স্বাগতম দাসের ‘যেন রুচির মহামারি’ (২৯-৯) শীর্ষক প্রবন্ধ প্রসঙ্গে কিছু কথা। আজ সমাজমাধ্যমের মাদকতায় শুধু অল্পবয়সিরাই নয়, সকলেই আসক্ত। যেন করাল হাতছানিতে ধীরে ধীরে খাদের কিনারায় সবাইকে ডেকে নিচ্ছে। যাঁরা বাসে বা ট্রেনে বসে থাকেন তাঁদের মধ্যে এমন কাউকে কি দেখা যায় যিনি মোবাইলে চোখ রাখেননি? অধিকাংশই সারবত্তাহীন রিল খুলে দেখছেন আর লাইক দিচ্ছেন। অধিকাংশ রিলের মান কহতব্য নয়। যে হাতের কাছে যা আবর্জনা পাচ্ছে তাই ছড়াচ্ছে ও সমাজে অসুখ ছড়িয়ে দিচ্ছে।
প্রতিভাসম্পন্ন গায়ক গায়িকাদের কদর আজ কমেছে। ভাল সাহিত্যের কদর কমেছে। শিল্পীরাও উপযুক্ত সম্মান ও জায়গার অভাব বোধ করছেন, ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ছেন। ভাল কাজ করার আগে যে চাই ‘রিচ’। নয়তো অন্য কোনও ব্যক্তি তাঁর সৃষ্টি কেড়ে নিয়ে সমাজমাধ্যমে ছেড়ে দিয়ে নাম-যশ চুরি করে নিচ্ছেন। ছবি, গান, সুর, ভাল লেখা— সবই দেখা মাত্র সংগ্রহ করে নিচ্ছেন সমাজমাধ্যমে অতিসক্রিয় লোকেরা, স্রষ্টার নাম ছাড়া ছড়িয়ে দিয়ে বাহবা ও অর্থ অর্জনের চেষ্টা করছেন। নিজে মৌলিক পোস্ট করতে না পারলে, কী ভাবে ‘কপি পেস্ট করে অর্থ উপার্জন’-করা যায়, তারও গাইড দিচ্ছেন সমাজমাধ্যমে। সৃষ্টিশীলতা যে ব্যক্তিগত মেধা-সম্পদ, তাকে এ ভাবে নিয়ে নিজের মনে করে ব্যবহার করা যায় না, সেই বোধটাও নেই? এই অন্যায় ঠেকাতে আইন আনার সময় হয়েছে। নয়তো, নীতি প্রসঙ্গ বাদ দিলেও, মানুষকে দুধ বলে এঁরা পিটুলিগোলা খাইয়েই চলবেন। ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিল্প।
এই রুচিহীনতার কারণে সমাজ আজ বিকারগ্রস্ত। না হলে শিশুকে হিংস্র কুকুরের দলের নৃশংস আক্রমণ, চিড়িয়াখানায় মজা করতে গিয়ে বাঘের বা সিংহের ডেরায় পড়ে যাওয়ার পর ওই ব্যক্তির মর্মান্তিক মৃত্যু, পাহাড়ের হড়পা বানে কোনও পরিবারের সদস্যদের সলিল সমাধির মতো দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাগুলিরও ভিডিয়োগ্রাফি করে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করা হয়! এমন মনোভাব মানুষের বিকৃত ইচ্ছা বা রুচির সর্বনাশের কথা বলে। শ্মশানের দৃশ্য ভিডিয়ো করার মানসিকতাই বা আসে কী ভাবে? অন্য মানুষের করুণ বা মর্মান্তিক পরিণতির দৃশ্য চাক্ষুষ করে ক্যামেরাবন্দি করা কোনও মানুষের শুভচেতনার ইঙ্গিত বহন করে না। