Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: মানুষ ও কুকুর

পত্রের বিষয়ে কিছু বলতে চাই। কুকুরছানা পিটিয়ে মারার ব্যাপারে অধিকাংশ পত্রলেখকরা একমত হয়েছেন এই বলে যে, কুকুররা মানুষদের কামড়ায়, তাই মানুষরা তাদের পিটিয়ে মারায় কোনও ভুল হয়নি

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০০
Share: Save:

পত্রের বিষয়ে কিছু বলতে চাই। কুকুরছানা পিটিয়ে মারার ব্যাপারে অধিকাংশ পত্রলেখকরা একমত হয়েছেন এই বলে যে, কুকুররা মানুষদের কামড়ায়, তাই মানুষরা তাদের পিটিয়ে মারায় কোনও ভুল হয়নি। কিন্তু তাঁরা বুঝতে পারছেন না, এই কথা বলে তাঁরা মানুষ আর কুকুরকে এক শ্রেণিতে বসিয়ে দিচ্ছেন। কুকুর আমাদের কামড়ায় তাই আমাদেরকেও তাদের পিটিয়ে মারতে হবে— তা হলে আমরা কুকুর বা কোনও নিম্নশ্রেণির পশুর থেকে আলাদা হলাম কী করে? মানুষের মধ্যে মানবত্ব থাকে বলেই তাকে মানুষ বলা হয়।

পত্রলেখকরা হয়তো বলতে পারেন, ওই বাচ্চা কুকুরগুলো বড় হয়ে হিংস্র হয়ে উঠত আর মানুষকে কামড়াত—তাই ওদের পিটিয়ে মারা ঠিক কাজ। এই যুক্তিতে তো প্রতিটা মানবশিশুকেও মেরে ফেলতে হয়। কারণ মানবশিশুদের মধ্যে থেকেও তো অনেক জন চোর-ডাকাত-খুনি প্রভৃতি হয়ে উঠতে পারে!

কুকুরের তাড়ায় মানুষটির মৃত্যু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কোনও কুকুর তাড়া করে এলে নিজেকে বাঁচানোর জন্যে তাকে আক্রমণ করা উচিত। কিন্তু তাড়া করে আসা কুকুরকে আক্রমণ করা, আর নিরীহ, নির্দোষ কুকুরবাচ্চাদের পিটিয়ে মেরে ফেলা— এই দু’টি সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার। আর, কে বেশি হিংস্র? সেই কুকুরটা কোনও রকম ভাবে প্ল্যান করে তো লোকটিকে গাড়ির সামনে ফেলেনি। যেটা হয়েছে সেটা অ্যাক্সিডেন্টাল। আর অন্য দিকে দু’জন মিলে প্ল্যান করে ১৪টি কুকুর বাচ্চা মেরেছে। তা হলে?

এ ছাড়াও প্রতি দিন মানুষেরা একে অপরকে কত খুন-জখম করছে, তা জানলে কুকুরেরাও লজ্জা পাবে। আমি পশুপ্রেমী নই, মেনকা গাঁধীর ফ্যানও নই। বরং কুকুরকে ভয় পাই। যাতে না কামড়ে দেয় তাই এড়িয়ে চলি। কিন্তু তারা যাতে ভবিষ্যতে না কামড়ে দেয় সেই জন্য তাদের আগেই পিটিয়ে মেরে দেব— এত বড় বুদ্ধিভ্রংশ এখনও হয়নি। আশা করি কখনও হবে না।

দেবরাজ দত্ত

মেদিনীপুর

সে দিন ট্রেনে


পুরুলিয়া এক্সপ্রেস অর্থাৎ রাঁচি-হাওড়া ইন্টারসিটি গাড়িতে বনগাঁ লোকালের মতো ভিড় হতে পারে, তাও আবার সংরক্ষিত কামরায়, ভাবিনি কখনও। উঠে দেখি একটি অবাঙালি পরিবার আমার আসনে বসে আছেন। তাঁদের বুঝিয়ে আমি বসার সুযোগ পেলাম। আমার সামনের আসনে এক জন বয়স্কা মহিলা, সঙ্গে কলেজে পড়া মেয়ে, বুঝলাম মা-মেয়ে বাড়ি ফিরছেন, তবে তাঁদের আসন সংরক্ষিত নেই।
একটু পরে এক বৃদ্ধা উঠলেন ট্রেনে। মাথায় চুল নেই, হাতে ছুঁচ ফোটানোর দাগ। বেশ কাহিল লাগছে ওঁকে। সঙ্গে তাঁর ছেলে, অন্যান্য কামরায় থিকথিকে ভিড় থাকায় মাকে নিয়ে সংরক্ষিত কামরায় উঠে পড়েছেন। সামনের ভদ্রমহিলাকে বললেন, “দিদি, মাকে কেমোথেরাপি করিয়ে ফিরছি, খুব কাহিল। একটু বসতে দেবেন?” মহিলা সঙ্গে সঙ্গে বসতে দিলেন বৃদ্ধাকে।
ট্রেন ছাড়ল। সাঁতরাগাছি পেরোবার পর এক হোমরা-চোমরা পুরুষ এলেন। বললেন “সিটগুলো যে ছাড়তে হবে, আমাদের বুক করা আছে।” বলার কিছু ক্ষণ পর এলেন এক নবীন দম্পতি, সঙ্গে আরও এক ব্যক্তি। বৃদ্ধার ছেলে তাঁদের অনুরোধ করলেন মাকে কিছু ক্ষণ বসতে দেওয়ার জন্য। হাবভাব এবং দৈহিক ভাষা দেখে বেশ বুঝতে পারলাম তাঁরা জায়গা ছাড়বেন না। এ দিকে ভিড়ের চাপে, প্রবল ঠেলাঠেলিতে, যন্ত্রণায় বৃদ্ধার কাঁদো-কাঁদো অবস্থা। থাকতে না পেরে বললাম, “দিদা আপনি আমার সিটে বসুন, টিটিই এলে দেখছি ব্যাপারটা।’’ উনি বসলেন আসনে, তার পর কখনও দাঁড়িয়ে কখনও একটু বসে জিরোচ্ছি। বৃদ্ধা আমায় ‘মা’ করে সম্বোধন করে বললেন, “আমার জন্য তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।” ওঁর ছেলে ধন্যবাদ জানাতে এলে বললাম, ‘‘কাকু, আমাদের মতো কমবয়সিরা সাহায্য করবে না তো আর কে করবে?’’
খড়্গপুর আসতে ওই বয়স্কা মহিলা সেই দম্পতিকে অনুরোধ করলেন কিছু ক্ষণ বসতে দেওয়ার জন্য। তাঁরা তাঁকে তো বসতে দিলেনই না, বরং অপমান করলেন। ভদ্রমহিলা খানিক ক্ষুণ্ণ হয়ে চলে গেলেন অন্য বগিতে। নামার সময় বৃদ্ধা এবং তাঁর ছেলে আমায় আশীর্বাদ করে গেলেন।
ছোটবেলায় ‘দুধের দাম’ বলে একটি গল্প পড়েছিলাম। হঠাৎ মনে পড়ল। গল্পটি বনফুলের লেখা। ছোট্ট করে বলে নিই। এক বৃদ্ধা স্টেশনে হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়েছেন। পায়ে খুব ব্যথা। ট্রেনে ওঠার জন্য সাহায্যের প্রয়োজন, সাহায্য চেয়ে স্যুট-বুট পরিহিত বাবু থেকে শুরু করে শিক্ষিত ব্যক্তি— সবাইকে অনুরোধ করলেন, কিন্তু সবাই অবজ্ঞা করলেন, কুকুরের মতো খেদিয়েও দিলেন কেউ কেউ। ওখান দিয়ে এক কুলি পেরোচ্ছিলেন। বৃদ্ধা তাঁকে দেখে কেঁদে ফেললেন। কুলি বৃদ্ধাকে সাহায্য করলেন ট্রেনে উঠিয়ে দিয়ে। বৃদ্ধা আপ্লুত হয়ে তাঁকে টাকা দিতে চাইলে তিনি নিতে অস্বীকার করলেন। তখন বৃদ্ধা বললেন ‘‘বাবা, তুমি আমার ছেলের কাজ-ই করেছ, তাই টাকাটি দুধের দাম হিসেবেই নাও।’’
ভেবেছিলাম সে গল্প পুরোপুরি কাল্পনিক। কিন্তু এ দিনের ঘটনা চোখের সামনে দেখে বুঝলাম, সম্মান আর সাহায্য দু’টি শব্দ এখন অভিধানেই সীমাবদ্ধ। শিয়ালদহ লাইনে যাতায়াতের সুবাদে দেখেছি, এখনকার যুবকরা, এমনকি নিজের বাবার বয়সি মানুষগুলিও, যুবতী, গর্ভবতীদের সম্মান তো করেনই না, বরং যৌন হেনস্থা, অভব্য আচরণ, শ্লীলতাহানি প্রভৃতি অনেকের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। আর বয়স্ক মহিলাদের প্রতি সম্মানের কথা না-হয় ছেড়েই দিলাম, বয়স্কদের জন্য সংরক্ষিত আসনেও অবলীলায় বসে অন্য দিকে চেয়ে থাকেন তরুণরাও। তবে হ্যাঁ খুব সুন্দরী, আবেদনময়ী হলে আলাদা ব্যাপার।
তবে ভাল মানুষ যে একেবারেই নেই তা নয়, আছেন, বিরল। কোনও দিন আপনার-আমার নিকটাত্মীয়রাও হয়তো শিকার হবেন এমন কোনও ঘটনার। মাঝে মাঝে ভাবি, আমরাই তো আজকের প্রজন্ম, আমাদেরই উচিত এগিয়ে এসে মানুষজনকে সাহায্য করা। কিন্তু আমরাই যদি পিছিয়ে যাই নিজেদের কর্তব্য থেকে, তা হলে সেটি খুবই দুঃখের ব্যাপার।


আহেলী দাস
সিন্দার পট্টি, পুরুলিয়া

হাঁটার অধিকার


হাঁটার অধিকার জীবনের এক প্রধান অধিকার— দাবি করে হায়দরাবাদের শ্রীমতী কান্তিমতী কানন ‘রাইট টু ওয়াক ফাউন্ডেশন’ নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন, যার উদ্দেশ্য, গ্রেটার হায়দরাবাদ মিউনিসিপাল কর্পোরেশনকে দিয়ে পথচারীদের হাঁটার অধিকার অবাধ ও নিরাপদ করা। কান্তিমতীর মতে, বাক্‌স্বাধীনতা, ভোটাধিকারের মতোই, হাঁটার অধিকারও সমান গুরুত্বপূর্ণ। ফুটপাতের ষোলো আনাই হাঁটার জন্য, পুরসভা তা সুনিশ্চিত করতে বাধ্য। তাঁর যুক্তিতে মানবাধিকার কমিশন স্বীকার করেছে, হাঁটার অধিকার ও স্বাধীনতা লঙ্ঘিত হলে মানবাধিকারও লঙ্ঘিত হয়।
কলকাতাতেও আমরা প্রশ্ন করতে পারি, ফুটপাত যদি হাঁটা ছাড়া অন্য কাজে ব্যবহৃত হয়, তা কি অনুমোদনযোগ্য? কিছু মৌলিক পুর অধিকারের ক্ষেত্রে সমঝোতা হতে পারে না।


সুজিত ভট্টাচার্য
কলকাতা-৩৩

তখন?


কলকাতার সাংস্কৃতিক জগতের লোকজন প্রতিবাদ করতে জানেন। কোনও শিল্পী বা সাহিত্যিকের অপমান তাঁরা কখনও নীরবে মেনে নিতে জানেন না। তাই কবি শ্রীজাত অসমে যখন অপমানিত হলেন, তখন কলকাতার উদার মনোভাবাপন্ন বহু শিল্পী ও গুণী মানুষ তীব্র প্রতিবাদ করলেন, খুব ভাল লাগল। কিন্তু এই উদার সংস্কৃতিসম্পন্ন মানুষেরা কোথায় ছিলেন, যখন কিছু মৌলবাদী তসলিমা নাসরিনকে কলকাতা-ছাড়া করেছিল?


রেখা দত্ত
মুর্শিদাবাদ

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Politics Taslima Nasrin Administration
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE