আমি কোনও দিন সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা পড়িনি, শুধু জানতাম উনি এক জন বিখ্যাত কবি। হঠাৎ কী ভাবে ওঁকে এতটা কাছ থেকে দেখলাম, চিনলাম, জানলাম, ভাবতেই অবাক লাগে। ঠিক তারিখ মনে নেই, হয়তো ১৯৮৬-৮৭ সাল হবে। আমরা তখন কোচবিহারে থাকি। তার আগে বর্ধমানে থাকাকালীন এক বন্ধু মারফত আলাপ হয়েছিল কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। উনি একাধিক বার আমার বাড়ি এসেছেন, আমাকে ছোট বোনের মতো স্নেহ করতেন। কোচবিহারে হঠাৎ এক দিন বেলা ১২টা নাগাদ শক্তিদা একটা রিকশা থেকে নামলেন আমাদের বাড়ির সামনে। বললেন, দিনহাটাতে কবি সম্মেলন হচ্ছে, উনি সেটিতে যোগ দেওয়ার জন্য এসেছেন। কিছু ক্ষণ গল্প করে চলে গেলেন গেস্ট হাউসে। সন্ধ্যাবেলা গেস্ট হাউসে শক্তিদা, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, শরৎ মুখোপাধ্যায়, বেলাল চৌধুরী, শামসুর রাহমান ও আরও অনেকের সঙ্গে দেদার আড্ডা হল। রাতে আমরা ফিরে এলাম। পরে আমার স্বামী মনোজকে ওঁরা জোর করে নিয়ে গেলেন দিনহাটাতে। অত জন কবির মাঝে উনিই একমাত্র অ-কবি, সন্ধেবেলা ফিরে বললেন ওঁকেও জোর করে স্টেজে তোলা হয়েছে এবং ফুলের তোড়াও দেওয়া হয়েছে। আমরা খুব হাসতে লাগলাম।
রাতে হঠাৎ দেখি সুভাষ মুখোপাধ্যায় কয়েক জন কবিকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের বাড়িতে উপস্থিত। বললেন, তোমার বাড়িতে আমি থাকব, শক্তি ইত্যাদি ওদের সঙ্গে গেস্ট হাউসে থাকব না। ওরা খুব দুষ্টু। সঙ্গে একটি ঝোলা, পরনে শার্ট, প্যান্ট ও জ্যাকেট।
পর দিন সকালে রান্নাঘরে আমি কাজ করছি, উনি এসে বললেন, এটা গ্যাস বার্নার? নতুন রকম! আসলে বাজারে এক রকম গ্যাস ওভেন ছিল অনেকটা বক্সের মতো, মাঝখানে একটা ট্রে বসানো, তাতে বিভিন্ন রকম রান্না করা যেত। সুভাষদা বললেন, এটাতে বেশ খলসে মাছের বাটিচচ্চড়ি করা যাবে? আমি বললাম, কেন যাবে না? তখনই বললেন, চলো বাজারে যাই। সুভাষদার পরনে লুঙ্গি, হাতে বিড়ি, নিয়ে গেলাম বাজারে। ওঁকে দেখে আশেপাশের লোকেরা খুব অবাক। খলসে মাছ কেনা হল। আমাদের হুকুম দিলেন, সরষে বাটা কাঁচালঙ্কা দিয়ে সব গুছিয়ে দিলাম— সুভাষদা রান্নাঘরে রান্নায় মনোযোগী।
যখন বাটিচচ্চড়ি হয়ে গিয়েছে, বললেন। বার করে দেখি, সরষের ঝোলের মধ্যে মাছগুলো ভাসছে। ওঁকে কিছু না বলে নিজেই একটু ঠিকঠাক করে পরিবেশন করলাম। সুভাষদা খুব খুশি, রান্নায় পারদর্শিতা দেখিয়ে। এমনি করে কবি সম্মেলন শেষ হল। কিন্তু সুভাষদা থেকে গেলেন আমাদের বাড়িতে।
কোচবিহারে আমি একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করি। শুনে বললেন, চলো তোমার স্কুল দেখি আসি। বাড়ি থেকে বেশ দূরে স্কুলটা। স্কুলের সব কিছু দেখে উনি খুব খুশি। আমার স্কুলের এক ভ্যান ড্রাইভারও আবার একটু কবি গোছের, ফাঁক পেলে কবিতা লিখত। কিছু দিন আগে ও সুভাষদার ‘জেলখানার চিঠি’ আবৃত্তি করে একটা প্রাইজ় পেয়েছিল। ওঁকে দেখামাত্র সাষ্টাঙ্গে প্রণাম। সুভাষদা আমার স্কুল দেখার পর বললেন, কলকাতায় গীতার (বৌদি) একটা স্কুল আছে, ওর বন্ধুর তৈরি, এখন গীতাই তার হাল ধরেছে। তুমি কলকাতায় গেলে ওর স্কুলটা দেখে আসবে।
দু’দিন বাদে আমাদের শিলিগুড়ি যাওয়ার কথা, ওঁকে জানাতেই বললেন, আমিও শিলিগুড়ি যাব। ওঁর এক বাল্যবন্ধু হাবুদার সঙ্গে দেখা করবেন। অদ্ভুত ভাবে আমরাও হাবুদার বাড়ি যাব। উনি আমাদের খুব কাছের মানুষ। হাবুদা তো আমাদের সঙ্গে সুভাষদাকে দেখে অবাক। আমরা কোচবিহারে এনজেপি স্টেশন থেকে সুভাষদাকে ট্রেনে তুলে দিয়ে ফিরলাম। ।
অনামিকা সেনগুপ্ত
কলকাতা-৪৫
ব্যবহার
ঝাড়গ্রাম থেকে বিনপুর যাওয়ার পথে দুর্গাপুর রুটের বাসের কন্ডাক্টরের ব্যবহারে ব্যথিত হলাম। ২৩ জানুয়ারি। নেতাজি সুভাষচন্দ্রের জন্মদিন। সকালেই বিদ্যালয়ে বেরিয়ে পড়লাম। ওই দিন কোনও এক রাজনৈতিক দলের সভা ছিল। সুতরাং বাস প্রায় ছিল না। ঝাড়গ্রাম পাঁচমাথার মোড়ে এসে শুনলাম, দুর্গাপুর রুটের এসবিএসটিসি আসছে। এল। মুহূর্তের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে গেল। তারই মধ্যে আমিও। বাস ছাড়ল। শুরু হল ভাড়া আদায় করা। কোনও কথা না বলে একটি কুড়ি টাকার নোট বার করে দিলাম। কন্ডাক্টর টিকিটও দিলেন। তার পরেই কানে বার বার ধাক্কা খেতে লাগল কন্ডাক্টর মহাশয়ের উচ্চবাক্য।
এক জন মধ্যবয়সি ভদ্রলোক ব্যাগটা ঠিক করে রাখতে পারছিলেন না। তিনি কন্ডাক্টরের কাছে সামান্য সাহায্য চাইলেন— উত্তর এল ‘‘আমি আপনার চাকর নই।’’ অসহায় ভদ্রলোক নিজের ব্যাগটা টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেলেন ইঞ্জিনের ওপর। অন্য আর একটি ব্যাগ তিনি আমায় দিলেন। এ দিকে কন্ডাক্টর কাউকে নেমে যেতে বলছেন, কাউকে ভাড়া নিয়ে কটুবাক্য বলছেন। বুকটা আমার যন্ত্রণায় ভরে উঠতে লাগল। কন্ডাক্টর আমার কাছাকাছি আসতে আমি বললাম, ভাই, আমরা ডেলি প্যাসেঞ্জার একটু কমই ভাড়া দিই। তিনি উত্তরে বলেন, ‘‘মাস্টারদের আমি একটু বেশিই নিই।’’ বললাম, এ কী কথা! মাস্টারমশাইদের বেশি ভাড়া কেন? ‘‘ওঁরা বেশি বেতন পান।’’ বললাম, তা হলে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার এঁদের? উনি বললেন, ‘‘জ্ঞান দেবেন না, জ্ঞান দেবেন না।’’ এখন আমার বয়স পঞ্চাশ। আর যিনি টিকিট কাটছিলেন, আমার চেয়ে অন্তত বছর পনেরোর ছোট হবেন। আমরা কি এঁদের কাছে একটু মিষ্টি ব্যবহার আশা করতে পারি না?
মোহিনীমোহন পাঠক
ঝাড়গ্রাম
বন্ধ ভোঁতা নয়
‘বন্ধ নয়’ (২২-২) শীর্ষক চিঠিতে লেখক বলছেন, এখন আর কেউ বন্ধ চান না, ১৯৮০-৯০’এর দশকে বন্ধের যৌক্তিকতা থাকলেও, এখন বহু ব্যবহারে বন্ধ ভোঁতা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বর্তমান শতকের প্রথম দশকে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে উত্তাল কৃষক আন্দোলনে এই বন্ধকেই বহু বার ব্যবহার করে রাজ্যে পালাবদল ঘটানো হয়েছে। যে দল সে সব বন্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিল, তারা আজ ক্ষমতায় এসে বলছে বন্ধ কর্মনাশা। বিজ্ঞানের অপব্যবহার হয় বলে বিজ্ঞানকে আমরা যেমন বর্জন করতে পারি না, তেমনই বন্ধের অপব্যবহার হয় বলে তার সংগ্রামী চরিত্র কখনও অগ্রাহ্য করা উচিত নয়।
গোপাল সাহা চৌধুরী
পানুহাট, কাটোয়া
ময়লার স্তূপ
‘কবির নামে’ (৩-১২-১৮) শীর্ষক চিঠি প্রকাশিত হওয়ার পরে জীবনানন্দ দাশ পার্কের (ওয়ার্ড নং ৭৪) জঙ্গলাকীর্ণ হওয়ার খবর জেনে, জঙ্গল পরিষ্কার হয়েছে সত্যি, সঙ্গে রেলিং, দোলনা ইত্যাদি রং করাও হয়েছে। কিন্তু পার্কের ময়লা পরিষ্কার করে, পার্কেই এক জায়গায় স্তূপীকৃত করে রাখা হয়েছে। তোলা হয়নি। মশার উপদ্রবও বেড়েছে।
সিদ্ধেশ্বর নাথ বর্মা
কলকাতা-৯২
আমাদের দায়
আর ক’দিনের মধ্যেই প্রচণ্ড গরম পড়বে, এপ্রিলেই শুরু হয়ে যাবে কালবৈশাখীর দাপট। ব্যস, শুরু মশাবাহিত নানা রোগের উৎপাত। ডেঙ্গির প্রকোপে কয়েক বছর ধরে কত মানুষ মারা যাচ্ছেন, তবুও কি প্রশাসনের দিকে আমরা সেই ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি? আমরা যত্রতত্র নোংরা ফেলি। পুরসভার ময়লার গাড়িতে ময়লা ফেলতে আলস্য বোধ করি। প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ জেনেও বাড়ি থেকে কাপড়ের থলি নিয়ে যেতে ভুলে যাই। দোকানদার প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ দিতে না চাইলে তর্ক করি। এ বার পুরসভা চায়, আমরা যেন অপচনশীল বর্জ্য রাখার জন্য সাদা ও পচনশীল বর্জ্য রাখার জন্য সবুজ ব্যাগ ব্যবহার করি। আমরা পারব তো?
লোপামুদ্রা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা-৭৯
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy