সামিম আখতার বানুর ‘ক্যালকাটা’ (১৮-১) শীর্ষক পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে বলি, শুধু ‘ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি’ নয়, আমাদের দেশে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান এখনও আছে, যারা নাম বদল করেনি। যেমন, ক্যালকাটা হাই কোর্ট, ক্যালকাটা গার্লস কলেজ, বম্বে হাই কোর্ট, মাদ্রাজ হাই কোর্ট, মাদ্রাজ ইউনিভার্সিটি, বম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটি। এ-রকম আরও অনেক প্রতিষ্ঠান থাকতে পারে। দেশের বাইরে চিন দেশ পিকিং ইউনিভার্সিটি নামটাই বজায় রেখেছে, এর নাম বেজিং হয়নি। সম্ভবত এরা ঐতিহ্য বজায় রাখার জন্য পুরনো নামই বহাল রেখেছে। বিদেশি শক্তির দাসত্ব তত্ত্ব সব সময় খাটে না। অতএব, ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি ভবিষ্যতে আদৌ ‘কলকাতা ইউনিভার্সিটি’ হবে কি না, তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই ঠিক করবেন।
রঞ্জিতকুমার দাস বালি, হাওড়া
শিশির ভাদুড়ি?
জয়ন্তবাবু, আপনি নরেন্দ্র মোদীকে অভিনেতা শিশির ভাদুড়ির সঙ্গে তুলনা করলেন! (‘সত্যিকারের অভিনেতা’, ২৪-১)। এর আগে লেখাগুলিতে তুলনা করেছিলেন হিটলারের সঙ্গে। ভাল। আপনারা বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাসী, সুতরাং আপনাদের বলার অধিকার কাছে। কিন্তু এটা বুঝতে পারছি না, প্রতিনিয়ত মোদীকে পালা করে আপনারা সহিষ্ণুতার পাঠ পড়াছেন, কিন্তু এই সাড়ে তিন বছরে আপনি বা আপনারা কেন এতখানি অসহিষ্ণু হয়ে উঠছেন? আপনাদের মতে, মোদী-জাদু ফিকে হয়ে গেছে। তবে মোদীকে এত ভয় কিসের? দেশের মানুষকে বোকা ভাববেন না, তারা অনেক সচেতন।
তপন দে ই-মেল মারফত
এমন ছবি কেন
‘পদ্মাবত নামেই ওঁদের আতঙ্ক’ (২৫-১) শিরোনামে অনমিত্র সেনগুপ্তর লেখায় চেতন সাইনির পরিবারের ‘পদ্মাবত’ সিনেমার প্রতিবাদের চূড়ান্ত বাস্তব নমুনার ব্যাখ্যা ঝুলন্ত মৃতদেহের ছবিসহ পাওয়া গেল। সংবাদের গুরুত্ব বাড়াতে এই রকম নির্মম ছবি ছাপালে জনমানসে, বিশেষত শিশুদের সরল মানসিক বিকাশে নৃশংসতার ছাপ থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমন বীভৎস ছবি ছাপিয়ে দৃশ্য দূষণ করবেন না; ঘটনার ব্যাখ্যাই যথেষ্ট।
সুব্রত দেবনাথ রহড়া
বিশ্বাস
‘জাগ্রত?’ (২৫-১) শীর্ষক চিঠিতে যে প্রশ্ন উঠেছে তার উত্তরে জানাই, ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিতে অটল ভক্তের ব্যাখ্যা হল, যে ব্যক্তি দেবদেবীর মূল্যবান সামগ্রী চুরি করে, ঈশ্বরের বিবেচনায় তার (চোরের) প্রয়োজন এতটাই তীব্র যে, দেবদেবী চোরের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে, কৃপা করে তাকে নিজের গয়না ও মূল্যবান সামগ্রী বিনা বাধায় আত্মসাৎ করতে দেন। আর ভক্তকে রক্ষা করা— সেও তো বিশ্বাসেরই আর এক রূপ।
কল্যাণ পাল গোলপুকুর, বারুইপুর
ভাষা ও ক্ষমতা
সব্যসাচী ভট্টাচার্যের হারিয়ে যাওয়া রামায়ণের কাহিনি (‘ছাপাখানার সংস্কৃতিতে হারিয়ে গেল বহু রামায়ণ’, ‘জনগণমনতন্ত্র’ ক্রোড়পত্র, ২৬-১) মনে পড়িয়ে দিল ভাষার এক অসামান্য ক্ষমতার কথা, যেখানে লেখনীর ব্যাখ্যা নির্ভর করে পাঠকের নিজস্ব ব্যাখ্যা তৈরির সক্ষমতার উপরে। সংস্কৃতির বিভিন্নতা জন্ম দেয় নানা অপরূপ রচনার, আর তাই বাল্মীকির রামায়ণ ছড়িয়ে পড়ে নানা ভাষায় নানা রীতিতে— যেখানে প্রতিটি ব্যাখাই নিজস্ব, স্বতন্ত্র এবং স্ব-মূল্যে ভাস্বর।
তবে কয়েকটি প্রসঙ্গ আরও একটু উল্লেখের দাবি রাখে। প্রথমত মধু কবি যে শীতল উপেক্ষা পেয়েছিলেন তা তাঁর জীবদ্দশা এমনকী মৃত্যুর পরেও বিদ্যমান ছিল (তিনি মারা যাওয়ার প্রায় ১৫ বছর পরে তাঁর সমাধি বাঁধানো হয়েছিল)। আর ভারতের অনার্য জাতিগুলিও রামকথাকে নানা কোণ থেকে দেখতে চেয়েছিল। আদিবাসী সাঁওতাল, অসমিয়া, মালয়ালম, মিজো— প্রতিটি ট্র্যাডিশনই তাদের নিজস্ব চিন্তাভাবনার ফসল রূপে জন্ম দিয়েছে নানা রামায়ণী উপকথার, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একজোট হয়ে বিকল্প ঐতিহ্যের পথ খুলে দিয়েছে।
ঊহ্য থাকল আর একটি কথাও। জ্ঞান তখনই বদ্ধ যখন তা ক্ষুদ্র স্বার্থের পাঁকে আবদ্ধ; যখন তার যান্ত্রিকতা নির্ধারিত হয় ক্ষমতাশালীর ছাপাখানার মেশিনে। যেখানে সমস্ত পৃথিবীটাই নিয়ন্ত্রিত হয় কিছু ছায়া-প্রতিচ্ছায়ার (images) প্রেক্ষিতে, সেখানে তাদের ব্যাখার জায়গাটাই যদি একছাঁচে ঢেলে দেওয়া যায়, তা হলে কোনও একটি বিশেষ বয়ানের কর্তৃত্বকে প্রশ্ন করার মতো কেউ থাকবে না। ফলে শেষ পর্যন্ত অথরিটির কথাই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। দিন বদলালেও এর অন্যথা হয় না। উল্লেখ্য, মধু কবির কাব্যের ধারাবাহিক প্রকাশনা কিন্তু সেই তথাকথিত ভদ্রলোকদের হাত ধরেই, বলা ভাল রাজশক্তির প্রচ্ছন্ন মদতে।
ভাষার অপব্যবহার ক্ষমতার অপব্যবহারকেই স্বাগত জানায়। কারণ, ভাষার মাধ্যমেই ক্ষমতার সার্থক বহিঃপ্রকাশ। প্রসঙ্গত লোকসভায় সুষমা স্বরাজ ও শশী তারুরের উপস্থাপন উল্লেখ্য, যেখানে রাষ্ট্রসংঘে হিন্দি ভাষাকে প্রাধান্য দেওয়া প্রসঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ তর্কের সূত্রপাত হয়। ১৯৬৩ সালে হিন্দি ও ইংরেজি উভয় ভাষাকেই মান্যতা দেওয়া হয় সরকারি ভাষা রূপে। তারুর এই তথ্যটিকেই হাতিয়ার করে হিন্দিকে জাতীয় ভাষা রূপে উন্নীত করার প্রচেষ্টার বিপক্ষে জোরদার সওয়াল করেছেন।
তবুও হিন্দি প্রচার পায় এবং উত্তর ও পূর্ব ভারতের বেশির ভাগ মানুষ হিন্দিকেই দ্বিতীয় ভাষা রূপে শেখেন (স্কুল স্তরের দ্বিতীয় ভাষার ধারণা এ-ক্ষেত্রে বিচার্য নয় কিন্তু) প্রধানত বলিউডি সিনেমার উপস্থাপন-নৈপুণ্যে ও ব্যবহারের তাগিদে। একটি বহু ভাষার দেশে এই ধরনের ঘটনা অতি সাধারণ ও তা ভাষার ঐশ্বর্যকেই তুলে ধরে। তা হলে এই অসহিষ্ণুতা কেন?
উত্তরটা সেই কর্তৃত্বপনায়। ভারতের বুকে এক সময় শৈব ও বৈষ্ণবদের মধ্যে যে বৈরিতা ছিল তা কোনও অংশে আজকের হিন্দু-মুসলিম সমস্যার চেয়ে কম নয়। ক্ষমতা কার দখলে থাকবে তা নিয়ে একই ধর্মে সক্রিয় বিরোধিতার নজির আমাদের দেশেই রয়েছে। আর সেই ক্ষমতার স্বাদ বজায় রাখার জন্যই মুক্তমনের পথিকদের বার বার পড়তে হয় গিলোটিনের খপ্পরে। ভিন্ন মত থাকলেই আর পছন্দ না হলেই তাকে দশচক্রে ফেলে ভূত বানানোর খেলা নতুন কিছু নয়। তাই তো সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও ‘পদ্মাবত’ মুক্তিতে ভাবাবেগে আঘাত লাগার কারণ দেখিয়ে একটি সংগঠনের নারী বাহিনী রাষ্ট্রপতির কাছে জহরব্রত পালনের অনুমতি চায়, ভাঙচুর করা হয় স্কুলবাস, তাণ্ডব চলে রাস্তায়। আর তারই সমর্থনে বিবৃতি দেন নানা রাজ্যের মন্ত্রিসভার সদস্যরা।
সোহম রায়চৌধুরী কলকাতা-১২৩
তেলেভাজা বিপদ
তেলেভাজা থেকে শুরু করে পকোড়া— দেখা যাচ্ছে ওই লাইনেই বেরোজগারি থেকে মুক্তির দিশা। দেশকে স্বয়ংনির্ভর করে তুলতে গেলে সব দেশবাসীর খাদ্যতালিকায় ভাজাভুজি যুক্ত করতেই হবে। কিন্তু নিত্য দিন এই সব বস্তু খেয়ে চললে বিপদের আশঙ্কা, অন্তত আমাদের বাংলায়। দেশের অন্য অঞ্চলের সাধারণ লোকজন পকোড়া-কচৌরি খেয়ে দিব্যি হজম করে ফেলতে পারেন। কিন্তু মূলত আর্দ্র আবহাওয়া আর স্যাঁতসেঁতে মাটির বাংলা গ্যাস-অম্বল-আমাশার আড়ত। কথায় বলে, পেটরোগা বাঙালি। এর পর জাতীয় কর্মসংস্থান বাবদ আরও বেশি বেশি ভাজাভুজি গলাধঃকরণে, বাঙালি আরও পিছিয়ে পড়বে। কাজের সময় বারে বারে শৌচাগারে ছোটা আর ঢেকুর তোলা কোনও কাজের কথা নয়।
বিশ্বনাথ পাকড়াশি শ্রীরামপুর-৩, হুগলি
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy