Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: সত্যি হলেও গল্প

এ রাজ্যের যা অবস্থা, যে কোনও বুথে ডিউটি করতে যাওয়ার আগে চাপা উত্তেজনা কাজ করে। কিন্তু বিকাল ৩:৩৫ মিনিট নাগাদ লোহাচুর গ্রামের স্কুলমাঠে পৌঁছে চার জন সিআইএসএফ জওয়ান ছাড়া কারও দেখা মেলেনি।

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

বর্ধমান পূর্ব লোকসভার অন্তর্ভুক্ত পূর্বস্থলী উত্তর বিধানসভার অন্তর্গত ২৩২ নং বুথ লোহাচুর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটকর্মী হিসাবে না গেলে বুঝতাম না, বঙ্গে এ ভাবেও ভোট হয়।

এ রাজ্যের যা অবস্থা, যে কোনও বুথে ডিউটি করতে যাওয়ার আগে চাপা উত্তেজনা কাজ করে। কিন্তু বিকাল ৩:৩৫ মিনিট নাগাদ লোহাচুর গ্রামের স্কুলমাঠে পৌঁছে চার জন সিআইএসএফ জওয়ান ছাড়া কারও দেখা মেলেনি। সারা সন্ধ্যা কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মী বা এজেন্ট দেখা করতেও আসেননি। কারা কোথা থেকে ভোট নিতে এসেছেন, এ বিষয়ে মানুষের উপেক্ষায় অবাক হয়েছিলেন অভিজ্ঞ প্রিসাইডিং অফিসার। শেষে আমাদেরই রাতের খাবারের ব্যবস্থা করতে এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলতে যেতে হয়।

ভোটের দিন সকালের চিত্রটা আরও আশ্চর্য। সকাল ৫:৩০ মিনিটের মধ্যে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়ে গেলেও কোনও রাজনৈতিক দলের এজেন্টের দেখা মেলেনি। কমিশনের নিয়মানুযায়ী সকাল ৬টায় মহড়া ভোট করার কথা। যখন আমরা ভাবছি, গ্রামবাসীরা ভোট বয়কট করেছেন কি না, ঘুমভাঙা চোখে এক যুবক এসে জানালেন, তিনি এক জন এজেন্ট। অন্য দলের এজেন্টদের কথা জিজ্ঞেস করলে, তিনি ফোন করে বাকি দু’টি রাজনৈতিক দলের এজেন্টদের ডেকে নিলেন।

সকাল ৭টায় আসল ভোট শুরু হলে, মেশিনের সমস্যা দেখা যায়। ফলে সিল কেটে আবার কন্ট্রোল ইউনিট চালু করা হয়। এ বারেও চমক। এজেন্টরা কোনও আপত্তি জানাননি। বরং সহযোগিতা করেছেন। আমাদের অবাক করল তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের তিন যুব এজেন্টের মধ্যে বন্ধুত্ব। এক ভোটার বললেন, ‘‘এখানে রাজনীতি করা নিয়ে কোনও জোরাজুরি নেই, সবাই মনে মনে পার্টি করে।’’

এক জন প্রায় ৮০ বছরের বৃদ্ধ একা ভোট দিতে এলেন, তিনি মেশিনের কার্যপদ্ধতি বুঝতে না পেরে ভোটকক্ষ থেকে বেরিয়ে এসে প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে দু’বার বুঝে গেলেন, কী ভাবে ভোট দিতে হবে। কোনও এজেন্ট বললেন না, আমি দাদুকে দেখিয়ে দিচ্ছি কী ভাবে ভোট দিতে হবে, তাই সঙ্গে যাচ্ছি। আরও অনেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে ডেমো দেখে বুঝে নিয়ে, একা একা ভোট দিলেন।

যেখানে প্রতিনিয়ত ছাপ্পা, রিগিং, এজেন্টদের হাতাহাতি, ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসের কথা হেডলাইনে জায়গা করে নেয়, সেখানে এই ৯৪৩ জন ভোটারের পল্লিগ্রামে, কথা-কাটাকাটিহীন, ঝামেলাহীন, রক্তচক্ষুহীন ভোট, ভাবা যায়!

প্রণয় ঘোষ

কালনা, পূর্ব বর্ধমান

অদ্ভুত নিয়ম

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মী হিসাবে প্রতি বার বিধানসভা বা লোকসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণের ডাক পড়ে। এ বছর ২৬০ বর্ধমান দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রে মাইক্রো অবজ়ার্ভার হিসাবে ডাক পড়ল। এত দিন জানতাম ভোটকর্মীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য দু’দিনের, পি মাইনাস ওয়ান আর পোলিং ডে। ২৯ এপ্রিল ইউআইটি গোলাপবাগ ডিসিআরসি-তে পৌঁছনোর পর জানতে পারলাম, মাইক্রো অবজ়ার্ভারদের দায়িত্ব আরও এক দিনের জন্য বাড়ানো হয়েছে। এমও কাউন্টারে বিস্তারিত জানতে চাইলে বলা হল, কাল রিপোর্ট জমা দেওয়ার সময় জানতে পেরে যাবেন।

ভোটের দিন সন্ধ্যায় আরসি (রিসিভিং সেন্টার)-তে পৌঁছে রিপোর্ট জমা দেওয়ার সময়, হাতে নতুন একটি করে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার ধরিয়ে দেওয়া হল। লেখা: পরের দিন সব মাইক্রো অবজ়ার্ভারদের পেপার স্ক্রুটিনির জন্য নিয়োগ করা হচ্ছে। ব্যাপারটা কী? বলা হল, প্রিসাইডিং অফিসারের সঙ্গে আপনাদের রিপোর্টে যদি কোনও গরমিল থাকে বা কোনও বুথ নিয়ে অভিযোগ থাকে, সেগুলো পর্যালোচনার জন্য আপনাদের ডাকা হচ্ছে।

ব্যাপারটা যত না বেশি আক্ষেপের, তার চেয়ে বেশি কষ্টের। নিয়ম যদি এটাই, তা হলে সব জেলার নিয়ম এক রকম নয় কেন? (উল্লেখ্য, নদিয়া জেলার কোনও লোকসভা কেন্দ্রেই এ রকম কোনও নির্দেশ জারি হয়নি)। ভোটকর্মীদের দুর্দশা যদি এতটুকু না কমে, উপরন্তু এক রাতের জন্য বেড়ে যায়, সহজে মেনে নেওয়া সম্ভব? আরসি-তে আমাদের রাত্রিযাপনের কোনও ব্যবস্থা চোখে পড়ল না, ১২৭০ টাকার বিনিময়ে (মাইক্রো অবজ়ার্ভার ভাতা) ভোট করতে এসে, হোটেল বা লজে থাকার জন্য যদি পকেট থেকে আরও হাজার টাকা খসে যায়, মেনে নেওয়া যায়?

সায়ন নন্দী

নবদ্বীপ

ভোগান্তি

ভোটের আগের দিন ডিসি (ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার)-তে পৌঁছে দেখি, কাউন্টারে লাইন। এত গরম, ফ্যানের নীচে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল গায়ে ফোসকা পড়বে। যা-ই হোক, এক সময় ‘মেরা নম্বর আ গয়া’। ভোটের জিনিসপত্র নিতে হবে, সব ঠিকঠাক আছে কি না বুঝে নিতে হবে। সহযোগীদের সহায়তায় ঘামতে ঘামতে তাও সম্পন্ন হল। পুলিশ ট্যাগ, মাইক্রো অবজ়র্ভার ট্যাগ সবই ভোটকর্মীকে করতে হবে।

বুথে যাব কী ভাবে? কৃষ্ণনগর বিপিসি ডিসি থেকে হেলিপ্যাডের মাঠে যেতে হবে প্রথমে। ভাবলাম, হেলিকপ্টারে পৌঁছে দেবে বোধ হয়! মহানন্দে একটা বাসে উঠলাম। পৌঁছনোর মুখেই শুনতে পেলাম, নাকাশিপাড়া যাওয়ার বাস পেতে কাউন্টারে যোগাযোগ করুন। দেখি, একটা কাউন্টারকে মৌমাছির চাকের মতো ঘিরে ধরেছেন বহু ভোটকর্মী আর বাস-চালক। বুথে তাড়াতাড়ি যাওয়ার আশা ভেস্তে গেল। প্রায় দু’ঘন্টা অপেক্ষার পর আর থাকতে না পেরে প্রতিবাদ করলাম। অনেকে যোগ দিলেন। তাতে বাসের ব্যবস্থা হল, কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত এক জন টিপ্পনি কাটলেন, ‘‘এরা আবার শিক্ষক!’’

বেথুয়াডহরি থেকে প্রায় ১০ কিমি ভিতরে দাদুপুর হাইস্কুল পৌঁছলাম। সারা ঘর বেঞ্চে ঠাসা। বাথরুম অপরিচ্ছন্ন। আমার বুথে ১১৪০ ভোটার ছিলেন। এক জন ভোটার এত জোরে বোতাম টিপেছেন যে ব্যালট ইউনিটের ওই বোতামটা নীচে বসে গিয়েছে। মেশিন আর কাজ করছে না। এজেন্টদের নিয়ে ঢুকলাম ভোটকক্ষে, বোতামটা পেন দিয়ে তুলে দিতেই আবার শুরু হল ভোট।

ভোট শেষ করে আরসি-তে ৯:১৫-য় পৌঁছে রাত দশটার আগেই সব জিনিস জমা করেছি। তার পর বাড়ি পৌঁছনোর জন্য ছুটোছুটি। অনেক পরে বিপিসি থেকে গভর্নমেন্ট কলেজের মাঠে এলাম বাসে করে। ওখানে আবার কোন বাস কোথায় আছে, জিজ্ঞেস করলে, জানে না বলছে। দেড় ঘণ্টা পর করিমপুরগামী একটি বাসে উঠলাম, আরও আধ ঘণ্টা পর ছাড়ল। এ ছাড়া টাকা দিয়েও খাবার না পাওয়ার যন্ত্রণা তো ছিলই।

আতিউর রহমান

হাতিশালা, নদিয়া

সাধারণ সমস্যা

প্রায় সব বুথেই একটা সাধারণ সমস্যা হয়। কিছু লোক দাবি করেন, বয়স্ক বা অক্ষম ব্যক্তিদের ভোট তাঁর হয়ে অন্য কেউ দিয়ে দেবেন। প্রিসাইডিং অফিসার পড়েন বিপদে। তিনি যদি নিয়ম মেনে ফর্ম ফিল আপ করে তাঁর ভোট নিতে যান, তা হলে অনেক সময় লাগবে। তা ছাড়া গণতন্ত্রের প্রহরী পোলিং এজেন্টদের প্রচ্ছন্ন হুমকি তো থাকেই। আর যদি নিয়ম না মেনে কাজ করেন, তা হলে অনেক অন্যায় দাবির সঙ্গে আপস করতে হয়, সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশন তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করতে পারে। এটা একটা ওপেন সিক্রেট। এই সমস্যা সমাধানের জন্য কিছু ব্যবস্থা করা যেতে পারে:

১) প্রথমেই বিএলও (বুথ লেভেল অফিসার)-দের মাধ্যমে সার্ভে করে এই সমস্ত ভোটারদের নামের তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। তা হলে কারা এই সুযোগ পাবেন, কারা পাবেন না, তা নিয়ে বিতর্ক হবে না। বিএলও-দের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ফর্ম ভোটের অনেক আগেই তাঁদের বাড়ি পৌছে দিতে হবে।

২) এ ছাড়াও তালিকা অনুযায়ী অক্ষম ব্যক্তিদের পোস্টাল ব্যালট দেওয়া যেতে পারে।

সেন্টু শেখ

চন্দনপুর, নদিয়া

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 Poling Agent
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE