Advertisement
০২ ডিসেম্বর ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: ইডেনের তিন গল্প

১৯৮০-র ১৬ অগস্ট ইডেনে ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের ফুটবল লিগের খেলাকে ঘিরে দু’দলের সমর্থকদের মধ্যে প্রচণ্ড ঝামেলা হয়েছিল, প্রবল হুড়োহুড়ির কবলে পড়ে ১৩ জন ফুটবল-প্রেমিকের মৃত্যু ঘটেছিল।

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৮ ০০:৫৫
Share: Save:

‘অপরাজিত ইডেন’ (২২-৫) অনবদ্য এক বিশেষ ক্রোড়পত্র। কিন্তু তিনটে স্মরণীয় ঘটনার উল্লেখ করা হলে ভাল হত।

জগমোহন ডালমিয়ার অসামান্য উদ্যোগে ১৯৮৭-র ৮ নভেম্বর বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল (প্রুডেনশিয়াল কাপ) অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইডেনে। অ্যালান বর্ডারের অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।

১৯৮০-র ১৬ অগস্ট ইডেনে ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের ফুটবল লিগের খেলাকে ঘিরে দু’দলের সমর্থকদের মধ্যে প্রচণ্ড ঝামেলা হয়েছিল, প্রবল হুড়োহুড়ির কবলে পড়ে ১৩ জন ফুটবল-প্রেমিকের মৃত্যু ঘটেছিল।

প্রথম জওহরলাল নেহরু আন্তর্জাতিক গোল্ড কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট এবং তৃতীয় বারের টুর্নামেন্টের উদ্বোধন হয়েছিল ইডেনে যথাক্রমে ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৮২ এবং ১১ জানুয়ারি ১৯৮৪-তে। দু’বারই এই টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী।

বাবলু নন্দী দমদম

চুনীর খেলা

চুনী গোস্বামী ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে ইনদওরে তাঁর অসামান্য ক্রীড়াচাতুর্যের কথা উল্লেখ করেছেন। ১৯৭১-এ চুনী গোস্বামীর নেতৃত্বে রঞ্জি ট্রফিতে বাংলা অসাধারণ খেলেছিল। সমর চক্রবর্তী ও সুব্রত গুহ— দু’জন অসামান্য বোলার ছিলেন। চুনীকে ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে দেখিনি, কিন্তু ক্রিকেটার হিসেবে তাঁর উৎকর্ষ প্রত্যক্ষ করেছি। ভারতীয় ক্রিকেটে তাঁর চেয়ে অদক্ষ অনেকেই টেস্ট দলে জায়গা পেয়েছেন বলে আমার ধারণা। চুনী গোস্বামী টেস্ট খেললে আমাদেরও এক জন ডেনিস কম্পটন থাকত।

একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করি। ১৯৬৯-৭০ সালে বিল লরির নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া দল ভারত সফরে আসেন। ইয়ান চ্যাপেল ও গ্রাহাম ম্যাকেঞ্জি— দুই ডাকসাইটে খেলোয়াড়। সম্ভবত খেলার তৃতীয় বা চতুর্থ দিনে দৈনিক টিকিটের লাইন পড়েছিল আগের দিন বিকেল থেকে। আমরা তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র, বন্ধুরা মিলে সন্ধে থেকে লাইনে ছিলাম। রাত গভীর হলে লাইনটা জনসমুদ্র হয়ে দাঁড়ায়। সকালে গেট খুলতেই সামনে যাঁরা ছিলেন তাঁদের উপরেই পিছনের লোকেরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। পদপিষ্ট হয়ে ছ’জন যুবক মারা যান এবং প্রায় ৩০ জন আহত হন। এর পর থেকে ইডেনে দৈনিক টিকিট বিলি বন্ধ হয়।

শিবাজী চৌধুরী কলকাতা-৪৫

ফুটবলও হত

একটা জিনিস পাঠকদের জানাই। ১৯৬৭ সালে ক্রিকেটের মাঠ ইডেনে প্রথম ফুটবল ম্যাচ হয়— কলকাতা লিগে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান ম্যাচ দিয়ে। সেই ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগানকে ২-১ গোলে হারিয়েছিল। প্রথম গোল করেছিলেন মোহনবাগানের রাইট ব্যাক বিক্রমজিৎ দেবনাথ। খেলার প্রথমার্ধে দলের লেফ্ট ব্যাক আলতাফের বাড়ানো পাস থেকে দেবনাথ ৪০ গজ দূর থেকে একটি দূরপাল্লার শটে গোল করেন— ইস্টবেঙ্গলের গোলরক্ষক পিটার থঙ্গরাজকে বিভ্রান্ত করে। তার পর দ্বিতীয়ার্ধে ইস্টবেঙ্গলের প্রশান্ত সিনহা গোল করে খেলার সমতা ফেরান। খেলার শেষের দিকে ইস্টবেঙ্গলের ফরওয়ার্ড অসীম মৌলিক মোহনবাগানের দুই স্তম্ভ জার্নেল সিংহ এবং সি প্রসাদকে কাটিয়ে ডান পায়ের জোরালো শটে জয়সূচক গোল করেন। মোহনবাগানের গোলে ছিলেন বিখ্যাত পি বর্মন।

অখিল বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা-৮৯

পটৌডি, আসিফ

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘ক্যাচ ফেলে মন জয় সোবার্সের’ পড়ে দু’টি ঘটনা মনে পড়ে গেল। ১৯৭৪-৭৫ সালে ইডেনে ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ় খেলা চলাকালীন প্রথম ইনিংসের দ্বিতীয় দিনে ভারত অধিনায়ক মনসুর আলি পটৌডি ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের ফাস্ট বোলার অ্যান্ডি রবার্টসের বলে মুখে প্রচণ্ড আঘাত পান। মুখ দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। কিন্তু তা পরোয়া না করে, তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে, অ্যান্ডি রবার্টসের বলে পর পর দু’টি ছয় মারেন। সে দিন ইডেনের সমস্ত দর্শক দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে ওঁকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন।

দ্বিতীয়টি হচ্ছে, ১৯৭৭ সালে ভারত-পাকিস্তান টেস্ট ম্যাচ চলাকালীন দুঃখজনক ঘটনা। চতুর্থ ইনিংসের পঞ্চম দিনে ব্যাট করছিলেন আসিফ ইকবাল এবং আবদুল কাদির। জয়ের জন্য পাকিস্তানের কয়েকটি রান বাকি ছিল। আসিফ অসাধারণ খেলছিলেন। কিন্তু একটি রান নিতে গিয়ে আসিফ পায়ে পা জড়িয়ে ক্রিজ়ের মাঝখানে পড়ে যান। আহত হন। কাছেই ছিলেন ফিল্ডার দিলীপ দোশি। উনি রান আউট করেন। মনে হচ্ছিল যেন অভিমন্যু বধ হচ্ছে। সমস্ত ইডেনের দর্শকরা সে দিন ‘হায় হায়’ করে উঠেছিলেন। ওটাই ছিল আসিফের শেষ আন্তর্জাতিক টেস্ট ম্যাচ। ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার শেষ দিন। সে দিনও ইডেনের দর্শক দাঁড়িয়ে ওঁকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। প্যাভিলিয়নেও পুষ্পবৃষ্টি হয়। অল্পের জন্য পাকিস্তান পরাজিত হয়েছিল।

শোভনলাল বকসী কলকাতা-৪৫

কিশোরীলাল

জাগরী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দুশো বছর পেরিয়ে এসেছে ব্রহ্মসঙ্গীত’ (রবিবাসরীয়, ২৫-৪) নিবন্ধের জন্য ধন্যবাদ। তবে ব্রহ্মসঙ্গীতের এই স্মৃতিচারণায় তৎকালীন ব্রহ্মসঙ্গীতের বিখ্যাত রচয়িতা কিশোরীলাল রায়ের উল্লেখ না থাকায় লেখাটি কিছুটা অপূর্ণ থেকে গিয়েছে। উঁচু মানের মনোহরশাহি ব্রহ্মসঙ্গীত রচনায় সে যুগে অনেকেই কিশোরীলালকে প্রথম সারির বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁর রচিত ব্রহ্মসঙ্গীতে বৈষ্ণব কবিদের ভক্তিভাবের মিশ্রণ ঘটেছে, ভাষার লালিত্যের সঙ্গে মার্জিত রুচি সংযোজিত হয়েছে। মনোহরশাহি ব্রহ্মসঙ্গীত রচনায় কিশোরীলাল বিভিন্ন সুরের প্রয়োগ করেছেন। যেমন সুহই, দশকোষী, ধরা, শ্রীরাগ, ধানসী, কামোদ, দাস পাড়িয়া, মল্লার প্রভৃতি। ধানসী সুরে তিনি লিখেছেন ‘‘ধৈর্য্য ধর, দুঃখ পরিহর, পাইবে আপন নাথে। ভুঞ্জ বিরহ, ভাবি সুখ তরে, মিলিবে তাঁহার সাথে।’’ অপর একটি রচনায় সুহই সুরে লিখেছেন ‘‘যাহার করুণারাশি নির্ম্মল আলোচিত, দরবয় পাষাণ পরাণ। সেই বিভু সুন্দর, জগব্যাপী শোভিছে, ভাল মতে না কৈনু ধেয়ান।’’

তবে শুধুমাত্র ব্রহ্মসঙ্গীতের রচয়িতা হিসেবেই নয়, বাংলার নবজাগরণে এক বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ছিলেন উত্তরবঙ্গের ঋষি কিশোরীলাল রায়। বিপিনচন্দ্র পাল তাঁর ‘যুগের মানুষ বিজয়কৃষ্ণ’ গ্রন্থে (অধ্যায় ১৪, পৃ. ৫৮, ৫৯) কিশোরীলালের জীবন ও কর্মের উজ্জ্বল বর্ণনা দিয়েছেন। আবার নবকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের ‘সঙ্গীত মুক্তাবলী’ গ্রন্থে (পৃ. ৮৯০) কিশোরীলালের অতি মনোহর ব্রহ্মসঙ্কীর্তনের উল্লেখ পাওয়া যায়। উল্লেখ্য, বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী মানসিক দুরবস্থা ও অশান্তির সময় কিশোরীলালের সংস্পর্শে এসে ব্রাহ্মধর্মের মূল সূত্রে বিশ্বাস করেন এবং কলকাতা ব্রাহ্মসমাজে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের সঙ্গে পরিচিত হন।

মানবজীবন সম্পর্কিত কিশোরীলালের বহু রচনা আজও প্রাসঙ্গিক। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘অ্যান এসে অন হ্যাপিনেস’ (১৮৮৩) এবং ‘ফ্রি এনকোয়ারি আফটার ট্রুথ’ দেশ-বিদেশের মনীষীদের দ্বারা উচ্চপ্রশংসিত হয়।

দেবাশিস রায় রহড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

আচার্য

‘কলকাতার কড়চা’য় প্রকাশিত ‘যোগসূত্র’ শীর্ষক লেখায় (২১-৫) ছাপা হয়েছে ‘পণ্ডিত কুমার বসুর ভাই জয়ন্তর কাছে’। কোনও বিশিষ্ট শিল্পী সম্পর্কে এমন পরিচিতি অসম্মানজনক। এখানে লেখা উচিত ছিল ‘আচার্য জয়ন্ত বসুর কাছে’।

অনিন্দিতা চট্টোপাধ্যায় ই-মেল মারফত

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

অন্য বিষয়গুলি:

Eden Gardens Memories
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy