Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: দুঃসহ অভিজ্ঞতা

২৪ সেপ্টেম্বর টিকিটের যাত্রাপথ ছিল ডালাস-লস অ্যাঞ্জেলস-সিঙ্গাপুর-কলকাতা। ডালাস বিমানবন্দরে ওঁরা পৌঁছে জানতে পারেন, ফ্লাইট প্রথমে লস অ্যাঞ্জেলসে না গিয়ে সান ফ্রান্সিসকোয় যাবে।

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৯ ০০:০১

আমার বাবা (৭৫ বছর) ও মা (৬৭) সাড়ে চার মাসের জন্যে আমার বোন ও ভগ্নীপতির কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেড়াতে গিয়েছিলেন। তাঁদের ফেরার টিকিট ছিল এক নামী এয়ারলাইনসে। টিকিট কাটা হয়েছিল এক নামী অনলাইন সংস্থা থেকে।

২৪ সেপ্টেম্বর টিকিটের যাত্রাপথ ছিল ডালাস-লস অ্যাঞ্জেলস-সিঙ্গাপুর-কলকাতা। ডালাস বিমানবন্দরে ওঁরা পৌঁছে জানতে পারেন, ফ্লাইট প্রথমে লস অ্যাঞ্জেলসে না গিয়ে সান ফ্রান্সিসকোয় যাবে। ব্যাপারটা তাঁদের অবাক করলেও, তাঁরা সেই ফ্লাইটে চড়ে সান ফ্রান্সিসকোয় পৌঁছন। সেই বিমান বন্দরে চার ঘণ্টারও বেশি অপেক্ষার পরে যখন ফ্লাইটে বসেন লস অ্যাঞ্জেলেসের উদ্দেশে রওনা হবেন বলে, তখন পাইলট জানান, কিছু যান্ত্রিক গোলযোগের জন্যে প্লেন উড়তে পারবে না। সব যাত্রী নেমে পড়েন, সঙ্গে আমার বাবা, মা’ও।

সান ফ্রান্সিসকো বিমানবন্দরে লাউঞ্জে ওঁদের এয়ারলাইনসের এক জন অফিসার প্রায় জোর করেই টিকিট রি-রুট করে অন্য একটি এয়ারলাইনসে করে দেন। ওঁদের সেই রুটে টিকিট হয় সান ফ্রান্সিসকো-ইস্তানবুল-ঢাকা-কলকাতা। সান ফ্রান্সিসকো-ইস্তানবুল-ঢাকা যেতে হবে সেই দ্বিতীয় এয়ারলাইন্সে। ঢাকা-কলকাতা বাংলাদেশ বিমানে।

বাবা, মা মৃদু আপত্তি করেছিলেন, কিন্তু ওখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী সে-সব অগ্রাহ্য করে এই রি-রুট করে দেন এবং বর্ষীয়ান দম্পতির সঙ্গে বেশ রূঢ় ভাবেই কথা বলেন। সান ফ্রান্সিসকোয় আমার সঙ্গে বাবা, মা’র ফেসবুক মেসেঞ্জারে কয়েক বার যোগাযোগ হওয়ায় আমিও দেখেছি এক জন কর্মীকে বেশ চেঁচিয়ে কথা বলতে ওঁদের সঙ্গে। আসল ঘটনা এখান থেকেই শুরু।

ইস্তানবুলে পৌঁছে ঢাকার ফ্লাইট ধরতে যাবেন যখন, ওঁদের আটকে দিয়ে বলা হয়, ওঁদের বাকি টিকিট অবৈধ। ইস্তানবুল বিমানবন্দর থেকে বাবা আমায় এই ঘটনা যখন জানান, তখন কলকাতায় রাত বারোটা। বাবা জানান, তাঁকে বলা হয়েছে দেশে ফিরতে গেলে তাঁকে নিজের টাকায় টিকিট কিনে ফিরতে হবে। ইস্তানবুল বিমানবন্দরে ওয়াইফাই আন্তর্জাতিক ভিজ়িটরদের এক ঘণ্টার জন্যে দেওয়া হয়। বাবা পাসওয়ার্ড চাইতে গেলে তাঁকে বলা হয়, তিনি এক ঘণ্টার বেশি সময় বিমানবন্দরে রয়েছেন। বাবা-মা ইস্তানবুলে মোট ৩৪ ঘণ্টা আতঙ্কে, অনিশ্চয়তায় কাটান। ওই ৩৪ ঘণ্টায় দু’জন এক বোতল জল ও একটা কেক ভাগ করে খান। কলকাতায় আমি আর ডালাসে বোন ও ভগ্নীপতি সম্পূর্ণ অন্ধকারে রইলাম। মূল এয়ারলাইনসের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করতে পারিনি।

প্রথম এয়ারলাইনসে আমার ভগ্নীপতি বার বার যোগাযোগ করলে বলা হয়, ঢাকার ফ্লাইট তাঁরা ধরতে পারেননি বলে, তাঁদের টিকিট পুনর্বার রি-রুট করে আর একটি এয়ারওয়েজ়ে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাবা-মা এ বার ইস্তানবুল-দোহা হয়ে কলকাতা ফিরবেন।

পরের দিন কলকাতায় তৃতীয় বিমানসংস্থার হেল্পলাইনে ফোন করে জানতে পারি, প্রথম এয়ারলাইনসের দেওয়া তথ্য তাদের সঙ্গে মিলছে না। ওই দুই নামের যাত্রী সে দিনের দোহা-কলকাতাগামী ফ্লাইটে নেই। তবুও সেই ফ্লাইট কলকাতায় আসার সময়ে আমি কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছই। তাঁরা এলেন না দেখে, আমি কলকাতা বিমানবন্দরের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজারের ঘরে গেলাম। তিনি আমার সমস্যা শুনলেন এবং বিভিন্ন এয়ারলাইনসের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনও সদুত্তর দিতে পারলেন না।

এর মধ্যে ইস্তানবুল থেকে বাবার ওই ক্ষণিকের ফোন পাওয়া মাত্র আমি ভারতীয় পররাষ্ট্র দফতরের হেল্পলাইনে কল করি। নিদ্রালু গলায় এক জন জানান, ইস্তানবুলের ভারতীয় দূতাবাসে যোগাযোগ করতে, যার নম্বর ওয়েবসাইটে পেয়ে যাব। ওয়েবসাইটে আমি যতগুলো ইমেল পাই, সবকটায় বাবা-মা’র আটক হওয়ার খবর জানিয়ে দিই। পরের দিন সন্ধ্যাবেলা ইস্তানবুলের ভারতীয় দূতাবাসের এক অফিসার যোগাযোগ করে বাবা, মা’র পাসপোর্ট নম্বর নেন ও কিছু পরে আবার ফোন করে জানান, ইস্তানবুল বিমানবন্দর তাঁকে জানিয়েছে যে ওই পাসপোর্ট নম্বরের যাত্রী বিমানবন্দরে নেই। আমাকে অবাক করে দিয়ে এও জানান, সাধারণ ভিজিটরের মতো, দূতাবাসের কর্মীদেরও নাকি বিমানবন্দরে প্রবেশ নিষেধ।

উনি আন্তরিক ভাবে কথা বললেও বেশি কথাই ছিল অপ্রাসঙ্গিক, যেমন বৃদ্ধ বাবা-মা’কে কেন এই রকম টিকিট কিনে দিয়েছি! তাঁদের কেন একা ছেড়ে দেওয়া হল, টিকিট কাটার জন্যে কেন পর্যাপ্ত অর্থ নেই? যাই হোক, বিমানবন্দরে যখন অসহায় হয়ে বসে আছি, সেই সময়ে বাবার ফোন দিল্লি থেকে। তিনি সম্পূর্ণ নিজের টাকায় অর্থাৎ ডেবিট কার্ডে টিকিট কেটে অন্য একটি সংস্থার বিমানে দিল্লি পৌঁছেছেন। তখন সকাল সাতটা। এর পরে দিল্লি থেকে ইন্ডিগোর ফ্লাইটে কলকাতায় বিধ্বস্ত অবস্থায় দুজনে পৌঁছলেন কলকাতায় সোয়া বারোটায়।

মূল এয়ারলাইনসের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যোগাযোগ করে অভিযোগ জানিয়ে বিশেষ লাভ হয়নি। ৪৮ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে তাদের আবার যোগাযোগ করার কথা ছিল। তার পর তাদের সল্টলেক অফিসে গেলে তাদের রিজ়ার্ভেশন সুপারভাইজর চিঠিটি নেন। বলেন, পুজোর ছুটির জন্যে তাঁরা এখনই কিছু করতে পারবেন না, দু’সপ্তাহ সময় চাই।

এই চিঠি লেখার মূল কারণ সকলকে জানানো, বিখ্যাত ভ্রমণ ও বিমান সংস্থা থেকে টিকিট কেটেও তাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন নির্মম ব্যবহারের জন্যে ক্রেতারা কী ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন।

আজকাল বিদেশে কর্মরত সন্তানদের কাছে মা-বাবার যাওয়া নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। কারও ক্ষেত্রে যেন এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি না ঘটে।

অভিষেক রায়

কলকাতা-৯২

আশ্চর্য আপত্তি

হাওড়া থেকে আপ হামসফর এক্সপ্রেসের এসি থ্রি টিয়ারে যাচ্ছি বেঙ্গালুরু। ফাঁকা ট্রেন। গোটা কামরায় মেরেকেটে জনা দশেক যাত্রী। আমার কুপের ছটি বার্থে সহযাত্রী মাত্র এক জন। ফেজ দাড়ি আর টুপি পরিহিত জনৈক মুসলিম ভদ্রলোক। আলাপ হওয়ায় জানলাম, তিনিও বাঙালি, বাড়ি ডানকুনির দিকে। কর্মস্থল বেঙ্গালুরু। ছুটি কাটিয়ে ফিরছেন কাজের জায়গায়।

রাত্রি দশটা নাগাদ টিটি এলেন। ঘুম থেকে জাগিয়ে টিকিট পরীক্ষা করে চলেও গেলেন। এবং মিনিট দশেক পরেই পরেই ফিরে এসে পুনরায় আমাকে ঘুম থেকে তুলে জানালেন, আমাকে অন্য একটি কামরায় যেতে হবে। কারণ ‘ইয়াহাঁ পর আপকি সিকিয়োরিটি মে প্রবলেম হো সকতি হ্যায়।’

রেল কর্তৃপক্ষের আমার নিরাপত্তা নিয়ে এতখানি উদ্বেগ দেখে চমৎকৃত হলেও, কারণটা বুঝতে পারছিলাম না। এবং মধ্যরাত্রে লটবহর নিয়ে অন্য কামরায় যাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিল না। সেই অনিচ্ছার কথা জানাতে, টিটি আমাকে অন্তত পাশের কুপের নীচের বার্থে চলে যেতে অনুরোধ করলেন। মাত্র তিন হাত দূরত্বে আমার নিরাপত্তা কী ভাবে বেড়ে যাবে, তা-ও বোধগম্য হচ্ছিল না।

আমার অবুঝপনা দেখে নিরুপায় টিটিবাবু ইশারায় আমার সহযাত্রীর দিকে আমার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলেন। তখন মাথায় ঢুকল ব্যাপারটা। নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটার কারণ সহযাত্রী ওই ‘মুসলিম’ ভদ্রলোকটি। কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ পাশের কুপে চলে গেলাম। কারণ টিটির কথা অমান্য করলে অন্যতর কোনও বিপদে পড়লেও সাহায্য পাওয়া মুশকিল হবে।

তবে যাওয়ার আগে সহযাত্রী ভদ্রলোকটির দিকে এক ঝলক তাকিয়ে দেখেছিলাম। মোবাইলের স্ক্রিনে নিবদ্ধ সেই অপমানিত মুখখানি আমার বাকি রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল।

পারমিতা চৌধুরী

কলকাতা-৮২

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

ভ্রম সংশোধন

‘ফেলে আসা সময়ের ছবি’ (পুস্তক পরিচয়, ৫-১০) শীর্ষক আলোচনায় ‘অনুষ্টুপ’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘বিদ্যাসাগর-বঙ্কিম সম্পর্ক নির্ণয়’ নিবন্ধের লেখকের নাম অতুল সুর নয়, নিখিল সুর। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

Travel Dallas Kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy