‘বাতিল সঙ্গীতের শিক্ষকপদ’ (৫-১১) শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে জানতে পারলাম সম্প্রতি আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের ইসলামপন্থী সংগঠনগুলি নাচ-গানের শিক্ষা ইসলাম-বিরোধী এই যুক্তিতে সরকারি স্কুলে গান ও নাচের শিক্ষক নিয়োগের বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভ দেখায়। এর পরিণতিতে সে দেশের সরকার সরকারি প্রাথমিক স্কুলে সঙ্গীতশিক্ষকের পদ অবলুপ্ত করে। এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমেই অবিভক্ত ভারতে এক জন শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতগুণী উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ-র আত্মকথার (আমার কথা) একটি অংশের প্রতি সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাই। ১৯৩৫-৩৬ সালে তিনি যখন উদয়শঙ্করের সঙ্গে বিদেশ ভ্রমণ করছেন, সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনায় বলছেন, “প্যালেস্তাইন, তুর্কী, মিশর অঞ্চলের মুসলমানদের দেখে বুঝেছি আমাদের দেশের মুসলমানদের থেকে তারা কত পৃথক। মোল্লাদের লম্বা দাড়ি নেই। কিন্তু কী সুন্দর তারা কোরান পড়ে, আজান দেয়। যেমন সুন্দর উচ্চারণ, তেমনি হৃদয়ের ভক্তি। দেশের মোল্লাদের শিক্ষায় মনে হত ইসলামে বুঝি সংগীতের স্থান নেই। কিন্তু ও দেশে সংগীতের অনাদর নেই, ওদের গ্রামের ছেলেমেয়েদের কী সুন্দর সব নাচ রয়েছে। উদয়ের সব নাচেই হিন্দুদের দেবদেবীর কথা। কিন্তু তবুও সব শ্রেণির মুসলমানরাই তার নাচ দেখে প্রশংসায় মুখর। ওদের প্রাণে গান রয়েছে।”
তবে আমাদের দেশের ইসলামি ঐতিহ্যেও যে সঙ্গীত প্রাচীন কাল থেকে মর্যাদার আসন পেয়ে এসেছে, তার প্রমাণ আমির খুসরো থেকে তানসেন। আমাদের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের শ্রেষ্ঠ শিল্পীদের একটা বড় অংশই ছিলেন ইসলাম-ধর্মাবলম্বী। আমাদের সঙ্গীতে আল্লা, করিম, রহিম যেমন আছেন, তেমনই আছে কত ইসলাম-ধর্মসাধকের নাম। পুস্তকে, লেখায় চার পাশে ছড়িয়ে আছে ইসলামি সঙ্গীত, মহরমের গান, মুসলমানি বিয়ের গান। আর গজলের মতো জনপ্রিয় সঙ্গীতের ধারা যে গভীর ভাবে ইসলাম ধর্মসংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে, তা কি অস্বীকার করা যায়? তা হলে স্কুলে সঙ্গীতশিক্ষা ইসলাম-বিরোধী বা ইসলামে সঙ্গীতের স্থান নেই, এটা গোটা ইসলাম সমাজের কথা হতে পারে না। এটা কোনও ধর্মগুরুর দৃষ্টিভঙ্গি হলে সেটাও বিচার করে দেখার যে তিনি কী পরিপ্রেক্ষিতে, কোন সময়ে, কোন সমাজে দাঁড়িয়ে এমন ভেবেছেন। সঙ্গীতের কিছু খারাপ অনুষঙ্গের কারণে এক সময়ে বাঙালি হিন্দুসমাজেও ছেলেমেয়েদের সঙ্গীতচর্চাকে বাঁকা চোখে দেখা হত। এটাও ঠিক, সঙ্গীতের মতো শক্তিশালী মাধ্যম নিয়ে কাজ করতে হলে হয়তো সতর্কতাও আবশ্যক।
যথার্থ সঙ্গীত দেহমনে উন্মাদনা-উত্তেজনা নয়, মানুষের মনে গভীর শান্তি ও আনন্দ আনে। যাঁরা বিদ্যালয়ে সঙ্গীতশিক্ষার বিরুদ্ধে আন্দোলনকে ধর্মীয় যুক্তিতে সমর্থন করছেন, তাঁদের জীবনেও কেউ কোনও দিন এমন আনন্দ অনুভব করেননি এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? কিন্তু তাঁদের সেই অভিজ্ঞতাকে নিজের ভিতর স্বীকার করতে হবে। এবং এও খেয়াল করতে হবে এই পৃথিবীতে আজানের মতো সুন্দর, মরমি সঙ্গীত খুব বেশি সৃষ্টি হয়নি। শিশুবয়স থেকে সঙ্গীতের গভীরতা উপলব্ধি করতে শিখলে সেই সুরের গূঢ় বার্তাটিও মানুষ ধরতে শিখবে।
সর্বানন্দ চৌধুরী, কলকাতা-৯৩
অন্যায্য আয়
সম্প্রতি অনলাইনে বিদ্যুতের বিল জমা করতে গিয়ে দেখলাম একটি জনপ্রিয় ডিজিটাল লেনদেন এবং আর্থিক পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা বিলে উল্লিখিত মূল্যের চেয়ে এক টাকা বেশি নিচ্ছে ‘প্ল্যাটফর্ম ফি’ হিসেবে। অথচ, অপর একটি সংস্থা তা করছে না। আপাতদৃষ্টিতে এক টাকা অতি ক্ষুদ্র বলে মনে হলেও, হিসাব বলে, যদি বিদ্যুৎ সংস্থার প্রায় চুয়াল্লিশ লক্ষ উপভোক্তার মধ্যে ১০ শতাংশও ওই অ্যাপের মাধ্যমে বিল জমা করে থাকেন, তা হলে উক্ত সংস্থার অনায়াসে মাসিক অতিরিক্ত আয় দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে চার লক্ষ টাকা। এমনিতেই দিন দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যে ভাবে বাড়ছে, তাতে তার সঙ্গে পাল্লা দিতে দিতে মানুষ জর্জরিত। এর উপর এই অতিরিক্ত মূল্যের বোঝা প্রত্যেক উপভোক্তার ঘাড়ে কেন চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে?
ইতিমধ্যেই এই কৌশল অবলম্বন করছে বিভিন্ন ই-কমার্স সংস্থা তাদের অনলাইন বিলে। তারা ডেলিভারি ফি-র সঙ্গে এই ধরনের অতিরিক্ত মূল্য জুড়ে দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে ও ওই অতিরিক্ত মূল্য দিতে একপ্রকার বাধ্য করছে। এই অঙ্ক সব সময় এক টাকায় সীমাবদ্ধ থাকছে না। কখনও তা আট-ন’টাকাতেও পৌঁছে যাচ্ছে। অধিকাংশ মানুষই এত খতিয়ে না দেখে এই অতিরিক্ত মূল্য অজানতে দিয়ে চলেছেন। মজার কথা হল, এই অতিরিক্ত মূল্য নেওয়া হচ্ছে বিবিধ নামে— কখনও সার্ভিস ফি, সারচার্জ, প্রসেসিং ফি, বুকিং ফি, ডিজিটাল ডেলিভারি ফি, আবার কখনও ট্রানজ়্যাকশন ফি, হ্যান্ডলিং ফি, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ফ্রি, প্ল্যাটফর্ম ফি হিসেবে। প্রশাসন সব কিছু জেনে বুঝেও, কোনও প্রতিকারের পথে না হেঁটে, নীরব দর্শক হয়ে বসে রয়েছে। তা হলে সংস্থাগুলির এই ধরনের অতিরিক্ত আয়ের পথ বন্ধ করার দায়িত্ব কে নেবে?
শান্তনু ঘোষ, শিবপুর, হাওড়া
ঝাউবন নাশ
দিঘা কেমন ভাবে শহরকেন্দ্রিক একটি সুন্দর পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে তারই বিস্তারিত তথ্যের পাশাপাশি হাহাকারের ছবি খুঁজে পাওয়া গেল আকাশ বিশ্বাসের ‘কোথায় সেই ঝাউবন ছায়া’ (৩১-১০) প্রবন্ধটিতে। গোয়ার মডেল অনুসরণ করে দিঘাকে আকর্ষণীয় করে তোলার প্রয়াস অবশ্যই প্রশংসনীয় হতে পারে। কিন্তু প্রবন্ধের শিরোনামেই ইঙ্গিত রয়েছে, তাতে নিদারুণ ভাবে ধাক্কা খেয়েছে পরিবেশ তথা প্রাকৃতিক ভারসাম্য। শুধু ব-দ্বীপ ভূমি নয়, সুন্দরবনের ম্যানগ্ৰোভের প্রাচীর কলকাতাকেও প্রবল ঝড়ঝাপ্টার তীব্রতা থেকে অনেকটাই রক্ষা করে থাকে। আমপানের পরে ক্ষতিগ্রস্ত ম্যানগ্ৰোভ অরণ্যের ঘনত্ব বাড়াতে বন দফতরের উদ্যোগে বিশেষ কর্মসূচি গ্ৰহণ করা হয়। স্থানীয় মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ‘সুন্দরবন দিবস’, ‘বনমহোৎসব’ প্রতি বছরই উৎসবের চেহারা নেয়। সুন্দরী, গরান, গেঁওয়ার অরণ্য না থাকলেও, দিঘার ‘ম্যানগ্ৰোভ’ হল তার ঝাউগাছ। এই প্রাকৃতিক প্রাচীরকে রক্ষা এবং মজবুত করে, তার পর তার সৌন্দর্যায়ন করা হলে সেটা কি উপযুক্ত কাজ হত না?
জমির অপ্রয়োজনীয় গাছ কাটার অনুমতি জোগাড় করতে কৃষকের কালঘাম ছুটে যায়, ঘর বাঁচাতে গাছের ডাল ছাঁটার জন্য গৃহস্থকেও সাতপাঁচ ভাবতে হয়। এমতাবস্থায় সৈকতে ঝাউবন নিঃশব্দে উধাও হয়ে যাওয়া বিস্ময়কর নয় কি? ‘কোস্টাল রেগুলেশন জ়োন’ বলে কি কোনও বিধি নেই? কেন কেউ তা মানছে না? ঝাউগাছ নিধনের কারণে জমি কী ভাবে সমুদ্রের গ্ৰাসে চলে যাচ্ছে তাজপুরের দিকে গেলেই মালুম হবে। তারজালিতে আবদ্ধ বোল্ডার যেখানে পুরোপুরি রক্ষাকবচ হতে পারছে না, সেখানে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের দাপটের সামনে পাথরে বাঁধানো সমুদ্রপাড় কতটা সুরক্ষা দিতে সক্ষম, ভবিষ্যৎ বলবে।
ধীরেন্দ্র মোহন সাহা, কলকাতা-১০৭
ওষুধ বিক্রি
ভারতীয় রেল মেল-এক্সপ্রেস ট্রেনে একটি বিশেষ সুবিধা চালু করলে ভাল হয়। মূলত, কিছু জেনেরিক এবং বিশেষ কিছু ওষুধের ব্যবস্থা। যাঁদের বয়স ৫০ বছরের বেশি, তাঁদের অনেক রকম শারীরিক সমস্যা থাকে। মেল-এক্সপ্রেস ট্রেনের সংরক্ষিত বগিতে যাঁরা কমপক্ষে তিনশো কিলোমিটার ভ্রমণ করবেন এবং বয়স ৫০ বছর বা তার বেশি, তাঁরাই এই সুযোগ পাবেন। ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল নিতে চাইলে পুরো পাতা নিতে হবে— কেটে দেওয়া চলবে না। দূরপাল্লার ট্রেনে রেল কর্তৃপক্ষ পরীক্ষামূলক ভাবে এই প্রকল্পটি চালু করে দেখতে পারেন।
অরুণ কুমার সেন, কলকাতা-১৯
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)