E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: ক্ষতিগ্রস্ত পড়াশোনা

শুধুমাত্র চরম আবহাওয়ার প্রভাবে গত বছর বিশ্ব জুড়ে ৮৫টি দেশে পড়াশোনা বিঘ্নিত হয়েছে প্রায় ২৪ কোটি ২০ লক্ষ স্কুলপড়ুয়ার। সমীক্ষা অনুযায়ী, এই দেশগুলোর প্রতি সাত জন শিশুপিছু কমপক্ষে এক জনের পড়াশোনা বিঘ্নিত হয়েছে চরম আবহাওয়ার কারণে।

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২৫ ০৬:০৬

বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনে যে সব সাধারণ দৈনন্দিন প্রক্রিয়া প্রায়ই প্রভাবিত হচ্ছে, শিক্ষা তার মধ্যে অন্যতম। কিছু দিন আগে ইউনিসেফ-এর তরফে ‘গ্লোবাল স্ন্যাপশট অব ক্লাইমেট-রিলেটেড স্কুল ডিসরাপশনস ইন ২০২৪’ নামক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। রিপোর্টে উঠে এসেছে, শুধুমাত্র চরম আবহাওয়ার প্রভাবে গত বছর বিশ্ব জুড়ে ৮৫টি দেশে পড়াশোনা বিঘ্নিত হয়েছে প্রায় ২৪ কোটি ২০ লক্ষ স্কুলপড়ুয়ার। সমীক্ষা অনুযায়ী, এই দেশগুলোর প্রতি সাত জন শিশুপিছু কমপক্ষে এক জনের পড়াশোনা বিঘ্নিত হয়েছে চরম আবহাওয়ার কারণে। গত বছর এই সূত্রে সবচেয়ে প্রভাবিত অঞ্চল ছিল দক্ষিণ এশিয়া।

প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চরম আবহাওয়ার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি স্কুল শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে, তা হল তাপপ্রবাহ। গত বছর এর ফলে প্রভাবিত হয় প্রায় ১৭ কোটি পড়ুয়া। এমনিতেই যে কোনও অঞ্চলে শিশু ও বয়স্করাই চরম আবহাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ‘অধিকতর ঝুঁকি’তে থাকে। ফলে যে সব শ্রেণিকক্ষে প্রচণ্ড গরমে কোনও স্বস্তির ব্যবস্থা নেই, সেখানে শিশুরা পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারে না। আবার যদি বর্ষায় বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে স্কুলে আসা-যাওয়ার রাস্তা ডুবে যায় বা স্কুলচত্বর প্লাবিত হয়, তাতেও তারা ক্লাসে যেতে পারে না।

ইউনিসেফ এই প্রসঙ্গে জানিয়েছে যে, দশকের পর দশক জীবাশ্ম জ্বালানির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার-সহ মানুষের নানা রকম স্বার্থান্বেষী কাজকর্ম এই পৃথিবীকে উষ্ণতর করে তুলছে ও বদলে দিচ্ছে আবহাওয়ার রূপ। গত বছর বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি শিল্পবিপ্লব পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের সীমা অতিক্রম করে। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে আগামী দিনে বিশ্ব জুড়ে তাপপ্রবাহ ও সাইক্লোনের মতো বিপর্যয় বৃদ্ধি পাবে, বিশ্ববাসী আরও বেশি দুর্যোগের ঝুঁকির সম্মুখীন হবে। ইউনিসেফ-এর আশঙ্কা, চরম আবহাওয়ার তাৎক্ষণিক প্রভাবের শিকার হওয়ার বাইরেও কিছু শিশু, বিশেষত মেয়েদের স্কুলছুট হওয়ার সম্ভাবনা আরও বাড়বে।

ইউনিসেফ-এর পর্যবেক্ষণমূলক তথ্যে এও জানা যায়, চরম আবহাওয়ার কারণে ২০২৪ সালে বিভিন্ন দেশে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে উচ্চ-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস স্থগিত রাখতে, ছুটি বাড়াতে এবং পাঠদানের সূচিতে বদল আনতে হয়েছিল। এমনকি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে অনেক স্কুল ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছিল। শ্রেণিকক্ষগুলি যাতে আরও চরম আবহাওয়া-প্রতিরোধী হিসাবে তৈরি করা যায়, সেই লক্ষ্যে পরিকল্পনা আবশ্যক। কারণ, বিশ্ব জুড়ে স্কুলে পাঠরত শিশুদের এক বৃহৎ অংশই ১০ বছর বয়সে এসেও ঠিকমতো পড়তে বা লিখতে পারে না। এর মাঝে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। আশঙ্কার কথা, আজ বিশ্বের প্রায় ১০০ কোটি শিশু জলবায়ু ও পরিবেশগত ক্ষতির উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলিতে বাস করছে। ফলে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে ভবিষ্যতে একটি গোটা প্রজন্মই হয়তো অশিক্ষার আঁধারে তলিয়ে যাবে।

শুভজিৎ বসাক, কলকাতা-৫০

সবার শিক্ষা

পশ্চিমবঙ্গের সরকার যেন শিক্ষাকে ছুটির তালিকায় পরিণত করার এক অদ্ভুত খেলায় মেতেছে। প্রতি বছর গ্রীষ্মের ছুটির মেয়াদ বাড়ছে— ৫০ দিন, ৬০ দিন, কখনও তারও বেশি। অথচ, সরকারি স্কুলে শিক্ষাদানের প্রকৃত সময়, ক্লাসে শিক্ষকের উপস্থিতি কিংবা ছাত্রছাত্রীদের পাঠসূচি অনুযায়ী শিক্ষালাভ— কিছুই নির্দিষ্ট নয়।

এই পরিস্থিতি নিছক আবহাওয়ার কারণে নয়। হ্যাঁ, তাপপ্রবাহ নিঃসন্দেহে বিপজ্জনক, কিন্তু সেই অজুহাতে এমন দীর্ঘ ছুটি কোনও শিক্ষাবান্ধব প্রশাসনের চিন্তাধারা হতে পারে না। বরং মনে হচ্ছে, এর পিছনে রয়েছে এক সুপরিকল্পিত ‘সরকারি শিক্ষা ধ্বংস প্রকল্প’। লক্ষ্য একটাই— সরকারি স্কুলব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করে তাকে ধীরে ধীরে বেসরকারিকরণের দিকে ঠেলে দেওয়া। বর্তমানে রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলিতে কয়েক লক্ষ শিক্ষকের পদ শূন্য পড়ে আছে। শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বছরের পর বছর থমকে রয়েছে। এক দিকে ছাত্রসংখ্যা বাড়ছে, অন্য দিকে শিক্ষক সঙ্কট চূড়ান্ত। পাঠদান ব্যাহত, বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নেই, সহশিক্ষা কার্যক্রম অচল, গ্রন্থাগার বা বিজ্ঞান পরীক্ষাগারের মতো পরিকাঠামো প্রহসনে পর্যবসিত। অনেক জায়গায় এক-এক জন শিক্ষককে একাধিক শ্রেণির দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে, কখনও কখনও একাধিক বিষয়েরও। এটা কি কেবল অব্যবস্থা? না কি এ এক কৌশলী পরিকল্পনা, যাতে মানুষ নিজেরাই সরকারি স্কুল এড়িয়ে গিয়ে বেসরকারি বিকল্প খোঁজে?

যখনই সরকার তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়, তখন সেই জায়গা দখল করে নেয় বাজার। আজ শহর তো বটেই, মফস্‌সল বা প্রত্যন্ত গ্রামেও ‘ইংরেজি মাধ্যম বেসরকারি স্কুল’ ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে। অনেক সময় সেই স্কুলগুলোর নিজস্ব ভবন পর্যন্ত থাকে না, প্রশিক্ষিত শিক্ষক তো দূরস্থান। তবুও গরিব-মধ্যবিত্তরা সর্বস্ব খরচ করে সন্তানদের সেখানে পাঠাচ্ছেন। কেন? কারণ, সরকারি স্কুলের প্রতি ভরসা আজ ভেঙে পড়েছে। শিক্ষা এখন অধিকার নয়, একটি বিক্রয়যোগ্য পণ্য। একটা সময় ছিল, যখন শিক্ষাকে মানবিক অধিকার বলে গণ্য করা হত। আজ তা হয়ে উঠেছে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসার ক্ষেত্র। সরকার নিজে শিক্ষায় বিনিয়োগ কমিয়েছে। আজ যে অভিভাবকের অর্থের জোর আছে, তাঁর সন্তানের জন্য রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ক্লাসরুম, স্মার্ট বোর্ড, আধুনিক লাইব্রেরি, কোডিং-রোবোটিক্সের ক্লাস। আর যাঁদের পকেটে কিছু নেই? তাঁদের সন্তানের জন্য তালা ঝুলছে স্কুলে, শিক্ষক অনুপস্থিত, মিড-ডে মিলই একমাত্র টান।

এই সঙ্কট থেকে মুক্তি পেতে চাই একটি সুসংগঠিত, যৌক্তিক, দাবিনির্ভর শিক্ষার আন্দোলন। সরকারি স্কুলগুলোয় পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ, বিজ্ঞান পরীক্ষাগার, লাইব্রেরি, ইন্টারনেট সংযোগ, বিষয়ভিত্তিক ও পূর্ণকালীন শিক্ষকের দাবি উঠুক। সেই সঙ্গে চাই পাঠ্যক্রমে বিজ্ঞান, যুক্তিবাদ ও সমাজ সচেতনতার অন্তর্ভুক্তি, দলীয় রাজনীতিমুক্ত শিক্ষা প্রশাসন, স্কুল পরিচালনা ও নিয়োগে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা, ছুটির নিয়মে যুক্তি ও বাস্তবতার প্রয়োগ, দুর্যোগ মাথায় রেখে কিন্তু শিক্ষার ক্ষতি না করে বিকল্প পঠনপাঠনের ব্যবস্থা।

যে দেশে শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকারকে এ ভাবে অবহেলা করা হয়, সেখানে প্রকৃত প্রগতির আশা করা যায় কি? একটি সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে চাই বিজ্ঞানভিত্তিক, মানবিক, এবং গণতান্ত্রিক শিক্ষা। না হলে হয়তো এক দিন এমন সমাজ গড়বে, যেখানে ধনীর সন্তানেরা কোটি টাকায় ‘শিক্ষা’ কিনবে, আর গরিব সন্তানেরা স্কুলের তালা দেখে বাড়ি ফিরে যাবে। এটাই কি আমাদের প্রজাতন্ত্রের প্রতিশ্রুতি ছিল? এখনই সময় প্রতিবাদের, দাবি তোলার— সবার জন্য সমান, মুক্ত, বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার।

প্রতাপ চন্দ্র দাস, নবদ্বীপ, নদিয়া

দূষণ রোধ

আজ রথযাত্রা। এই রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গায় মানুষের ঢল নামে। মেলা বসে। মানুষের সমাগম যেখানে যত বেশি সেখানে পরিবেশ নিয়ে চিন্তাও তত বেশি। মানুষের ভিড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে সেই সব অঞ্চলের পরিবেশ দূষণের মাত্রা। বাড়ে প্লাস্টিক এবং নানা ধরনের ক্ষতিকর বর্জ্য জমা হওয়ার সম্ভাবনা। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এবং আয়োজকরা দূষণ নিয়ন্ত্রণে, বিশেষত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় যথাযথ উদ্যোগ করলে রথযাত্রার স্থান এবং সংলগ্ন অঞ্চলের দূষণ অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কেউ নিয়ম না মানলে, তার বিরুদ্ধে অবিলম্বে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে।

একমাত্র তবেই মহাসমারোহে উৎসব পালনের পাশাপাশি পরিবেশও সুরক্ষিত থাকবে।

পার্থ প্রতিম মিত্র, ছোটনীলপুর, পূর্ব বর্ধমান

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Atmosphere UNICEF

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy