Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: আ মরি বাংলা

তাই বিশুদ্ধ বাংলা বলতে না পারার জন্য লজ্জিত হই না, বরং অক্ষমতার বড়াই করেন অনেক বাঙালিই। যত দূর জানি, বাংলাদেশ ছাড়া আজ আর কোথাও বাংলা ভাষা প্রার্থিত মর্যাদা পায় না। 

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৫১

আবাহন দত্ত ‘সম্রাট কিংবা মার্শাল পুতিন’ (২১-১১) নিবন্ধে লিখেছেন রুশি ওলেগার মন্তব্যের কথা। ইংরেজি ভাষা বলতে তাঁদের কেন অনীহা, জানতে চাইলে যিনি বলেন, ‘‘বিকজ় উই আর নট কলোনি, উই আর এম্পায়ার।’’

এই মেজাজ ও আভিজাত্য কোনও বাঙালির মধ্যে এখন দেখি না। ঔপনিবেশিক শাসন ও আনুগত্যের হ্যাংওভার আজও কাটাতে পারিনি। তাই বিশুদ্ধ বাংলা বলতে না পারার জন্য লজ্জিত হই না, বরং অক্ষমতার বড়াই করেন অনেক বাঙালিই। যত দূর জানি, বাংলাদেশ ছাড়া আজ আর কোথাও বাংলা ভাষা প্রার্থিত মর্যাদা পায় না।

একদা রবীন্দ্রনাথ কল্লোলযুগীয় সাহিত্যে ‘দারিদ্র্যের আস্ফালন’ দেখেছিলেন। এখন আমরা দেখি অজ্ঞতা কিংবা স্বল্প জ্ঞানের আস্ফালন। কিছু স্বঘোষিত নবীন বিশেষজ্ঞ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাঙ্গণে জুটেছেন ইদানীং। তাঁরা সমস্বরে বলেন, বাংলা ভাষা নিয়ে গর্বের তেমন কিছু নেই। শুধু তা-ই নয়, বলা হচ্ছে, ভুল বানান বলে কিছু নেই। শুদ্ধ বাংলা বলেও কিছু হয় না। এই ভাষা ও বানানের বিশুদ্ধবাদিতা নাকি আধিপত্যের কণ্ঠস্বর। অতএব বাংলা ভাষা নিয়ে যা খুশি বলার অধিকার বা স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। প্রবীণ বিশেষজ্ঞের দল এর সামান্য প্রতিবাদ করলেও অসম্মানিত হচ্ছেন।

ফলে এ-পার বাংলায় এখন যারা নিজেরাই শুদ্ধ বাংলা লিখতে অপারগ, তারা সমস্বরে তাল মিলিয়ে বলছে: শাবাশ, এই তো চাই। ভুল-ঠিকের সীমারেখা মুছে দাও।

শিষ্টভাষা ও ‘খিস্তি’র মধ্যেও ভেদ যেন এঁরা মুছে ফেলতে চান। তাই বাংলা ভাষায় অনায়াসে ঢুকছে— খিল্লি, ল্যাদ, বিন্দাস, ঝাক্কাস, মস্তি, ধামাকা, এ জাতীয় শ্রুতিকটু শব্দ। উদারীকরণের নামে বাংলার শব্দভাণ্ডার প্রসারিত করার এই জাতীয় প্রচেষ্টা নিন্দনীয়।

তরুণ মুখোপাধ্যায়

প্রাক্তন অধ্যাপক, বঙ্গভাষা ও সাহিত্য বিভাগ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়

প্লাস্টিক

‘প্লাস্টিকের কৌটোয় খাবার বাড়াচ্ছে বিপদ’ (২৫-১০) শীর্ষক প্রতিবেদনটি সময়োপযোগী। তবে আরও কিছু জরুরি কথা বলা প্রয়োজন। প্লাস্টিক আসলে পলিমার। নানা ধরনের প্লাস্টিক রয়েছে, যাদের প্রত্যেকের ধর্ম আলাদা। প্লাস্টিক সব সময় মানবদেহের ক্ষতি করে না।

যেমন পলি-ল্যাকটিক অ্যাসিড (পিএলএ) পলিমার দিয়ে তৈরি স্ক্রু, প্লেট, রড, জালি ইত্যাদি আমাদের দেহের ভিতর মেডিক্যাল ইমপ্লিমেন্ট লাগাতে ব্যবহার করা হয়। পিএলএ দিয়ে তৈরি এই জিনিসগুলি খুব ধীরে ধীরে শরীরের ভিতরে মিলিয়ে যায়, কোনও শারীরিক ক্ষতি না করেই।

পলি-ল্যাকটিক অ্যাসিড হলেও এটি কিন্তু কোনও অ্যাসিড নয়। পলিভিনাইল ক্লোরাইড (পিভিসি)-এর সহায়ক উপাদান ডিইএইচপি যোগ করা পলিমার থেকে সারা পৃথিবীতেই তৈরি হয় ব্লাড ব্যাগ এবং ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেট ইত্যাদি যা চিকিৎসায় অপরিহার্য।

অবশ্য ডিইএইচপি এক ধরনের থ্যালেট। মানুষের দেহে নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি ডিইএইচপি জমা হলে, তার বেশ কিছু ক্ষতিকর প্রভাব আছে। তাই ডিইএইচপি-বিহীন পিভিসি উদ্ভাবনের প্রচেষ্টা চলছে। অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিকর থ্যালেট ডিআইএনপি বা ডিআইডিপি ব্যবহার করে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ পিভিসিও তৈরি হচ্ছে।

‘ইউরোপিয়ান ফুড সেফটি অথরিটি’র মতে, শিশুরা মুখে দিতে পারে এ রকম খেলনা বা জিনিসপত্র ছাড়া এ রকম পিভিসি দিয়ে তৈরি জিনিসপত্র দৈনন্দিন ব্যবহার করা যেতে পারে।

খাবার যে প্লাস্টিকের কৌটোয় আমরা বাড়িতে নিয়ে যাই, তা সাধারণত তৈরি হয় পলিস্টিরিন (পিএস), হাই-ডেনসিটি পলিইথিলিন (এইচডিপিই), লো-ডেনসিটি পলিইথিলিন (এলডিপিই) বা পলিপ্রপিলিন (পিপি) থেকে। পলিস্টিরিন ছাড়া সবগুলিই নিরাপদ পলিমার হিসাবে চিহ্নিত। এগুলি পরিষ্কার করে ধুয়ে নিয়ে ব্যবহার করা যায়। পলিপ্রপিলিনের বোতল গরম জলে ফুটিয়ে, দুধ ভরে শিশুকে খাওয়ানো যায়। পলিপ্রপিলিনের তৈরি পাত্র ইত্যাদি এমনকী উচ্চ বাষ্প চাপে গরম করে জীবাণুমুক্ত করা যায়।

পলিস্টিরিন সম্পর্কে এতটা বলা যায় কি না, সে সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ আছে। তবে স্বল্প সময়ের জন্য ব্যবহার, যেমন থালা গ্লাস বাটি কাপ চামচ ইত্যাদি হিসাবে ব্যবহার করা ক্ষতিকর নয় বলেই মনে হয়। সাধারণ তাপমাত্রায় পলিস্টিরিনের কৌটোয় কোনও জিনিস রাখলে, তা-ও ক্ষতিকর নয় বলেই মনে হয়। তবে তপ্ত খাবার পলিস্টিরিনের পাত্রে বেশি ক্ষণ না রাখাই বাঞ্ছনীয়।

জলের বোতল, নরম পানীয়ের বোতল, ওষুধের বোতল ইত্যাদি তৈরি হয় পলি-ইথিলিন টেরেপথ্যালেট (পিইটি) পলিমার থেকে। নামের সঙ্গে থ্যালেট কথাটি যুক্ত রয়েছে বলে অনেকেই এক সময় ধরে নিয়েছিলেন এতে থ্যালেট রয়েছে, এমনকী মনে করা হত এতে বিসফেনল-এ রয়েছে।

কিন্তু পিইটি তৈরি করবার কোনও পর্যায়েই কোনও থ্যালেট বা বিসফেনল-এ ব্যবহার হয় না।

এ বিষয়ে বিতর্ক মেটাবার জন্য আমাদের দেশে ড. এম কে ভান-এর নেতৃত্বে গঠিত এক উচ্চ পর্যায়ের কমিটি বিশদ বৈজ্ঞানিক বিচার বিশ্লেষণের পর ২০১৬ সালে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, “...সুস্পষ্ট ভাবে নির্দিষ্ট করে দেওয়া এবং শক্তপোক্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও পদ্ধতি প্রকরণের আওতায় থেকে ওষুধ প্যাকেজিংয়ের জন্য পিইটি ব্যবহার করা যেতে পারে এবং তা নিরাপদ এই আশ্বাসও দেওয়া যেতে পারে...’’ পিইটি বোতল পৃথিবীর সব দেশেই বেশ ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হয়।

পলিকার্বনেট (পিসি) পলিমার তৈরিতে অবশ্য বিসফেনল-এ ব্যবহৃত হয়। ২০০৩ সালে বিজ্ঞানী প্যাট্রিসিয়া হান্ট, ইঁদুরের উপর করা এক পরীক্ষার ফলাফল জানাতে গিয়ে গর্ভবতী নারী ও শিশুদের উপর এর ক্ষতিকর প্রভাব থাকতে পারে বলে জানান। বেশ কিছু দেশে, বিসফেনল-এ রয়েছে এমন জিনিস তার পর নিষিদ্ধ হয়ে যায়।

বিষয়টি নিয়ে বিশদ অনুসন্ধানের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (এফডিএ) জানাচ্ছে, মানুষ বানর ইত্যাদি প্রাইমেটদের দেহের বিপাক এবং রেচন প্রক্রিয়া ইঁদুরের তুলনায় অনেক উন্নত হওয়ার ফলে, প্রাইমেটরা তাদের এনজ়াইমের সাহায্যে বিসফেনল-এ’র বিপাক অনেক ভাল ভাবে সম্পন্ন করে। অর্থাৎ মানুষের দেহে বিসফেনল-এ’র প্রভাব ইঁদুরের চাইতে অনেক অনেক কম।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশন্যাল ইনস্টিটিউট অব হেল্‌থ’ আরও এক ধাপ এগিয়ে জানাচ্ছে, নবজাত ও শিশুদের দেহে এবং মানুষের দেহে বর্তমানে যে হারে বিসফেনল-এ প্রবেশ করছে, তা স্বাস্থ্যের পক্ষে তেমন বিপজ্জনক নয়; যথেষ্ট ‘মার্জিন অব সেফটি’ রয়েছে। সুতরাং পলিকার্বনেটের তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে যথেচ্ছ ব্যবহার না করাই ভাল।

কিন্তু এ সব আমাদের মতো মানুষেরা বুঝবেন কেমন করে? প্লাস্টিকের জিনিসপত্র চোখে দেখে বা হাত দিয়ে ছুঁয়ে তো বোঝা সম্ভব নয়, সেটি কোন পলিমার দিয়ে তৈরি।

এর জন্য প্লাস্টিকে তৈরি প্রত্যেকটি জিনিসের গায়ে নম্বর-সহ প্রতীকচিহ্ন থাকতে হবে বলে সরকারি বিধি রয়েছে; কিন্তু অধিকাংশ জিনিসপত্রের গায়ে তা দেখতে পাওয়া যায় না। তা ছাড়া রান্নাঘরে ব্যবহার্য প্লাস্টিকের প্রতিটি জিনিসপত্র ভার্জিন প্লাস্টিক থেকে তৈরি হওয়া প্রয়োজন, রিসাইকলড প্লাস্টিক থেকে নয়। প্রতীক-চিহ্ন না থাকলে সেটাই বা আমরা বুঝব কেমন করে? সেই কথা মাথায় রেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

তপনকুমার বিশ্বাস

কলকাতা-১১৪

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।ডেঙ্গিতে ফের মৃত্যু, গাফিলতির অভিযোগ’ শীর্ষক সংবাদ প্রতিবেদনে (রাজ্য, ৪-১২, পৃ ৫) ভুলবশত পুরনো খবর ছাপা হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

Colonial Rule Loyalty Bengali Language
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy