Advertisement
E-Paper

অস্বাভাবিক

জনসংযোগের দায়িত্ব যে সংস্থাটির উপর ন্যস্ত ছিল, তাহাকেও নাকি বরখাস্ত করা হইয়াছে। স্তন্যদান ও স্তন্যপান যে মায়ের ও শিশুর অধিকার, মলের কর্মী বা জনসংযোগ প্রতিনিধির তাহা দৃশ্যত জানা ছিল না।

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০৪

উতলা হইয়া উঠা শিশুকে স্তন্যপান করাইবার আবডাল খুঁজিতেছিলেন মা। দক্ষিণ কলিকাতার শপিং মলে। ঠাঁই মিলে নাই। মলের এক কর্মী সুপরামর্শ দেন, শৌচাগারে কাজটি সারিয়া ফেলুন। ক্ষুব্ধ মা মলের ফেসবুক পেজ-এ অভিযোগ করিলে সংস্থার জনসংযোগ প্রতিনিধি জানান, এই সব কাজ বাড়িতে সারিয়া আসাই বিধেয়! তাহার পর ফেসবুকে বহু শব্দ বহিয়া গিয়াছে। মল কর্তৃপক্ষ ক্ষমা চাহিয়া জানাইয়াছেন, তাঁহাদের সব ব্যবস্থাই ছিল, কিন্তু আপাতত নাই। জনসংযোগের দায়িত্ব যে সংস্থাটির উপর ন্যস্ত ছিল, তাহাকেও নাকি বরখাস্ত করা হইয়াছে। স্তন্যদান ও স্তন্যপান যে মায়ের ও শিশুর অধিকার, মলের কর্মী বা জনসংযোগ প্রতিনিধির তাহা দৃশ্যত জানা ছিল না। ফলে, তাঁহাদের নিকট এই মায়ের অনুরোধ বা দাবিটি বেখাপ্পা ও বেয়াড়া ঠেকিয়াছে। প্রশ্ন, জানা ছিল না কেন? যাহা মানবসভ্যতার আদিমতম ক্রিয়া, তাহাকে ‘স্বাভাবিক’ এবং ‘অপরিহার্য অধিকার’ হিসাবে জ্ঞান করিতে কি সত্যই নারীবাদে দীক্ষিত হইতে হয়? না কি, সেই স্বাভাবিকতাকে ভুলাইয়া এক অ-স্বাভাবিক শালীনতার ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করিবার, এবং বজায় রাখিবার কাজটি সমাজ করিয়া চলিয়াছে বলিয়াই এই আচরণ?

পুরুষতন্ত্রের চক্ষে নারীর শরীর একটি বস্তুমাত্র। সেই শরীরের উপর অধিকার পুরুষের, নারীর নহে। ফলে, শরীরের কোন অংশটি জনসমক্ষে প্রকাশ করা যাইবে, আর কোন অংশ চক্ষুগোচর হইলে ‘রে রে’ পড়িয়া যাইবে, তাহা নির্ধারণের অধিকার নারীর নাই। স্তন তেমনই একটি অঙ্গ, পৌরুষ যাহাকে কামনার বস্তু হিসাবেই দেখিয়াছে। তাহাতে অধিকার কেবলমাত্র সেই নির্দিষ্ট নারীর প্রভুর। সন্তানেরও অধিকার, তবে তাহা গোপনে। অতএব, প্রকাশ্যে স্তন্যদান দূরে থাকুক, জনপরিসরে তাহার জন্য আবডাল দাবি করিবার অধিকারও নারীর নাই। শহর কলিকাতার জনপরিসরগুলি এই মানসিকতার সাক্ষ্য বহন করিতেছে। শপিং মল হইতে রেস্তরাঁ, সিনেমা হল, ট্রেন স্টেশন, কয়টি জায়গায় স্তন্যপান করাইবার জন্য নির্দিষ্ট পরিসর আছে? এই অভাবটি যে নাগরিক অধিকার লঙ্ঘন, সেই বোধই এই শহরের নাই। পুরুষতন্ত্রের শাসন এমনই মজ্জাগত যে এই অস্বাভাবিকতা কাহারও চক্ষে বিষম ঠেকে না।

নারী শরীরের যে কোনও স্বাভাবিকতাই কি পুরুষতন্ত্রের নিকট অশোভন, লজ্জাকর, অপবিত্র হিসাবেই প্রতিপন্ন হয়? ঋতুস্রাবই যেমন। ঋতুমতী মেয়েরা পরিবারের পরিসরেও প্রান্তিক হইয়া স্রাবের দিনগুলি কাটান। দিনগুলিতে তাঁহাদের কাজ করিতে বাধা নাই— নারী শরীরকে বিশ্রাম দেওয়ার কথা পুরুষতন্ত্র ভাবিয়া দেখে না— কিন্তু অধিকার খণ্ডিত। যে শবরীমালার মন্দির লইয়া গোটা দেশ উত্তাল, ঋতুমতী নারীর প্রতি সেই মন্দিরের বৈষম্য কি গৃহস্থালির বৈষম্য হইতে চরিত্রে পৃথক? বস্তুত, দক্ষিণ কলিকাতার শপিং মল আর শবরীমালায় ফারাক কোথায়? শপিং মল ধনতন্ত্রের যুক্তিতে চালিত, ফলে সেখানে নারীর প্রবেশাধিকার খণ্ডিত নহে। কিন্তু, তাহার শরীরের স্বাভাবিকতা, তাহার জৈবিক দাবিকে অস্বীকার করিবার অন্যায়ে দুইটি পরিসর এক বিন্দুতে মিলিয়া যায়। সেই বিন্দুতেই পুরুষতন্ত্রের অধিষ্ঠান। যে পুরুষতন্ত্র ঋতুমতী নারীকে বিচ্ছিন্ন করিয়া রাখে, স্তন্যদানে উদ্‌গ্রীব মাকে শৌচাগারে যাওয়ার পরামর্শ দেয়।

Taboo Breastfeeding Kolkata Metropolitan City
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy