Advertisement
০১ মে ২০২৪
Journalists

সংবাদের শক্তি

আসলে কলমের জোর বা শক্তি শাণিত তরবারির থেকেও বেশি, তা তো এ দেশে ইংরেজ শাসনকালেই হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন শাসকেরা।

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৩ ০৫:৪১
Share: Save:

সম্পাদকীয় ‘একটি বিনীত প্রশ্ন’ (২০-৯) এবং তাপস সিংহের প্রবন্ধ ‘সাংবাদিকদের দরকার নেই’ (২৫-৯) পড়ে আশঙ্কিত হলাম। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে গেলে সাংবাদিকের শারীরিক নিপীড়ন, হুমকি, কারাদণ্ডের আদেশ, এ সবই ঘটে চলেছে। সাংবাদিকের ভূমিকায় অসন্তোষের কারণে তাঁকে চরম শাস্তি দিতে, অর্থাৎ খুন বা গুম করতেও আজ অনেকে পিছপা হন না।

সাংবাদিকদের অপরাধ কী? অনৈতিক বা জনবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য প্রশাসনের সমালোচনা বা তা প্রতিরোধের জন্য কলম ধরা যাবে না, বা কোনও সত্য কথা প্রকাশ করা যাবে না, এই কি আজ নিয়ম? নেতাদের অনৈতিক কাজকে কেন সংবাদপত্র সমর্থন করবে? অনেক সাংবাদিক বা সংবাদপত্র নিরুপায় হয়ে সেটাই করে চলেছেন, নিজেদের রুটি-রুজির কথা ভেবেই। এই পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষ বা নির্ভীক সাংবাদিকতার প্রশ্নই নেই। গুটিকয়েক প্রথম সারির সংবাদপত্র বা তাদের প্রতিনিধিরা পরমুখাপেক্ষী না হয়ে যত দূর সম্ভব নিরপেক্ষতা বজায় রাখার চেষ্টা করে চলেছেন।

আসলে কলমের জোর বা শক্তি শাণিত তরবারির থেকেও বেশি, তা তো এ দেশে ইংরেজ শাসনকালেই হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন শাসকেরা। বহু স্বনামধন্য সাহিত্যিক ও সাংবাদিকের বক্তব্য এমনই শক্তিশালী ছিল যে, সে সব লেখা সরাসরি বিদ্রোহ বা বিপ্লবের থেকে কোনও অংশে কম ছিল না। তাই কালে কালে শাসক দল কলমযোদ্ধাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে, তাঁদের নিগ্রহের রাস্তা বেছে নিয়েছে। সংবাদপত্রের মুখ বন্ধ করতে তারা তৎপর। অথচ এটা অবিসংবাদিত সত্য যে, দেশের সংবাদমাধ্যম যত বেশি নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও স্বতন্ত্র হবে, দেশের গণতন্ত্র তত বেশি শক্তিশালী হবে। আর সে কারণেই সংবাদপত্রকে গণতন্ত্রের অন্যতম শক্তিশালী স্তম্ভ বলে স্বীকার করা হয়। আর সে স্তম্ভকেই চূর্ণ করার খেলায় মেতেছেন ক্ষমতাসীনেরা, যেখানে ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের ঘোষণাতেও বলা হয়েছে, যে কোনও মাধ্যমের তথ্য ও ধারণা খোঁজা, গ্রহণ এবং প্রদান করা হল স্বাধীনতা।

শাসক বা সরকারের মৌলিক দায়িত্ব সংবাদপত্র ও বিভিন্ন পত্রপত্রিকাকে সুরক্ষিত রাখা, যাতে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ভাবে তারা কাজ করত পারে। সত্য ঘটনাকে দেশের সামনে উপস্থাপিত করতে পারে। কিন্তু তার পরিবর্তে সরকার তাদের রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের ভয় দেখায়। যেন তেন প্রকারেণ সাংবাদিককে আইনের প্যাঁচে ফেলে দেওয়ার প্রবণতা সারা দেশ জুড়েই চলছে, যা দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করার সমান। প্রভাবশালীরা ভুলে যান, চরম শাস্তি দিয়েও নিরপেক্ষ সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের নির্ভীকতাকে থামানো কখনও সম্ভব নয়।

স্বরাজ সাহা, কলকাতা-১৫০

দমনের নীতি

সংবাদের স্বাধীনতা সম্পর্কে তাপস সিংহের প্রবন্ধটি যথার্থ এবং সময়োপযোগী। ভারতীয় গণতন্ত্রে সংবাদমাধ্যমকে চতুর্থ স্তম্ভের মর্যাদা দেওয়া হলেও, স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে এ দেশের প্রশাসনিক মহল, রাজনৈতিক মহল, এমনকি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও সংবাদমাধ্যমের উপর ক্রমাগত আঘাত হেনে চলেছে। ন্যায়নিষ্ঠ, সত্য সংবাদ জনগণের সামনে তুলে ধরতে যে সমস্ত সাংবাদিক ও সংবাদ সংস্থা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তাঁদের উপর আঘাত হানার প্রবণতা এ দেশে স্বাধীনতার জন্মলগ্ন থেকেই চলে আসছে, এখন সে প্রবণতা যেন ক্রমবর্ধমান। সত্য ঘটনা তুলে ধরলেই সাংবাদিকরা শাসকগোষ্ঠীর চক্ষুশূল হয়ে দাঁড়ান। মণিপুরের ঘটনায় এডিটর্স গিল্ডের পর্যবেক্ষণ, সেখানে জাতিদাঙ্গার সময়ে প্রশাসন কোনও দায়িত্ব পালন করেনি বরং সংঘর্ষের সময়ে পক্ষপাতিত্ব করেছে রাজ্য প্রশাসন। এই ধরনের সত্যনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ হলে রাষ্ট্রযন্ত্রের রক্তচক্ষুর শিকার হতে হয়, এমনকি ‘দেশবিরোধী’ তকমা লাগিয়ে দেওয়া হয় সাংবাদিকদের গায়ে। কিন্তু এটা গণতন্ত্রের পক্ষে কখনওই কাম্য নয়। সংবাদ যদি ভুল হয়, কিংবা কারও বিরুদ্ধে যায়, তা হলে তার প্রতিবাদ করার পথ রয়েছে, কিন্তু সে পথে না গিয়ে সাংবাদিকদের প্রতি দমন-পীড়নমূলক ব্যবস্থা করা গণতন্ত্রের পক্ষে মানানসই নয়।

সঠিক সংবাদ তুলে ধরা সংবাদমাধ্যমের কাজ, সে কাজে যদি রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করে, তা হলে তার ফল বিরূপ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। সংবাদমাধ্যম সরকারের ভুল ধরিয়ে দেওয়ার কাজ করে রাষ্ট্রকে সাবধানতার বাণী শোনায়। সরকার যদি সে বিষয়ে কর্ণপাত না করে সাংবাদিকদের উপর আঘাত হানার চেষ্টা করে, তা হলে সরকার তথা জনগণের পক্ষে সেটা মোটেই সুখকর হয় না। বর্তমান যা পরিস্থিতি, তাতে লেখকের কথায় বলাই যায় সংবাদমাধ্যমের সামনে এখন বিকল্প মাত্র দু’টি— হয় রাষ্ট্রের ক্ষমতার প্রতি প্রশ্নহীন আনুগত্য প্রদর্শন, নয়তো দেশবিরোধী হিসাবে চিহ্নিত হওয়ার প্রভূত আশঙ্কা।

বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়, শিয়াখালা, হুগলি

চিকিৎসার দাম

‘অকেজো স্বাস্থ্য কার্ড’ (সম্পাদক সমীপেষু, ১৮-৯) শীর্ষক পত্রের সঙ্গে সহমত পোষণ করে আরও কিছু কথা সংযোজন করতে চাই। পত্রলেখক রাজ্য সরকারের কর্মীদের জন্য হেলথ স্কিম সম্পর্কে যথার্থই বলেছেন যে, বেসরকারি হাসপাতালে ওই স্কিমের স্বাস্থ্য কার্ড দাখিল করলে অনেক রোগীকে প্রবল বঞ্চনার মুখে পড়তে হয়। ওই সব হাসপাতালের কর্মীদের ব্যবহারে যে ঔদাসীন্য এবং উষ্মা প্রকাশ পায়, তা সরকারি কর্মীদের মোটেই প্রাপ্য নয়। অনেক সময়েই জানানো হয় যে, রোগীর পছন্দের অভিজ্ঞ ডাক্তার হেলথ স্কিমের অধীনে চিকিৎসা করেন না। ফলে সেই সব ক্ষেত্রে রোগী বাধ্য হন অপেক্ষাকৃত অনভিজ্ঞ ডাক্তারের অধীনে চিকিৎসা করাতে, অথবা হেলথ স্কিমের নির্ধারিত মূল্যের বিল হাতে পেয়েও, অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সাম্মানিকের অতিরিক্ত মূল্য নগদে মিটিয়ে তবেই চিকিৎসা পেতে। তবে সব বেসরকারি হাসপাতালই যে এই রকম অনৈতিক কাজের শামিল, তা নয়। নবান্নের নিকটবর্তী সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে গিয়ে আমাকে এই রকম অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়নি। কিন্তু এমন পরিষেবা অন্য হাসপাতালগুলি দিতে অস্বীকার করে কেন, সেটাই প্রশ্ন।

হেলথ স্কিমের তালিকাভুক্ত বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে এই প্রসঙ্গে কথা বলে দেখেছি, যেখানে তাঁদের সাম্মানিক দক্ষিণা ৮০০-১২০০ টাকা, অথচ হেলথ স্কিমে তা হ্রাস পেয়ে হয় সর্বাধিক ২৫০ টাকা। ফলে, অধিকাংশ চিকিৎসকই চিকিৎসা করতে অনীহা প্রকাশ করে থাকেন। একই চিত্র বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল রেডিয়োলজিক্যাল পরীক্ষা, অথবা শল্যচিকিৎসার মূল্যের হারের ক্ষেত্রে। সেগুলো বাজার দরের চেয়ে এতটাই কমে নির্ধারিত যে, চিকিৎসক তথা হাসপাতালগুলো আশঙ্কা করে ওই হারে পরিষেবা দেওয়া মানে নিজেদের আর্থিক ক্ষতি ডেকে আনা। আর ঠিক এই ভীতিই হল হাসপাতালগুলোর হেলথ স্কিমের প্রতি অনাগ্রহী হওয়ার প্রকৃত কারণ।

এটাও ভাবা দরকার যে, ২০১১ সালের পর থেকে বিগত ১২ বৎসর, বাজারের সঙ্গে সমতা বজায় রেখে এই মূল্য তালিকার হারের পরিমার্জন করা হয়নি। চিকিৎসকদের দক্ষিণা ও প্রতিটি প্রক্রিয়ার মূল্য তালিকার পরিমার্জন ঘটানো হোক, এবং রাজ্য সরকারের কর্মীদের জন্য হেলথ স্কিমের অধীনে চিকিৎসার প্রকল্পের পুনরুজ্জীবন ঘটানো হোক।

শান্তনু ঘোষ, শিবপুর, হাওড়া

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Journalists News Society
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE