Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Honey bee

সম্পাদক সমীপেষু: হাতির ভয় মৌমাছিকে

এর পরিবর্তে প্রযুক্তি ব্যবহার করে হাতিদের লোকালয়ে প্রবেশ ঠেকানোর চেষ্টা করা যেতে পারে।

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২১ ০৪:৩০
Share: Save:

বর্তমানে জ্বালানির দাম অত্যধিক বৃদ্ধি পাওয়ায় পোড়া মোবিলের খরচ প্রচুর বেড়েছে। ফলে পোড়া মোবিল সহযোগে তৈরি হুলাও খরচসাপেক্ষ হয়ে পড়েছে (‘পোড়া মোবিলও দামি, হাতি তাড়াতে হিমশিম’, ২২-১১)। তবে হুলার সাহায্যে হাতিদের গায়ে মশাল ছুড়ে মারার প্রবণতা দেখা যায়। বিশেষত দক্ষিণের বেশ কিছু রাজ্যে এই ছবি পশুপ্রেমীদের কষ্টের কারণ।

এর পরিবর্তে প্রযুক্তি ব্যবহার করে হাতিদের লোকালয়ে প্রবেশ ঠেকানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। যেমন চাকরিসূত্রে দেখেছি, উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে এই ফসল পাকার সময় বেশ কিছু রেলগেটে (যেগুলো হাতি চলাচলের রাস্তা বা করিডরের আশেপাশে) হাতির দেখা পেলেই সাউন্ড সিস্টেমে আগে থেকে রেকর্ড করা মৌমাছির আওয়াজ বাজাতে থাকে। এই আওয়াজ হাতিরা বেশ ভয় পায় এবং সমীহ করে চলে। আসলে জঙ্গলের পশুপাখি জঙ্গলের ভাষা বোঝে এবং শোনে। এই সম্বন্ধে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের ট্র্যাফিক ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

সুব্রত দত্ত, কলকাতা-৫৮

একটি অভিযোগ

শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা-য় ১৪২৮-এ প্রকাশিত শ্রীজাত লিখিত ‘খরগোশ আর মারুবেহাগ’ উপন্যাসটির প্লট, পটভূমি, চরিত্রচিত্রণ এমনকি বিষয়বস্তু প্রসঙ্গে এই পত্রের অবতারণা। শ্রীজাতর উপন্যাসের মূল উপজীব্য, “মৃতপ্রায় শিল্প ও শিল্পীরা ডাইং আর্টস অ্যান্ড আর্টিস্টস” (পৃ ১২০)। উপন্যাসে এই ‘মৃতপ্রায় শিল্পী ও শিল্প’-এর আখ্যান প্রতিষ্ঠা করতে যে দু’টি চরিত্র তিনি আশ্রয় করেছেন, তার এক জন জাদুকর, অপর জন সঙ্গীতশিল্পী, এক জন সানাইবাদক।

এই প্রসঙ্গে জানাই, গত ২০১৮ সালে রাতুল চন্দরায় ও অনির্বাণ দাস সম্পাদিত দশম বর্ষ, ত্রয়োদশ সঙ্কলন, বইমেলা সংখ্যা বাতিঘর পত্রিকায় আমার লেখা একটি গল্প ‘এইচ এম টি’ প্রকাশিত হয়েছিল, যা ২০১৯ সালে বাংলার ত্রস্ত নীলিমায় গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত হয় ‘শংকর কবিচন্দ্র বা রামকৃষ্ণ রায় যে আখ্যান লেখেননি’ শিরোনামে। শ্রীজাতর এই উপন্যাসের সঙ্গে আমার সেই গল্পের আশ্চর্যজনক সাদৃশ্য। এ বিষয়ে একটু সূত্রাকারে বলা যাক, কারণ পাঁচ পাতার গল্পের সঙ্গে প্রায় পঞ্চাশ পাতার উপন্যাসের সাদৃশ্য এত বেশি যে, ছত্রেছত্রে তার উদাহরণ দেওয়া সম্ভব।

প্রথমত, আমার গল্পটির বিষয়বস্তু বিশ্বায়নের ফলে হারিয়ে যাওয়া বা হারিয়ে যেতে থাকা শিল্প। শ্রীজাতর উপন্যাসের বিষয়ও তা-ই!

দ্বিতীয়ত, দু’টি ক্ষেত্রেই হারিয়ে যাওয়া শিল্পের প্রধান চরিত্র এক জন জাদুকর ও তার বন্ধু এক সঙ্গীতশিল্পী!

তৃতীয়ত, দুই ক্ষেত্রেই জাদুকর আগে নিয়মিত কাজ পেতেন এবং জাদুকে কেবল মনোরঞ্জনের উপাদান নয় একটি শিল্প বা আর্ট হিসাবে দেখতেন এবং নিজের আর্টিস্ট সত্তার প্রতি তাঁর লালনের অভাব ছিল না।

চতুর্থত, আমার গল্পের জাদুকরের নাম ‘হর’— শিবের নাম। গল্পের নাম ‘শংকর কবিচন্দ্র বা রামকৃষ্ণ রায় যে আখ্যান লেখেননি’ স্বয়ংপ্রকাশ যে এটি শিবায়ন কাব্যের ভাবনাকে ভেঙে লেখার কারণ শংকর কবিচন্দ্র বা রামকৃষ্ণ রায় শিবায়নের আখ্যান লিখেছিলেন বাংলা ভাষায়। শ্রীজাত জাদুকরের নাম দিয়েছেন মোহিনী, নারায়ণের ‘প্রতারক’ রূপ। জাদুকর রয়েছেন একই রকম। এমনকি শারীরিক বর্ণনা সমেত।

পঞ্চমত, এখানেই শেষ নয়, আমার গল্পের জাদুকর প্রেমে পড়েছিলেন গুরুপত্নীর। আর শ্রীজাতর উপন্যাসের সানাইবাদক প্রেমে পড়লেন গুরুকন্যার।

ষষ্ঠত, হয়তো কাকতালীয় কিংবা আমার লেখা গল্পের প্রভাবেই— ‘খরগোশ আর মারুবেহাগ’ উপন্যাসে জাদুকরের সঙ্গিনী চরিত্রটির নাম শ্রীজাত ‘মায়া’ রেখেছেন। আমার গল্পেও ‘মহামায়া’ ছিল জাদুকরের দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম। তাকে ‘মায়া’ নামে উল্লেখ করা হয়েছে গল্পে।

সপ্তমত, সেই জাদুকরের বন্ধু যিনি তিনি সঙ্গীতশিল্পী। মাচার কণ্ঠী-শিল্পী বলতে যা বোঝায়। আমার কণ্ঠী-শিল্পীর কাজ যায় নতুন যুগের ডিজের দাপটে, আর সানাইবাদকের কাজ যায় ক্যাসেটের কারণে। আমার গল্পে সঙ্গীতশিল্পীর নাম অনঙ্গ দাস। তিনি অন্তরে নারী শরীরে পুরুষ। যৌন পরিচয় সমপ্রেমী। এই তথ্যটি আমাদের এই পত্রের ক্ষেত্রেও কাজে লাগবে। শ্রীজাত তাঁর উপন্যাসে কণ্ঠী-গায়ককে সানাইবাদক করেছেন।

অষ্টমত, মাচার কণ্ঠী-গায়ক অনঙ্গ দাস অন্তরে নারী শরীরে পুরুষ। যৌন পরিচয়ে সমপ্রেমী। শ্রীজাত চরিত্রের সমপ্রেমী বৈশিষ্ট্য নিয়ে গিয়েছেন মঞ্জীর চরিত্রে।

নবতম, ম্যাজিক এবং সময় সম্পর্কে বক্তব্যেও আশ্চর্য মিল। হর বলেছিলেন, “কারণ জাদু হল সাধনার বিষয়। সাধনায় সময়কে যেমন স্থির করে দেওয়া যায়, তেমনই সময়কে তাড়াতাড়ি চালানো যায়। জাদুর বলে আপনারা যা দেখেন তা কিন্তু সত্যিই ঘটে।” শ্রীজাতর উপন্যাসে দেখি মোহিনীকে তাঁর সঙ্গীতশিল্পী বন্ধু বলেন, “জানো মোহিনী, সময় নিজেও একটা ম্যাজিক। অনেক সময় একটা মুহূর্ত এমন ভাবে কাটে, যেন বছর পেরোচ্ছি। আবার অনেক সময় দশ বছরেও সময় এগোতে চায় না।” (পৃ ১৫৯) এমনকি শ্রীজাত অনঙ্গ দাসের উল্লিখিত ফোনের প্রসঙ্গটিও তাঁর উপন্যাসে গ্রহণ করেছেন।

শেষত, উদাহরণ আরও বাড়ানো যায়, এমনকি আমার অন্য গল্প থেকেও। শ্রীজাত উল্লিখিত উপন্যাসে মঞ্জীর চরিত্রের বয়ানে লিখেছেন, “ফিচার হতে পারে বা ডকুফিচার, অসুবিধে নেই, কিন্তু মৌলিক হতে হবে, হতে হবে ভাবনার খোরাকসম্পন্ন, হতে হবে দূরদর্শী ও স্পর্শকাতর।” কিন্তু শ্রীজাতর উপন্যাসটি যে ‘মৌলিক’ হল না! তা ভাবনার খোরাকসম্পন্ন ও দূরদর্শী হয়ে থাকলে তো কৃতিত্ব মূল গল্পটির, যা আমার লেখা।

কণিষ্ক ভট্টাচার্য, কলকাতা-৫০

অদ্ভুত অভিযোগ!

সম্প্রতি কণিষ্ক ভট্টাচার্য আমার প্রতি যে অভিযোগ এনেছেন, তারই প্রত্যুত্তরে এই চিঠি। ১৪২৮ বঙ্গাব্দের শারদীয়া আনন্দবাজার পত্রিকা-য় ‘খরগোশ আর মারুবেহাগ’ নামে আমার একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়। কণিষ্কবাবুর দাবি এবং অভিযোগ, আমার এই উপন্যাসের ভাবনা তাঁর লিখিত ও ২০১৮ সালে প্রকাশিত ছোটগল্প ‘শংকর কবিচন্দ্র বা রামকৃষ্ণ রায় যে আখ্যান লেখেননি’ থেকে আহৃত। তিনি প্রেরণা বা প্রভাবের কথা বলেননি, আমার প্রতি সরাসরি কুম্ভীলকবৃত্তির গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। আমি স্পষ্ট ভাবেই এই অভিযোগের বিরোধিতা করছি এবং সম্পূর্ণ ভাবে এই অভিযোগ অস্বীকার করছি। কেন, তা বলি।

প্রথমেই, তাঁর গল্পটি আমি ইতিপূর্বে পড়িনি, তাঁর পাঠানো চিঠির সঙ্গে গল্পটির প্রতিলিপি পেয়ে প্রথম বার পড়লাম। পাঠক হিসাবে এ আমার অজ্ঞতাই বটে, কিন্তু পড়া যে হয়নি, তা সত্যি।

কণিষ্কবাবু যে যে বিন্দু ছুঁয়ে এই অভিযোগ প্রতিষ্ঠা করেছেন, আমি চেষ্টা করব, তাদের স্পর্শ করেই নিজের যুক্তি সাজাবার, পরিশেষে আমার নিজেরও কিছু কথা থাকবে। তার আগে স্বীকার করা ভাল যে, ওঁর ও আমার লেখার মধ্যে কিছু চোখে পড়ার মতো সাদৃশ্য আছে বলেই এই অভিযোগের অবতারণা। কিন্তু কেবল সেই কারণে কণিষ্কবাবু সরাসরি কুম্ভীলকবৃত্তিকেই বেছে নিলেন অভিযোগ হিসাবে, শিল্পের ক্ষেত্রে এ অতিসরলীকরণ। এও দেখছি, তিনি কোনও সংশয়ের জায়গা রাখেননি তাঁর অভিযোগে— এ যে আমূল চৌর্যবৃত্তি, তা নিশ্চিত ভাবে বলছেন।

প্রথমত, তাঁর বিস্ময়, তাঁর গল্প ও আমার উপন্যাসের বিষয়বস্তু একেবারে এক, আর তা হল মৃতপ্রায় শিল্প বা ‘ডায়িং আর্ট’। যদিও আমি মৃতপ্রায় শিল্পের ধারণাকে উপন্যাসের আধার হিসাবে ব্যবহার করতে চেয়েছি, বিষয়বস্তু হিসাবে নয়। তবু যদি তর্কের খাতিরে মেনেও নিই, তা হলে বলব, মৃতপ্রায় শিল্প বা ডায়িং আর্ট নিয়ে বহু দিন ধরে গোটা পৃথিবী জুড়ে নানান কাজ হয়ে চলেছে। তার মধ্যে যেমন বহু আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তথ্যচিত্র ও ছোট ছবি আছে, তেমনই আছে বেশ কিছু নামী চলচ্চিত্র এবং নিবন্ধও। আশা করি সে সবের কিছু অন্তত কণিষ্কবাবুর গোচরে এসেছে, যেমন এসেছে আমারও। তাই বিষয়বস্তু হিসাবে মৃতপ্রায় শিল্প বা ডায়িং আর্ট আজ আর নতুন বা মৌলিক কিছু নয়, বরং বহুলচর্চিত ও ব্যবহৃত একটি ভাবনা। এ ক্ষেত্রে মৌলিকত্বের দাবি কণিষ্কবাবু করতে পারেন না। আমিও পারি না। পৃথিবী জুড়ে যখন মৃতপ্রায় শিল্প ও সংশ্লিষ্ট শিল্পীদের নিয়ে কাজ হচ্ছে, তখন আমি আমার সামান্য লেখাকে সেই স্রোতের অংশ হিসাবেই ভাবব।

(বক্তব্যের পরবর্তী অংশ কালকের ‘সম্পাদক সমীপেষু’ বিভাগে)

শ্রীজাত, কলকাতা-৩১

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Honey bee elephant attack
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE