Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: একা বুড়ো মানুষেরা

এই একাকিত্বকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন সার্জন জেনারেল বিবেক মূর্তি হার্টের অসুখের একটা বড় কারণ বলে দেখিয়েছেন।

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৮ ০১:০৬

পৌলমী দাস চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘শুধু নিজের সঙ্গেই’ (১২-৬) প্রসঙ্গে এই চিঠি। বয়স্ক মানুষের নিঃসঙ্গতাবোধ এখন বিশ্ব জুড়ে। কয়েক মাস আগে ব্রিটিশ সরকার একটি নতুন দফতর খুলেছে, ‘মিনিস্ট্রি অব লোনলিনেস’। এই নজিরবিহীন পদক্ষেপটি করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে বলেছেন, ‘‘অনেক অনেক মানুষের কাছে এটা একটা রূঢ় বাস্তব।’’ ব্রিটেনে শুধু বয়স্কদের জন্য হেল্পলাইন ‘সিলভারলাইন’ ইতিমধ্যেই খুব জনপ্রিয়। নিবন্ধটিতে উল্লিখিত হানও এই রকম একটি হেল্পলাইন, ‘বেজিং লাভ ডেলিভারি’-র সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।

আর একটি দেশ জাপান, যেখানে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা অনুপাতে সবচেয়ে বেশি। সেখানে একটি নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে। চুরির অপরাধে অনেক বৃদ্ধা ধরা পড়েছেন। দোকান থেকে চুরি। জীবনে প্রথম বার। এর একটা কারণ অর্থনৈতিক হলেও, অন্য কারণ হচ্ছে নিঃসঙ্গতা। ১৬ মার্চ ২০১৮, ‘ব্লুমবার্গ বিজ়নেস উইক’ যে সচিত্র সাক্ষাৎকারভিত্তিক রিপোর্ট ছাপিয়েছে, তা পড়লে চোখে জল এসে যায়। শুধু সঙ্গী পাবেন বলে তাঁরা চুরি করে জেলে যাচ্ছেন। জেলে এঁদের দেখভাল করতে কর্তৃপক্ষ জেরবার। জাপান সরকার তাঁদের স্নান ও অন্যান্য দৈনন্দিন কাজকর্ম দেখাশোনার ভার নিয়েছে।

এই একাকিত্বকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন সার্জন জেনারেল বিবেক মূর্তি হার্টের অসুখের একটা বড় কারণ বলে দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এটা দিনে পনেরোটা সিগারেট খাওয়ার থেকেও খারাপ। নিঃসঙ্গতাকে তিনি স্থূলতার থেকেও অস্বাস্থ্যকর বলে মনে করেন।

অন্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে বয়স্কদের অনুপাত কম। এবং কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বেশি বলে এটাকে একটা ‘তুলনামূলক সুবিধে’ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু অন্য দেশের তুলনায় সরকারের তরফ থেকে সামাজিক সুরক্ষার আয়োজন সামান্য। বিশেষত স্বাস্থ্যব্যবস্থা, যার প্রয়োজনীয়তা এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি, তা প্রায় পুরোটাই বেসরকারি ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। তবে নানা স্তরে সামাজিক বাঁধুনিটা পশ্চিমি দেশের তুলনায় জোরালো। যদিও এর দুর্বলতাও মাঝে মাঝে চোখে পড়ে।

জেরিয়াট্রিক নিউরো-সাইকায়াট্রিস্ট Dilip V Jeste বলেছেন, নিঃসঙ্গতা একটি অনুভূতি। এটা আমাদের ভেতরের ব্যাপার। অনেক মানুষের ভিড়েও আমরা একাকী বোধ করতে পারি। এটা মোকাবিলা করার জন্য তিনি আমাদের ‘উইজ়ডম’-এর ওপর জোর দিয়েছেন। বলেছেন, চাই আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ। তিতকুটে মনোভাবের জন্য হান ভুগেছেন। তা এড়াতে আমাদের মনের লালন-পালনের দিকে নজর দিতে হবে।

শেখর বসু মল্লিক কলকাতা-৪২

বলতেও পারত

অমিতাভ গুপ্তর বৈঠকি গল্পচ্ছলে তথ্য ও তত্ত্বনিষ্ঠ প্রবন্ধ ‘ছাতা নেই মানেই বৃষ্টি?’ (১০-৬)সম্পর্কে এ চিঠি। শ্রীগুপ্তের শিবুদা বলেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল হেল্থ অ্যান্ড মেডিক্যাল কাউন্সিল হোমিয়োপ্যাথির চিকিৎসাশাস্ত্রের ওপর ১৮০০ গবেষণাপত্র নিয়ে সিস্টেমেটিক রিভিউ করে এবং দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানায়, ব্যাপারটা নিতান্তই ভাঁওতা। রোগ সারানোর ক্ষমতা হোমিয়োপ্যাথি ওষুধের নেই। যেটুকু সারে, তা নিতান্তই প্লাসেবো এফেক্ট।’’ এটা তথ্য, পত্রপত্রিকা-নেট ঘাঁটলেই পাওয়া যাবে।

আবার তপেশের বন্ধু শিশির যখন শিবুদার যুক্তির প্রতিবাদ করে, শিবুদা তাকে সাইকোলজির ‘কনফার্মেশন বায়াস’ তত্ত্ব শোনান। শেষের দিকে তিনি আবার তপেশ-শিশিরের আর এক বন্ধু সূর্যকে ‘কগনিটিভ ডিসোন্যান্স’ তত্ত্ব বোঝান।

কনফার্মেশন বায়াসের মূল বক্তব্য হল, ‘‘মন যাতে বিশ্বাস করে, সেই বিশ্বাসের পক্ষেই প্রমাণ খুঁজে বেড়ায়।’’ কগনিটিভ ডিসোন্যান্সের বক্তব্য হল, ‘‘মন যা শুনতে চায়, যা দেখতে চায়, মানুষ সেটাই শোনে, দেখে৷’’ আহা! বেচারা তপেশ, শিশির বা সূর্য তথ্য বা তত্ত্ব কিছুই পেশ করতে পারে না।

তপেশ বলতেই পারত, ‘‘শিবুদা, হোমিয়োপ্যাথিক সিস্টেম অব মেডিসিন ১৭৯৬ খ্রিস্টাব্দে জার্মান ডাক্তার মহাত্মা স্যামুয়েল হ্যানিম্যান আবিষ্কার করেন। কোনও দিন কি নেটে তাঁর জীবনী ঘেঁটে দেখেছেন? বর্তমানে পৃথিবীর ৮০টি দেশে হোমিয়োপ্যাথিক ওষুধ ব্যবহার করেন প্রায় ৮০ কোটি মানুষ। প্রায় ৪২টি দেশে হোমিয়োপ্যাথি লিগাল সিস্টেম অব মেডিসিন হিসেবে মান্য; ২৮টি দেশে এটি কমপ্লিমেনটারি/অল্টারনেটিভ মেডিসিন হিসেবে মান্য। জার্মানি, ফ্রান্স, সুইৎজ়ারল্যান্ড, গ্রিস, ইজ়রায়েল, পাকিস্তান, মেক্সিকো, ব্রাজ়িল, চিলি, কলম্বিয়া, সৌদি আরব-সহ আমাদের দেশে এটি ন্যাশনাল হেল্থ কেয়ার সিস্টেমের অন্তর্ভুক্ত। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৪২টি দেশের ৪০টিতে হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু আছে। দু’একটি দেশের বিগ ফার্মা হাউজ় নিয়ন্ত্রিত কাউন্সিল নিজ নিজ স্বার্থ পূরণের লক্ষ্যে হোমিয়োপ্যাথিকে মান্যতা না
দিতেই পারে! খবর নিলে দেখবেন, সাধারণ মানুষ আজও সে দেশে হোমিয়ো চিকিৎসা করাচ্ছেন আর ডাক্তাররাও হোমিয়ো চিকিৎসা করছেন। এ ঘটনা আগেও বহু বার হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে৷’’

শিশির বলতে পারত, ‘‘শিবুদা, আপনি নিজেই তো ‘কনফার্মেশন বায়াস’-এর শিকার। আপনি নিজে হোমিয়োপ্যাথি বিশ্বাস করেন না, তাই ওই একটি দেশের মান্যতা না দেওয়ার ঘটনাটা আপনার মনের সমস্ত জায়গা দখল করে বসে আছে।’’ একই ভাবে, সূর্য বলতে পারত, ‘‘হক কথা, শিবুদা, আপনি শুনতে চান, হোমিয়োপ্যাথি একটা ভাঁওতা, তাই অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল হেল্থ অ্যান্ড মেডিক্যাল কাউন্সিলের ওই কথাটাই আপনি কেবল শুনেছেন— আ লিভিং এক্সাম্পল অব কগনিটিভ ডিসোন্যান্স৷’’

সুরজিৎ ঘোষ কলকাতা-৩১

প্লাসেবো?

অমিতাভ গুপ্তর নিবন্ধের মূল কথা, হোমিয়োপ্যাথিতে কিছুই কাজ হয় না, তবে যেটুকু কাজ হচ্ছে বলে মনে হয়— তা হচ্ছে প্লাসেবো এফেক্ট। আমি দীর্ঘ চল্লিশ বছর হোমিয়োপ্যাথি নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করি, এই বিতর্কিত প্লাসেবো এফেক্ট নিয়ে কিছু বলতে চাই।

বহু বছর আগে, আমাদের বাড়ির পোষা গরু এবং আশেপাশে অনেকের গরুর একটা অসুখ হচ্ছিল। গরুর খুরের মাঝে এক ধরনের ক্ষত হচ্ছিল, মুখ দিয়ে লালা পড়ত এবং খাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পশু চিকিৎসালয়ে দীর্ঘ চিকিৎসা করে অনেক গরু ভাল হয়, কিন্তু আমাদের গরু এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর দু’এক ডোজ় ‘নাইট্রিক অ্যাসিড’ ২০০ শক্তিতে দিতেই, দ্রুত ভাল হয়ে ওঠে। এর পর প্রতিবেশীদের অনেকেই তাঁদের অসুস্থ গরুকে এই ওষুধ খাওয়ান এবং গরুগুলি সেরে ওঠে। প্লাসেবো এফেক্ট?

অনেক গোয়ালা তাঁদের গরুর বাঁটে সমস্যা হলে ‘ফাইটোলাক্কা ২০০’ খাইয়ে দেন এবং ভাল কাজ পান। প্লাসেবো এফেক্ট?

বেশ কিছু মানুষ আছেন, হোমিয়োপ্যাথিতে মোটেই বিশ্বাস করেন না, কিন্তু বাড়িতে এক শিশি ‘আর্নিকা’ রাখেন, বাচ্চারা পড়ে গিয়ে অাঘাত পেলে ‘অার্নিকা’ খাইয়ে দেন এবং সুফল পান। প্লাসেবো এফেক্ট?

ক্ষীতেন্দ্রনাথ চৌধুরী চাকদহ, নদিয়া

নার্স ও আয়া

রাস্তাঘাটে, যেখানে সেখানে, দেওয়ালে, পিলারে বিজ্ঞাপনে লেখা থাকে ‘নার্স ও আয়া চাই’। অনেকেই হয়তো এখনও জানেন না, নার্সিং পড়তে গেলে উচ্চ মাধ্যমিকে ৯০ শতাংশ নম্বর এবং জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে আসতে হয়। এবং ৪ বছর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে তবেই নার্স হওয়া যায়। তাই দেওয়ালের আনাচে কানাচে ‘নার্স ও আয়া চাই’— এই ধরনের বিজ্ঞাপন অবিলম্বে বন্ধ করা হোক, এবং নার্সকে আয়ার সঙ্গে গুলিয়ে না ফেলে গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদা দেওয়া হোক।

মিতালী জানা এসএসকেএম হাসপাতাল

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

Loneliness Elderly
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy