Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Dramatist

সম্পাদক সমীপেষু: তিনি সফল নাট্যকার

দীনবন্ধুই প্রথম “সভ্যনামিক মানুষের বর্বর অন্তর” উদ্ঘাটিত করেছিলেন।

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২১ ০৫:১৫
Share: Save:

আবাহন দত্তের ‘প্রথম আধুনিক বাংলা নাট্যকার’ (পত্রিকা, ২৭-২) নিবন্ধ সূত্রে কিছু কথা। দীনবন্ধু মিত্র যুগের শিল্পী, কালের বাণীরূপ। সমাজ সচেতক নাটকের অন্যতম স্রষ্টা। “বাংলা সাহিত্যে বাস্তবতার অগ্রদূত, এবং বোধ হয় তিনিই বাংলা সাহিত্যের সর্বপ্রধান বাস্তববাদী লেখক”— তাঁর এই মূল্যায়ন করেছেন অজিত কুমার ঘোষ, বাংলা নাটকের ইতিহাস বইতে। নিবন্ধকার বলেছেন, “আস্ত একখানা তোরাপ- আদুরী-নিমচাঁদ সৃষ্টি দীনবন্ধুর সাহিত্যিক মুনশিয়ানার অভাবই প্রকট করে।” মুনশিয়ানার অভাব নয়। তোরাপ, আদুরী অত্যন্ত সফল; বাংলা সাহিত্যে অতুলনীয়। এমনকি নিমচাঁদও বাংলায় অনন্য। বঙ্কিমের ভাষায়, “রুচির মুখ রক্ষা করিতে গেলে ছেঁড়া তোরাপ, কাটা আদুরী ভাঙ্গা নিমচাঁদ আমরা পাইতাম।”

দীনবন্ধুই প্রথম “সভ্যনামিক মানুষের বর্বর অন্তর” উদ্ঘাটিত করেছিলেন। অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে নীল-দর্পণ’এর ভূমিকায় লিখেছিলেন, “হে নীলকরগণ!... তোমাদিগের ধনলিপ্সা কি এতই বলবতী যে তোমরা অকিঞ্চিৎকর ধনানুরোধে ইংরাজ জাতির বহুকালার্জ্জিত বিমল যশস্তামরসে কীটস্বরূপে ছিদ্র করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছ?”একান্ত বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তিনি সমাজজীবনের গভীরে প্রবেশ করেছিলেন। নাট্য আঙ্গিকের ক্ষেত্রে কিছুটা শৈথিল্য দোষ সেখানে থাকলেও চরিত্রাঙ্কনে তিনি বাস্তবানুগ সফল ও সার্থক। তাঁর নাটকের বৈপ্লবিক আদর্শ আজও পথ দেখায়। তাঁর প্রহসন ‘জামাই বারিক’-এ আছে কৌলীন্য প্রথার অনিষ্টকর দিকের উল্লেখ। আবার, ব্রাহ্ম-আন্দোলন ও স্ত্রী-শিক্ষার প্রতি পক্ষপাত স্পষ্ট তাঁর ‘লীলাবতী’ প্রহসনে। তবে ঐতিহাসিক ও রোম্যান্টিক পটভূমিতে নাটক লিখতে গিয়ে তিনি ব্যর্থ হন। তাঁর নবীন তপস্বিনী-র মালতী-মল্লিকারা কোনও রূপে পাঠকের মন জোগায়। কবিতার মধ্যে ‘সুরধুনী কাব্য’ ও ‘দ্বাদশ কবিতা’ মনে দাগ না কাটলেও ‘যমালয়ে জীবন্ত মানুষ’ ও ‘পোড়া মহেশ্বর’ হাসির গল্প হিসেবে বিস্ময়ের উদ্রেক করে।

সুদেব মাল, খরসরাই, হুগলি

বিজ্ঞানে অনাগ্রহ

‘বিজ্ঞানের সঙ্কট’ (এষণা, ৩-৩) একটি জরুরি প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়েছে বিজ্ঞানসেবী মানুষদের। বাংলা, তথা ভারতের বিজ্ঞানচর্চা কি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানচর্চার গতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে? উত্তরটি নিঃসন্দেহে নেতিবাচক। দায়ী, কম পরিশ্রমে সিদ্ধিলাভের বাসনা ও চটজলদি উপার্জনের হাতছানির কাছে আত্মসমর্পণ। শিক্ষকতার অভিজ্ঞতায় দেখি, সিংহভাগ শিক্ষার্থীই উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করে জয়েন্ট এন্ট্রান্স, নিট, আইআইটি ইত্যাদি প্রবেশিকা পরীক্ষাকে পাখির চোখ করে। ওরা পরীক্ষাগারের সূক্ষ্ম পরিমাপের পরিবর্তে মহার্ঘ কোচিং সেন্টারের মক-টেস্টের প্রতি অধিক আগ্রহী। ফলে, উচ্চশিক্ষায় পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত, জীববিদ্যার মতো বিষয়ে আসন ফাঁকা থাকছে, অথবা সেখানে মধ্যমেধার প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে, যা বিজ্ঞানের সঙ্কটের প্রধান কারণ। সমাধান হবে তখনই, যখন উচ্চশিক্ষাকে কর্মমুখী করা হবে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান পরীক্ষাগার শিল্পসহায়ক হলে শিল্পমহলও পরীক্ষাগারের প্রতি আগ্রহ দেখাতে বাধ্য হবে।

পার্থ পাল, মৌবেশিয়া, হুগলি

অসমসাহসী

শিবনারায়ণ রায় শতবার্ষিক স্মারক গ্রন্থ-এর সংক্ষিপ্ত সমালোচনা (পুস্তক পরিচয়, ২৭-২) পড়তে গিয়ে মনে হল, বাঙালি প্রকৃত অর্থেই তাঁকে ভুলতে বসেছে। আজকের বাঙালির মধ্যমেধাই কি বিস্মরণের মূল কারণ? না কি, এই বিবর্ণ সময়ে দাঁড়িয়ে তাঁর মতো ঋজু মেরুদণ্ড আমাদের বুকে ভয় জাগানোর পক্ষে যথেষ্ট, তাই ভুলে যেতে চাই? তাঁর চিন্তার আভিজাত্যকে কি আজ স্পর্শ করতে পারি? তাঁর মতো ভাবুক, অনুভবী চিন্তকের আদর্শ ও কাজের বিপুল প্রেক্ষাপট ছাপিয়েও বলতে হয়, এমন আগ্রাসী পাঠকও সহজে পাওয়া যাবে না। শান্তিনিকেতনের বাড়িতে তাঁর ঈর্ষণীয় লাইব্রেরি ছিল।

আশির দশকের একেবারে গোড়ায় অধ্যক্ষ হিসেবে তাঁর রবীন্দ্রভবনে যোগদান। স্বেচ্ছাবসরের পরেও জীবনের বাকি সময়টা শান্তিনিকেতনে থাকতেই তিনি পছন্দ করতেন। সেই পর্বের উপাচার্য অম্লান দত্তের সহযোগিতায় ভাবুক শিবনারায়ণ আর শিল্পী কে জি সুব্রহ্মণ্যমকে আশ্রম ক্যাম্পাসের মধ্যে দু’টি বাড়ি দেওয়া হয়, অবশ্যই অর্থের বিনিময়ে। উদ্দেশ্য ছিল, এমন কৃতী ব্যক্তিত্বরা শান্তিনিকেতনে বসবাস করলে, তা আশ্রমের জন্যেই মঙ্গলজনক। অবশ্য, আজকের শান্তিনিকেতনের সঙ্গে এ সবের মিল খুঁজতে চাওয়া বাতুলতামাত্র।

অধ্যক্ষ শিবনারায়ণের কথা অল্পে শেষ হওয়ার নয়। মেলবোর্ন থেকে সদ্য ফিরেছেন তখন। রবীন্দ্রভবনকে আধুনিক ভঙ্গিতে সাজিয়ে তুলতে চাইছিলেন। তাঁর পরিচালনায় লাইব্রেরি, আর্কাইভ, অডিয়ো-ভিসুয়াল নতুন করে সেজে উঠছিল। শান্তিনিকেতনের প্রথম ‘সাহিত্যমেলা’ তাঁর হাতে। রবীন্দ্রভবনে নানা আন্তর্জাতিক সভার আয়োজন, প্রতি শুক্রবার সন্ধ্যায় ‘উদয়ন’ বাড়িতে সাহিত্যের আসর ইত্যাদি মিলিয়ে শান্তিনিকেতনের ঢিলেঢালা জীবনে যেন নতুন প্রাণসঞ্চার করেছিলেন। রঙের রবীন্দ্রনাথ নিয়ে গবেষণার সময় কেতকী কুশারী ডাইসন ও আমি তাঁর কাছে প্রভূত সহায়তা পেয়েছি। রবীন্দ্রনাথের আংশিক দৃষ্টিবিভ্রমের প্রসঙ্গ আলোচনায় কাগজপত্রে বিরূপ সমালোচনার যে ঝড় উঠেছিল, তার বিরুদ্ধেও তিনি রুখে দাঁড়ান। ক্ষমতার সিংহাসন কখনও তাঁকে নতমস্তক করতে পারেনি।

শুধু তা-ই নয়, কোথায় থামতে হয়, তা তিনি জানতেন। রবীন্দ্রভবনের কর্মজীবনে তাঁর শেষ দিন, অধ্যক্ষ হিসেবে নির্ধারিত সময়ের আগেই চলে যাচ্ছেন তিনি। শেষবেলার অশ্রুসিক্ত বিদায়সভা ইত্যাদি আবেগের প্রশ্নই ওঠে না। কেবল আমরা গুটিকয় তরুণ অফিসের শেষে তাঁর সঙ্গে দেখা করব বলে নিজেরাই ঠিক করেছি। যথাসময়ে তাঁর ঘরে গিয়ে দেখি শূন্য কেদারা। কখন যে তিনি তাঁর কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন, সে কথা তাঁর পিয়নটিও জানেন না। অধ্যক্ষের আসনও যে ক্ষমতারই আসন, তাই বুঝি না-বলেই চলে যাওয়া। কিন্তু সেই ব্যতিক্রমী মানুষটি কি আজ আমাদের মন থেকেও এমন নীরবে নিঃশব্দে চলে যাবেন?

সুশোভন অধিকারী, সীমান্ত পল্লি, শান্তিনিকেতন

আড়ালে অজয়

আগামী ২৭ মার্চ চিত্রপরিচালক অজয় করের ১০৭তম জন্মদিন। জন্মশতবর্ষে তিনি উপেক্ষিত ও অবহেলিত থেকে গিয়েছেন (জন্ম ২৭ মার্চ, ১৯১৪; মৃত্যু ২৮ জানুয়ারি ১৯৮৫)। বাংলা চলচ্চিত্র জগৎ কি শুধু রায়, সেন, ঘটক, সিংহ, মজুমদারদের নিয়েই মূল্যায়ন করে যাবে? তাঁর পরিচালিত জিঘাংসা, হারানো সুর, সপ্তপদী, অতল জলের আহ্বান, সাত পাকে বাঁধা প্রভৃতি অবিস্মরণীয় ছবি। তাঁর প্রতি সম্মান প্রদানের জন্য কিছু প্রস্তাব— তাঁর পরিচালিত সমস্ত ছবি ডিজিটাল করে সংরক্ষণ করা হোক। তাঁর সমগ্র কর্মকাণ্ড নিয়ে গবেষণামূলক গ্রন্থ প্রকাশিত হোক। জাতীয় স্তরে তাঁকে সম্মানিত করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ করা উচিত। তাঁর নামাঙ্কিত পুরস্কার চালু হোক।

বিশ্বনাথ বিশ্বাস, কলকাতা-১০৫

অন্য দুনিয়া

‘নেশাগ্রস্ত’ (সম্পাদকীয়, ৫-৩) অতিমারি কালের প্রামাণ্য ছবি তুলে ধরেছে। ভার্চুয়াল দুনিয়াকেই এখন অতিবাস্তব মনে হয়। এক দিকে আত্মপ্রচার ও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়ার মোহ, অন্য দিকে মনোরঞ্জনের রকমারি আয়োজনের স্বাদ, সবই একটা আঙুলের ডগায়। এর বাইরে রয়েছেন তাঁরা, যাঁদের এই ফোন কেনার ক্ষমতা নেই, যাঁরা স্বল্পশিক্ষিত, অথবা শিক্ষিত হলেও বয়স বা অসুস্থতার জন্যে এই জগতে প্রবেশে অপারগ। পরমুখাপেক্ষী হয়ে বেঁচে থাকতে থাকতে এঁদের মনে হীনম্মন্যতা বাসা বাঁধে। এঁরা এক ধরনের মানসিক ব্যাধির শিকার তো হচ্ছেনই, প্রতারিতও হচ্ছেন। এঁদের সুস্থ রাখার উদ্যোগ করতে হবে।

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-১০৪

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dramatist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE