Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: মাস্কের আমি, তুমি

প্রশ্ন একটাই, সমাবেশে মাস্ক পরে জন-গণ-মন গাইলে সেটা জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননা হবে না তো! আবার মাস্ক না পরে গাইলে তো নিয়মবহির্ভূত ব্যাপার হবে!

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২০ ০০:০১

দিলীপ ঘোষ মহাশয় নানা রঙের ও রকমের পদ্ম-ছাপ মাস্ক পরে দেখা দিচ্ছেন প্রতি দিন। আশা করা যায়, এই উদাহরণ অনুসরণ করে, কিছু দিনের মধ্যেই বাজারে আসবে ঘাসফুল মাস্ক। তার পর ধীরে ধীরে হাত ও কাস্তে-হাতুড়ি ছাপ। তখন হবে ‘মাস্কের আমি মাস্কের তুমি, মাস্ক দিয়ে যায় চেনা।’ ‘যথোচিত সামাজিক দূরত্বের নিয়ম’ মেনে, মুখে নির্বাচনী প্রতীকওয়ালা মুখোশ আঁটা, হাতে নির্বাচনী প্রতীকওয়ালা দস্তানা পরা জনসমাবেশ দেখা এখন সময়ের অপেক্ষা। প্রশ্ন একটাই, সমাবেশে মাস্ক পরে জন-গণ-মন গাইলে সেটা জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননা হবে না তো! আবার মাস্ক না পরে গাইলে তো নিয়মবহির্ভূত ব্যাপার হবে!

শুভেন্দু দত্ত
কলকাতা-১০১

লাঠি ও আমরা

ইদানীং সংবাদমাধ্যমে ও সামাজিক মাধ্যমে কিছু চিত্র দেখা যাচ্ছে, যেখানে পুলিশকর্মীরা লকডাউন ভাঙার ‘শাস্তি’ হিসাবে সাধারণ মানুষকে লাঠিপেটা করছে, আর জনগণ সেটিকে কুর্নিশও জানাচ্ছে। আমরা অনন্ত কাল ধরে দেখে আসছি, পুলিশ, বা, আধাসেনা, সেনা বা অন্য কোনও পদস্থ ব্যক্তি সাধারণ মানুষের সঙ্গে যাচ্ছেতাই ভাবে কথা বলছে, বা চড় মারছে, বা কান ধরে ওঠবোস করাচ্ছে— আমাদের কাছেও এগুলি ‘স্বাভাবিক’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অথচ, কোনও নিয়মের বইতে এগুলির আইনি স্বীকৃতি নেই; বরং, কেউ আইন ভাঙলে একাধিক শালীন পদ্ধতি আছে মোকাবিলা করার— আটক করা, গ্রেফতার করে মামলা রুজু করা, ইত্যাদি। নিশ্চয় দুরূহ সময়ে দুরূহ পন্থা অবলম্বন করতে হয়, কিন্তু মানুষের সঙ্গে অপমানজনক ও কুরুচিকর আচরণ করলে এক সময়ে তো হিতে বিপরীত হবে।

সামাজিক মাধ্যমে আমরা বেআইনি পদ্ধতিগুলিকে সোল্লাস সমর্থন জানাচ্ছি। পুলিশ লাঠি চালালে বা চুলের মুঠি ধরে টানলে বা চাকার হাওয়া বার করে দিলে যদি আমরা হাততালি দিয়ে বলি ‘ঠিক’, এত দিন যেটাকে ফেক এনকাউন্টার বলা হত সেটাকেও বলি ‘ঠিক’, কেউ যদি বলে “পকড় পকড় কে গোলি মারো” সেটাকেও বলি ‘ঠিক’, এ রকম চলতে থাকলে কাল যদি একদল প্রতিবাদরত মানুষের উপর গুলি বা ট্যাঙ্ক চালিয়ে দেওয়া হয়, আমরা সেটাকেও ‘ঠিক’ বলে ফেলব না তো?

অভিজিৎ দাস
হুগলি

কেন চুক্তি

‘মুখোশের আড়াল’ (১২-৫) চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘‘১৯১৮-য় ব্রেশ-লিটভস্ক’এ (বর্তমান বেলারুশ) হিটলারের নেতৃত্বাধীন জার্মানির সঙ্গে লেনিনের নেতৃত্বাধীন বলশেভিকদের শান্তিচুক্তি হয়েছিল।’’ তখন হিটলার কোথায়? হিটলার তখন জার্মানির এক জন সৈনিক মাত্র। জার্মানির এক শতাংশও মানুষও তখন তাঁকে চেনেনি। ১৯১৯ সালে হিটলার রাজনৈতিক দলে যোগ দেন। আর জার্মানির চ্যান্সেলর হন ১৯৩৩ সালে।

আর লেনিনকে চুক্তি করতেই হত। কারণ তিনি ক্ষমতায় এসেছেন মূলত যুদ্ধবিরোধী প্রতিশ্রুতিকে সামনে রেখে।

এর পর পত্রলেখক বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, স্তালিনের সোভিয়েট ছিল হিটলারের প্রথম দিকের দোসর। স্তালিন এক জন স্বৈরাচারী ও উৎপীড়ক শাসক নিশ্চয়ই হতে পারেন, কিন্তু এ কথা নিশ্চিত ভাবে বলা যায়, তাঁর মনেও ‘শুদ্ধ জার্মান রক্ত’ ও ‘কমিউনিস্টহীন জার্মানি’ গড়ার কারিগর হিটলার ও তাঁর নাৎসি জার্মানির প্রতি ছিল অকৃত্রিম ঘৃণা। এ বার প্রশ্ন, তা হলে মলোটভ-রিবেনট্রপ চুক্তি হল কেন?

মনে রাখতে হবে, ১৯৩৫ সালে কমিন্টার্নের অধিবেশনেই পৃথিবীর সমস্ত গণতান্ত্রিক শক্তিকে বামপন্থী বা কমিউনিস্টদের সঙ্গে ফ্যাসিবাদ বিরোধী মঞ্চ তৈরির ডাক দেওয়া হয়। বলা বাহুল্য সেই আহ্বান ব্যর্থ হয়। এমনকি হিটলারের রাইনল্যান্ড দখল এবং চেকোস্লোভাকিয়া দখলের পর পরই সোভিয়েট পুনরায় ফ্যাসিবাদ বিরোধী জোট গঠনের আবেদন জানায় ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সকে। সেই আবেদনে সাড়া না দিয়ে, তারা জার্মানির সঙ্গে মিউনিখ চুক্তি স্বাক্ষর করে। এর পর সোভিয়েটের অনাক্রমণ চুক্তি ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। মলোটভ নিজে চিঠিতে এক পার্টি সদস্যকে বলেন, ‘‘...সোভিয়েট এখনও ফ্যাসিবাদী আক্রমণ সামলাতে প্রস্তুত নয়।’’ ইতিহাসবিদ ই পি থমসন এ বিষয়ে কটাক্ষ করেছেন, ‘‘সোভিয়েটকে জব্দ করতে যারা হিটলারের সঙ্গে মিউনিখ চুক্তি করেছিল, তাদের মুখে সোভিয়েট-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তির সমালোচনা সাজে না।’’

মনে রাখতে হবে, নাৎসি পার্টি ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই ‘ইহুদি পরিচালিত সোভিয়েট’ বিরোধী প্রোপাগান্ডায় নামা শুরু হয়ে গিয়েছিল। আর জার্মানির এই তীব্র কমিউনিস্ট-বিরোধিতার জন্যই যুদ্ধশেষে মার্কিন জেনারেল জর্জ প্যাটনকে বলতে হয়েছিল, "We fought the wrong enemy." সুতরাং, মলোটভ-রিবেনট্রপ চুক্তি ছিল রাশিয়ার তরফে যুদ্ধ ঠেকানোর উপায় মাত্র।

শাশ্বত ঘোষ
লিলুয়া, হাওড়া

বাংলা অভিধানে

কোভিড, নোভেল করোনাভাইরাস, প্যানডেমিক, মিউটেশন, জনতা কার্ফু, লকডাউন, কোয়রান্টিন, আইসোলেশন, কন্টেনমেন্ট জোন, সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং, এন-৯৫ মাস্ক, সিঙ্গল ইউজ় গ্লাভস, স্যানিটাইজ়ার, পিপিই, থার্মাল স্ক্যানিং, টেস্টিং কিট, ন্যাট টেস্ট, আরটি-পিসিআর টেস্ট, সোয়াব টেস্ট, ডাবলিং রেট, বায়োসেফটি ক্যাবিনেট, হার্ড ইমিউনিটি, অ্যান্টিবডি, প্লাজ়মা, কো-মর্বিডিটি, অ্যাসিম্পটোম্যাটিক, নাকা-চেকিং, টেলি-মেডিসিন, অ্যান্টিজেন, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ইত্যাদি অনেক শব্দবন্ধ ও শব্দের সঙ্গে দৈনিক সংবাদপত্র মারফত পরিচিত হয়ে আমরা সমৃদ্ধ হলাম এই অতিমারির আবর্তে।

আমার মতো অনেকের কাছেই শব্দগুলো হয়তো অচেনাই ছিল কিছু দিন আগে পর্যন্ত। কিন্তু বর্তমানে অগুন্তি বাঙালির দৈনন্দিন চর্চায় বিরাট ভূমিকা গ্রহণ করার ফলে, শব্দগুলি নিশ্চয় বাংলা অভিধানের পরবর্তী সংস্করণে স্থান পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে।

অতীশ ঘোষ
মাখলা, হুগলি

লজ্জাবোধ

‘মধ্যবিত্তের লজ্জা’ (৭-৫) শীর্ষক চিঠিতে লেখা হয়েছে, উচ্চবিত্তদের প্রচুর সঞ্চয়, নিম্নবিত্তরা সরকারি বেসরকারি নানা সাহায্য পাচ্ছেন, কিন্তু মধ্যবিত্তরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে। কারণ করোনা পরিস্থিতিতে রোজগার অনিশ্চিত হওয়া সত্ত্বেও মধ্যবিত্তের এত লজ্জা, কিছুতেই হাত পাততে পারেন না।

তা হলে গরিব মানুষ, যাঁরা হাত পেতে সাহায্য নিচ্ছেন, তাঁদের কি লজ্জাবোধ বা আত্মসম্মানবোধ নেই? না কি তা মধ্যবিত্তের তুলনায় কম?

আসলে কেউই হাত পেতে সাহায্য নিতে চান না, পরিবর্তিত পরিস্থিতি তাঁকে বাধ্য করে। উচ্চ, মধ্য, নিম্নবিত্ত, সমাজের সকল শ্রেণির মানুষেরই আত্মসম্মানবোধ থাকে।

অনিমেষ দেবনাথ
বেতপুকুর, পূর্ব বর্ধমান

হুঁকোমুখো

বর্তমান পরিস্থিতিতে আমার প্রিয় চরিত্র হুঁকোমুখো হ্যাংলা। বাংলাতেই বাড়ি, যে এক সময় ফুর্তিতে থাকত, তার মুখ আজ ফ্যাকাশে। বাড়িতে আটকে থাকতে আর কত ক্ষণ ভাল লাগে? দুটি লেজ নিয়ে ডান দিকে যাবে না বাঁ দিকে, না কি রাখবে সোজা, বেজায় চিন্তিত সে। ডান দিকে কন্টেনমেন্ট জোন, আর বাঁ দিকে পুলিশের ভয়। যে সারা দিন গান গাইত ‘সারেগামা টিম টিম’, আজ আর পারে না, মুখে মাস্ক দিয়ে কী করে গান গাইবে?
আর একটি ল্যাজ যদি থাকত?

চৈতালি বিশ্বাস

কলকাতা-২৮

coronavirus covid 19 lockdown
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy