Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: বিচক্ষণতার পরিচয়

সঞ্জয়ের প্রাণদণ্ড না দেওয়া এই মুহূর্তে বিচারকের বিচক্ষণতারই পরিচয় দেয়। কিন্তু এ সিদ্ধান্তে শাসক দলের শিরে সংক্রান্তি!

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৫ ০৬:১৩
Share
Save

দেবাশিস ভট্টাচার্যের লেখা ‘উৎস যদি না বাহিরায়...’ (৩০-১) প্রবন্ধ বিষয়ে কিছু বক্তব্য। তদন্তে গাফিলতি, সাধারণ জনগণের উত্তর না পাওয়া একাধিক প্রশ্ন, মৃত্যু রহস্য ইত্যাদি প্রসঙ্গের উত্থাপন অবান্তর; প্রায় সকলেই এ বিষয়ে কমবেশি অবগত। তবে ব্যক্তিগত ধারণা হল, চরম শাস্তি হলে শাসক দল স্বস্তির নিঃশ্বাসই ফেলত। কোর্টের পুরো রায় পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায়, আদালত আইনরক্ষক ও তদন্তকারীদের দিকে যে ভাবে অভিযোগের আঙুল তুলেছে, তাতে এটি স্পষ্ট— সঞ্জয় চরম দণ্ড পেয়ে গেলে, আরও তদন্ত এবং সুবিচারের সম্ভাবনা— যদি এখনও একটু ক্ষীণ আশা থাকে, তলিয়ে যেত গভীর জলে। তার সঙ্গে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিপুল দুর্নীতির বিষয়টিও চাপা পড়ত। তড়িঘড়ি করে মৃতার দেহ দাহের সঙ্গে সঙ্গে প্রমাণ লোপাটের অভিযোগটি তদন্তের আওতায় না নেওয়া, মৃত্যুর পিছনে উদ্দেশ্যের নিশ্চিতকরণের জন্য সূত্র সংগ্রহ না করা— এই ধরনের অসংখ্য তদন্তের গাফিলতি যা প্রকাশ পেয়েছে, এমতাবস্থায় সঞ্জয়ের প্রাণদণ্ড না দেওয়া এই মুহূর্তে বিচারকের বিচক্ষণতারই পরিচয় দেয়। কিন্তু এ সিদ্ধান্তে শাসক দলের শিরে সংক্রান্তি! তাই স্বাভাবিক কারণেই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে উচ্চ আদালতে যাওয়ার, যাতে পথে পড়ে থাকা কাঁটাটি আইনসিদ্ধ ভাবে উপড়ে ফেলার আদেশ মেলে। সব কিছুতেই কেমন যেন ধোঁয়াশা।

মহাশ্বেতা দেবীর উদ্ধৃতি মনে পড়ে, “জীবন গণিত নয় এবং মানুষ রাজনীতির জন্য তৈরি হয়নি। আমি বর্তমান সমাজব্যবস্থার পরিবর্তন চাই এবং শুধু দলীয় রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না।” আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে সাধারণ মানুষ যে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন তাতে বর্তমান সমাজব্যবস্থার অব্যবস্থা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে বহু দিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভও তো আছড়ে পড়েছিল রাজপথে! জনগণের সেই প্রতিবাদী স্বর যেন ধোঁয়াশাতে মিলিয়ে না যায়।

সুপ্রিয় দেবরায়, ভদোদরা, গুজরাত

ব্যর্থতা শাসকের

দেবাশিস ভট্টাচার্যের লেখা ‘উৎস যদি না বাহিরায়...’ প্রসঙ্গে কিছু কথা। ফৌজদারি মামলায় মোটিফ বা অপরাধপ্রবণ মানসিকতাও খতিয়ে দেখা হয়। ঘটনা এক হলেও এই ‘মোটিফ’ আলাদা রকমের হতে পারে। তাই প্রতিটি আপাতসদৃশ ঘটনায় একই রায় আশা করা কিন্তু উচিত নয়।

আর জি কর মামলায় বিচারকের রায় নিয়ে সমালোচনা করে এ ভাবে ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ সৃষ্টি করা ঠিক নয়। বরং উচ্চ আদালতে গিয়ে রায় নিয়ে প্রশ্ন তোলা যুক্তিযুক্ত। কারণ দেশের সংবিধানে সব কিছুরই একটা পদ্ধতি আছে। বিচারব্যবস্থাকে তো শাসন বিভাগের দেওয়া রিপোর্টের উপর অনেকখানি ভরসা করতে হয়। এ ক্ষেত্রে তা পেশ করেছে সিবিআই, যাদের বিচারপতিরা এক সময় খাঁচায় বন্দি তোতাপাখি বলেছিলেন, আর ছিল সেই পুলিশ রিপোর্ট যাদের প্রতি দিন উচ্চ আদালতে ভর্ৎসিত হতে হয়। এদের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই তো বিচারপতিকে বিচার করতে হয়েছে। ফলে ব্যর্থতা যদি কিছু থাকে সেটা আসলে শাসকেরই নয় কি?

দায়িত্বশীল নাগরিক হিসাবে বিচারের প্রতি আস্থাশীল থাকা আমাদের দরকার। নিজের আবেগের সপক্ষে বিচার পাওয়া যায় না। বিচারের বাণীর মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধও থাকে। সস্তা রাজনীতি আর বিচারের আদর্শ কখনও এক নয়। সত্যের সন্ধানে অনেক দূর যাত্রা করতে হয়। প্রয়োজনে আরও সময় লাগে তো লাগবে। কিন্তু সত্যের এক দিন জয় হবেই।

তন্ময় কবিরাজ, রসুলপুর, পূর্ব বর্ধমান

বিচারের প্রতীক্ষা

‘উৎস যদি না বাহিরায়...’ প্রবন্ধটিতে কিছু স্পষ্ট কথা প্রাঞ্জল ভাবে আলোচনা করেছেন প্রবন্ধকার। এই রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য ও সিবিআই আলাদা ভাবে হাই কোর্টে গিয়েছে। এই রায়টি কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রকাশ্যে এনেছে। তদন্ত নিয়ে পুলিশ এবং সিবিআই-এর ভূমিকা কতটা গ্রহণযোগ্য বা সন্দেহজনক সেটা নিয়েও অনেক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। সেই সঙ্গে লেখক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন যে সাক্ষীদের একাংশের বয়ান ও বক্তব্য নিয়ে পরস্পরবিরোধী মন্তব্য পাওয়া গিয়েছে, তা নিয়ে আরও অনেক জেরা করার প্রয়োজন ছিল বলে আদালতেরও মনে হয়েছে। ঘটনার ডায়েরি লেখায় অহেতুক বিলম্ব করা, ময়নাতদন্তে বহু ত্রুটি, ঘটনাস্থলকে চিহ্নিত না করা বা চিহ্নিত হলেও সেই জায়গাটিকে ঠিকঠাক সংরক্ষিত না করা যেমন রয়েছে, তেমনই আবার আদালতের বিভিন্ন প্রশ্নের যথাযথ উত্তর না দেওয়ার বিষয় রয়েছে বা প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। মৃতদেহ তড়িঘড়ি সৎকার এবং আর জি করের ভাঙচুর নিয়ে ইতিমধ্যে জনগণের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে প্রচুর সন্দেহের কারণ আছে বলে অনেকেরই মনে হচ্ছে।

চার্জশিটে এখনও পর্যন্ত এক জনের নামই দিয়েছে সিবিআই। পরে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেওয়ার কথা, যা জমা পড়েনি। শুধুমাত্র ফাঁসি হবে না যাবজ্জীবন হবে, সেই বিষয়ে বিতর্কে তেমন আগ্রহ নেই। জনগণ কিন্তু চেয়ে আছে এই উত্তর পাওয়ার আশায় যে, তা হলে কি শুধু সঞ্জয় রায় একা দোষী? না কি আরও অনেকে যুক্ত আছে? থাকলে, তারা কোথায়? এ কথা তো বলার অপেক্ষা থাকে না, প্রমাণ লোপাটের চেষ্টাও খুবই গুরুতর অপরাধ। সে ক্ষেত্রে যাঁদের নাম আসছে বা ইতিমধ্যে এসেছে তাঁদের ডেকে যথাযথ তদন্ত করা হচ্ছে না কেন বা সিবিআই আরও জিজ্ঞাসাবাদ করছে না কেন— সেই প্রশ্নও রয়ে গিয়েছে। নির্যাতিতার বাবা-মা তাঁদের মেয়েকে হারিয়েছেন, তাঁদের তো জীবনের একমাত্রই লক্ষ্যই হল সন্তান যেন বিচার পায়। জনগণও চায় আসল অপরাধীরা সামনে আসুক।

যে আন্দোলনের ঢেউ আর জি কর কাণ্ডে দেখা গেল, মানুষ তা সহজে ভুলে যাবে না; সেই আগুন জ্বলবে যত দিন না চিকিৎসক বিচার পাবেন। ন্যায়সঙ্গত বা উচিত কাজ করতে না পারার জন্য অন্যদের বা অন্যকে দোষারোপ না করে নিজের ত্রুটিগুলো সামনে এনে কি নতুন করে অনুসন্ধানের বিষয়ে ভাবা যায়? অহেতুক কাউকে হেনস্থা করা কি কোনও রাজ্য বা রাষ্ট্রের নৈতিক বোধের পরিচয়?

মানুষমাত্রই স্বপ্ন দেখে এবং আশা নিয়ে বাঁচে। ঘুণ-ধরা সমাজ হলেও বহু মানুষ এখনও মানুষের পাশেই এসে দাঁড়ায়, সঙ্গে থাকে। সেই ক্রান্তির আগুন এখনও জ্বলছে। হয়তো তা জ্বলবে যত দিন না পর্যন্ত এই ঘটনায় প্রকৃত সুবিচার পাওয়া যাবে। আজ সকল নাগরিক আশায় দিন গুনছে, সকলেই এক নতুন ভোরের প্রতীক্ষায়।

সোমা বিশ্বাস, কলকাতা-৭৬

প্রশ্ন রইল

দেবাশিস ভট্টাচার্যের লেখা ‘উৎস যদি না বাহিরায়...’ প্রবন্ধটির শিরোনাম গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। এই উৎস খুঁজে বার করার দায়িত্ব যাদের দেওয়া হয়েছে, আর তাদের যারা নিয়ন্ত্রণ করছে, বোঝাই যাচ্ছে তারা তো উৎস বার করার পক্ষে নয়! তাই অনেক ঢাকঢোল পিটিয়েও উৎস বার করা গেল না। কারাগারে রইল সেই এক জন, যাকে সিবিআই তদন্তের আগেই দোষী সাব্যস্ত করেছিল রাজ্য প্রশাসন। বিচারের পর শুরুতেই যেমন বলেছিলেন তেমনই আবারও তার ফাঁসির দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীকে সরব হতে দেখা যাচ্ছে।

কিন্তু প্রশ্ন থেকেই গেল যে কেন এক জন কর্মরত ডাক্তার-ছাত্রীকে তাঁর কর্মক্ষেত্রে প্রাণ দিতে হল? যত দিন আন্দোলনের জোয়ার ছিল তত দিন তবু মানুষের মনে সুবিচারের কিছুটা আশা ছিল, আন্দোলনের চাপে শাসকরা না চাইলেও ন্যায্য দাবিগুলিকে অন্তত অস্বীকার করতে পারেনি। কিন্তু আন্দোলনের গতি কিছুটা স্তিমিত হয়ে যেতেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে অপরাধীরা আবার আড়াল খুঁজে নিল বলেই মানুষের মনে হচ্ছে।

অনুরূপা দাস, পাঁশকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

RG Kar Rape and Murder Case RG Kar Protest RG Kar Case Hearing

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}