সুজিত মাঝির ‘আমাদের তাড়িয়ে দেবে?’ (১২-৭) প্রবন্ধের শিরোনামের অত্যন্ত সংবেদনশীল প্রশ্নটি শিশুমনের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার প্রতিফলন। প্রাথমিকের এক ছাত্রীর প্রশ্নে লেখক বিচলিত বোধ করলেও, তার দায় কিন্তু শিক্ষক-শিক্ষিকা’সহ আমাদের মতো অভিভাবকদেরও। যাঁরা কু-প্রভাব বা অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় থেকে শিশুমনকে মুক্ত রাখতে সক্ষম। ঘরে-বাইরে সর্বত্রই হরেক অপ্রিয় বিষয় শিশুর সামনে প্রতিভাত হয়। সহজাত প্রবৃত্তির গুণে শিশু দ্রুত তা গ্ৰহণ করে। এ ক্ষেত্রে শিশুর সঠিক মানসিক বিকাশে বাড়ি এবং বিদ্যালয়ের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, বিদ্যালয়ে প্রবন্ধকারের মতো শিক্ষকের বড়ই অভাব, শিশুমনকে পড়ে, যাঁরা সঠিক পথে তাকে চালনা করতে পারেন। ‘মাইনের প্রতি সুবিচার করাটা একটা দায়িত্ব’— এই মনোভাব ক’জন শিক্ষকের আছে? না হলে কি হিন্দু এবং মুসলমান ছাত্রদের জন্য এখনও আলাদা ভাবে মিড-ডে মিল রান্না ও পরিবেশন করার চল থাকে? যদিও গণমাধ্যমে খবরটি সম্প্রচারিত হওয়ার পর ওই বিদ্যালয়ে দীর্ঘ দিনের কু-প্রথার অবসান ঘটেছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কি দায় এড়াতে পারবেন?
এ দেশে শিক্ষা-সংস্কৃতি, ক্রীড়া-সহ বহু ক্ষেত্রে সংখ্যায় কম হলেও, মুসলমান ব্যক্তিত্বরা আপন প্রতিভা বলে নিজ ক্ষেত্রে ভাস্বর। মহম্মদ রফির হৃদয়স্পর্শী সঙ্গীত বা উস্তাদ আমজাদ আলি খানের সরোদের মূর্ছনায় মোহিত হওয়া কোনও হিন্দু কি তাঁদের ‘অন্য’ চোখে দেখেন? হিন্দু পরিবারে বিবাহের মতো শুভ অনুষ্ঠানে এখনও বিসমিল্লা খানের সানাই শোনা যায়। একই ভাবে মহম্মদ সিরাজের দুরন্ত বলে উইকেট পড়লে গোটা দেশের ক্রীড়ামোদীরা যেমন আনন্দে লাফিয়ে ওঠেন, তেমনই দলের সহ-খেলোয়াড়রাও তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। আর, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালাম তো তরুণ প্রজন্মের কাছে প্রেরণাস্বরূপ। তাই সমাজের গরিষ্ঠ অংশের কাছে ধর্ম কখনও বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায়নি।
তবে, ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি সমাজকে কী ভাবে প্রভাবিত করছে, ছোট্ট ছাত্রীটির প্রশ্নেই তা অনুধাবন করা যেতে পারে। আমাদের রাজনীতিবিদরা না শোধরালে, সাধারণ মানুষকেই শিক্ষকের ভূমিকা নিতে হবে। কবি শঙ্খ ঘোষের আহ্বানকে স্মরণ করে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে, “...আয় আরো হাতে হাত রেখে/ আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি।” বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়ার সেটাই সম্ভবত একমাত্র পথ।
ধীরেন্দ্র মোহন সাহা, কলকাতা-১০৭
সহবত কই
আজকাল চার পাশে তাকালে একটি প্রশ্ন বড় বেশি করে মনে উঁকি দেয়— সহবত কি সত্যিই বিলুপ্তির পথে? বিশেষত, মোবাইল ফোন আর সমাজমাধ্যমের সর্বব্যাপী আগ্রাসনের এই যুগে মনে হয় যেন শালীনতা, ভদ্রতা আর মানবিকতার মতো শব্দগুলো অভিধানের পাতায় ধুলো জমিয়ে পড়ে আছে। একদা যা কিছুকে আমরা সমাজ-বিরোধী, নিন্দনীয় বা অশ্লীল বলে জানতাম, আজ তা যেন এক দৈনন্দিন স্বাভাবিকতায় পর্যবসিত। এই পরিস্থিতি কি তবে আমাদের সভ্যতার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে, যেখানে মূল্যবোধের মাপকাঠিগুলো আমূল বদলে যাচ্ছে?
আমরা যে সমাজে বড় হয়েছি, সেখানে গুরুজনদের সম্মান, ছোটদের স্নেহ, প্রতিবেশীর প্রতি সৌজন্যবোধ এবং সর্বোপরি বাচনভঙ্গিতে শালীনতা ছিল আবশ্যিক। পারিবারিক শিক্ষা থেকে শুরু করে বিদ্যালয়ের পাঠ— সর্বত্রই এই মূল্যবোধগুলো শেখানো হত। অথচ আজ রাস্তার মোড়ে, গণপরিবহণে, এমনকি পারিবারিক অনুষ্ঠানেও কান পাতলে শোনা যায় অকথ্য গালাগালি। মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে সারা ক্ষণ ভেসে উঠছে অশ্লীল ছবি আর ভিডিয়ো। আর সমাজমাধ্যমে একে অন্যকে অত্যন্ত খারাপ ভাবে বিদ্রুপ করা, ভুয়ো খবর ছড়ানো নিত্য দিনের ঘটনা হয়ে উঠেছে। এই লাগামহীন স্বাধীনতা কি তবে আমাদের মূল্যবোধের ভিত্তিকেই নড়িয়ে দিচ্ছে?
প্রযুক্তির এই অভূতপূর্ব বিকাশ আমাদের জীবনকে নিঃসন্দেহে সহজ করেছে। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে দূর হয়েছে ভৌগোলিক বাধা, বেড়েছে যোগাযোগ, জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে বহুলাংশে। কিন্তু এর অন্ধকার দিকটিও আমাদের দেখতে হবে। হাতের মুঠোয় গোটা বিশ্ব এসে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে এক ধরনের মিথ্যা শক্তির জন্ম নিয়েছে। বেনামি অ্যাকাউন্টের আড়ালে লুকিয়ে থেকে মানুষকে অপমান, সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা এখন খুব সহজ। এর ফলে ব্যক্তিজীবনে ধৈর্য, সহনশীলতার অভাব প্রকট হয়ে উঠছে। ভার্চুয়াল জগতের ক্ষণিকের আনন্দ বা কুখ্যাতি যেন বাস্তব জীবনের সামাজিক দায়বদ্ধতাকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। মানুষ নিজেদের এক অদৃশ্য বর্মের আড়ালে লুকিয়ে নিচ্ছে, যেখান থেকে তারা নির্দ্বিধায় বিষ ছড়াতে পারে।
এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। উন্নত দেশগুলোতেও সাইবার বুলিং, অনলাইন হয়রানি এবং ডিজিটাল আসক্তির মতো সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে। এর প্রতিকারের জন্য আন্তর্জাতিক স্তরেও আলোচনা ও পদক্ষেপের প্রয়োজন। শুধু আইন করে বা কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করে হয়তো এর সমাধান হবে না। কারণ, আইন কেবল বাহ্যিক আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, মানুষের মানসিকতাকে পরিবর্তন করতে পারে না। প্রয়োজন আত্ম-অনুসন্ধান, প্রয়োজন ব্যক্তিগত শুভবুদ্ধির জাগরণ। পরিবারে মা-বাবাকে তাঁদের সন্তানদের প্রতি আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। তাদের হাতে মোবাইল তুলে দেওয়ার আগে এর ভাল-মন্দ দিকগুলো বোঝাতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ডিজিটাল সাক্ষরতার উপর জোর দিতে হবে, যেখানে শিক্ষার্থীদের শেখানো হবে কী ভাবে নিরাপদে এবং দায়িত্বশীল ভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হয়। সমাজমাধ্যমেরও এই বিষয়ে দায়বদ্ধতা রয়েছে। তাদের উচিত এমন অ্যালগরিদম তৈরি করা, যা নেতিবাচক বিষয়বস্তুকে নিরুৎসাহিত করে ইতিবাচক আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করবে। আর, গণমাধ্যম, বিশেষ করে সংবাদপত্র ও টেলিভিশন, এই বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তারা কেবল সমস্যাগুলো তুলে ধরবে না, সমাধানের পথও দেখাবে। প্রযুক্তিকে আমরা মানবতাবিরোধী করে তুলব, না কি মানবতাকে আরও উন্নত করার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করব, সেই সিদ্ধান্ত আমাদেরই নিতে হবে।
সোহিনী দত্ত, কলকাতা-৭৪
ভয় পাচ্ছি
সোমা মুখোপাধ্যায়ের প্রতিবেদন ‘ফের ভুল হলে মিশিয়ে দেব মাটিতে’ (১৪-৭) পড়ে আতঙ্কিত বোধ করছি। এটা কি এক জন চিকিৎসকের সংলাপ হতে পারে? এমনটা তো আমরা বর্তমানে রাজ্যের সমাজবিরোধীদের মুখে শুনতে অভ্যস্ত। প্রবন্ধ থেকেই জানতে পারলাম ডাক্তারি পরীক্ষায় কম নম্বর পেলেও পাশ করা যায় হুমকি প্রথার দৌলতে। এই ভাবে পাশ করা চিকিৎসকরাই পরে আমাদের চিকিৎসা করবেন, এই ভেবেই অসহায় লাগছে। কষ্টার্জিত স্বাধীনতা নিশ্চয়ই আমাদের এই ধরনের দুর্নীতি করার স্বাধীনতা দেয়নি।
সুরজিৎ সাহা, কলকাতা-৩৩
রক্তের জোগান
সামনে দুর্গাপুজো। এই সব উৎসবের মরসুমে এমনিতেই রক্তের চাহিদা ও জোগানে ব্যাপক ঘাটতি দেখা যায়। ফলে বহু অসুস্থ রোগী ও পরিবার তখন সমস্যায় পড়েন। তাই মহালয়া থেকে কালীপুজোর মধ্যে প্রতিটি মণ্ডপে বাধ্যতামূলক ভাবে স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হোক সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের সহযোগিতায়। এবং এর জন্য মণ্ডপগুলিতে ব্যাপক প্রচারেরও আয়োজন করা জরুরি। তবেই সবার পুজো সুখের হবে।
অমলেন্দু কুন্ডু , বাসুদেবপুর, হাওড়া
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)