‘মুক্তমনা মুসলিমদের ডাক শমীকের’ (১১-৭) শীর্ষক খবরটি পড়ে জানলাম রাজ্য বিজেপির সভাপতি পদে আসীন হয়ে শমীক ভট্টাচার্য মুক্তমনা মুসলিমদের বিজেপির পক্ষে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন বাঙালি হিন্দুর মতোই মুক্তমনা প্রগতিশীল মুসলিমদের অস্তিত্ব রক্ষার শেষ লড়াই। আগামী বিধানসভা নির্বাচন এই মানুষগুলির অস্তিত্ব রক্ষার শেষ লড়াই-ই বা কেন, তা স্পষ্ট হল না, বরং শুনতে হুমকির মতো ঠেকল। বিজেপিকে সমর্থন না করলে তাঁদের অস্তিত্ব কেন বিপন্ন হবে, তাও তিনি ব্যাখ্যা করেননি। বরং বলেছেন, সংখ্যালঘু সমাজের সমর্থন ছাড়াই তাঁর দল ক্ষমতায় আসতে চলেছে।
বাস্তবিক, বর্তমানে শুধু এ রাজ্যে নয়, সারা দেশে মুসলিমদের, বিশেষত প্রগতিশীল মুসলিমদের অস্তিত্ব যতখানি বিপন্ন হয়েছে, তা হয়েছে কেন্দ্রে বিজেপি শাসনের কারণেই। বিজেপি নেতারা যত হিন্দুত্বের জিগির তুলেছেন, যত তা মুসলিম বিদ্বেষের রূপ নিয়েছে, ততই প্রগতিশীল মুসলিমদের অস্তিত্ব সঙ্কুচিত হয়েছে। অভিজ্ঞতায় দেখেছি, যে প্রগতিশীল মুসলিম বিদ্বজ্জনেরা মুক্ত মন নিয়ে চলতেন, ধর্মনিরপেক্ষ জীবন যাপন করতেন, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে তাঁদের অনেকের উপরে প্রবল সামাজিক চাপ তৈরি হয়েছে। সমাজে হিন্দু মৌলবাদ যত প্রসারিত হয়েছে, মুসলিম মৌলবাদও ততই শক্তিশালী হয়েছে।
অনস্বীকার্য যে, তৃণমূল মুসলিমদের একটা বড় অংশকে ভোটব্যাঙ্ক হিসাবে ব্যবহার করছে। এক কালে কংগ্রেসও মুসলিমদের ভোটব্যাঙ্ক হিসাবে ব্যবহার করেছে। এ রাজ্যে সিপিএমের দীর্ঘ শাসনকালে মুসলিমরা শেষ পর্যন্ত যে ভোটব্যাঙ্ক হিসাবেই ব্যবহৃত হয়েছেন, সাচার কমিশন তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হঠাৎ প্রগতিশীল মুসলিমরা কেন মুসলিমবিদ্বেষী বিজেপিকে সমর্থন করবেন, বোঝা দায়। তাঁরা যদি ঐক্যবদ্ধ ভাবে গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং গণতান্ত্রিক শক্তির পক্ষে দাঁড়াতে পারেন, তবেই তাঁদের অস্তিত্ব বজায় থাকবে।
ইন্দ্র মিত্র, কলকাতা-৩১
চরম ক্ষতি
‘স্কুলে দেরি ছাত্রীদের, বাইরে থেকে তালা’ (১৫-৭) শীর্ষক সংবাদটি পড়ে জানা গেল, জলপাইগুড়ির একটি বালিকা বিদ্যালয়ে নির্ধারিত সময়ের পরে এসে মূল ফটক বন্ধ থাকায় বেশ কিছু ছাত্রী বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারেনি। ছাত্রীরা ফিরে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই তাদের অভিভাবকরা এই ঘটনার প্রতিবাদে ফটকের বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেন। একটি বিদ্যালয় সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে নিয়মানুবর্তিতা একটি আবশ্যিক শর্ত। সেই নিয়মানুবর্তিতারই এক অপরিহার্য অঙ্গ হল সময়ানুবর্তিতা। সময়ানুবর্তিতা বজায় রাখার প্রয়োজনেই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি কার্যকর পদক্ষেপ করেছিলেন। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, বিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের এ রকম পদক্ষেপ করার পিছনে একটা কারণ নিশ্চয়ই রয়েছে। হয়তো দিনের পর দিন ছাত্রীদের তরফে এই সময়ানুবর্তিতার চূড়ান্ত অভাব দেখেই কর্তৃপক্ষ এ রকম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
মানুষের জীবনে সাফল্যের চূড়ায় উত্তরণের ক্ষেত্রে এক অপরিহার্য সোপান হল সময়ানুবর্তিতা, যার পাঠ ছাত্রজীবন থেকেই শুরু হওয়া উচিত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অভিভাবকরা যে পদক্ষেপটি করলেন, তাতে তাঁরা শুধু সন্তানদের জীবনে সাফল্যের সেই সোপানটিকে নিজ হাতে ধ্বংসই করলেন না, পাশাপাশি তাঁদের সন্তানদের মধ্যে যে মূল্যবোধ গড়ে উঠতে পারত, সেখানেও কুঠারাঘাত করলেন। অনেক অভিভাবককেই বর্তমান প্রজন্মের পড়ুয়াদের ঔদ্ধত্য, বেপরোয়া মানসিকতা নিয়ে হাহুতাশ করতে দেখা যায়। কিন্তু এই মানসিকতার পিছনে অভিভাবকদের একটা অংশেরও যে ভূমিকা রয়েছে, সেটাও মনে রাখা দরকার। সংবাদে প্রকাশ, ছাত্রীরা শিক্ষিকাদের কারও কারও দেরি করে আসা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। নিঃসন্দেহে, ছাত্রীরা এই বিষয়টি নিয়েই তাদের অভিভাবকদের প্ররোচিত করেছে, যার পরিণতিতে অভিভাবকরা ওই পদক্ষেপটি করেন।
শিক্ষিকারা দেরি করে এলে, সেটিকেও বিদ্যালয়ের নিয়মানুবর্তিতার লঙ্ঘন বলেই মনে করা যায়। কিন্তু তার জন্য এ রকম চরম পদক্ষেপ না করে অভিভাবকদের উচিত ছিল বিষয়টি নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা। কিন্তু সেই ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা তাঁরা দেখালেন কই? সন্তান-স্নেহের উৎকট প্রদর্শন ঘটাতে গিয়ে বরং তাঁরা সন্তানদেরই চরম ক্ষতি করলেন।
প্রদীপনারায়ণ রায়, শক্তিপুর, মুর্শিদাবাদ
কিসের দোষে
গত মে মাসে সুপ্রিম কোর্ট এই রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের ডিএ সংক্রান্ত রায়ে প্রাথমিক ভাবে বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ মিটিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু একটি অন্য দিকও এই প্রসঙ্গে আলোচনা করা দরকার। সরকারি কর্মচারীরা পে-কমিশনের সুবিধা-সহ অন্য সমস্ত প্রকার সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন। স্থায়ী শিক্ষকদের অনেকেরই বেতন আশি হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা। অথচ, একই জায়গায় একই বিদ্যালয়ে একই কাজ করা সত্ত্বেও এক জন পার্শ্বশিক্ষকের বেতন উচ্চ প্রাথমিকে তেরো হাজার আর প্রাথমিকে দশ হাজার টাকা। এ দিকে, এই পার্শ্বশিক্ষকেরা কেউ এম এসসি কিংবা এম এ পাশ, সঙ্গে পেশাগত বি এড বা ডিএলএড-ও করেছেন। এক শ্রেণির বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রতি বছর বেড়েই চলেছে আর আর এক শ্রেণি একই জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে— এই বৈষম্য কেন? আশি হাজার টাকা বেতনের শিক্ষকেরও যেমন পরিবার আছে, তেমনই আছে দশ হাজার বেতনের পার্শ্বশিক্ষকেরও। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ, এই দুর্মূল্যের বাজারে পার্শ্বশিক্ষকদের বেতনবৃদ্ধির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হোক।
সিনথল ঘোষ, রানাঘাট, নদিয়া
বিকল্প কই
সিদ্ধার্থ জি সিংহের ‘প্লাস্টিক দূষণ থেকে মুক্তির পথ’ (১৩-৮) শীর্ষক প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বলি, বর্তমানে এ দেশে প্লাস্টিক ব্যবহারের উপর যতই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হোক, সাধারণ মানুষ কিন্তু প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ এখনও যথেচ্ছ ব্যবহার করে চলেছেন। কারণ, প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে স্বল্পমূল্যে সহজলভ্য কোনও পণ্য মানুষের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হয়নি এখনও পর্যন্ত। বিদেশে বহু রাষ্ট্র কিন্তু ইতিমধ্যেই প্লাস্টিক বর্জন করতে শুরু করে দিয়েছে। অথচ, আমরা এখনও শুধুমাত্র আলোচনার পর্যায়ে আটকে থেকেছি। আমরা কি পারি না প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের পরিবর্তে একটু মজবুত ধরনের (মোটা কাগজের সঙ্গে পাতলা কাপড়ের আস্তরণ দিয়ে তৈরি) ক্যারিব্যাগ অথবা থলি কম দামে বাজারে নিয়ে আসতে? অথবা ছোট ছোট চটের থলির প্রবর্তন করতে, আগেকার দিনে যেমনটি দেখা যেত। এই ধরনের বিকল্প জিনিস তৈরি করার উদ্যোগ করা হলে দরিদ্র মানুষদেরও খানিক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। তা ছাড়া, পাট এ বঙ্গের সম্পদ। পাট থেকে ক্যারিব্যাগ তৈরির উদ্যোগ পাটশিল্পের উন্নতির সহায়কও হয়ে উঠতে পারে।
সুব্রত সেন গুপ্ত, কলকাতা-১০৪
আরও ট্রেন
‘বাড়তি ট্রেন’ (৩০-৭) সংবাদটি পড়লাম। বিধাননগর রোডের স্টেশনের ভিড় কমাতে রেল বিশেষ উদ্যোগ করেছে। ফলস্বরূপ সন্ধ্যার ব্যস্ত সময়ে সরাসরি বিধাননগর রোড স্টেশন থেকে কল্যাণীগামী বিশেষ ট্রেন পরিষেবা চালু করা হয়েছে। এর সঙ্গে বনগাঁগামী একখানি লোকাল ট্রেন পরিষেবা চালু হলে, যাত্রী-চাপ উল্লেখযোগ্য ভাবে কমবে বলে আশা করা যায়।
অঞ্জন কুমার শেঠ, কলকাতা-১৩৬
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)