির এক সম্মানজনক পরিভাষা আরোপিত হয়ে আসছে, ‘বুক লিফ্টিং’। কী শাস্তি, কোন কারাগার নির্ধারিত এই অপরাধের জন্য, কে জানে? হয়তো কিছু লোকের সামনে অপদস্থ হতে হয়, এটাই প্রধান শাস্তি। কখনও ভোলার নয় লোকাল ট্রেনের কামরায় স্বল্পমূল্যের বইয়ের ফেরিওয়ালার সেই মোক্ষম কথাটা— লেখাপড়া জানে তো সকলে, পড়াশোনা করে ক’জন!

দেখতে দেখতে বইমেলা প্রায় পঞ্চাশের দিকে পা বাড়াচ্ছে। পঞ্চাশেও আজকাল সবাই তরুণ। বাড়ি বদলে বদলে যেতে পারে। যেখানেই থাকুক সেটাই তো ঘর। তাই বইমেলা অবস্থান বদলালেও, তার প্রতি টান একই রকম রয়েছে, বরং বেড়েছে। অনেকে বিদেশ থেকে দেশে ফেরেন শুধুমাত্র কলকাতার বইমেলার টানে। সারা বছর কৃচ্ছ্রসাধন করে গৃহশিক্ষক তাঁর সঞ্চিত কয়েক হাজার টাকা দিয়ে বই কেনেন বইমেলায় এসে। মৃত সন্তানের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে বাড়ি বাড়ি কাজ-করা মা লিটল ম্যাগাজ়িন বার করে চলেন। এত মানুষ এক সঙ্গে দেখার জায়গা বইমেলা। এখানে আগত মানুষদের লক্ষ্য আর উপলক্ষ কম নেই। কিন্তু শুধু বইয়ের জন্য এত বিভিন্ন ধরনের মানুষের একত্রে মিলন ভাবা যায়! এত বই কোথায় পাব? চোখে দেখেও তো শান্তি। বই পড়লে বোমা পড়ে না। নির্বাচনে গুলিতে নিহত এক মানুষকে এক রাজনীতিক ‘সমাজবিরোধী’ বলে দাগিয়ে দিলে প্রবীণ এক সাহিত্যিক প্রতিবাদ করে বলেছিলেন, “ও সমাজবিরোধী হতে যাবে কেন? আমার কাছে প্রায়ই ও আসত। বই নিয়ে যেত পড়বে বলে।”

শান্তি প্রামাণিক, উলুবেড়িয়া, হাওড়া

বাসের দশা

কলকাতা জুড়ে যে সকল বাস চলাচল করে, তাদের অবস্থা খুব খারাপ। অলিখিত নিয়ম হয়ে গিয়েছে, ভিড় না হলে গাড়ি চলবে না। গাদাগাদি করে যাতায়াত রোজনামচা হয়ে গেছে। যেখানে বাসের ভাড়া ১২ টাকা, সেখানে অন্য কোনও পরিবহণ ব্যবহার করলেই ১০০ টাকার উপরে খরচ। শহরের মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, গরিব খেটে খাওয়া মানুষদের একমাত্র ভরসা বাসযাত্রা। ব্যক্তিগত গাড়িচালকদের খুব তাড়া, নির্ধারিত সময়ের আগেই পৌঁছতে চায়। উল্টো দিকে বাসের কোনও তাড়া নেই, বাসের সওয়ারিদের কোনও তাড়া থাকতে নেই। অনেক যাত্রীই চান, সামান্য ভাড়া বাড়িয়ে ভাল পরিষেবা দেওয়া হোক। কিন্তু কে শোনে কার কথা?

সৈয়দ সাদিক ইকবাল, সিমলা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sexual Harassment Women Workplace
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE