E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: স্বপ্নের সওদা

ট্রাম্প মনে করেন বিশ্ব উষ্ণায়ন একটা ভাঁওতা। তাই দূষণ নিয়ন্ত্রণের আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় আমেরিকা কোনও দায় নেবে না। এ ছাড়া তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অভিবাসী নিয়ন্ত্রণ।

শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৬:৩০

‘আমেরিকা, অতঃপর’ (৮-১১) সম্পাদকীয়ের পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় বার প্রেসিডেন্ট হিসাবে প্রত্যাবর্তনে আগামী দিনে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অশুভ প্রভাব পড়বে মনে হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প হলেন আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি এক বার হেরে যাওয়ার পরও দ্বিতীয় বার জয়ী হয়েছেন। তিনিই বিশ্বের সম্ভবত একমাত্র প্রেসিডেন্ট, যাঁর বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ ডলারের দুর্নীতি, হিংসায় মদত দেওয়া, এবং যৌন অপরাধ-সহ ২৬টি গুরুতর মামলা এবং ৩৪টি ফৌজদারি মামলা এখনও বিভিন্ন আদালতে চলছে। তিনি দৃশ্যতই আত্মসর্বস্ব এক জন মানুষ, যিনি গণতন্ত্রের তোয়াক্কা করেন না। তাঁর কথাবার্তা অশালীন ও অসংলগ্ন, নানা বিদ্বেষে ভরপুর। তবু তিনি নির্বাচন প্রাক্কালে আমেরিকার অধিবাসীদের কাছে স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছেন, ‘মেক আমেরিকা, গ্রেট এগেন’ স্বপ্নটি বিক্রি করেছেন। জো বাইডেন ইজ়রায়েলকে যুদ্ধে সমর্থন জুগিয়েছেন বলে তরুণ ভোটারদের একটা বড় অংশ তাঁর পক্ষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। ট্রাম্প তাঁদের সমর্থন আদায় করেছেন, যা নিঃসন্দেহে ট্রাম্পের রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচায়ক। যদিও এই সমর্থনের মধ্যে অশিক্ষা, বর্ণবিদ্বেষ, জাত্যভিমান ও পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এর ফলে শ্রমজীবী, দরিদ্র ও অশ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। যার সুবিধা ট্রাম্পই পেয়েছেন।

ট্রাম্প মনে করেন বিশ্ব উষ্ণায়ন একটা ভাঁওতা। তাই দূষণ নিয়ন্ত্রণের আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় আমেরিকা কোনও দায় নেবে না। এ ছাড়া তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অভিবাসী নিয়ন্ত্রণ। আমেরিকায় বসবাসকারী প্রায় এক কোটি অবৈধ অভিবাসীকে তিনি তাড়িয়ে দেবেন বলেছেন। তাঁর স্বৈরতন্ত্রী ও ফ্যাসিবাদী মনোভাব ভারত ও বাংলাদেশে কী প্রভাব ফেলবে, তা-ই দেখার অপেক্ষা।

তপনকুমার বিদ, বেগুনকোদর, পুরুলিয়া

ব্যর্থতার কারণ

দু’-দু’বার (২০১৬ সালে হিলারি ক্লিন্টন, ২০২৪ সালে কমলা হ্যারিস) সুযোগ পেয়েও আমেরিকার জনগণ কোনও মহিলাকে তাঁদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করলেন না। ২০২০ সালের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের বিরুদ্ধে ‘ক্যাপিটল’ দখল এবং হামলা করার অভিযোগ উঠেছিল, তিনিই আবার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন। আসলে গত চার বছরে জো বাইডেনের নেতৃত্বে ডেমোক্র্যাট সরকারের নড়বড়ে অর্থনীতি, বিদেশনীতির ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তহীনতা, বেকারত্বের হার বৃদ্ধি, এই সব কারণেই আমেরিকার মানুষ ডেমোক্র্যাটদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

পাশাপাশি বর্ণবৈষম্যের চোরাস্রোত এ বারের নির্বাচনে রিপাবলিকানদের জিততে সাহায্য করেছে। ইলন মাস্কের মতো ধনকুবের কর্পোরেটরা প্রকাশ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হয়ে প্রচার করেছেন। ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকানদের বিদেশনীতির ক্ষেত্রে খুব একটা পার্থক্য না থাকলেও একটা সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, আমেরিকার ভোটারদের ৬১% ইজ়রায়েলি আগ্রাসনের প্রশ্নে বাইডেন প্রশাসনের নির্লজ্জ সমর্থনের বিরুদ্ধে। ভোটপ্রচারের সময় ইজ়রায়েলি আগ্রাসনের প্রশ্নে কমলা হ্যারিসের নীরবতা এই অংশের ভোটারদের হতাশ করেছে। ট্রাম্পের প্রতি ভালবাসা নয়, জো বাইডেনের ব্যর্থতাই রিপাবলিকানদের জিততে সাহায্য করেছে।

শেষাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়, ভদ্রেশ্বর, হুগলি

দিশাহীন

বুথ-ফেরত সমীক্ষাকে নস্যাৎ করে আমেরিকার ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হলেন রিপাবলিকান দলের ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁকে আমেরিকার এক জন ধনী, খামখেয়ালি, অহঙ্কারী ও বিতর্কিত রাজনৈতিক চরিত্র বলেই জানেন রাজনীতি-সচেতন মানুষ। তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, একাধিক ফৌজদারি মামলা, যৌন কেলেঙ্কারি ও সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্রে জনগণই শেষ কথা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভোট প্রচারে ট্রাম্প যে কথাগুলি বলেছেন তার মধ্যে রয়েছে অতিমারির পরে বিধ্বস্ত আমেরিকার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, গৃহস্থালি পণ্য ও জ্বালানির মূল্যস্ফীতি কমানো এবং আমেরিকার অভিবাসন ও শুল্ক নীতিতে কঠোর হওয়া। অন্য দিকে, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস কোনও নতুন দিশা দেখাতে পারেননি। মনে করা হচ্ছে, ট্রাম্পের শাসনকালে ভারত প্রতিরক্ষা ও সামরিক ক্ষেত্রে সুবিধা পাবে। তবে অভিবাসন ও ভিসা নীতিতে কঠোর অবস্থান ভারতের অস্বস্তি বাড়াবে।

হারানচন্দ্র মণ্ডল, ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

দাদাগিরি শেষ?

গত জুন মাসের নির্বাচনী বিতর্কে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অসহায় অবস্থার পরেই মোটামুটি ঠিক হয়ে গিয়েছিল এ বারের নির্বাচনের ভাগ্য। বাইডেনকে সরিয়ে, কমলা হ্যারিসকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ঘোষণা করে শেষ কামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ডেমোক্র্যাটরা। তাঁরা ভাবেন যে, এক জন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহিলা, যিনি আফ্রিকান-আমেরিকান দুই অভিবাসীর সন্তান, নিশ্চয়ই সাধারণ মানুষের সহানুভূতি পাবেন। ‌এই উন্মাদনা নিয়ে লক্ষ লক্ষ ডেমোক্র্যাট স্বেচ্ছাসেবক, প্রাক্তন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টরা এবং আমেরিকার সেলেব্রিটিরা প্রচারে নামেন। শেষ পর্যন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্প নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফিরলেন। আমেরিকার সাতটি ‘সুইং স্টেট’-এর ফলাফল, যা আগে ট্রাম্পের বিপক্ষে ১-৬ ছিল, এই নির্বাচনে ট্রাম্পের পক্ষে ৭-০ হল।

সারা বিশ্বে বর্তমানে গণতন্ত্র ভঙ্গুর। গত বার নির্বাচনে পরাজয়ের পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের হিংসা ও সাংবিধানিক গণতন্ত্রের প্রতি অসূয়া প্রদর্শনের পরেও রিপাবলিকান প্রার্থীর জয়লাভ বিশ্ব জুড়ে চলতে থাকা অতি দক্ষিণপন্থী মনোভাবের প্রতি জনগণের নীরব সমর্থনের পরিচয় দেয়। মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরেও নির্বাচনে যখন জনগণ এক স্বৈরাচারী উচ্চাকাঙ্ক্ষীর প্রতি পুনরায় নিরঙ্কুশ আস্থা প্রদর্শন করে, তখন গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কী হতে চলেছে, সেই ইঙ্গিত মেলে। কোভিড-পরবর্তী বিশ্বে আমেরিকার দাদাগিরির পতন হয়েছে, চিনের আধিপত্য বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রণাঙ্গনে চলতে থাকা যুদ্ধগুলিতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে আমেরিকার ভূমিকা কী হয়, ‘আমেরিকান ড্রিম’ কতখানি বাস্তবায়িত হয়, লক্ষ থাকবে সবার।

তন্ময় সিংহ, শালবনি, পশ্চিম মেদিনীপুর

মশকরা

আমেরিকায় রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের সংবাদ শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘লালে লাল’ (৭-১১)। এই একমাত্রিক শিরোনামে চমক আছে। কিন্তু আমাদের আজন্ম পালিত ধারণার সঙ্গে তার সাযুজ্য খুঁজে পাই না। ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি, আমেরিকা পুঁজিবাদের এক নম্বর পৃষ্ঠপোষক। সাম্রাজ্যবাদীও বটে। ভিয়েতনাম, কিউবা, ভেনেজ়ুয়েলার উপর দীর্ঘ দিন দাদাগিরি চালিয়েছে। আবার আরব দেশে, বিশেষত ইরাকে ঘাঁটি গাড়া, বিচারের ছলনায় সাদ্দাম হোসেনের ফাঁসি, এগুলিও আমেরিকার মস্তিষ্কপ্রসূত ‘শান্তি স্থাপন’! আফগানিস্তানে দীর্ঘ দিন সৈন্যশাসন আর এক উদাহরণ। ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট আমেরিকার পুঁজি বিকাশের জন্য যত দূর যেতে হয় তিনি যাবেন। তাঁর সর্বনেশে অভিবাসন নীতির প্রয়োগ বহু মানুষের নিদ্রায় ব্যাঘাত আনবে। ‘লালে লাল’ শিরোনামকে আমেরিকা বরাবর ঘৃণা করে এসেছে। ট্রাম্পের দৃষ্টি এ ক্ষেত্রে আরও স্বৈরাচারী, আরও নির্মম। এ তো লালের সঙ্গে মশকরা ব্যতীত অন্য কিছু নয়।

স্বপন কুমার ঘোষ, কলকাতা-৩৪

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Donald Trump US Presidential Election 2024 USA

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy