Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Doctors

সম্পাদক সমীপেষু: চেম্বারে চিকিৎসা

বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও নার্সিং হোম কী ভাবে সরকারি ডাক্তারদের কুক্ষিগত করে নেয়, স্বাস্থ্য কর্তারা তা বিলক্ষণ জানেন। কারণ, তাঁরাই রাজনৈতিক চাপের মুখে অথবা অর্থনৈতিক প্রলোভনে লাইসেন্স প্রদান করেন।

দোষী ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ভিজিল্যান্স তদন্ত শেষ হতে হতে তাঁর অবসরের সময় হয়ে যায়।

দোষী ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ভিজিল্যান্স তদন্ত শেষ হতে হতে তাঁর অবসরের সময় হয়ে যায়। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২২ ০৬:০৯
Share: Save:

রাজনৈতিক পালাবদল হয়, অথচ স্বাস্থ্য দফতরের কিছুই বদল হয় না (“বেসরকারি ক্ষেত্রে কাজ করলে ‘এনওসি’ চাই সরকারি ডাক্তারদের”, ৪-১১)। সরকারি ডাক্তারদের বেসরকারি কাজে রাশ টানা, আরও কড়াকড়ি, একাধিক নির্দেশ, এ সব দীর্ঘ দিন ধরে সব সরকারই বলে থাকে। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন প্রায় অসম্ভব। ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অধিকাংশ সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই শাসক দলের সংগঠনের অধীনে চলে যান। নিয়মকানুন যতই কঠোর হোক না কেন, উৎকোচ এবং পক্ষপাতদুষ্ট রাজনীতি যত দিন থাকবে, আইনের শাসন কিছুতেই প্রয়োগ করা যাবে না।

বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও নার্সিং হোম কী ভাবে সরকারি ডাক্তারদের কুক্ষিগত করে নেয়, স্বাস্থ্য কর্তারা তা বিলক্ষণ জানেন। কারণ, তাঁরাই রাজনৈতিক চাপের মুখে অথবা অর্থনৈতিক প্রলোভনে লাইসেন্স প্রদান করেন। ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্ট কাগজে-কলমে থেকে যায়। দোষী ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ভিজিল্যান্স তদন্ত শেষ হতে হতে তাঁর অবসরের সময় হয়ে যায়। অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে দুটো ইনক্রিমেন্ট বন্ধ অথবা বদলি করলে ডাক্তারদের খুব একটা ক্ষতি হয় না। কারণ, প্রাইভেট প্র্যাকটিস থেকে আয় অনেক বেশি।

তবে প্রায় সব ক্ষেত্রেই সরকার দায়সারা ভাবে মামলা লড়ার কারণে হারে, এবং ডাক্তারদের সুদ-সমেত বকেয়া মাইনে বাড়িতে পৌঁছে দিতে হয়। দীর্ঘ দিন স্বাস্থ্য দফতরে কাজ করে মনে হয়েছে, অন্যান্য সার্ভিসের মতো সরকারি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও প্রতি তিন বছর অন্তর ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বদলির সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নিয়মাবলির প্রবর্তন প্রয়োজন। স্বাস্থ্য আধিকারিকদের উচিত নার্সিং হোম ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো নিয়মিত সারপ্রাইজ় ভিজ়িট করা ও রিপোর্ট পেশ করা। তবে সর্বশেষ ও সর্বপ্রথম কথাটা হল রাজনৈতিক সদিচ্ছা।

বাসুদেব দত্ত, হালিশহর, উত্তর ২৪ পরগনা

দাঁতের ডাক্তার

এই রাজ্যের ডেন্টাল সার্জারির বর্তমান অবস্থা হতাশাজনক। পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা ৯.১৩ কোটি, সেখানে সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত দন্ত চিকিৎসকদের সংখ্যা এক হাজারও নয়! ফলে সমস্যায় পড়ছেন সাধারণ মানুষ, লাফিয়ে বাড়ছে মুখের ক্যানসারের রোগীর সংখ্যা। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হচ্ছে না ক্যানসার, কারণ ব্লক স্তর থেকে হাসপাতালগুলোয় গত সাত বছর ডেন্টাল সার্জন পদে নিয়োগই বন্ধ।

‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডেন্টাল সার্ভিস’ ব্যাচেলর ডিগ্রিধারী দন্ত চিকিৎসকদের নিয়োগ করে ব্লক প্রাইমারি হেলথ সেন্টার, গ্রামীণ হাসপাতাল, মহকুমা হাসপাতাল, ও জেলা স্তরের সরকারি হাসপাতালগুলোতে। এই ক্যাডারে শেষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ওয়েস্ট বেঙ্গল হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড থেকে প্রকাশিত হয় নভেম্বর, ২০১৫ সালে। এ ছাড়া রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজ, ডেন্টাল কলেজগুলোতে শিক্ষক-চিকিৎসক পদে নিয়োগ হয় পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রিধারী দন্ত চিকিৎসকদের, ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডেন্টাল এডুকেশন সার্ভিস’-এর অধীনে। ২০১৮ সালে এই ক্যাডারের মাত্র ৫২টি পোস্টে নিয়োগ করা হয়, যা চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট কম।

রাজ্য সরকার নিয়োগ বন্ধ রাখলে সমস্যায় পড়বেন গ্রামের মানুষ। খাদের কিনারায় পৌঁছে গিয়েছে ডেন্টাল সার্জারির ভবিষ্যৎ। ডেন্টাল সার্জারি পাশ-করা ছেলেমেয়েরা বছর বছর নিয়োগের অপেক্ষায় বসে থাকেন। নিয়োগের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর। কত ছেলেমেয়ের বয়স পেরিয়ে গিয়েছে পরীক্ষাতে বসার অপেক্ষায়, কে বলতে পারে? দন্ত চিকিৎসকের অভাবের মূল্য দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকেও।

সায়ক দে, ডেন্টাল সার্জন, আলিপুরদুয়ার

রুচিহীন কথা

পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বীরভূমের একটি জনসভায় তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের দুর্বলতার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন, “এক ল্যাংড়া অন্য ল্যাংড়াকে জড়িয়ে ধরে খেলছে” (‘অধীরকে বিজেপি-যোগ টেনে নিশানা ফিরহাদের’, ৭-১১)। এই উক্তি রুচিহীন এবং অমানবিক, এতে প্রতিবন্ধী মানুষ, তাঁদের পরিবার এবং প্রতিবন্ধী আন্দোলনের কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। আমাদের দেশের প্রতিবন্ধকতাযুক্ত ব্যক্তিদের অধিকার আইন অনুসারে এই বক্তব্য আইনত দণ্ডনীয় বটে। তবে এখন পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের রাজনীতিতে কুকথার প্রচলন এত বেশি যে, এই উক্তির জন্য এক মন্ত্রীর শাস্তি হবে, এমনটা আশা করা দুষ্কর।

মন্ত্রী মহাশয়কে মনে করিয়ে দিতে চাই যে, আমরা আসলে সকলেই ‘আপাতত সমর্থ’ (টেম্পোরারিলি এব্‌ল বডিড)। এক জন ২৪ বছরের যুবক যখন ৭৪ বছরে পৌঁছয়, তখন কি তার একই রকম শারীরিক ক্ষমতা থাকে? এই বিষয়টি বোঝার জন্য প্রতিবন্ধীদের অধিকার নিয়ে তাত্ত্বিক পড়াশোনার দরকার হয় না, এটি একেবারে সাধারণ জ্ঞান। বয়সজনিত, দুর্ঘটনাজনিত কারণে, বা রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষই চলার শক্তি হারিয়েছেন, তাঁদের ‘ল্যাংড়া’ বলে ডাকাটা কি কোনও সভ্য সমাজের পরিচয় দেয়? মূলস্রোতের সিনেমা বা সমাজমাধ্যমে আমরা প্রায়ই দেখি যৌনতা, জেন্ডার, প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদি প্রান্তিক পরিচয়কে হাসির খোরাক হিসাবে ব্যবহার হতে। ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদ একই আচরণ করতে পারেন না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের প্রান্তিক গোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে সেই গোষ্ঠীর মানুষদের অপমান করা মেনে নেওয়া যায় না।

শম্পা সেনগুপ্ত , প্রতিবন্ধী আন্দোলন কর্মী, কলকাতা

সন্ত্রাসবাদী?

