E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: দুর্বিষহ উৎসব

মানুষের সহচর পশু, কীটপতঙ্গেরা আলো, আওয়াজ, জলদূষণ আর বিষাক্ত বাতাসের তাণ্ডবে চরম বিপর্যস্ত বোধ করছে। আর মানুষ, যারা এই ধ্বংসযজ্ঞের পুরোহিত, ভালমন্দের সবচেয়ে বেশি দায় বর্তায় তাদের উপর।

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৫ ০৫:৫২

‘বাস্তুতন্ত্রের বিপদ’ (৭-১০) সম্পাদকীয়টি পাঠ করতে গিয়ে মনে পড়ল, গত দুর্গাপুজোয় এক প্যান্ডেলের বিশেষ আলোকসজ্জার কথা। এক জন জানালেন, প্যান্ডেলের নাচ-গানে নাকি এমন লেজ়ার আলো প্রয়োগ করা হয়েছে, যা বিরক্ত করছে আকাশকে। প্রবন্ধে বলা হয়েছে মণ্ডপ থেকে ছোড়া লেজ়ার রশ্মির কথা, যার ফলে দিশাহারা হয়ে পড়ছে পরিযায়ী পাখিরা। তীব্র আলোয় সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়ছে পাখিদের স্বাভাবিক যাপন।

শান্তিনিকেতনের এক বন্ধু জানিয়েছিলেন, রাস্তার কোনও কোনও মোড়ে ল্যাম্পপোস্টের জোরালো আলোয় পাখিরা সারা রাত আর্তনাদ করে, ডানা ঝাপটায়। অর্থাৎ, তাদের ঠিকমতো বিশ্রাম হচ্ছে না। সকালে হাঁটতে বেরিয়ে চোখে পড়ে, রাস্তায় ইতস্তত পড়ে থাকছে পাখিদের শব। এ কোন সর্বনাশের ইঙ্গিত? আমাদের উৎসব এবং ব্যবসায়িক লাভের তীব্র আলোকসজ্জায় পরিবেশে গরম বাড়ছে দেদার। রাতে ফোটার ফুলগুলি পর্যন্ত পাপড়ি মেলতে পারছে না। মানুষের সহচর পশু, কীটপতঙ্গেরা আলো, আওয়াজ, জলদূষণ আর বিষাক্ত বাতাসের তাণ্ডবে চরম বিপর্যস্ত বোধ করছে। আর মানুষ, যারা এই ধ্বংসযজ্ঞের পুরোহিত, ভালমন্দের সবচেয়ে বেশি দায় বর্তায় তাদের উপর। এখন উৎসবের তালিকার কলেবর বেড়েছে। এ সবের প্রভাব প্রতিফলিত হচ্ছে বাস্তুতন্ত্রের অস্তিত্বে। অভিযোগ জানাতে চাইলে দু’দিনের ব্যাপার বলে মানিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু শব্দদূষণের ঝাপটায় প্রবীণ মানুষ ও রোগীদের দুর্বিষহ অবস্থা মাপার কোনও ব্যবস্থা নেই। বাস্তুতন্ত্রের উপর যে ধ্বংসলীলা চলছে, তাতে মানুষের কালিদাসীয় কাজের কথা আসতে বাধ্য।

তবে একটি ফাঁক নিয়ে দু’কথা বলতে চাই। প্রতিরোধের বিষয়ে প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকার উপর জোর দেওয়া হয়েছে প্রবন্ধে। প্রশ্ন হল, প্রশাসনের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষিত হচ্ছে কি না, কে বা কারা সে দিকে নজর রাখবেন? গ্রাম বা শহর, উভয় ক্ষেত্রেই জনপ্রতিনিধি সেই নজরদারির বন্দোবস্ত করতে পারেন। তাঁর ইতিবাচক শংসাপত্র ছাড়া পরের বছর উৎসবের অনুমতি মিলবে না। ব্যক্তি বা পরিবারগত আনন্দ-অনুষ্ঠানগুলিও যেন প্রতিবেশীদের কাছে ক্লেশের কারণ না হয়ে ওঠে, সেটা আগেই জানিয়ে দেবেন সেই প্রতিনিধি। প্রয়োজনে তাঁকে সহায়তা করার জন্য পঞ্চায়েত বা পুরসভা স্তরে সেই অঞ্চলের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের নিয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করা হোক। নিয়ম অমান্য করলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গৃহীত হোক অতি দ্রুত। কোনও উৎসবই যেন উৎপাতের কারণ না-হয়ে ওঠে।

বিশ্বনাথ পাকড়াশি, শ্রীরামপুর, হুগলি

নিরানন্দ

সম্পাদকীয় ‘বিপর্যয়ের কারণ’ ও ‘বাস্তুতন্ত্রের বিপদ’ (৭-১০) প্রণিধানযোগ্য। এ-প্রসঙ্গে কিছু আলোচনা জরুরি মনে করি। প্রবন্ধে বলা হয়েছে— রাজ্যের এক প্রান্তে যখন বিপর্যয় চলছে, তখন অন্য প্রান্তে মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে দুর্গাপুজোর ‘কার্নিভাল’-এ মেতে থাকা শোভন হল কি না, সে প্রশ্ন অন্যত্র বিচার্য। সবিনয়ে বলি, এ-প্রশ্নটাও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ না-হওয়ার কারণ কী? বাঙালির দুর্গাপুজোও কি কোনও শৃঙ্খলার আবহে পালিত হওয়া উচিত নয়? পুজো শুরুর আগে থেকেই এক জন অন্যতম দায়িত্বশীল সাংবিধানিক পদে থাকা মানুষ ফিতে কাটাকাটিতে ব্যস্ত থাকবেন, এ-হেন বিজ্ঞাপন তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ একটি সমাজে বড়ই বেমানান।

সম্পাদকীয় ‘বিপর্যয়ের কারণ’ প্রসঙ্গে আসি। আন্তঃরাজ্য ও আন্তর্জাতিক নদী পরিচালনায় একটা প্রশাসনিক ব্যবস্থা-সহ আন্তর্জাতিক চুক্তি রয়েছে। এগুলি রূপায়ণ ও পর্যালোচনায় সরকারের নির্দিষ্ট ভূমিকার কথা আমাদের মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর প্রশাসন নিশ্চয়ই অস্বীকার করবেন না। কিন্তু আশ্চর্য হতে হয়, সেই দায়িত্ব পালন না করে রাজ্য সরকার অধিক বৃষ্টিপাতজনিত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে যদি বার বার একই সুরে কথা বলে চলে; ঘুরেফিরে সেই ‘ম্যান মেড বন্যা’-র তত্ত্বটিই খাড়া করতে থাকে, তা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। প্রশাসনিক প্রশ্রয়ে, হয়তো বা আশ্রয়েও পাহাড়ে যে ভাবে পরিবেশবিধি লঙ্ঘন করে ব্যবসায়ী ও শাসক দলের নেতারা প্রকৃতিকে যেমন খুশি লুট করার অলিখিত ছাড়পত্র দিয়ে রেখেছেন, তাতে প্রকৃতির স্থিতিশীলতা নষ্ট হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এই গুরুত্বপূর্ণ সত্যকে আড়াল করে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলি মানুষের জীবন-সম্পত্তি রক্ষার দায়িত্ব পালন করছে না।

কিছু মানুষের আনন্দের জোগান দিতে শুধু অনেক লোকের অসুবিধা নয়, গোটা বাস্তুতন্ত্রকে সমস্যায় ফেলাই উৎসবের রেওয়াজ। আর উৎসবে সবাই একই রকম আমোদে যোগ দিতে না-ও পারেন! রাজ্যের এক শ্রেণির মানুষের হুল্লোড়ের আয়োজনকে যে মানুষগুলো উৎসব বলে মনেই করেন না, তাঁরা কেন মেনে নেবেন ‘উৎসব সবার’ এই বার্তাটি? টানা বেশ কয়েক দিন অফিস-কাছারি বন্ধ রেখে, জরুরি পরিষেবারও ক্ষেত্রবিশেষে বিঘ্ন ঘটিয়ে, এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোয় ডাক্তারি পরিষেবা স্তব্ধ করে দিয়ে, এ কেমন উৎসবের ফোয়ারা ছোটানো হচ্ছে রাজ্যবাসীর মধ্যে?

এ ক্ষেত্রে শুধু বাস্তুতন্ত্রের বিপদ না বলে যদি বলা হয়, বাঙালির সামাজিক সাংস্কৃতিক পরিবেশ-প্রতিবেশের সর্বনাশ চলছে উৎসবের নামে, তা কি অত্যুক্তি মনে হবে! এর আগের উদ্ধত বাম সরকার যে ভাবে নিজের কবর নিজেরা খুঁড়ে কার্যত এখন মুছে যেতে বসেছে, বর্তমান শাসকও ফাঁকা ময়দানে খেলার সুযোগ পেয়ে যদি ভেবে বসে এ ভাবেই চলে যাবে দিন, তবে তার চেয়ে দুঃখজনক কিছু হতে পারে বলে মনে হয় না।

শক্তিশঙ্কর সামন্ত, ধাড়সা, হাওড়া

পরিবেশবান্ধব

সম্পাদকীয় ‘বাস্তুতন্ত্রের বিপদ’ যে সব বিষয়ে মানুষকে সজাগ করতে চাইছে, সেগুলির নিরন্তর প্রচার খুবই দরকার। পশ্চিমবঙ্গে শারদীয়ার উৎসব শেষে মোট কত পরিমাণ কঠিন বর্জ্য তৈরি হয়, তার একটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেলে বেশ হয়। এগুলির কিছু অংশ রি-সাইক্লিং করা হলেও তা খুব নিয়ন্ত্রণহীন অবৈজ্ঞানিক ভাবে হয়। ফলে আরও পরিবেশের ক্ষতি হয়।

কিন্তু কিছু আশা এখনও আছে। গত তিন বছর ধরে আমি একটি সংবাদ চ্যানেল ও একটি অতি পরিচিত রং প্রস্তুতকারী সংস্থার যৌথ পরিচালনার পুজো প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসাবে ও পুরস্কার বিতরণে গিয়েছি। এই প্রতিযোগিতাটি হয়ে থাকে পরিবেশবান্ধব আয়োজন কাদের কতটা, সেটা বিচার করে। খুশির কথা এই যে, এতে প্রায় শ’দুয়েক দুর্গাপুজো অংশগ্রহণ করেছে আর সংখ্যাটা ক্রমে বাড়ছে। লক্ষ করেছি যে, এই সব জায়গায় পরিবেশবান্ধব বস্তুর ব্যবহার বেশ কঠোর ভাবে মানা হচ্ছে। প্যান্ডেল তৈরিতে সিন্থেটিক উপাদান নেই বলা যায়, প্রসাদ বিতরণে থার্মোকলের ব্যবহার বন্ধ। প্রতিমার রঙে, সাজসজ্জায় পরিবেশবান্ধব উপাদান ব্যবহার হচ্ছে। বছরভর বৃক্ষরোপণ এবং তার যত্ন নেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু আর একটি ক্ষতিকর ব্যাপারে চেষ্টা করেও লাগাম টানা যাচ্ছে না। গাছের গায়ে, ডালপালায় জড়িয়ে আলোকসজ্জা। বাহারি এই ব্যবস্থায় গাছের ও তার গায়ে বাসা বেঁধে থাকা বহু পাখি, ছোট জন্তু, পোকামাকড় ইত্যাদির ক্ষতি হচ্ছে। জীববৈচিত্রকে বাঁচিয়ে রাখা যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ— এই প্রচার আরও চালিয়ে যেতে হবে।

সুব্রত দাশগুপ্ত, কলকাতা-১৫৭

জিএসটি কেন

সমস্ত বিমার উপর সরকার জিএসটি ছাড়ের ব্যবস্থা করল। বাদ রাখল শুধুমাত্র গ্রুপ বিমার বেলায়। যাঁরা অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী, তাঁরা গ্রুপের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিমা করালে কেন সেই বিমা জিএসটি-র মধ্যে দিয়ে যেতে হবে? বিমার প্রিমিয়াম তো নিজের অবসরকালীন ভাতার টাকা থেকে দিতে হয়।

স্বপন কুমার আঢ্যভান্ডারহাটি, হুগলি

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Environment Pollution

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy