বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ভুলেই থাকব হয়তো’ (২৪-৪) শীর্ষক প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। প্রবন্ধকার বলেছেন, টাকা পেলেই নেওয়া যায় না ভুলে গেছে যে সমাজ, টাকা থাকলেই দেওয়া যায় না— এ কথা সে বোঝাবে কী করে? বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মনে পড়ে যায়, ক্যাবচালক কিংবা ট্যাক্সিচালকদের স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে যাত্রীদের ভুলো মনে গাড়িতে ফেলে রেখে যাওয়া সোনার গয়না-টাকাকড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনাগুলি। তা হলে মহানগরের বুকে এখনও এমন মানুষ আছেন, যাঁরা মনে করেন, অন্যের জিনিস পেলেই নিয়ে নিতে নেই। কারণ, মহামূল্যবান জিনিসটি নিয়ে নিলে সেই ব্যক্তি পরবর্তী সময়ে ‘চোর’ আখ্যায় ভূষিত হতে পারেন। এমন মানুষরা নিঃসন্দেহে সংখ্যায় কম। তা হলেও তাঁরা এই সমাজেই তো বাস করেন।
এ দিকে, যোগ্য-অযোগ্য শিক্ষকদের ন্যায্য দাবিতে তপ্ত সমাজ। পরীক্ষা নিয়ে পরীক্ষক ছাত্রের খাতাটির যদি যথাযথ মূল্যায়ন করতে না পারেন কিংবা পরীক্ষা পরিচালনা করেছেন যে সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ, তাঁরা যদি রাজনৈতিক-সামাজিক নানাবিধ চাপে ছাত্রের মানের অবমূল্যায়ন করেন, তা নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে এক গর্হিত অপরাধ বটে। সে দিক থেকে বিচার করলে যিনি বা যাঁরা পরীক্ষাটি পরিচালনা করেছেন, তাঁদের অপদার্থ বললেও অত্যুক্তি হয় না। পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্রটি সংরক্ষণ করার দায় পরীক্ষক সংস্থারই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেই কাজটিও হয়নি। সত্যিই পশ্চিমবঙ্গের ‘স্কুল সার্ভিস কমিশন’ নামক সংস্থাটি সব দিক থেকেই যেন গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। সংস্থাটির পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের বেশ কিছুরই কর্মক্ষমতা ক্রমশ কমে এসেছে, নয়তো একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। এই অবস্থায় সমাজতত্ত্ববিদদের বিশ্লেষণগুলি যথাযথ ভাবে প্রণিধানযোগ্য। বর্তমান সমাজের আচার-আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা বলেন যে, যখন কোনও ক্ষেত্রে সমাজে কিছু সংখ্যক মানুষের উপর আঘাত নেমে আসে, তা সর্বদা সমগ্র সমাজের দুঃখের কারণ না-ও হয়ে উঠতে পারে। যেমন— হাজার দিনের উপর অবস্থানে বসে থাকা হবু শিক্ষক পদপ্রার্থীদের আন্দোলন সম্প্রতি কাজ হারানো যোগ্য-অযোগ্য শিক্ষকদের কাছে কোনও দিনই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি। গান্ধী মূর্তির পাদদেশে অবস্থানরত সেই সকল হবু শিক্ষক-শিক্ষিকা পদপ্রার্থীদের সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্র, পত্রিকার প্রবন্ধে কিংবা আলোচনাচক্রে কিছু আলোচনা চলেছে। বাকি সময় এই আন্দোলন সকলের অগোচরেই রয়ে গেছে। এমন ভাবেই সমাজ ভুলে থাকতে চায়। নিজের পেটে আঘাত না লাগলে এই সমাজে অভুক্ত থাকার অর্থ কোনও ব্যক্তিই বুঝে উঠতে পারেন না। তাই ঘটি-বাটি বিক্রি করেও বাঙালি এখন খেয়েপরে বেঁচে থাকার স্বার্থেই চাকরি কিনতে চায়। তার জন্য দশ-কুড়ি লক্ষ টাকা দিতে হলেও তারা রাজি।
যে দেশে চাকরির দোকান বসে, সেখানে যে ক্রেতা ভিড় করবেই তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশেষত ক্ষুধার্ত ক্রেতা হলে তো কথাই নেই। তাই অসহায় অবস্থায় পড়া যোগ্য-অযোগ্য মানুষগুলোকে নিয়ে সমাজমাধ্যমে রসিকতা করা কিংবা পাড়ার আড্ডায় তাঁদের ‘অপরাধী’ বলে একঘরে করে দেওয়ার মধ্যে দিয়ে সমাজের অদূরদর্শিতার পরিচয়ই মেলে। বছরের পর বছর ধরে যোগ্য-অযোগ্যের সহাবস্থানে চলতে থাকা সমাজটায় এমন সব প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসে। আর যোগ্য-অযোগ্যের মাপকাঠিটা সে হাতড়েই চলে।
সঞ্জয় রায়, হাওড়া
উঠুক আওয়াজ
বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রবন্ধটিতে সরাসরি কয়েকটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। সর্বোচ্চ আদালত এসএসসি পরীক্ষায় নজিরবিহীন দুর্নীতির কারণে যে প্রায় ছাব্বিশ হাজার চাকরির নিয়োগ বাতিল করেছে, প্রশ্নগুলির প্রাসঙ্গিকতা তাকে ঘিরে। দীর্ঘ সময় ধরে আদালতে বহু বার শুনানি হয়েছে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে। অভিযোগ, যোগ্যতা নয়, টাকার বিনিময়ে কয়েক হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীকে অবৈধ ভাবে নিয়োগ করা হয়। এ কাজে রাজ্যের শাসক দলের নেতা-কর্মী থেকে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর পর্যন্ত যুক্ত থাকার কথা প্রকাশ পেয়েছে। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী-সহ শিক্ষা দফতরের একাধিক কর্তাব্যক্তির কারাবাসের পর্ব চলছে; অনেকে আবার জামিনে মুক্তি পেয়ে বাইরেও বেরিয়েছেন। তদন্ত চলছে বটে, তবে মূল মাথারা শাস্তি আদৌ পাবেন কি না, তা এখন প্রশ্নের মুখে। এত দিন পরে সিঙ্গুরের জমি আন্দোলন পর্বে উঠে আসা এক অতি পরিচিত মুখ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন তাঁর কাছে নাকি এক শিক্ষাকর্তা অভিযোগ জানিয়েছিলেন, শাসক দল স্কুলে নিয়োগের বিনিময়ে টাকা সংগ্রহ করতে বলেছে। এত দিন পরে তা প্রকাশ্যে আসায় লাভ কিছু হল কি? তবে দলটি যে দুর্নীতিগ্রস্ত, তাতে হয়তো সিলমোহর পড়ল।
পাঠকের মনে থাকবে, সারদা কেলেঙ্কারি সামনে আসার পর মুখ্যমন্ত্রী সারদা কাণ্ডে সর্বস্বান্তদের উদ্দেশে বলেছিলেন, যা গেছে তা গেছে। তিনি সর্বহারাদের শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। বর্তমানে সর্বোচ্চ আদালতের রায় পাওয়া মাত্র তিনি চাকরিহারাদের সঙ্গে নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে মিলিত হয়ে অভয়বাণী শোনালেন, সরকার চাকরিহারাদের পাশে আছে। আর জি কর কাণ্ডে দেখেছি ডাক্তারদের সঙ্গে তড়িঘড়ি মিটিং সেরে নিতে। কিন্তু ওইটুকুই— সমাধানের পথ এখনও অধরাই।
কিন্তু মূল প্রশ্ন যেটি প্রবন্ধের শিরোনাম থেকে উঠে আসে তা হল, কবে থেকে টাকার বিনিময়ে চাকরি এত সহজ হয়ে গেল? প্রবন্ধকার এর উত্তর দিয়ে রেখেছেন প্রবন্ধে— চাকরির দোকান লেগেছিল গ্রামে। সবাই চাকরি কিনতে যেত। কারা গিয়েছিল? আমরাই তো গিয়েছিলাম চাকরি কিনতে। এত বড় একটা অন্যায় ও দুর্নীতি গোটা রাজ্য জুড়ে হয়ে চলল, অথচ আমরা নাগরিক সমাজ (চাকরিহারা-সহ) রাজনৈতিক নেতাদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিব্যি হাত ধুয়ে ফেলতে চাইছি। রাজনৈতিক নেতাদের কেউ ভিন গ্রহের মানুষ নন, তাঁরা এই সমাজেরই মানুষ। আমাদের তো দায়িত্ব ছিল তাঁদের সতর্ক করার, সংশোধন করার। আমরা কি তা করতে পেরেছি?
এ ভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনগুলি আরও ভয়ঙ্কর হতে চলেছে। তাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হলে, আড়াল না খুঁজে আওয়াজ তোলা প্রয়োজন, রাজনীতিকে পরিহারযোগ্য না ভেবে দিন বদলের উদ্যোগ করা দরকার।
বরুণ কর, ব্যান্ডেল, হুগলি
পশুখাদ্যে ঘাটতি
ফি বছর এই সময় চাষিরা ধান কেটে বাড়ি নিয়ে যান। তবে বেশ কয়েক বছর হল চাষিরা ভরসা রাখছেন ধান কাটা ও ঝাড়াই মেশিন কম্বাইন্ড হার্ভেস্টারের উপর। মেশিন মাঠে নামলেই ধান বস্তাবন্দি হয়ে যাচ্ছে। এতে মাঠের ফসল মাঠেই পেয়ে যাচ্ছেন সকলেই। আগে মজুর দিয়ে এই তীব্র রোদে ধান কাটতে বেশ কয়েক দিন লেগে যেত। মজুরিও বেশি দিতে হত। মজুর সঠিক সময়ে পাওয়াও একটা বড় ব্যাপার ছিল। তার উপর ছিল ঝাড়াইয়ের সমস্যা। তবে এ সবের চিন্তা আর নেই। মূলত বিঘা প্রতি এক হাজার টাকার চুক্তিতে ধান কেটে বস্তা ভর্তি করে দিচ্ছে এই মেশিন, যা আগে মজুরি দিতে খরচ হত অন্তত বিঘা প্রতি তিন থেকে চার হাজার টাকা। তবে এত সুবিধার মধ্যেও অসুবিধা হল এই মেশিনে পাওয়া যায় না খড়। ফলে গরুর খাবার মিলছে না।
কৃষ্ণ চক্রবর্তী, পলাশপাই, পশ্চিম মেদিনীপুর
অকেজো
অনূর্ধ্ব ১৭ ফুটবল বিশ্বকাপের সময় বহু ব্যয়ে বেলেঘাটা-বাইপাসের মোড়ে একটি বিশাল আন্ডারপাস গড়ে তোলা হয়। তার পাঁচটি এসক্যালেটর প্রায় দু’বছর ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এগুলি দ্রুত সারানোর ব্যবস্থা করা হোক।
দেবাশিস বসু, কলকাতা-১০৬
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)