মানবতা ও নীতির পক্ষে জীবনপণ সংগ্রামে শামিল হওয়া বিশিষ্ট সমাজকর্মী ও প্রতিবাদী মানুষদের কেন রাষ্ট্রের প্রতিহিংসার শিকার হতে হয়, ‘কলমওয়ালা’ (১-১১) সম্পাদকীয়তে উঠে এসেছে তার বিশ্লেষণ। বহু বার দেখা গিয়েছে, মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও জনজাতির মানুষদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যাঁরা কঠিন আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের সরকার কোনও সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত বলে দেখাতে চায়। কিন্তু তাঁদের দেশদ্রোহিতার প্রমাণ দিতে পারে না। তবু, অশীতিপর কবি ভারাভারা রাও, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী গৌতম নওলাখা, দলিত জনজাতি অধিকার আইন-বিশেষজ্ঞ সুরেন্দ্র গ্যাডলিং, জনজাতি আন্দোলনের বিশিষ্ট কর্মী সুধা ভরদ্বাজ, সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান— এমন বহু বিশিষ্ট মানুষ রাষ্ট্রের প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। এ বছর মে মাসে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪এ রাষ্ট্রদ্রোহ আইনকে সর্বোচ্চ আদালত স্থগিতাদেশ জারি করলেও, রাষ্ট্র কিন্তু ইউএপিএ বা বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনের ৩৫নং ধারাকে সংশোধন করে নিয়েছে, যাতে যে কাউকে সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দিয়ে জেলে পোরা যায়। তবে কি আজ ভিন্নমতের কোনও কথা জোর দিয়ে বলা যাবে না? জীবন-যুদ্ধে পদে পদে ক্ষতবিক্ষত হওয়া মানুষরা যোগ দিতে পারবেন না কোনও জোরালো গণতান্ত্রিক বিক্ষোভ-সমাবেশে? রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার কোনও অন্যায় অবিচারের মুখোমুখি হলেও করা যাবে না দৃঢ় সমালোচনা?

ইতিহাস সাক্ষী, প্রতিস্পর্ধী মানুষ এ ভাবেই শাসকের রক্তচক্ষুকে নস্যাৎ করে, অসমাপ্ত কাজ পূরণ করার জন্য লড়াই চালিয়ে যান। তাঁদের কলম কেড়ে নিলেও তাঁরা ফাদার স্ট্যান-এর মতো দীর্ঘকাল কারাবন্দি থেকে জীবন দিয়ে লিখে রেখে যান প্রতিবাদের ইস্তাহার! চিন্তাবিদ ও ইংরেজ পণ্ডিত টমাস হবস (১৫৮৮-১৬৭৯) ৩৫০ বছরেরও আগে, ‘লেভিয়াথান’, তথা সর্বগ্রাসী রাষ্ট্রের নিরঙ্কুশ ক্ষমতার ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, এমন আগ্রাসী রাষ্ট্র যাতে উদ্ভূত না হয়, এর জন্য সবার সচেষ্ট থাকা দরকার।

যে-হেতু কলমই পারে প্রকৃত প্রতিবাদের ইস্তাহার সবার কাছে দ্রুত তুলে ধরতে, তাই কি কলমের প্রতি রাষ্ট্রক্ষমতার এত ভয়?

পৃথ্বীশ মজুমদার, কোন্নগর, হুগলি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Doctors Politics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE