সম্পাদকীয় ‘ভাঙা ও গড়া’ (১০-৭) সম্পর্কে কয়েকটি কথা। ক্রিকেট— তা সে টি-২০, এক দিনের অথবা টেস্ট হোক— রেকর্ড ভাঙা-গড়ার কাজ চলছে নিরন্তর। কথায় বলে, রেকর্ড তৈরি হয় ভাঙার জন্য। দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক উইয়ান মুল্ডার জ়িম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে ব্যক্তিগত ৩৬৭ রানে অপরাজিত থেকে ইনিংস ঘোষণা করে চমক দিয়েছেন।
বিশ্বক্রিকেটে টেস্টে সর্বোচ্চ ৪০০ রানের রেকর্ডের কাছাকাছি এসেও কেন তিনি ইনিংস ঘোষণা করলেন, এর জবাবে মুল্ডার বলেন, ক্রিকেটের রাজপুত্র ব্রায়ান লারার প্রতি তাঁর প্রগাঢ় শ্রদ্ধাতেই তিনি তাঁর ৪০০ নট আউট-এর বিশ্বরেকর্ড ভাঙতে চাননি। লারার প্রতি মুল্ডারের এই অসীম শ্রদ্ধা ও ভক্তি ক্রিকেট বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। ক্রিকেটে এ রকম আরও বহু নজির রয়েছে যা এই খেলাকে মহিমান্বিত ও স্মরণীয় করে তুলেছে। ক্রিকেট মাঠে এমনও দেখা গিয়েছে, কোনও দেশের অধিনায়ক আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে প্যাভেলিয়নগামী বিপক্ষের ক্রিকেটারকে পুনরায় খেলায় ফিরিয়ে এনে প্রায় নিশ্চিত জেতা ম্যাচ হেরেছেন।
মুল্ডারের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলছি, ক্রিকেট গতিশীলতা ও চলমানতার খেলা। প্রতি দিন, প্রতি মুহূর্তে ক্রিকেটের রেকর্ড বইতে নতুন লেখা ফুটে উঠছে। পরিবর্তিত হচ্ছে এই খেলার নিয়ম-রীতি। উঠে আসছে অসাধারণ সব প্রতিভা। তৈরি হচ্ছে নতুন রেকর্ড। একদা দুর্ভেদ্য হিমালয়ের চূড়ায় প্রথম পা রেখেছিলেন এডমন্ড হিলারি ও তেনজ়িং নোরগে। তার পর অসংখ্য পর্বতারোহী হিমালয়ের চূড়ায় পদার্পণ করলেও এডমন্ড হিলারি ও তেনজ়িং নোরগের গৌরব এতটুকু ক্ষুণ্ণ হয়নি। তেমনই টেস্ট ক্রিকেটের কিংবদন্তি সুনীল মনোহর গাওস্কর টেস্টে সর্বপ্রথম ৩৪টি শতরান ও ১০০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। তার পর একাধিক ব্যাটার এই কীর্তি অতিক্রম করে নতুন রেকর্ড গড়লেও গাওস্করের সম্মান ও গৌরব আজও অটুট রয়েছে। এ ভাবে এক দিনের আন্তর্জাতিকে সইদ আনোয়ারের ১৯৪ রান ও কপিল দেবের ৪৩৪ টেস্ট উইকেট-এর বিশ্বরেকর্ডও এক দিন ভেঙে গিয়েছিল। এক দিন রোহিত শর্মার এক দিনের আন্তর্জাতিকে ২৬৪ রান, মুত্থাইয়া মুরলীধরনের ৮০০ টেস্ট উইকেট ও সচিন তেন্ডুলকরের ১০০টি আন্তর্জাতিক শতরানের অক্ষত রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড তৈরি হবে। এখানেই ক্রিকেটের বৈচিত্র ও মহত্ত্ব। কীর্তিমান অগ্ৰজদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান এবং নতুন কীর্তি স্থাপনের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতের ক্রিকেট আরও বেশি আকর্ষণীয়, উপভোগ্য ও বিনোদনের মাধ্যম হয়ে উঠবে।
হারান চন্দ্র মণ্ডল, ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
চরৈবেতি মন্ত্রে
ক্রিকেটবিশ্বে ব্রায়ান লারাকে জীবন্ত কিংবদন্তি বলে অভিহিত করাটা হয়তো অত্যুক্তি হবে না। ২০০৪ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অ্যান্টিগা টেস্ট ম্যাচে এক ইনিংসে তাঁর অপরাজিত ৪০০ রানের ব্যক্তিগত স্কোর, টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এক মাইলফলক। সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ও ব্যাটার উইয়ান মুল্ডার, জ়িম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ব্যক্তিগত অপরাজিত ৩৬৭ রানে অবস্থানকালীন ইনিংসের সমাপ্তির ঘোষণা করেছিলেন।
মুল্ডারের ভাষ্য অনুযায়ী, ব্রায়ান লারার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে তিনি লারার রেকর্ড স্পর্শ করতে ও ভাঙতে চাননি। সে কারণেই তাঁর এ হেন সিদ্ধান্ত। যদিও প্রতিযোগিতামূলক খেলার জগতে সমসাময়িক প্রজন্মের লক্ষ্য থাকে অতীতের গড়া রেকর্ড স্পর্শ করা, এমনকি সুযোগ পেলে সেই নজির অতিক্রম করে নতুন শীর্ষবিন্দুর অবস্থান রচনা করাও। এই প্রসঙ্গ অতারণা করায় ‘ভাঙা ও গড়া’ সম্পাদকীয়টি সুপাঠ্য হয়েছে।
মুল্ডারের ইতিবাচক এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানোর পরেও কিছু প্রশ্ন থেকে যায়। ক্রিকেটে ব্যাটারের আউট হওয়ার জন্য যে হেতু বোলারের একটি মাত্র বলের প্রয়োজন, সেখানে ব্যক্তিগত ৪০০ রানের শীর্ষে পৌঁছতে প্রয়োজনীয় ৩৩ রানের মধ্যে তিনি আউট হতেন না এমনটা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় কি? ক্রিস গেল এই ঘটনাটিকে ‘জীবদ্দশায় এক বার আসে এমন সুযোগ’ হাতছাড়া করার ‘ভুল’ বলে ব্যক্তিগত মত প্রদান করেছেন। গেলের এই মন্তব্য, অগ্রাহ্য করার উপায় নেই। কারণ, খেলার মাঠে যে কোনও পরিকল্পনা রূপায়ণের সম্ভাবনা ও বাস্তবায়নের মধ্যে সর্বদা একটা ফারাক থাকে। যদি ৪০০ রানে পৌঁছনোর আগেই তিনি আউট হয়ে যেতেন, তবে নিশ্চয়ই তাঁর ভাষ্য অন্য রকম হত? প্রশ্ন জাগে, মুল্ডার কি ব্যক্তিগত ৪০০ রানের গণ্ডি অতিক্রম করে সেই ইনিংসটি লারাকে শ্রদ্ধার্ঘ্যস্বরূপ নিবেদন করতে পারতেন না? তিনি যদি ৪০০ রানের গণ্ডি অতিক্রম করতে সক্ষম হতেন, তবে বর্তমান ও পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে সেটা অতিক্রম করার জন্য এক নতুন লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হত। সেটাকে পাখির চোখ করে, ভবিষ্যতে ক্রিকেটবিশ্ব নতুন প্রতিভার বিচ্ছুরণ দেখার সুযোগ পেত।
খেলার জগতে পুরনোকে অতিক্রম করে নতুন রেকর্ড গড়া এক বহমান প্রক্রিয়া। নতুন নজির গড়ার মধ্যে অতীতের স্রষ্টার প্রতি অসম্মান প্রদর্শিত হয় না। বরং অতীতে স্রষ্টার গড়া সৃষ্টিকেই পরোক্ষে প্রতিষ্ঠিত করে। ভবিষ্যতে কোনও ব্যাটার হয়তো টেস্টে এক ইনিংসে ব্যক্তিগত অপরাজিত ৪০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করবেন কিংবা অতিক্রম করতে সমর্থ হবেন। তথাপি ব্রায়ান লারার গড়া নজির কখনও ইতিহাস বিস্মৃত হবে না। তাই, খেলার জগতে পুরনো রেকর্ড ভেঙে নতুন নজির স্থাপন করার মূল মন্ত্র হোক ‘চরৈবেতি’, এই হল ক্রিকেটভক্তের মত।
অরিন্দম দাস, হরিপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
ঘোর দুর্দিন
‘কলকাতা লিগে চোটের চিকিৎসায় ছাতা’ (৮-৭) শীর্ষক সংবাদটির পরিপ্রেক্ষিতে জানা গেল, লিগে খুবই অব্যবস্থা চলছে! চিকিৎসক ও চিকিৎসার পর্যাপ্ত সরঞ্জামই নেই আইএফএ-এর তরফ থেকে। প্রতিটি ম্যাচে চিকিৎসক ও পর্যাপ্ত চিকিৎসার সরঞ্জাম রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যিক। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন, এ বার থেকে কলকাতা লিগের প্রতিটি ম্যাচে এক জন চিকিৎসক, অ্যাম্বুল্যান্স ও পর্যাপ্ত চিকিৎসার সরঞ্জাম রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
কলকাতাকে ভারতীয় ফুটবলের মক্কা হিসাবে চিরকাল ফুটবলপ্রেমীরা জেনে এসেছেন। কলকাতা ফুটবল নিয়ে উন্মাদনায় ভেসেছেন ফুটবলপ্রেমীরা। বিকাল হতেই মাঠমুখী জনতা দলবদ্ধ ভাবে মাঠে প্রবেশ করতন প্রিয় দলের খেলা দেখতে। রেডিয়োতে অজয় বসু, কমল ভট্টাচার্যদের ধারাবিবরণী শুনতে শুনতে মানুষ আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে পড়তেন।কলকাতা ফুটবলের সেই সোনালি দিন কি বিস্মৃত অতীত?
কালী শঙ্কর মিত্র, ভদ্রেশ্বর, হুগলি
গৌরব ফেরান
আজ কলকাতা লিগ যেন নিয়মরক্ষার খেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতীতে এই প্রতিযোগিতায় বেশিরভাগ বাঙালি ফুটবলারই খেলতেন। অন্য রাজ্যের বিশেষ করে পঞ্জাব কিংবা কেরলের কিছু নামকরা ফুটবলারও খেলতেন। লিগের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের জেলা স্তর থেকে অনেক ফুটবলার উঠে এসে পরবর্তী কালে ভারতীয় ফুটবলের তারকা হয়েছেন। কিন্তু এখানে এখন বাংলার ফুটবলারদের তুলনায় অন্য রাজ্যের ফুটবলার বেশি।
টিভি আসার পর লাইভ টেলিকাস্ট হত। এখন মোবাইল অ্যাপ-এ খেলা দেখতে হয়। মোটা টাকা দিলে তবেই খেলা দেখা যাবে। তাই ক্রমেই দর্শক ফুটবল থেকে মুখ সরিয়ে নিচ্ছেন। কলকাতার ফুটবলের হৃতগৌরব ফেরানোকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি।
সুকুমার ঘোষ, কলকাতা-৮
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)