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বিপর্যয় ঘটতে পারে এমন জায়গায় মানুষ গিয়ে ছবি ক্যামেরাবন্দি করছে, কেউ কি দেখার, বাধা দেওয়ার নেই? এখানে কোথাও যেন কেবল নিজেদের মান ও উৎসাহ চরিতার্থ করতে গিয়ে নিজেদের হুঁশটাকেও বিসর্জন দিচ্ছে মানুষ। নিজেদের সমূহ বিপদের কথা জেনেও বা সরকারি নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করে ব্লগ, রিল বা লাইভ করার নেশায় আজ মানুষজনের এমন বেপরোয়া মনোভাব তো তাদের অন্তঃসারশূন্যতা ও নির্বুদ্ধিতাকেই স্পষ্ট করে দিচ্ছে। তবে সমাজতাত্ত্বিকরা যতই মানুষের এমন বিকৃত রুচি বা উদ্ভট আচরণের কারণ খুঁজুন না কেন প্রধান কারণটা যে হাতের ওই মুঠোফোনটার মধ্যে লুকানো আছে, অস্বীকার করার জায়গা আর বোধহয় নেই। কারণ নিজেকে সহজে, চটজলদি প্রচারের আলোয় আনার সর্বাপেক্ষা সহজ মাধ্যম ওই যন্ত্রটিই। যাকে সব সমর্পণ করে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছে একুশ শতক।
স্বরাজ সাহা, কলকাতা-১৫০
থামাতে হবে
স্বাগতম দাসের লেখা ‘যেন রুচির মহামারি’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সময়োপযোগী এবং বাস্তবোচিত এক আলোচনা। কিন্তু, প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করে, কেন এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হল?
প্রথম কথা, এখন বহু সংখ্যক মানুষের মধ্যে একটা বিখ্যাত হওয়ার শখ জেগেছে, তা সে বিখ্যাত হওয়ার মতো কোনও গুণ থাক বা না থাক। তাই, যাই করুক না কেন সেটাই সমাজমাধ্যমে তুলে ধরার প্রবণতা তৈরি হয়েছে, ইচ্ছা, যদি কোনও ভাবে ভাইরাল হওয়া যায়। আর সেটা তো হচ্ছেও, তাতে কোনও সারপদার্থ থাক বা না থাক। সমাজমাধ্যমে কনটেন্ট বানানো তুলনামূলক ভাবে কম খরচসাপেক্ষ, শ্রমও তেমন নেই। তাই এরা সবাই সেই সুযোগ নিতে চাইছে। একটা মোবাইল ছাড়া বলতে গেলে আর কিছুই প্রয়োজন নেই— আর সেটা তো হাতে হাতে। অতএব সেটারই সদ্ব্যবহার হোক।
এর ভবিষ্যৎ কী? সমাজমাধ্যমকে পুরোপুরি বর্জন করা বা সর্বস্ব দিয়ে আঁকড়ে ধরা— কোনওটাই তো রাস্তা হতে পারে না! আসলে, একটা সমন্বয় তৈরি করার দরকার হয়ে পড়েছে। কারণ আজকের দিনে একে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করলে, নিজেরই ক্ষতি। ভাল মন্দ যা-ই হোক না কেন, এর ক্ষমতা অপরিসীম, মানতেই হবে। তবে বুঝতে ও বোঝাতে হবে যে, এখানে পরিচিত হওয়াটাই করাটাই জীবনের শেষ কথা নয়। কাজটা কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়। সংগঠিত, পরিকল্পিত এবং দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ করলে হয়তো এই অর্থহীন ইঁদুরদৌড় থেকে জাতিকে এখনও থামানো সম্ভব।
দীপঙ্কর সেন, দুর্গাপুর, পশ্চিম বর্ধমান
প্রযুক্তির আঁধারে
স্বাগতম দাসের ‘যেন রুচির মহামারি’ প্রবন্ধটি প্রসঙ্গে আরও কিছু কথা। যে বিষয়গুলি ঘরের আড়ালে থাকাই ভাল বলে আমরা চিরকাল জেনে এসেছি, সেগুলো এখন প্রকাশ্যে আনতে কেউ দ্বিধাবোধ করছে না। সমগ্র সমাজের প্রতি এর কুপ্রভাব আমরা আমরা দেখতেই পাচ্ছি, গ্রামেগঞ্জে কিন্তু মেয়েদের প্রতি অশালীন আচরণ, যৌন নিগ্রহ বাড়ছে!
শুধু কি সমাজমাধ্যমের আড্ডাখানা? ইউটিউবে গল্পের চ্যানেলগুলোও তো এখন খুব জনপ্রিয়, কিন্তু সেখানে এমন কিছু গল্প আসছে যেগুলি আদিরসাত্মক। রিল-সূত্রেই দেখা যাচ্ছে যে, অন্ধকার জগতের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেশি, তাই কি নিম্ন রুচির সাহিত্যও বাড়ছে?
এই সর্বগ্রাসী নেট-দুনিয়ার প্রভাব আটকানোর উপায় কী? তা হলে কি ধরে নিতে হবে আমরা প্রযুক্তির দাস হয়ে পড়ছি? এক দিকে যেমন প্রযুক্তি তার প্রভাব বিস্তার করছে অন্য দিকে মানুষের চিন্তার দৈন্যতা বাড়ছে! তা হলে মানুষের মানবিক সুচিন্তার সঙ্গে প্রযুক্তির সম্পর্ক কি ব্যস্তানুপাতিক হয়ে গেল! নাকি এই ডিজিটাল দুনিয়া মানুষের মনকে ডিজিটাল বানিয়ে দিচ্ছে? সমাজতাত্ত্বিকদের গবেষণা ও তার ফলের অপেক্ষায় আছি।
দেবযানী চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা-৮৬
রাতের মেট্রো
মেট্রো কর্তৃপক্ষের কাছে একটি সময়োপযোগী ও জনস্বার্থমূলক আবেদন রাখতে চাই। মানুষের কাজের পরিধি ও কাজের সময়ের পরিধি উভয়ই এখন আগের চেয়ে বেড়েছে। তাই ব্লু ও গ্রিন লাইনের উভয় প্রান্ত থেকে দিনের শেষ মেট্রো রাত ১০টা ৩০ মিনিটে ছাড়লে আমার মতো বহু মানুষের উপকার হবে। সে ক্ষেত্রে রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত দশ বা বারো মিনিট অন্তর ও ১০টা থেকে ১০টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত পনেরো মিনিট অন্তর মেট্রো চললেই যাত্রীরা বহুলাংশে উপকৃত হবেন।
সত্যি কথা বলতে রাতে খুব বেশি সময়ের ব্যবধানে আবার একটা ট্রেন এলে যাত্রীদের ভরসা অর্জন করা সম্ভব নয়। কিন্তু ১০-১৫ মিনিট অন্তর মেট্রো চললে যাত্রীরা নিশ্চয়ই মেট্রো ব্যবহার করবেন।
ইন্দ্রনীল ঘোষ, লিলুয়া, হাওড়া
যুগোপযোগী
এখন নিউা টউন এলাকায় নথিভুক্ত বিদ্যুৎ গ্রাহকদের পুরনো প্রক্রিয়ায় বিলের হার্ডকপি পাঠানো হয়। গ্রাহকদের তো মোবাইল ফোন আছে, হয়তো সকলেরই আছে, না থাকলেও নম্বর দেখলেই তা জানা সহজ। তাই কয়েক দফা প্রচারের পর, আপত্তি না উঠলে মেসেজ করে দিলেও কাজ সম্পন্ন হয়। এত হার্ডকপি প্রিন্টের খরচ অনেক কমবে এতে, প্রকৃতি রক্ষা পাবে। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার উপর আর্থিক চাপ কমলে গ্রাহকেরও সুবিধা।
প্রতাপ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-১৫৬
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)