Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: সাহিত্য ও সিরিয়াল

পরিচালকরা ‘সাহিত্যনির্ভর’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করছেন, কখনওই বলছেন না মূল সাহিত্যানুসারী। সাহিত্যিক বা সাহিত্যপ্রেমীদের খুশি করার কোনও দায় তাঁদের থাকতে পারে না। তাঁদের মাধ্যম মেগা সিরিয়াল।

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০
একটি সিরিয়ালের দৃশ্য। ছবিটি প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত

একটি সিরিয়ালের দৃশ্য। ছবিটি প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত

‘সংযোজনে হারিয়ে যাচ্ছে মূল সাহিত্য?’ (আনন্দ প্লাস, ৩০-১১) বিতর্কটি চায়ের পেয়ালায় তুফান তুলতে পারে। তবে প্রকৃত প্রস্তাবে নিরর্থক। কালজয়ী কোনও উপন্যাস বা গল্পকে যখনই মেগা সিরিয়ালের ছাঁচে পরিবেশন করা হবে, তখন সমকালীন দর্শকের রুচি ও চাহিদাই প্রযোজক এবং পরিচালকের কাছে প্রাধান্য পাবে। এ ক্ষেত্রে মূল সাহিত্যে সংযোজন অথবা বিয়োজনই একমাত্র হাতিয়ার, যা সাহিত্যকে সিরিয়ালে রূপান্তর ঘটায়। প্রকৃত পাঠক, যিনি চিরকালীন সাহিত্যের রসাস্বাদন করেছেন, তিনিই আবার মেগা সিরিয়ালও সাহিত্যবোদ্ধা রূপে একই রকম উপভোগ করবেন, এবং যাকে সাহিত্যানুসারী হতে হবে শুধু এই কারণেই— এমন দাবি সঙ্গত কি?

পরিচালকরা ‘সাহিত্যনির্ভর’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করছেন, কখনওই বলছেন না মূল সাহিত্যানুসারী। সাহিত্যিক বা সাহিত্যপ্রেমীদের খুশি করার কোনও দায় তাঁদের থাকতে পারে না। তাঁদের মাধ্যম মেগা সিরিয়াল। বিনোদনের দুনিয়া। ব্যবসার ক্ষেত্র। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার লড়াই। তাই দর্শক যেটা খাবে সেটাই তাঁদের কাছে একমাত্র বিবেচ্য।

অন্য দিকে লেখক স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়ায় সাহিত্যপ্রেমীরা হতাশ হবেন। মেগা সিরিয়াল সাহিত্যের মূল সুর ধরে রাখলে তবেই দর্শক ভাল পাঠক হবেন, বা অন্য ভাবে বললে, মেগা সিরিয়ালের লঘুচিত্ত কূটকচালিপ্রিয় দর্শককে পাঠকবৃত্তে অন্তর্ভুক্ত করার তাড়নাতেই সিরিয়াল নির্মাতাদের মূল সাহিত্য থেকে সরে আসা চলবে না, কোনও প্রকার বিকৃতি বা বিচ্যুতি হবু পাঠকমনে ওই লেখকের সাহিত্যসৃষ্টি সম্পর্কে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে— এ রকম ধারণা পোষণ করার অর্থ সাহিত্যিককে অপমান করা। সাহিত্যিকদের কলমের জোর কি এতটাই কমে গেল যে সিরিয়ালের জোরালো রেকমেন্ডেশন ছাড়া তাঁদের লেখা পাঠকসমাজে সমাদৃত হবে না?

এ বার আসুন একটু ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে আমরা প্রযোজক বা পরিচালকদের দিকে তাকাই! দর্শক রুচি নিয়েই তাঁদের কাজ করতে হয়। সব কিছুতেই এখন চলছে লঘুকরণ প্রক্রিয়া। সিরিয়াল কি তার বাইরে থাকতে পারে? আড়াল খুঁজে নিতে হয়। নস্টালজিয়ার আড়াল। ভারী ভারী নাম ব্যবহার করে বাঙালি দর্শকের আবেগে একটু সুড়সুড়ি দিয়েই আবার তাঁরা নিজস্ব বৃত্তে ঢুকে পড়েন। সেই কূটকচালি, ষড়যন্ত্রের জাল বোনা, পরকীয়ার বাঁধাধরা ছক! বঙ্কিমচন্দ্র, আশাপূর্ণা, সমরেশ মজুমদার, সুচিত্রা ভট্টাচার্য... এই নামগুলোর ওজন আছে। এগুলো ব্যবহার করলে বাজারে কাটতি বাড়ে। প্রযোজক নিজেকে সংস্কৃতিমনস্ক প্রমাণের একটা সুযোগ পান। আর মোড়কের আড়ালে স্বছন্দে নিজস্ব পরিসরে ঘুরে বেড়াতে পারেন। আবার বাজারের কাছেও দায়বদ্ধ থাকতে পারেন, বিকৃতি বা বিচ্যুতিজনিত মৃদু সমালোচনার দায় ঘাড়ে নিয়েও।

সাধারণ দর্শক আবার ওই নামী লেখকের বইটাও পটাপট কিনে নেন। সংস্কৃতিমনস্ক হওয়ার দায় যে তাঁরও আছে! এতে বইয়ের বিক্রিবাটা হঠাৎই বেড়ে যায়। প্রকাশক লাভের মুখ দেখেন। বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাওয়া কোনও ক্লাসিকের এটা কম পাওনা নয়। অন্তত সেই কথাটা মিথ্যা হয়ে যায় কিছু দিনের জন্য— নামীদামি লেখকের বই যত না কাটে বাজারে, তার চেয়ে বেশি কাটে পোকায়! তাই কোনটাকে বাছবেন লেখক? বিস্মৃতি না বিকৃতি?

পার্থ প্রতিম চৌধুরী

কোন্নগর, হুগলি

বাংলায় লজ্জা

তরুণ মুখোপাধ্যায় তাঁর চিঠিতে (‘আ মরি বাংলা’, ৫-১২)লিখেছেন “বিশুদ্ধ বাংলা বলতে না পারার জন্য লজ্জিত হই না, বরং অক্ষমতার বড়াই করেন অনেক বাঙালিই।” কথাটা যে কত বড় সত্য, তা বুঝেছিলাম এক বার কৃষ্ণনগরের কাছে একটি গ্রামে কুইজ় মাস্টার হিসাবে গিয়ে। কুইজ়টি ছিল এইট থেকে টুয়েলভ পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের জন্য। প্রতিযোগীদের নিয়মকানুন বোঝানোর পরে এক অভিভাবক এসে বললেন, “স্যর, নিয়ম এবং প্রশ্নগুলো যদি একটু ইংলিশে বুঝিয়ে দেন, তা হলে খুব ভাল হয়।” বেশ অবাক হলাম। এই গ্রামে অনেক বার এসেছি। এখানে বাংলা না বোঝার মতো মানুষ থাকার কথা নয়। জানতে চাইলাম, কেন? উনি বললেন, “আমার ছেলে এক জন প্রতিযোগী। ও ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে। বাংলা ভাল বলতে বা বুঝতে পারে না। সেই জন্যই...” কথাটা বলার সময় ভদ্রলোকের মুখে একটা প্রচ্ছন্ন গর্বের ভাব ফুটে উঠল। বললাম, ও কি বাইরে কোথাও থেকে পড়াশুনা করে? বললেন, “না না, এখানে বাড়িতে থেকেই পড়াশুনা করে।” জানতে চাইলাম, বাড়িতে বা পাড়ার বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কী ভাবে কথা বলে? ভদ্রলোক বললেন, “বাংলাতেই বলে, তবে অসুবিধা হয়।” বুঝলাম ছেলের বাংলা বলতে পারাটা ওঁর কাছে লজ্জাজনক বলে মনে হয় এবং ইংরেজি বলার থেকেও বাংলা বলতে না পারাটা তাঁর কাছে বেশি গর্বের। কথা না বাড়িয়ে ছেলেটিকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমি এত ক্ষণ যা বললাম তোমার বুঝতে কি কোনও অসুবিধে হয়েছে? ছেলেটি পরিষ্কার বাংলায় জানাল, কোনও অসুবিধা হয়নি। বললাম, আমি বাংলায় প্রশ্ন করব। কোনও প্রশ্ন বুঝতে অসুবিধা হলে আমাকে বলবে, আমি ইংরেজিতে বুঝিয়ে দেব। ছেলেটি সম্মতিসূচক ঘাড় নেড়ে চলে গেল। সে দিন পুরো কুইজ়টা আমি বাংলায় পরিচালনা করি। ছেলেটি এক বারও বুঝতে অসুবিধা হয়েছে বলে জানায়নি।

পিন্টু ভট্টাচার্য

বহিরগাছি, নদিয়া

ইংরেজিরও...

বিশ্বজিৎ রায়ের ‘বাংলা পড়লে ক্লাসে হাজিরা জরুরি নয়’ (রবিবাসরীয়, ৯-১২) শীর্ষক প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্মরণ করা যেতে পারে যে বিষয় হিসেবে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিলেতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও বহু দিন ব্রাত্য ছিল। প্রতিষ্ঠার বছর দুয়েকের মধ্যেই ১৮২৮ সালে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (ইউসিএল)–ই সর্বপ্রথম ইংরেজিকে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করে এবং রেভারেন্ড টমাস ডেল-কে ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। ইংল্যান্ডে সেটাই ছিল প্রথম ইংরেজি অধ্যাপকের পদে নিয়োগ। এই পথের পথিক হতে অক্সফোর্ড-কেমব্রিজের আরও অনেক বছর লেগে গিয়েছিল। তখনও ও দেশের উচ্চকোটির লোকেরা ইংরেজিকে ইতর জনের ভাষা মনে করতেন কিনা!

চন্দন আশিস লাহা

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়

সাধুবাদ

‘আইন পড়ায় সংরক্ষণ’ (২১-১১) খবরে পড়লাম, দুঃস্থ ও মেধাবী আইন পড়ুয়াদের অন্তত পাঁচ শতাংশকে নিখরচায় আইন পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার সংস্থান রয়েছে বিধানসভায় সদ্য পাশ হওয়া বিলে। রাজ্য সরকারকে অকুণ্ঠ সাধুবাদ জানাই এই বলিষ্ঠ পদক্ষেপের জন্য। সত্যিকারের যে ধরনের সংরক্ষণ দরকার তা এত দিনে বাস্তবায়িত হল। বাংলাই হল তার পথিকৃৎ।

হিমাদ্রি শঙ্কর রায়চৌধুরী

তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর

তন্দ্রাচ্ছন্ন

ভোটের ফল প্রকাশিত হওয়ার পর অথবা ক্রিকেটে ভারতের কাছে পাকিস্তানের হারের পর, পরিবেশ দূষণ পরিষদ কি শব্দবাজি পোড়ানোয় সাময়িক অনুমোদন দেয় অথবা তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকে?

বাসুদেব দত্ত

ইমেল মারফত

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

ভ্রম সংশোধন

‘ভেন্ডিং মেশিনে টিকিট কেটে দেয় ওরা’ শীর্ষক সংবাদ প্রতিবেদনে (কলকাতা, উত্তর, পৃ ১৪, ২২-১২) পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক হিসেবে রবি মহাপাত্রের মন্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ওই পদে নেই। বর্তমানে পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক নিখিলকুমার চক্রবর্তী। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

Literature Television Serial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy