Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Unidentified Dead Bodies

সম্পাদক সমীপেষু: চিকিৎসক ও দেহদান

সমীক্ষায় প্রকাশ, ওই লাশগুলি দেশের দুর্বল ও প্রান্তিক মানুষের। তাঁরা দুর্বল, প্রতিরোধ ক্ষমতাহীন, তাই তাঁদের ক্ষেত্রে আইন মানার প্রয়োজন হয় না।

Representational image of Dead Body.

‘বেওয়ারিশ’ লাশ। প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৪:০৯
Share: Save:

বিষাণ বসু তাঁর ‘নিয়ে গেছে তারে; কাল রাতে’ (৩০-১) শীর্ষক প্রবন্ধে চিকিৎসক হয়ে ওঠার পিছনে কতকগুলি অমানবিক দিক তুলে ধরেছেন। তা হল, চিকিৎসক হতে গেলে শব-ব্যবচ্ছেদ অপরিহার্য, কিন্তু মরণোত্তর দেহদানে মানুষের সাড়া কম বলে তথাকথিত ‘বেওয়ারিশ’ লাশ ব্যবহৃত হয়। সমীক্ষায় প্রকাশ, ওই লাশগুলি দেশের দুর্বল ও প্রান্তিক মানুষের। তাঁরা দুর্বল, প্রতিরোধ ক্ষমতাহীন, তাই তাঁদের ক্ষেত্রে আইন মানার প্রয়োজন হয় না। চিকিৎসক হিসাবে অনেক ডাক্তারই হয়তো এই বিপন্নদের সুরক্ষা দিতে পারেননি। অবশ্যই মানবিক চিকিৎসক অনেক আছেন। তবে তাঁরা হয়তো চিকিৎসক-সমাজে সংখ্যাগুরু নন।

আশা করি, সরকার এ বিষয়ে সদর্থক নীতি গ্রহণ করবে। মরণোত্তর দেহ ও অঙ্গদানে অনীহার কারণ সচেতনতার অভাব। চিকিৎসকরা সচেতন হবেন সবার আগে, এটা আশা করা যেতেই পারে। প্রশ্ন, ডাক্তারবাবু এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যরা কত জন দেহদানের অঙ্গীকার করেন? আমার মনে হয়, যে অভিভাবকরা সন্তানকে ডাক্তার বানাতে প্রাণান্তকর পরিশ্রম ও খরচ করে যাচ্ছেন, তাঁদের মরণোত্তর দেহদানে অঙ্গীকার করতে প্রণোদিত করা উচিত। তাতে সাধারণ মানুষও উৎসাহিত হবেন। পরীক্ষায় এর জন্য নির্দিষ্ট নম্বরও ধার্য করা যেতে পারে। চিকিৎসকরা নিজের পিতামাতার চিতাভস্ম নিয়ে গঙ্গায় বিসর্জন দিতে যাচ্ছেন— এমন দৃশ্য আদৌ দৃষ্টিনন্দন হয় কি?

সুবোধ কাইয়া, বর্ধনবেড়িয়া, উত্তর ২৪ পরগনা

স্বাস্থ্যে বঞ্চনা

কেন্দ্রীয় সরকারের সাম্প্রতিক স্বাস্থ্য বাজেটে দেখা যাচ্ছে, গত বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে জিডিপির যত শতাংশ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল, এ বছরে তা আরও কমানো হয়েছে। ২০২২-২৩ সালে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল মূল বাজেটের ২.০৫%। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ হয়েছে ১.৯৭%, যা জিডিপির অতিনগণ্য অংশ। যেখানে ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশে ৯%; জাপান, ফ্রান্সের মতো দেশে ১০%, আমেরিকায় ১৬%। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে দেখানো হচ্ছে এ বার বরাদ্দ গত বারের তুলনায় ১২.৬% বেশি। অথচ, এই সময়ে টাকার যা অবমূল্যায়ন হয়েছে, তার নিরিখে ধরলে স্বাস্থ্য খাতে গত বারের চেয়েও ৬% কম বরাদ্দ করা হয়েছে এ বার। যেখানে প্রতিরক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে ১.৬২ লক্ষ কোটি টাকা, যা সমগ্র স্বাস্থ্যক্ষেত্রের জন্য বরাদ্দের দ্বিগুণ।

উপরন্তু বরাদ্দের একটা বিপুল অংশ প্রত্যক্ষ ভাবে স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। শিক্ষা, জল, নিকাশি, গবেষণা, ওষুধ উদ্ভাবন ইত্যাদিতে সিংহভাগ বরাদ্দ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ১৫৭টি নার্সিং কলেজ এবং মাল্টি ডিসিপ্লিনারি ট্রেনিং সেন্টার তৈরির কাজে একটি বিরাট অংশ খরচ হবে। ফলে মার খাবে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের বনিয়াদি পরিষেবা, এবং রোগ প্রতিরোধমূলক কর্মসূচিগুলি।

অন্য দিকে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এমস-এর মানের যে প্রতিষ্ঠানগুলি গড়ে তোলা হচ্ছিল, সেই খাতে বরাদ্দ কমিয়ে করা হয়েছে ৯৪১১ কোটি টাকা থেকে ৩৩৬৫ কোটি টাকা। ফলে এই প্রতিষ্ঠানগুলির ভবিষ্যৎ আজ বিশ বাঁও জলে। এগুলি থেকে সাধারণ মানুষ উন্নত মানের চিকিৎসা পেতে পারতেন। করোনার মতো মারণ ব্যাধি প্রতিরোধের জন্য গত বছর ব্লক স্তরে পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরি গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছিল। এ বছর সেই খাতেও ৫% বরাদ্দ কমানো হয়েছে। ন্যাশনাল হেলথ মিশনের যে সব কর্মসূচি চলছে, কমানো হয়েছে তার বরাদ্দও। চিকিৎসা পরিষেবা সম্পর্কে বাজেটে বিশেষ কিছু কথা বলাই হয়নি। অর্থাৎ, প্রকৃত অর্থে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে মানুষের জীবন-মরণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত দৈনন্দিন প্রক্রিয়ায় যতটুকু খরচ আগে করা হত, এ বছর সেই সব খাতের ব‍রাদ্দ অত্যন্ত কমানো হয়েছে। যতটুকু বরাদ্দ হয়েছে, তা কার্যত বিমা-নির্ভর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে বিমা কোম্পানিগুলির পকেট ভরানোর উদ্দেশ্যে। স্বাস্থ্যের মৌলিক কাঠামো এবং জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে জোর না দিয়ে কার্যত সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে পঙ্গু করার চেষ্টা হয়েছে। এর ফলে জনসাধারণের খরচ বাড়বে। বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুমিছিল লম্বা হবে। পকেট ভরবে বিমা কোম্পানি এবং কর্পোরেট স্বাস্থ্য ব্যবসায়ীদের। জনবিরোধী এই স্বাস্থ্য বাজেটের তীব্র বিরোধিতা করছি।

সজল বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক, সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম

অনুদানের যুক্তি

পিএম পোষণ, আবাস যোজনা ইত্যাদি বিভিন্ন অনুদান প্রকল্প চালু আছে দেশ জুড়ে। দরিদ্র মানুষ এই সব সুবিধা পেয়ে অবশ্যই কিছুটা স্বস্তি পান। কিন্তু জনকল্যাণমূলক পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্যটা নিশ্চয়ই অনুদানের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নয়; নীচে থাকা বঞ্চিত দেশবাসীকে ধীরে ধীরে স্বাবলম্বী করে মূলস্রোতে নিয়ে এসে সম্মানের সঙ্গে নিজের পায়ে দাঁড়াতে শেখানোই এর প্রকৃত উদ্দেশ্য। কিন্তু বাস্তবে এক দিকে চিরকাল এই অবস্থা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা দেখা যায়, অন্য দিকে আছে দেশবাসীর অর্জিত আর প্রাপ্য অর্থ তাঁদেরকেই অনুদান হিসাবে পাইয়ে দিয়ে দলগত ফয়দা তোলার ফন্দি। অনেক সময়ে প্রকৃত অভাবী প্রাপকের নামে অন্যরা এই সুযোগ দখল করেন। অভাব কেটে যাওয়ার পরও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে তালিকা থেকে নাম কাটান না অনেকে, অথবা ভাবেন— চলছে চলুক। সবচেয়ে বড় আক্ষেপ হল, প্রাপ্য টাকা পেতে গেলে কমিশন দিতে হয়। সম্প্রতি প্রবাসী এক বঙ্গবাসী সাফাই কর্মচারী আবাস যোজনার লাখ দেড়েক টাকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে ২৫ হাজার টাকা কমিশন দিলেন, এটা ওঁর কাছ থেকেই শোনা। শুধু এই খাতে আসা কালো টাকার পরিমাণটা অকল্পনীয়।

স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরও ৮০ কোটি দেশবাসীকে সেই সীমায় থাকতে হয়েছে যাঁরা ৩ টাকা কিলো চালের লাইনে দাঁড়িয়ে। এটা জাতীয় গর্ব নয়, জাতির লজ্জা। নিকট ও দূর ভবিষ্যতে দান-গ্রাহক ও সংরক্ষিত জনগোষ্ঠী থেকে স্বাবলম্বী-মানুষে উন্নীত করে অনুদানের প্রয়োজন ধীরে ধীরে কী ভাবে কমানো যায়, তার রূপরেখা তৈরি করা জরুরি। এটাই সম্ভবত বাবাসাহেব আম্বেডকরের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। এই কাজ এখনও অত্যন্ত কঠিন, এবং নির্বাচনের বৈতরণি পার হতে এর কোনও সাহায্য পাওয়া যাবে না। বরং উল্টো বুঝতে পারে মানুষ। তাই বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধতে কে আর আসবে!

কৌশিক দাস, বেঙ্গালুরু

রাষ্ট্রের ধর্ম

সংবিধান অনুযায়ী ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। সংবিধানে সব ধর্মের সমান অধিকারের কথা বলা আছে। ‘সনাতন ধর্মই রাষ্ট্রীয় ধর্ম, দাবি যোগীর’ (২৯-১) শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে জানতে পারলাম উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের দাবি, সনাতন ধর্মই ভারতের রাষ্ট্রীয় ধর্ম। সম্প্রতি ভারতের সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার প্রশ্নে আন্তর্জাতিক মঞ্চে একাধিক বার প্রশ্নের মুখে পড়েছে মোদী সরকার। ফের হিন্দুত্বের পক্ষে এমন সওয়ালই শোনা গেল তথাকথিত হিন্দুত্বের ‘পোস্টার বয়’ যোগী আদিত্যনাথের গলায়, যা আন্তর্জাতিক মঞ্চে ও দেশে নতুন করে আরও এক বার বিতর্ক উস্কে দিল।

ওই অনুষ্ঠানে যোগী আরও দাবি করেছেন, স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে রাষ্ট্রীয় ধর্মের সঙ্গে যুক্ত হলে দেশ নিরাপদ হবে। সেই সূত্রে রামমন্দিরের প্রসঙ্গ এনে তিনি অযোধ্যার নির্মীয়মাণ রামমন্দিরকে ‘রাষ্ট্রীয় মন্দির’ বলেও আখ্যা দেন। যদিও ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের আদর্শ অনুযায়ী ভারতের কোনও রাষ্ট্রীয় ধর্ম বা রাষ্ট্রীয় ধর্মস্থান থাকতে পারে না। যিনি ভারতের মতো বৃহৎ গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় রাজ্যের এক জন প্রশাসনিক প্রধান, তিনিই যদি সংবিধানের বিরুদ্ধাচরণ করে এমন মন্তব্য করেন, আমরা কী শিখব?

মঙ্গলকুমার দাস, রায়দিঘি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Medical Science Doctors
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE