Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: অন্ধকারের চাষবাস

ফ্যাসিজমের ধারণা, বিস্তৃত ভাবে মানুষের মধ্যে ঐক্য সাধনের ধারণাকে তুলে ধরে... হিন্দু ভারতের এই রকমই একটি সংগঠন চাই হিন্দু সামরিক শক্তির পুনর্জাগরণের জন্য।

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৮ ০০:৩২
Share: Save:

কাঠুয়া ও উন্নাওয়ের দু’টি নারকীয় ঘটনা বিষয়ে নানা ধরনের মতামত বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে চলেছে। দু’টি ঘটনাতেই অভিযুক্তদের পক্ষে ওই সব রাজ্যের শাসক দলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনের বিষয়টি সর্বার্থে নিন্দিত হচ্ছে, হওয়াটাই সমুচিত।

কিন্তু তার পাশে পাশে এমন অনেক মন্তব্য আমরা পড়ছি যা আমাদের বিবমিষার সামনে পৌঁছে দেয়। যেমন— লিখেছেন এক স্থানীয় ব্যাঙ্ক ম্যানেজার— কাঠুয়ার নিষ্পাপ কিশোরীটিকে গণধর্ষণ ও খুন করে দুষ্কৃতীরা নাকি ভালই করেছে, অন্যথায় সে নাকি বড় হয়ে দেশের ওপর বোমা ফেলত! গত কয়েক বছর ধরে কেন্দ্রের শাসকদলটি তার শাখাপ্রশাখা-সহ যে অন্ধকারের চাষবাস করে চলেছে তার প্রত্যক্ষ অভিঘাতে এই সব বিষবাষ্পের বাড়বাড়ন্ত, এটা সকলেই বুঝি। কিন্তু যেটা হয়তো আমরা অনেকে বুঝি না, বা যেটা নানা ভাবে আড়াল হয়ে যায়, তা হল এই যে, এর কোনওটাই আসলে বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়— অর্থাৎ, কতিপয় ‘দুষ্টু ও বিপথগামী’ রাজনৈতিক কর্মী এই সব ঘটিয়ে ফেলছে— এই চালু তত্ত্ব এ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায় না। কেন?

আজকের বিজেপি আসলে অনেক পুরনো একটা মতবাদের রাজনৈতিক মঞ্চ, যার সূত্রপাত জাতীয় কংগ্রেস তৈরির দু’বছরের মাথায় তৈরি ‘ভারত ধর্ম মহামণ্ডল’(১৮৮৭)-এর মধ্য দিয়ে, যে সংগঠনকে ব্রিটিশ সরকার বিপজ্জনক আখ্যা দিয়েছিল (১৯১০)— পরে তাদেরই আর একটি শাখা ‘প্রয়াগ হিন্দু সমাজ’ ছিল তুলনায় আরও জঙ্গি, যাদের মূল নেতা ছিলেন মদনমোহন মালব্য। হিন্দুসমাজ ও ধর্মের উন্নয়ন, এবং শত্রুদের হাত থেকে হিন্দুদের বাঁচার প্রশিক্ষণ তারা দিত।

পরে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা তাদের নিজেদের মত ও পথ প্রচারের সুযোগ এনে দেয়। এমনকী, নজিরবিহীন ভাবে ক্যাম্পাসের মধ্যে আরএসএস-এর একটি অফিস ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র তৈরি করা হয়, এবং ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে সৈনিক তৈরির প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত হয়। এই সবই একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া যার সূত্রে আমরা দেখি আরএসএস-এর অন্যতম নেতা বি এস মুঞ্জে ইতালিতে মুসোলিনির সঙ্গে দেখা করতে যান— ১৯ মার্চ ১৯৩১ তাঁর সঙ্গে মুসোলিনির দেখা হয়।

মুঞ্জে তাঁর ডায়রিতে সেই অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন, তিনি মুগ্ধ হয়ে ঘুরে দেখেছেন ন্যাশনাল ফ্যাসিস্ট অ্যাকাডেমি, মিলিটারি কলেজ, সেন্ট্রাল মিলিটারি স্কুল এবং অনুভব করেছেন “...ফ্যাসিজমের ধারণা, বিস্তৃত ভাবে মানুষের মধ্যে ঐক্য সাধনের ধারণাকে তুলে ধরে... হিন্দু ভারতের এই রকমই একটি সংগঠন চাই হিন্দু সামরিক শক্তির পুনর্জাগরণের জন্য।’’ (সূত্র: আরএসএস ও ফ্যাসিস্ট সংযোগ— এ জি নুরানি)।

এই মুঞ্জে, যিনি হিন্দু মহাসভার সভাপতি হন (১৯২৭), ছিলেন পরবর্তী কালে আরএসএস নেতা হেডগেওয়ার-এর রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু, এবং ইতালির অভিজ্ঞতা থেকে এই দেশের হিন্দুত্ববাদী জঙ্গি সংগঠন তৈরি ও তার বিস্তৃতির ধারণাকে পরের প্রজন্মে ছড়িয়ে দেওয়ার মূল কারিগর।

এই সব কিছুর ধারাবাহিক ফল আজকের পরিস্থিতি। সহজ বুদ্ধিতে বোঝা যায়, জঙ্গিপনার অসি ঘোরাবার জন্য গোটাগুটি ভাবে একটা শত্রুপক্ষ নির্মাণ করে নেওয়া হয়েছে, যা একটি সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তির প্রধান কাজ। আর গুজরাত গণহত্যার কথা খেয়াল রাখলে বোঝা যায়, সেখানে সুপরিকল্পিত ভাবে ‘এথনিক ক্লেঞ্জিং’ই হয়েছিল। ২০০২-এর পরে যে সব রিপোর্ট অনুসন্ধান প্রতিবেদন ও সদ্য প্রকাশিত রানা আয়ুবের ‘গুজরাট ফাইলস’ সামনে এসেছে, তার ভিত্তিতে এই প্রবণতা চিহ্নিত করা যায়। অমদাবাদের ম্যাপ ধরে ধরে হিসাব করা হয়েছিল কোন কোন এলাকায় সংখ্যালঘুরা থাকেন, ভোটার লিস্টে তাঁদের নাম খুঁজে বেছে বেছে হত্যা করা হয়েছিল, গর্ভবতী মহিলার পেট চিরে ভ্রূণ বার করে তরোয়ালের ফলায় প্রদর্শিত হয়েছিল। সাম্প্রতিক দুটো ঘটনাও আসলে হয়তো হিমশৈলের চূড়া।

কিন্তু এর নিন্দা করতে হলে শুধু একটি রাজনৈতিক দল বা তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রশাসনকে বিদ্ধ করলে চলবে না, চিহ্নিত করা দরকার এই রাজনৈতিক দর্শনটাকে, প্রয়োজন ধারাবাহিক ভাবে তাকে উন্মোচন করার, যা মাস হিস্টিরিয়ার মতো আমজনতাকে ঘাতক ও ধর্ষক অথবা তার সমর্থক করে তোলে।

সমর্থকরা এটা খেয়াল করেন না যে, ওই কাশ্মীরি বালিকাটি যে গোষ্ঠীর, কারগিলে পাকিস্তানের বাহিনী হানা দেওয়ার খবর তাঁরাই প্রথম ভারতীয় সেনাকে দিয়েছিলেন (এই খবর টুইট করেছেন জাভেদ আখতার); আর ওই হতভাগ্য বালিকার বিপন্ন পিতা মেয়েকে সব জায়গায় খুঁজেছিলেন, খোঁজেননি কেবল মন্দিরে, কারণ তাঁর বিবেচনায় ওটা ছিল পুণ্যস্থান!

প্রবুদ্ধ বাগচী কলকাতা-৫২

ফ্লেক্স

পঞ্চায়েত নির্বাচন উপলক্ষেও, রাজ্য জুড়ে কয়েক লক্ষ বর্গ কিলোমিটার ডিজিটাল প্রিন্টের সাহায্যে ফ্লেক্সের তৈরি হোর্ডিং ও ব্যানার প্রচারের জন্য টাঙানো হবে। এই ফ্লেক্সের অন্যতম উপাদান পলি ভিনাইল ক্লোরাইড (পিভিসি)। প্লাস্টিকের মতো এটিও জৈব অভঙ্গুর (নন বায়ো ডিগ্রেডেবল)। ফলে ফ্লেক্স প্রকৃতিতে থেকে যায় অনেক দিন। আর ক্রমেই বাড়িয়ে তোলে প্রকৃতির আবর্জনা। যা বন্ধ করে দেয় নিকাশি নালা, নর্দমা প্রভৃতি। আবার ফ্লেক্স পোড়ালে, ডাই অক্সিন, কার্বন মনো-অক্সাইড, ক্লোরিন, অ্যামিন ইত্যাদি ক্ষতিকারক উপাদান বায়ুতে মেশে। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি ক্যানসার, বন্ধ্যত্বের জন্য দায়ী। পোড়ানোর পর যে ছাই পড়ে থাকে তা মাটিকে আম্লিক (পিএইচ ৪.৭) করে তোলে। প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে পরিবেশ ও পর্যটন দফতর আইন প্রণয়ন করেছে। কিন্তু প্লাস্টিকের চেয়ে কোনও অংশে কম বিপজ্জনক নয় ফ্লেক্স। নন্দগোপাল পাত্র

সটিলাপুর, পূর্ব মেদিনীপুর

টেট দ্বিচারিতা

পশ্চিমবঙ্গের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ২০১৫-র প্রাথমিক টেট পাশ প্রার্থীদের আজও নিয়োগ করল না পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। এই সব প্রার্থী ২০১৪ সালের মে মাসে ডব্লিউবিবিপিই অনুমোদিত ডিএলএড-এ ভর্তি হয় এবং এদের কোর্স শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের জুন মাসে। কিন্তু ডব্লিউবিবিপিই পরীক্ষা নেয় ২০১৭ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে এবং কোর্স শেষ করে আরও অনেক পরে। এর ফলে এই সব প্রার্থী ২০১৫-র প্রাথমিক টেট-এর মৌখিক পরীক্ষার আবেদন করার সময় (২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে) প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হিসাবে আবেদন করতে না পারার জন্য চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়। তখন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় গণমাধ্যমে বলেন এই সব প্রার্থীকে প্রশিক্ষিত হিসাবে নিয়োগ করবেন, কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে (২০১৮-র টেট-এর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময়) তিনিই আবার গণমাধ্যমে বলেন, এই সব প্রার্থীকে প্রশিক্ষিত হিসাবে ২০১৫-এর টেট-এর মেরিট লিস্টে এনে নিয়োগ করা হবে। সেই মতো ডব্লিউবিবিপিই নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বিজ্ঞপ্তি জারি (বিজ্ঞপ্তি নং- 2686/BPE/2017) করে এদের সব নথিপত্র জমা নেয়। কিন্তু ডিসেম্বর মাসে আবার এদের বাদ দিয়ে প্রার্থী নিয়োগ করেছে ডব্লিউবিবিপিই এবং ভুল নিয়োগ দিয়ে আবার ফোনের মাধ্যমে তা বাতিল করার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এত দিন কেটে যাওয়ার পরও এদের নিয়োগপত্র দেওয়া হল না। কেন প্রতি বার এত অবহেলা ও দ্বিচারিতা?

পৌলমী দাস সবং, পশ্চিম মেদিনীপুর

একটা নয়, পাঁচটা

‘নতুন সিনেমা হলে...’ খবরটিতে (১০-৪, আনন্দ প্লাস) লেখা হয়েছে যে, এসভিএফ সিনেমাজ-এর একটি সিনেমা হলই আপাতত কার্যকর। কিন্তু পুরুলিয়া, বোলপুর, কৃষ্ণনগর, মোগরা ও নরেন্দ্রপুর-সহ মোট পাঁচটা হল চলছে এসভিএফ সিনেমাজ-এর।

অহনা কাঞ্জিলাল দত্ত, এসভিএফ

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Farmers BJP Asifia Bano Hinduism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE