Advertisement
E-Paper

সম্পাদকীয় সমীপেষু: চৌর্যবৃত্তির নেপথ্যে

যারা প্রকাশ্য দিবালোকে বিদ্যা চুরি, তথ্য চুরি, ভোট চুরি বা অনুরূপ চুরিতে হাত পাকায়, চুরির মুহূর্তে তারাও আপন মনের নৈতিকতার আলোটা নিবিয়ে রেখে অনৈতিকতার জুতোয় পা গলিয়ে অন্ধকারে পা বাড়ায়।

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২৪ ০৭:২০

স্বপ্নেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ ‘ধরা পড়লেও লজ্জা নেই’ (১২-৭) আমাদের বেশ কিছু উপলব্ধি ও বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। চুরি করে প্রায় সবাই। বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন কারণে। প্রয়োজনে করে, অপ্রয়োজনেও। অভাবে করে, স্বভাবেও। তবে চুরি করে কেউ ধরা পড়ে, কেউ পড়ে না। যে ধরা পড়ে সে হেসে ব্যাপারটা এড়াতে চায়। যে এড়াতে পারে সে যখন-তখন ভদ্র বেশে জনারণ্যে মিশে যেতে পারে। আর যে ধরা পড়ে না সে নির্বিকার ভদ্রবেশে ঘুরে বেড়ায়। যুগ যুগ ধরে এক শ্রেণির মানুষ চুরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। কেউ কেউ চুরি করে অগাধ ধন-সম্পদের মালিক হচ্ছে। হয়ে উঠছে প্রতাপ ও প্রভাবশালী। কেউ বা আবার চুরি করা সত্ত্বেও খেয়েপরে বেঁচে থাকছে কোনও রকমে। বিবেচ্য এটিও যে, চুরি মানে শুধু ধনচুরি নয়। চুরি মানে হতে পারে মান চুরি, জ্ঞান চুরি, ভোট চুরি, তথ্য চুরি ইত্যাদি। কোন সুদূর অতীত থেকে চুরি কাজটা মূলত নিশিরাতেই চলে। তাই চোরের আর এক নাম নিশিকুটুম্ব। অর্থাৎ, নিশিরাতে কুটুম্ব সেজে অন্যের ঘরে ঢুকতে গেলে আলো নিবিয়ে ঢোকার কৌশল আয়ত্ত করতে হয় নিশিকুটুম্বকে। আর যারা প্রকাশ্য দিবালোকে বিদ্যা চুরি, তথ্য চুরি, ভোট চুরি বা অনুরূপ চুরিতে হাত পাকায়, চুরির মুহূর্তে তারাও আপন মনের নৈতিকতার আলোটা নিবিয়ে রেখে অনৈতিকতার জুতোয় পা গলিয়ে অন্ধকারে পা বাড়ায়। মনের সেই অজ্ঞান অন্ধকারে তারা ঠিক সবার অলক্ষ্যে তাদের লক্ষ্যবস্তু খুঁজে পায়। সমাজ, রীতিনীতি, লোকলজ্জা ইত্যাদি তাদের এই কাজে অন্তরায় হয় না। বিবেচ্য হয়ে দাঁড়ায় কেবল নিজের স্বার্থ, নিজের অর্থবিত্ত।

তবে নিজে কেউ মানতে রাজি নয় যে সে চোর। তখন যে বা যারা তাকে চোর বলেছে ছলে-বলে-কৌশলে, তাদের পাল্টা চোর আখ্যায় প্রত্যাঘাত করাটাই দস্তুর। আবার চোর অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি সমাজে প্রবল প্রতিপত্তিশালী হয়ে থাকে, তা হলে শুরু হয় দ্বন্দ্ব-সহ সামাজিক অস্থিরতা। এই অস্থিরতাই সমাজের সব মূল্যবোধকে ক্রমে ক্রমে অকার্যকর করে তুলছে। এই সামাজিক অবক্ষয় সর্বস্তরের মানুষের কাছে গভীর দুশ্চিন্তার বিষয়।

সৌম্য বটব্যাল

দক্ষিণ বারাসত, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

স্বার্থের খাতিরে

মাঝে মাঝেই সংবাদপত্রে বা কোনও সাহিত্য-পাক্ষিকে একটি বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ চোখে পড়ে— সম্প্রতি প্রকাশিত অমুক গল্প বা কবিতাটি অমুক সংখ্যার অমুক তারিখে প্রকাশিত কবিতার সম্পূর্ণ প্রতিরূপ। এই কুম্ভিলকবৃত্তি ধরিয়ে দিয়ে নিবিষ্ট পাঠকের প্রতি পত্রিকার তরফ থেকে দুঃখ প্রকাশ করে বলা হয়, ভবিষ্যতে ওই লেখক বা কবির কোনও গল্প বা কবিতা ওই পত্রিকায় প্রকাশিত হবে না। গল্পটা এখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু, যে প্রশ্নটা মনের মধ্যে ঘুরপাক খায় তা হল, সম্পাদকীয় বিভাগের জ্ঞান ভান্ডারের সীমাকে অতিক্রম করে গিয়েছে পাঠকদের পাঠের ভান্ডার। তাঁরা তন্ন তন্ন করে পড়েন। মনে রাখেন খুঁটিনাটি।

স্বপ্নেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তর-সম্পাদকীয়ের শুরুতেই তাঁদের যে বন্ধুটির অতি-সাধারণ ‘কুম্ভিলকবৃত্তি’র উদাহরণ দিয়েছেন, তাতে প্রতিবাদী সমবেত বন্ধুরা বিষয়টি ধরিয়ে দিতেই সেই ‘বন্ধুটি’ অতি সহজ পন্থায় যে হাস্যকর কাজটি করলেন, তাতে বন্ধুবৃত্তে তিনি হাসির খোরাক হলেও তাঁর কীর্তির জন্য তিনি আদৌ অনুতপ্ত হননি। ফেসবুকে ‘আনফ্রেন্ড’ করার মাধ্যমে চৌর্যবৃত্তি লুকিয়ে পড়ে না, কারণ তিনি তো ধরাই পড়ে গিয়েছেন। তাতে তাঁর কিছু এসে না গেলেই বিপদের আঁচ পাওয়া যায়। বোঝা যায়, লেখা চুরির ধাপ পেরিয়ে তিনি আরও বৃহত্তর চৌর্য কার্যে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। অন্যের লেখা টুকে বা তার থেকে ধারণা চুরি করে লিখে দিতে পারেন একটি গল্প। এবং সেটি প্রকাশিত হলেও হতে পারে। লেখক হিসাবে তাঁর স্বীকৃতির প্রথম ধাপ এটি। কিন্তু, পরবর্তী কালে ধরা পড়ে যাবেন যদি না তাঁর স্বকীয়তা বলে বৈশিষ্ট্যটি আদৌ জন্মায়। যত ক্ষণ তিনি চৌর্যবৃত্তির সহায়তায় পার পেয়ে যাচ্ছেন, অধরা থাকছেন, তত ক্ষণ ‘চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা’র আপ্তবাক্য তাঁর সহায়ক হবে। তাঁর অপরাধপ্রবণতার দ্বারটি আপনিই উন্মুক্ত হবে। অনুশোচনা-বিলুপ্ত সেই ব্যক্তি সাধারণ ছিঁচকে চোর স্তর থেকে মহান-কুম্ভিলক অভিধায়ে নিজেই পুলকিত হবেন।

আমাদের চার পাশে দেখা যায়, জনগণের সম্পত্তি, জলাভূমি, জমি দাদাগিরি বা গা-জোয়ারির মাধ্যমে করায়ত্ত করে যারা ফুলে-ফেঁপে উঠছে, তাদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। তারা নিস্তার পেয়ে যায় ‘আশীর্বাদী’ হাত মাথার উপর থাকার জন্য। মাস্টারমশাইরা সব কিছু দেখেও চুপ থাকেন পরিস্থিতির চাপে। সুতরাং, অসৎ পথে বাড়ি-সম্পত্তি বাড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতায় জনসমর্থনের অভাব হয় না। শুধু তার বা তাদের হয়ে গলা ফাটানোর জন্য একটা বশংবদ সমর্থকের দল প্রয়োজন, যারা ভোটের মহান যজ্ঞে সেই একদা-সামান্য-ব্যক্তির পৃষ্ঠপোষক দলের আস্থাভাজন হয়ে ওঠার জন্য জান বাজি রাখতেও পিছপা হয় না।

জন্ম থেকেই তো কেউ চৌর্যবৃত্তির সহজাত গুণ নিয়ে শৈশবে পা দেয় না। অভাবে স্বভাব নষ্ট হয়। পেটের খিদের কাছে চুরি করা যে অপরাধ, সেই জ্ঞান-বাণী পিছনের দরজা দিয়ে পালাতে বিলম্ব হয় না। সামান্য হাত-সাফাই করার অভ্যাস ক্রমেই নেশায় পরিণত হয়। ভিড় বাসে এক যাত্রীর পকেট কাটা হচ্ছে দেখেও ক’জন প্রতিবাদী হন? প্রাণের ভয় যে মারাত্মক। তাই অপকীর্তিগুলো আড়ালে চলে যায়। গৃহ সহায়িকার হাত-সাফাইয়ের উদাহরণটি অনবদ্য ভাবে উপহার দিয়েছেন স্বপ্নেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। আসলে, তাদের উপর নির্ভরশীলতা এতটাই সুদূরপ্রসারী যে, ‘চুরি দেখেও না-দেখার ভঙ্গিটি’ই যে ‘নিরাপদ পলায়নপন্থা’ তা অজানতে বিশ্বাস করেন গৃহকর্ত্রী। এ ভাবেই চৌর্যবৃত্তির সঙ্গে মূল্যবোধের অভাবের সাযুজ্য খুঁজে পাওয়া যায়। জীবনে প্রতিষ্ঠা না পাওয়ার বেদনা, অসফলতা এক নীরব যন্ত্রণার সৃষ্টি করে মানুষের মধ্যে। নিজেকে সাধারণ সবাই ভাবতে পারেন না। তাই ক্ষমতাধরদের পদলেহন করে দুর্নীতিকে জড়িয়ে ধরে অতৃপ্ত বাসনা পূরণের জন্য চৌর্যবৃত্তিরই ধারক-বাহক করে তোলে মানুষ।

ধ্রুবজ্যোতি বাগচী

কলকাতা-১২৫

মূল্যবোধহীন

স্বপ্নেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ জানায় যে, মানুষ শুধুমাত্র ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি বাড়ানোর জন্য চুরি করে চলেছে। আর্থিক কারণে চুরি করা এক ব্যাপার। কিন্তু সাচ্ছল্য থাকলেও লোকে চুরি করে নিজের প্রভাব বাড়াতে। এ ক্ষেত্রে ধরা পড়লেও কোনও ভয় নেই, কারণ তার পাশে আছে প্রভাবশালী মানুষ। এ প্রসঙ্গে প্রবন্ধকার একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন— এক গৃহকর্ত্রী দেখলেন তাঁর কাজের মেয়ে আলমারি থেকে চুরি করছে। গৃহকর্ত্রী কিছু বললেন না। কারণ বললে কাজের মেয়ে আর কাজে আসবে না। তাই তিনি রইলেন নীরব। সেই রকম ভাবে শাসক দলের নেতানেত্রী দাদাগিরি দেখালে বা টাকা লুটপাট করলেও উপরমহল নীরবই থাকে। কারণ, ভোট বড় বালাই।

কিছু মানুষের হয়তো প্রাচুর্য থাকে, কিন্তু তাদের প্রতি মানুষের সম্মান থাকে না। তাই ক্ষমতার অলিন্দে থেকে সম্মান আদায় করার এক মানসিক প্রবৃত্তি গড়ে ওঠে কারও কারও। তখন সে মূল্যবোধহীন হয়ে পড়ে। ভাগ্য বা সমাজের উপর আক্রোশ থেকে সমস্ত কিছু কেড়ে নিতে চায়। এই সব মানুষ থেকে তাই একটু সাবধানে থাকা দরকার।

দিলীপ কুমার চন্দ্র

গড়বেতা, পশ্চিম মেদিনীপুর

আসনবৃদ্ধি

বর্তমানে গণপরিবহণে যাতায়াত করা প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা কম নয়। চলন্ত বাসে, ট্রেনে তাঁদের ঠিক ভাবে দাঁড়ানোই খুব সমস্যা হয়। তাই বাসের মতো গণপরিবহণগুলিতে প্রবীণদের বসার আসনসংখ্যা বৃদ্ধি করা হোক।

বিশ্বজিৎ কর

কলকাতা-১০৩

Letters to the editor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy