—ফাইল চিত্র।
বিশ্বজিৎ রায়ের প্রবন্ধ, “উপহারে লেখা ‘মনে রেখো’” (১৭-৩) পড়ে ভাল লাগল, মনে কিছুটা ভরসা জাগল। তা হলে এখনও আশা আছে। প্রবন্ধকার পূর্ব মেদিনীপুরের বেতকল্লা মিলনী বিদ্যানিকেতনের যে বর্ণনা দিলেন, শিক্ষকদের আন্তরিক চেষ্টায়, ভালবাসায়, স্কুলটি খেলাধুলা, লাইব্রেরি, পড়াশোনা, পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা ও সবুজায়নের মাধ্যমে যে ভাবে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার মানোন্নয়ন করছে, সেটি সমগ্র রাজ্যের জন্য দৃষ্টান্তমূলক। বেতকল্লা স্কুলের শিক্ষকদের মতো সদিচ্ছা ও ভালবাসা নিয়ে অন্য স্কুলের শিক্ষকরাও যদি এগিয়ে আসতে পারেন তবে নব প্রজন্মের বিদ্যার্জনের কিছুটা সুরাহা হয়। ওই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া উপহারে, ‘মনে রেখো’ এই লেখাটি শ্রদ্ধা ও প্রীতির স্বাক্ষর বহন করে। কয়েক দশক আগেও সামাজিক অনুষ্ঠানে বই উপহার দেওয়ার চল ছিল। ভালবেসে তার পাতায় লেখা থাকত ‘মনে রেখো’।
প্রবন্ধকার বর্ণিত স্কুলের কর্মকাণ্ড পড়ে মনে পড়ে গেল সত্তরের দশকে আমাদের স্কুলবেলায় উঁচু ক্লাসে বিতর্ক প্রতিযোগিতা হত— স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আমরা যেন মনে রাখি বা মেয়েদের শিক্ষায় রামমোহন, বিদ্যাসাগরের অবদান। আবার বাৎসরিক স্পোর্টসে যেমন খুশি সাজো-য় মজা করে কত কিছু সাজা হত। ইংরেজি দুটো পেপার বা অঙ্ক স্কুলেই ভাল ভাবে শিখিয়ে দেওয়া হত। তখন কোচিং সেন্টার ছিল না, গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ানোর আর্থিক সামর্থ্যও অধিকাংশ বাড়ির ছিল না। কিন্তু এই সাধারণ সরকারপোষিত স্কুলের বিদ্যার পুঁজি নিয়ে তখনকার ছাত্রছাত্রীরা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সেই রকম ভালবাসার বিদ্যানিকেতন কি আবার তৈরি করা যায় না?
শিখা সেনগুপ্ত, বিরাটি, উত্তর ২৪ পরগনা
আদর্শ স্কুল
বিশ্বজিৎ রায়ের প্রবন্ধটি বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার কিছুটা হতাশাময় দিক তুলে ধরল, আবার অনেকটা সম্ভাবনার পথও দেখাল। কিন্তু এই লেখায় একটু তথ্যগত ভ্রান্তি আছে। বেতকল্লা মিলনী বিদ্যানিকেতনের বর্তমান প্রধান শিক্ষক তাপস কর মহাশয় যে পূর্বতন বিদ্যালয় থেকে এই মনন বীজ সংগ্রহ করেছেন, সেটি উলুবেড়িয়ার স্কুল নয়, আরও প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক কালের সম্ভ্রান্ত বিদ্যালয়। পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট থেকে ১৭ কিলোমিটার ভিতরে, বৈষ্ণবচক মহেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়। যেখানে শৃঙ্খলা, সংস্কৃতি, ভাষাচেতনা আর স্বপ্ন বোনার নিরন্তর প্রয়াসপাঠ চলত এক কালে। এক কালের এত সম্পন্ন পরিকাঠামো এবং শৃঙ্খলাসম্পন্ন বিদ্যালয় কেন শ্রীহীন আজ? একই বিদ্যালয়ে তাপসবাবুর সহকর্মী হিসাবে শিক্ষকতা করার অভিজ্ঞতায় বলি— এই ‘শ্রী’র উত্তরাধিকারের পতাকা বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে পিছুটানহীন, সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা কান্ডারির দরকার ছিল, তার অভাবে আজ শ্রীহীন পূর্বতন বিদ্যালয়ের মতো অনেক প্রতিষ্ঠান। যোগ্য উত্তরাধিকারের অভাবে বৈষ্ণবচকের মতো বহু ঐতিহ্যশালী স্কুল তলিয়ে গেছে। আবার বেতকল্লার মতো স্কুলও তৈরি হয়েছে বৈষ্ণবচকের মাটিতে বেড়ে ওঠা তাপসবাবুর মতো চারাগাছের কল্যাণে। এখানেও সেই একই সমস্যা। এত আয়োজন এত স্বপ্ন, সবই প্রধান শিক্ষকের নিজস্ব প্রয়াস-উদ্যোগ। তাঁর অবসরের পর হয়তো চলবে আরও কিছু দিন। তার পর আবারও বস্তুগত অসুবিধা না থাকলেও মনোগত নমনীয় সদিচ্ছার অভাবের কারণে হয়তো প্রতিষ্ঠানের এই গৌরবময় দিনে দাঁড়ি পড়বে। মননশীল যোগ্য উত্তরাধিকার সৃষ্টি করে যাওয়াটাও খুব প্রয়োজন। নইলে বেতকল্লাও হয়তো এক দিন বৈষ্ণবচক হয়ে উঠবে।
শুভময় দাস, মহিষাদল রাজ কলেজ, পূর্ব মেদিনীপুর
ভরসা
বেতকল্লা মিলনী বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক তাপস করের প্রথম বিদ্যালয় পাঁশকুড়া ২ ব্লকের অন্তর্গত বৈষ্ণবচক মহেশ চন্দ্র হাই স্কুল। ওই বিদ্যালয়ের পূর্বগরিমার বিষয়ে কিছু নিবেদন করছি। এই বিদ্যালয় যাঁরা পরিদর্শন করেছিলেন, এমন জনের কাছে শুনেছি, এই বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী পরিচালিত একটি বিপণি ছিল, যেখানে কোনও বিক্রেতা থাকত না। সকলেই নির্ধারিত মূল্য একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে নির্দিষ্ট জিনিসটি সংগ্রহ করত। পরীক্ষাগৃহে কোনও নজরদার (ইনভিজিলেটর) থাকতেন না।
তমলুক শহরের পুরসভার নিকট চক্রেশ্বর মন্দিরের উল্টো দিকে একটি পত্রপত্রিকার দোকান রয়েছে। সকালবেলা বিক্রেতা বোধ হয় সেখানে থাকতে পারেন না। যাঁরা পত্রিকা নেন, ওখানেই নির্দিষ্ট মূল্য রেখে পত্রিকা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। এখনও। এই আকালেও।
মানস ধাড়া, প্রধান শিক্ষক, ব্যবত্তারহাট আদর্শ হাই স্কুল, পূর্ব মেদিনীপুর
ভিতরের কথা
“উপহারে লেখা ‘মনে রেখো’” শীর্ষক প্রবন্ধে বেতকল্লা মিলনী বিদ্যানিকেতনের চিত্র সত্যি হৃদয়ে শান্তির প্রলেপ দেয়। চারিদিকে বিভিন্ন স্কুলে নৈরাজ্যের মধ্যে এটি যেন এক আশ্চর্য মরূদ্যান। যে কোনও বিদ্যালয়ের বহিরঙ্গটি দেখে অন্তরঙ্গ সম্পর্কে অনেকটাই ধারণা করা যায়। কিন্তু মনে রাখা দরকার, এখনকার অনেক স্কুলই বহিরঙ্গে বেতকল্লার মতোই সুন্দর। কিন্তু অন্তরে উঁকি মারলে এদের অনেকগুলির ভিতরেই ক্ষয় রোগের আভাস পাওয়া যায়। দেখতে পাওয়া যায় বিভিন্ন রকমের কল্যাণমূলক সরকারি প্রকল্প চলা সত্ত্বেও ছাত্রছাত্রীদের ভয়াবহ রকমের অনুপস্থিতি। দেখতে পাওয়া যায় মাধ্যমিক স্তরে পৌঁছে গিয়েও অক্ষরজ্ঞানহীন ছাত্রছাত্রীদের। সমাজে অবিরাম মিথ্যা আর অন্যায়ের ধারাপাতের মধ্যে কষ্ট করে যুক্তিবোধ গড়ে তুলতে অনীহা বোধ করে এই সব ছাত্রছাত্রী।
ক্রমশ মলিনতর হয়ে চলা ব্যবস্থাটি তলিয়ে দেখা দরকার, তা নিয়ে লেখা দরকার। অন্যথায় কয়েক বছর পর শিক্ষার বিষয়ে প্রবন্ধ পড়ার লোকও পাওয়া যাবে না।
সৌমেন রায়, পশ্চিম মেদিনীপুর
পলাশের গুণ
বসন্ত আর পলাশ ফুল একে অপরের পরিপূরক। পলাশ ফুল জানিয়ে দেয় ‘বসন্ত জাগ্রত দ্বারে’। বাংলা সাহিত্যে পলাশের কথা বার বার উঠে এসেছে। গানে-কবিতায় কোথায় নেই পলাশ? পলাশ ফুলের আগুন যে কী, তা বসন্তের আবহে কাছে না গেলে বোঝা সম্ভব নয়। পলাশ পর্ণমোচী বৃক্ষ। এই গাছের অনেক ভেষজ গুণও রয়েছে। ছেলেবেলায় দোলের কয়েক দিন আগে বাড়িতে বালতির জলে ভিজিয়ে রাখা হত পলাশ ফুল। তার পর সেগুলি গরম জলে ফোটানো হত। জল ঠান্ডা হলে তৈরি হত রং। এই রং পিচকারিতে ভরে আমরা দোল খেলতাম বন্ধুদের সঙ্গে। বর্তমানে ভেষজ আবির তৈরি হচ্ছে পলাশ ফুল থেকে। পলাশ গাছ যাতে যথেচ্ছ ভাবে কেটে ফেলা না হয়, তার জন্য প্রচার প্রয়োজন।
বিপদতারণ ধীবর, বেলিয়াতোড়, বাঁকুড়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy