‘আইন উড়িয়ে দিয়ে শব্দ-সন্ত্রাসে উৎসব’ (২১-১০) শীর্ষক সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। সমস্ত আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কালীপুজোর রাতে শুধু কলকাতা নয়, রাজ্য জুড়ে যে ভাবে শব্দবাজি ফাটল তাতে সরকার ও পুলিশের কোনও প্রতিশ্রুতিই কাজে এল না। প্রতি বছর কালীপুজোর আগে শব্দবাজি ও নিষিদ্ধ বাজি বন্ধের অনেক প্রতিশ্রুতির কথা শোনা যায়। কলকাতা পুলিশ ও পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বড় গলায় বলে, এ বার শব্দবাজির দৌরাত্ম্য কমবে। এ বারও পুজোর আগে কলকাতা পুলিশের শীর্ষকর্তারা শহিদ মিনার ময়দানে বাজির যে মেলা বসে, তা ঘুরে দেখে এসেছেন, কিন্তু নিষিদ্ধ বাজির কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। প্রতি বছরই কালীপুজো আসার আগে থেকে কলকাতা পুলিশ শহর জুড়ে অভিযান চালায় নিষিদ্ধ বাজি উদ্ধারের জন্য। বেশ কিছু নিষিদ্ধ বাজি বাজেয়াপ্তও হয়। কিন্তু তার পরও পুজোর রাত থেকেই শুরু হয়ে যায় শব্দবাজির তাণ্ডব। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবুজ বাজি ব্যবহারের কথা বলা হলেও, কী দেখে সবুজ বাজি চিনবেন আমজনতা?
কালীপুজোর সময় আবাসিক এলাকা তো বটেই, ছাড় পায় না হাসপাতাল-সহ অন্যান্য শব্দ-শূন্য এলাকাও। বাজির তাণ্ডবে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বাতাসের মান যথেষ্ট খারাপ হয়েছে বলে জানা গিয়েছে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্যে। সকাল থেকে কলকাতা ও লাগোয়া শহরতলির বাতাসের গুণগত মান মোটের উপরে খারাপ ছিল না। কিন্তু রাত যত গড়ায়, ততই বাজির তাণ্ডবে বাতাসের মান খারাপ হয়। এ বার বাজির কারণে দূষণ এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে, মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন চিকিৎসক মহল। বছরের অন্যান্য সময়েও বায়ুদূষণে নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, ফুসফুস ক্যানসারের মতো একাধিক জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু-বৃদ্ধ থেকে শুরু করে বহু মানুষ। তার উপর কালীপুজোতে বাতাসের দূষণ আরও বেড়ে যায়।
বায়ু ও শব্দদূষণ নিয়ে সাধারণ মানুষের সচেতনতা যদি বৃদ্ধি না পায়, তা হলে দূষণের হাত থেকে মুক্তির আশা না করাই ভাল।
রবীন রায়, শ্যামনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
ভাবনার বদল
প্রতি বছরের মতো এ বছরেও কালীপুজো এবং ছটপুজোর সময়ে খবরের শিরোনামে বার বার উঠে এল পরিবেশ দূষণের কথা। নানা ধরনের বাজির কারণে বাতাস কতখানি দূষিত হয়ে উঠল সেই পরিসংখ্যান পাওয়া গেল। আলোচনায় উঠে এল আদালত-নির্দেশিত নিয়মবিধি পালনে প্রশাসনের চরম গাফিলতির কথা। অর্থাৎ, আগের বছরের মতোই চিত্রটি পাল্টায়নি এ বছরেও। আগামী বছরেও যে পাল্টাবে, এমন কোনও আশা করা যাচ্ছে না।
হতাশার অন্যতম কারণ, আমরা কেবল অন্যের ত্রুটি খুঁজছি, অথচ নিজের দোষ দেখছি না। নিয়ম, আইন তখনই সফল হবে যখন আমজনতা তা মানবে। অথচ দেখি যে সব মানুষ মুখে পরিবেশ রক্ষার কথা বলেন, তাঁরাই বাড়ির সন্তানদের হাতে বিপুল পরিমাণে বাজি তুলে দেন বছরের এই সময়ে। চার পাশে চোখ মেললেই দেখা যায়, কখনও অভিজাত আবাসনের মেয়েটি রংমশাল জ্বালায় চিকিৎসক বাবার প্রশ্রয়ে, কখনও আবার বিজ্ঞানের শিক্ষক ছেলেকে সাহস জোগান পটকা ফাটাতে। যিনি ফুসফুসের রোগের কারণ হিসেবে বাতাসে ক্রমশ দূষণবৃদ্ধিকে দায়ী করেন, অথবা যিনি ক্লাসঘরে শিশুদের শিক্ষা দেন পরিবেশ দূষণের কুপ্রভাব বিষয়ে, তাঁরাই যদি অভিভাবক হিসেবে সন্তানদের হাতে বাজি তুলে দেওয়া থেকে সরে না থাকেন, তবে ছবিটা অল্প হলেও পাল্টাবে কেমন করে?
আমাদের সর্বাগ্রে দরকার, নিজের ও সন্তানদের মনে যে কোনও উপায়ে বাজি পোড়ানোর প্রতি এক রকমের বিরূপ মানসিকতা নির্মাণ। না হলে, বই আর সংবাদপত্রের পাতায় দূষণের পরিসংখ্যান হবে ক্রমশ ঊর্ধ্বগামী। মাত্রাতিরিক্ত দূষণ আর তার কারণে ঘটা বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব নিয়ে এখনও কি সচেতনতা জাগবে না?
অনির্বিত মণ্ডল, ইছাপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
অবোলাদের কষ্ট
‘বাজির ভয়ে মেট্রোর কামরায় পথকুকুর, শব্দ-তাণ্ডবে অসুস্থ বহু পোষ্য’ (২২-১০) শীর্ষক সংবাদটি যতটা বেদনাদায়ক, ততটাই উদ্বেগজনক। শুধু একটি ঘটনাই নয়, একাধিক ক্ষেত্রে অসহায় প্রাণীদের কখনও মুখে, কখনও লেজে বাজি, ফুলঝুরি বেঁধে তাকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিতে অথবা জীবন্মৃত করে দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা হয় না এক শ্রেণির ‘মানুষ’-এর। সমাজের শুভবুদ্ধিসম্পন্নরা এর প্রতিবাদ করলে, তাঁদের জন্য বরাদ্দ থাকে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন, হেনস্থা। আমরা বার বার ভুলে যাই, পৃথিবীটা সকলের। মানুষ-সহ প্রতিটি প্রাণীর সেখানে নিরুপদ্রবে জীবনযাপনের পূর্ণ অধিকার রয়েছে। সামান্য কিছু খাবার এবং স্নেহের বদলে নিঃস্বার্থ ভালবাসার বন্ধনে মানুষকে আবদ্ধ করতে পারে এই অবোলা প্রাণীগুলি। বাড়িতে পোষা দামি বিদেশি কুকুর, বিড়াল, পাখিদের তুলনায় আমাদের চার পাশে ঘুরে বেড়ানো অনভিজাত প্রাণীরা কিন্তু বুদ্ধিমত্তা, আনুগত্যে কোনও অংশেই কম যায় না। তাই আমাদের কর্তব্য, শিশুদের এই মূক প্রাণীদের প্রতি সহানুভূতি, সহমর্মিতার পাঠ দেওয়া। কারও আনন্দ যেন অপরের নিরানন্দের কারণ না হয়, সে দিকে নজর রাখা একান্ত প্রয়োজন।
স্বাতী চট্টোপাধ্যায়, বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ
লোক-দেখানো
সম্পাদকীয় ‘সেই তিমিরে’ (১৭-১০) পড়ে কিছু কথা। কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারগুলি দেশের নাগরিকদের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য নানা স্বাস্থ্য প্রকল্প চালু করেছে বটে, কিন্তু সেগুলি কতখানি কার্যকর তা নিয়ে অহরহ প্রশ্ন ওঠে। অথচ ওই দিনেই প্রকাশিত ‘আয়ুষ্মানে সুবিধা ৪৬ কোটির, ৫৮৩ কোটি টাকার দুর্নীতি’ শীর্ষক সংবাদে জানা গেল, ন্যাশনাল হেলথ অথরিটি জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের ‘আয়ুষ্মান ভারত’ যোজনায় সুবিধা পেয়েছেন ৪৫ কোটি মানুষ। ওই প্রকল্পে ৯.১৯ কোটি রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, আর চিকিৎসার জন্য খরচ হয়েছে ১,২৯,৩৮৬ কোটি টাকা। সেই সঙ্গে অবশ্য সংস্থার ২০২৪-২৫ সালের বার্ষিক রিপোর্টে ওই খরচের ক্ষেত্রে ৫৮৩ কোটি টাকার দুর্নীতির কথাও রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের চালু করা ‘স্বাস্থ্য সাথী’ নিয়েও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
দেখা গিয়েছে, সিংহভাগ ক্ষেত্রেই এই সব প্রকল্পে রোগীকে নিয়ে তাঁদের পরিবার-পরিজন বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরেও ভর্তি করাতে পারেন না। যাঁরা পারেন, তাঁদের রোগী হাসপাতালে যথার্থ চিকিৎসা পাচ্ছেন কি না, সেটাও প্রশ্নের। হাসপাতালগুলিতে ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার’ কাঠামো নিয়ে কেন্দ্র বা রাজ্য, কোনও সরকারই যে যত্নশীল নয় তা স্পষ্ট গত অক্টোবরে সুপ্রিম কোর্টের সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে নোটিস পাঠানোতেই। এ সংক্রান্ত আদালতের আগের নির্দেশিকা তারা কেউ মানেনি। এতে বোঝা যায়, এ নিয়ে তাদের সদিচ্ছার যথেষ্ট অভাব। দেশের হাসপাতালগুলিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স, কর্মী নেই। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব তেমন না থাকলেও, কর্মীর অভাবে অনেকগুলিই পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে।
মানুষকে চিকিৎসা দেওয়ার সদিচ্ছার যখন এতই অভাব, তখন ঘটা করে এত প্রচার করার যুক্তি কী? আসলে এগুলি মানুষের যতটা না উপকার করছে, তার চেয়ে বেশি সাহায্য করছে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে তাদের ব্যবসার উত্তরোত্তর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে। কর্পোরেট সংস্থাগুলি যত ফুলেফেঁপে উঠবে, তত শাসক দলের নির্বাচনী তহবিলে অর্থের জোগান আসবে। সেখানে জনগণের শত অসুবিধা হলেও সরকারের কী আসে যায়।
অলোক কুমার নাথ, হাওড়া
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)